এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ডুঙ লুঙ ডো

    Binary লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ | ২০৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩727609
  • স্বপ্নটা দেখে ঝটকা লাগলো প্রাণময়-এর। অনেক ধোঁয়াটে , বরফ ঢাকা কোনো একটা বিস্তীর্ন জায়গা। জঙ্গল-ই বলা যায়। তবে ঘন ঘন করমর্দন দূরত্বের দুমানুষ সমান উঁচু গাছ গুলো ডালপালা বের করা কঙ্কালের মতো , পাতা তো নেই-ই , গাছের ডালপালা সব আকাশ মুখী। চারিদিকে গাছের কালো কালো অবয়ব। হাঁটু পর্যন্ত উঠে আসা বরফ , জুতো টুপি বাদামি ওভারকোট-এর ভেতর দিয়েও প্রবল শীতে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। ক্ষীণ একটা আলো দূরে কোথাও সরে সরে যাচ্ছে , কিন্তু সেটা এতই দূরে , যে বরফ ভেঙে এগোনো যাচ্ছে না। তারপর মনে হলো আলোটাই এগিয়ে আসছে অমোঘ ভাবে , কিছুর তোয়াক্কা না করে। চারিদিকের গাছপালা সরে গিয়ে একটা বরফ ঢাকা জনমানব শূন্য হাইওয়ে হয়ে গেলো। যার মাঝখানে টুপি-বুট-ওভারকোট পরা প্রাণময় আস্তে আস্তে স্থবির হয়ে যাচ্ছে , যার একপাও নড়ার ক্ষমতা নেই। আর সেই দূরবর্তী আলোটা , একটা দৈত্যাকার ট্রাকের আকার নিয়ে দূরত্ব কমাতে কমাতে এক হাতের মধ্যে এসে গেলে , প্রাণময়-এর শরীরটা শূন্যে লাফিয়ে পরে , তলহীন , আলোহীন , অন্তহীন সুড়ঙ্গে। তারপর হঠাৎ , জামার আস্তিন ধরে কেউ আস্তে করে ঝাঁকায়। একটা জলে ডোবা শহর। জলের মাঝে মাঝে জেগে ওঠা অনেক পুরোনো সব বাড়ি আর অলিগলি। রাস্তার পাশে , একটা ফ্যাকাসে মেয়ে , বয়স অল্প-ই হবে , বড়োজোর একুশ বাইশ , কোলে একটা ফ্যাকাসে পোঁটাপড়া বাচ্চা। মেয়েটার নীল চোখ। জামার আস্তিন টেনে মেয়েটা পয়সা চায়।
    ***
    প্রাণময়-এর বাড়ি ভাটপাড়া। সওদাগরি আপিসে ডটপেন , পেন্সিল , দিস্তাখাতা , বোর্ড পিন , চা কফি চিনির পাউডার ইত্যাদি প্রভৃতি , বাংলা কথায় যাকে বলে স্টেশনারি সরবরাহের ব্যবসা আছে। তাও আজকাল বড়ো আপিসের বড়ো কোম্পানির সাথে তাল না রাখতে পেরে ব্যবসাটা মৃত প্রায়। শুধু পুরোনো কিছু কেরানি বাবাতুতো , কাকাতুতো মানুষের কল্যানে একটা দুটো সওদাগরি আপিসের প্রোডাকশন ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই-এর ওপরে টিঁকে আছে ওর ব্যবসা , আর ও নিজেও। কিন্তু এইসব বাবাতুতো , কাকাতুতো মানুষদের-ও রিটায়ারমেন্ট আসন্ন , আর কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে তার কোনো ঠিক নেই , ভবিষ্য বড়োই ম্রিয়মান।
    প্রাণময় -এর বয়স প্রায় চল্লিশ। মাধ্যমিক পাশ করা স্বল্প বিদ্যা-য় , আশেপাশে মানুষের সাহায্যে স্টেশনারি সরবরাহের ব্যবসা ছাড়া কিছু করে উঠতে পারেনি প্রাণময়। বাবা-মা ভাইবোন তিনকূলে কেউ না থাকা প্রাণময়-এর আপাতত সম্বল বলতে , সরিকি ভাড়াবাড়ির উঠোনের পাশের এক চিলতে ঘরের তক্তপোষ আর টেবিল , উঠোনের কমন কুয়ো তলা , আর বারোয়ারি টয়লেট। সে যাই হোক। প্রাণময় একজন হেরে যাওয়া , পিছিয়ে পড়া মানুষ। বড়োবাজারের ঘুমটি থেকে মাল তুলে আপিসে আপিসে , কারখানায় কারখানায় ঘাড়েকরে স্টেশনারি সাপ্লাই , কাজের মধ্যে এটাই। তবে এরকম গল্প প্রাণময়-র একার নয় , লক্ষ্য লক্ষ্য আরো অনেক প্রাণময় -এর মতোই।
    তবে , প্রতিটি মানুষের-ই কিছু কিছু নিজস্বতা থাকে। কারো কোনো হবি। কারো কোনো নেশা। কারো কোনো ইচ্ছে। প্রাণময় -এর মতো মানুষদের অবশ্য , এসব থাকার কথা না। কিন্তু প্রাণময় -এর ছিল। সিনেমা দেখার নেশা। তবে , হিন্দি বাংলার থেকে বেশি ইংরেজি বিদেশী ছবি। ছোটবেলায় ইস্কুল পালিয়ে , ট্রেন বাস ধরে , ধর্মতলায় বা হাতি বাগানের ততদিনে প্রায়-উঠে-যাওয়া গ্লোব-নিউএম্পায়ার-টকিসো তে অল্প পয়সার টিকিটে বিদেশী সিনেমা দেখার একটা প্রবল রোমাঞ্চকর ভালোলাগা ছিল , সেটা পরিণত বয়েসের স্নাযুতেও রয়ে গ্যাছে। এখন পারলে মাসে অন্তত , একটা বিদেশি সিনেমা দেখতে চেষ্টা করে প্রাণময়। মাল্টিপ্লেক্সের চাকচিক্যে , নিজের মলিন উপস্থিতি-র কুন্ঠা নিয়েও। বাড়ি ভাড়া আর মাসিক খরচে পরে হাতে সামান্য পয়সা থাকলেও।
    মুশকিল হচ্ছে , দশ ক্লাসে-র , কমমেধার ন্যূনতম ইংরেজি বিদ্যায় সেসব বিদেশী সিনেমার নাম-ও মনে রাখতে পারে না প্রাণময় , সংলাপের আটানব্বই শতাংশ বোধগম্য-ও হয় না ওর। কিন্তু তাও ও দ্যাখে। ভালো ছবি , জঘন্য ছবি , অ্যাকশন , সায়েন্স ফিকশন , রোমান্টিক কোনোটাই বিচার করেনা ও। কারণ সেরকম বিচার করার মতো বিদ্যে ওর নেই। খালি সিনেমা হলের বাইরের রোদ ঝাঁঝাঁ , ঘর্মাক্ত , ধুলোমাখা , অর্ডার সাপ্লাই-এর বাক্স কাঁধে হাঁফ ধরানো পৃথিবী , আর হলের মধ্যে অলীক পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করতে গায়ে কাঁটা দেওয়া অনুভূতি লেগে থাকে ওর।
    ***
    প্রাণময় কোনোদিন আল্পস দ্যাখেনি। খুব সম্ভবত: আল্পসের ভৌগোলিক ইতিবৃত্য এমনকি নামের সম্বন্ধে-ও পরিচিতি না থাকার-ই কথা। অ্যাদ্রিয়াটিক সাগরের জলেভেজা , ইতালির ভেনিস নিয়ে-ও একই ভাবে ক-অক্ষর প্রাণময়। তবে স্বপ্নে ফিরে আসে আল্পস , ভেনিসের জলে ডোবা সিল্যুয়েট । তবে স্বপ্নগুলো , বেশ মরবিড। অর্ডার সাপ্লাই দিতে গিয়ে আপিসের বড়বাবুর কাছে অকারণ আর আপত্তিকর গালিগালাজ শুনে কান্না পাওয়ার দিন, রাতে , বাসের কন্ডাক্টারের ধাক্কা খেয়ে বাস থেকে কাঁধে ভারীব্যাগ নিয়ে ফুটপাথে ছিটকে পড়ে, কোমরে চোট পাওয়া-র দিন, রাতে , পেমেন্ট নিতে গিয়ে পাওনা টাকার , পার্সেন্ট কেটে নেওয়া , পানখাওয়া অশ্লীল হাসির ক্যাশিয়ার বাবুর সাথে ঝগড়া হওয়ার দিন, রাতে - এরকম মরবিড স্বপ্ন দ্যাখে প্রাণময়। প্রাণময় হয়তো জানে না , আল্পসের স্বপ্নটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, যখন ফ্রান্স লড়ছিল পার্টিসান-ওয়ার। আর ভেনিসের স্বপ্নটা ওথেলো -র।
    ***
    সেদিন ট্রেন-র দরজায় রুক্ষ চুলের কাটাকাটা নাক চোখ তিন পুরুত চাপারঙা একটি মেয়ে কে দেখেছিলো প্রাণময়। গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মেয়ে। চেহারায় , কথায় দুর্বিনীত রুক্ষ সৌন্দর্য্য। সরু কোমরে জীবন যুদ্ধের তেজ। নীল রঙের সস্তার সালোয়ার কামিজ , হলুদ ওড়না , বুকের মাঝখান দিয়ে কাঁধ আর কোমরে জড়ানো। দেখে একটু মন টলমল করে প্রাণময় -এর। রোমানস্-টোমান্স থেকে জোর করে মুখ ফিরিয়ে রাখা প্রাণময় -এর বুকের ভেতর শিরশির করে।
    সেদিন রাতে স্বপ্নে , আগুন রাঙা ফুলে ভরা একটা ঘাস জমিতে নিজেকে খুঁজে পায় প্রাণময়। সামনে শ'খানেক মিটার মতো দূরে , অনেক উঁচু উঁচু থামওয়ালা আর অনেক চওড়া সিঁড়িওয়ালা দালান। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে আয়াত চোখের এক কালোমেয়ে। যার প্রতি পদক্ষেপে অহংকার। হাত বাড়িয়ে মেয়ের কোমর জরায় প্রাণময়।
    ***
    প্রাণময় এটাও জানে না , মেয়েটা ডায়ানা রস। ছবির নাম "মাহগনি"
    .. মাধুকরী হও নয়ন মোহিনী স্বপ্নের কাছাকাছি
  • ranjan roy | 176.62.***.*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৬:১২727610
  • বাঃ !
  • নির | 52.***.*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ২০:১৬727612
  • ভালো লাগল।
  • নির | 52.***.*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ২০:১৬727611
  • ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন