এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ডুবজলে নক্ষত্রের শব্দ শোনা যায়

    সায়ন্তন চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৭৭৮ বার পঠিত
  • গল্প, ছোট কি বড় জানি না, ধীরে ধীরে লিখব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সায়ন্তন চৌধুরী | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:০৬729564
  • বাতিল অ্যান্টেনায় হোঁচট খেয়ে দাঁত ছিরকুটে পড়ে আছে চাঁদ; তার মুখ থেকে আলো গড়িয়ে গড়িয়ে জমছে আকাশের বিভিন্ন কিনারে। মাঝে মাঝে হাওয়া দেয়। একতলার ঘর, ঘরের সামনে একফালি বারান্দা, ঐখানে দামিনী বসে আছেন, এরকমই রোজ। অন্ধকারে ডুবে আছে মেঝে, চেয়ারের পায়া, হাতলের গায়ে রাখা দামিনীর হাত। যেন জলে পা ডুবিয়ে বসে আছেন তিনি, এইভাবে দামিনীর পা-গুলো নড়ে। অন্ধকারে জল ভেঙে ছপছপ শব্দ তোলে ঢেউ। মাটির দুয়ারে বসে তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ রগড়ে নেয় হাতের উল্টোপিঠ। কান পেতে শোনে পুকুরে মাছেদের ঘাই মারার শব্দ। একটা ক্ষীণ প্রদীপের আলো এসে পড়েছে ঘর থেকে দুয়ারে। ঘরটা দুয়ারের ঐ প্রান্তে। আস্তে আস্তে এগোয় সে ঘরের দিকে। তারপর থেমে যায়। দামিনী ওদিকে যাবে না। বাঁশঝাড় থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁর ডাকে কান ফেটে যাচ্ছে। সেদিকে মুখ ফেরাল দামিনী। ওখানে জোনাকিরা ঘোরাফেরা করে। জোনাকিরা নাচে, খেলে, মরে যায়। মরা জোনাকি জমে থাকে বাঁশপাতায়। বাঁশের নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি সুন্দর শিশু। তার গা দিয়ে দুধসাদা আলো বেরোচ্ছে। সে দামিনীকে ডাকে। দামিনী এগোতে যান সেদিকে। আর তখনই চড়চড় করে চোখের পিছনে বিদ্যুৎ চমকায়, মাথার ভেতরটা চিরে যায় আড়াআড়ি। চুল জড়িয়ে যায় শাদা বৃষ্টির গলায়। ফ্যাকাশে জলে ছুঁচলো বাঁশপাতা ভাসে। পাতায় কুঁকড়ে শুয়ে থাকেন দামিনী। কে যেন চেঁচিয়ে ডাকছে তাঁকে। কারা দৌড়ে আসছে। মনে হয় রেললাইনে শুয়োর কাটা পড়ল আবার। শুয়োরের রক্ত, মাংস, চর্বি ছিরকুটে পড়ে আছে গ্রানাইট জুড়ে। কড়া রোদে চকচক করছে পাথরগুলো। পাথরের গায়ে ধুলো আর রক্ত চাপ বেঁধে কালচে হয়ে গেছে। হাওয়ায় আঁশটে ভাপ অনেকক্ষণ ঝুলে থাকে বঁড়শির মতন আর একদল মাছি খালি ঘুরে ঘুরে বসছে ঐখানে। (চলবে)
  • সায়ন্তন চৌধুরী | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১১729565
  • রক্তটা ক্রমে জামের কালচে রসে ডুবে যায়। দামিনীর ছোট ছোট হাত বেয়ে সেই রস গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে কনুইয়ের দিকে। কষাটে স্বাদে তার মুখ তর হয়ে থাকে। সে তালুতে জিভ ঠেকিয়ে টক-টক শব্দ করল। পুকুরের দিকে যেতে যেতে কুসুম চোখ পাকিয়ে বলে — জাম খেয়োনা মা! জাম খেলে পেট কামড়াবে। এতক্ষণে পুকুরে ডুবিয়ে রাখা বাসনগুলোর গায়ে এঁটো নরম হয়ে এসেছে, কুসুম নারকোলের খোলায় রাখা ছাই তুলে বাসনগুলো মাজতে শুরু করে। পুকুরের জলে ছোট ছোট ঢেউ ওঠে, ঢেউয়ের ফণায় রোদ চিকচিক করে। কাঁপতে থাকা রোদের বিন্দুগুলো জুড়ে জুড়ে একটা শিসের মত শব্দ তৈরী হয়। শিসের শব্দটা ক্রমশ বাড়তে থাকে, তীক্ষ্ণ ও তীব্র হয়ে শব্দটা একটা ট্রেনের সাথে চলতে শুরু করে। কামরার মেঝেতে রাখা তেলের আলোটার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে কুসুম। আলোয় কামরাভর্তি লোকের পায়ের বুড়ো আঙুলগুলো চোখে পড়ে। বুড়ো আঙুলে ভরা ট্রেনটা আস্তে আস্তে ঢোকে সীমান্তবর্তী স্টেশনে। ইঞ্জিন পাল্টে যায়, মাটিলাগা বুড়ো আঙুল নিয়ে ট্রেনটা ফের মাঠঘাট কেটে দৌড়তে আরম্ভ করে। রাঢ়ের দুপুরে বড়ো গরম হলকা বয়। ফ্যাকাশে আকাশে পাক খায় ধূসর চিল। তার গা থেকে কাঠিমে-জড়ানো সুতোর মত আলো খুলে খুলে নেমে এসে পুকুরের অনেক গভীরে থাকা শ্যাওলা, ঝাঁঝির ভেতর ঢুকে পড়ে। ট্রেনটা জড়িয়ে যায় ঐখানে, জলতলে মৃদু ঢেউয়ে শামুকের ভাঙা খোলস, লার্ভার দানাগুলি এপাশ ওপাশ করে। ওপাড়ের ঘাটে বাসন মাজতে মাজতে ছুঁড়িগুলো খিলখিলিয়ে ওঠে। কুসুম ঘাটের গোল গর্তটায় লোহার কড়াই বসায়, উঠে দাঁড়িয়ে গোড়ালি ঘোরায়। এ নদীনালার দেশ নয় গো, পদ্মাপারের বউ! রাঢ়ের মাটি ঢের শক্ত, পুকুর এবং দীঘিগুলো মানুষে-কাটা আর জষ্টিমাসের কাঠাফাটা রোদে পিঁপড়েরাও মাথা উল্টে উল্টোদিকে হাঁটে। (চলবে)
     

  • সায়ন্তন চৌধুরী | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১৪729566
  • ঘাট থেকে সুরকির বস্তা ফেলা ধাপ বেয়ে উঠে এসে কুসুম দ্যাখে দামিনী দুহাতে মাটি মেখে খেলা করছে। একটা পুতুল বানায় সে, যেটা ক্রমে হয়ে যায় সাপ, যেটা ক্রমে হয়ে যায় পেটমোটা কলসী। কলসী ভেঙে উপচে পড়ে বিকেলের আলো। ফাঁকা প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে ঝাঁকড়া কৃষ্ণচূড়া। তার নীচে মাথা নীচু করে বসে থাকেন দামিনী। চোখ বুজে বিড়বিড় করেন। মাথার ভেতর গোলাপী-বেগুনি সব বিদ্যুতের ঝলক নেচে বেড়াচ্ছে। ওরা বলছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। সবুজ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা ঢুকছে স্টেশনে। ঝালমুড়িওয়ালা বাতাসে ছড়িয়ে দেয় আমতেলের মৃদু গন্ধ। টকঝাল স্পেশাল ঝুরিভাজা দুলতে দুলতে চলে যায় আপ থেকে ডাউনের ট্রেনে। অস্তগামী সূর্যের আলোয় হাইভোল্টেজ তারে বসা কাকেরা জায়গা বদল করে। দামিনী দেখতে পান ইস্কুলের সামনে থেকে ফেরা রঙবেরঙের সিরাপ সাজানো গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে চলে যায় বরফওয়ালা। ঘর থেকে রাস্তার এই দৃশ্য তেরচাভাবে দেখতে দেখতে সদ্য মাড় দেওয়া জামাকাপড়গুলো গুছিয়ে রাখেন তিনি। নাকের কাছে স্বামীর গেঞ্জীটা এনে বুকভরে ঘ্রাণ নেন। ঘরের ভেতর বেগুনি অন্ধকার কালো হয়ে আসে। জ্বোরো গলায় কুসুম কী যেন বলে অস্পষ্টভাবে। মেঝেয় প্রদীপটার দিকে চেয়ে দামিনী চুপ করে বসে থাকে। হাতের বাটি থেকে একটা একটা করে মুড়ি তুলে খোঁটে। মায়ের কানে কানে জিগ্যেস করে খাবে কিনা। তারপর একটুক্ষণ মাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে ছেঁড়াখোঁড়া কাঁথার ভাঁজে। হালকা গরম ভাপ মেশানো মায়ের শরীরের গন্ধটা তার নাকে লেগে যায়। উঠে বসে মায়ের চুল নিয়ে খেলা করে। অন্যদিনের মত দামিনী মাকে সাজায় মিছিমিছি। ঠোঁটে মুড়ি গুঁজে রাক্ষসীর দাঁত বানায়। তারপর বিছানা থেকে নেমে প্রদীপের মৃদু আলোয় নিথর রাক্ষসীকে একলা রেখে সে পা টিপে টিপে চৌকাঠ ডিঙোয়। দরজার কপাট খুলে দুয়ারে এসে দাঁড়ায়। চাঁদের আলোয় গাছের ছাইরঙা পাতাগুলো কিলবিল করছে উঠোনে। সেইখানে আলোআবছায়ায় দামিনী দ্যাখে নিঃশব্দে শুয়ে আছে বিশাল ঘোড়া। তার মুখ বেয়ে ফেনা-ফেনা গ্যাঁজলা গড়াচ্ছে। থকথকে জ্যোৎস্নায় তার উজ্জ্বল শাদা কেশরগুলো কাঁপছে মৃদু মৃদু, আর তার পালকার কাছে ভাঙা ডানা থেকে রোঁয়া খসে খসে বাতাসে ঘুরপাক খায় একা একা। (চলবে)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন