এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • প্রকৃত ধার্মিক কখনো হিন্দু মুসলমান হতে পারে না

    bip
    অন্যান্য | ০৭ জুলাই ২০১৬ | ৮৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ | 183.67.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৮:১২717832
  • প্রকৃত ধার্মিক কখনো হিন্দু মুসলমান হতে পারে না
    *************************
    পৃথিবীতে কেওই নিধার্মিক না। কেওই অবিশ্বাসী না। আমরা সবাই ধার্মিক। সবাই বিশ্বাসী।

    ঈশ্বরে বিশ্বাস-এক মাত্র বিশ্বাস না। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে পরের জন্মে। কমিনিউস্টরা বিশ্বাস করে মার্ক্স-লেনিনের তত্ত্বে। অনেকে বিশ্বাস রাখে কঠোর পরিশ্রম আর সততায়। কেউ কেই বিশ্বাস করে মানুষ নিস্পাপ কিন্ত তাকে পরিস্থিতি পাপী করে তোলে।

    ইনফ্যাক্ট দুজন মুসলমানের বিশ্বাস কি হুবহু এক হতে পারে? কখনোই না। সব ইস্যুতেই তদের মাত্রাভেদ থাকবে। কিছু কিছু ইস্যুতে তারা এক হবেন, আবার অন্য অনেক ইস্যুতেই তাদের মতৈনক্য থাকবে।

    আমরা মুক্তমনারাও নিশ্চয় মানবিকতা, সার্বিক নৈতিকতা, নরনারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করি।

    সুতরাং বিশ্বাস, ধর্ম শব্দটাকে যতই ঘৃণা করি না কেন- নৈতিকতা, রাজনৈতিক অবস্থান, জীবনের উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত ইত্যাদি নিয়ে আমদের সবারই কিছু বিশ্বাস আছে-আর সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে আমাদের নিজস্ব ধর্ম।

    আমি সাধারনত মুক্তমনা বা ব্লগে ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মগুরুদের কাছ থেকে কি শিখেছি-সেগুলো লিখতে চাই না। কারন এগুলো ভাববাদ। আমি এখনো ১০০% বস্তুবাদি। কিন্ত সমাজবিজ্ঞান নৃতত্ত্বের বাইরে ধর্মের যে ভাববাদি ডাইমেনশন আছে সেগুলো নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত।

    আসলে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ জীবন-কোন কিছুই পারফেক্ট না। এখানে অনেক হিংসা, অনেক অত্যাচার, অনেক শোষন-অনেক বৈষম্য । ফলে আমার কাছে ঐশ্বরিক সমাধান আছে-যাতে সব কিছু একদম পারফেক্ট হয়ে যাবে-পৃথিবী স্বর্গরাজ্য হবে-ইত্যাদি আশার ছলনে ভুলি-অনেকেই র‍্যাডিক্যাল পলিটিক্যাল মতধারাতে বিশ্বাসী হয়। শুধু মুসলমান হিন্দুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বার্নি স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেইনেও সেই একই ড্রাগের মাদকতা। আমি সব কিছুর সমাধান করে দেব-আমার কাছে তোমার সব সমস্যার সমাধান আছে-ইত্যাদি টাঊস ঢপ যদি বিশ্বাসযোগ ককটেল সহযোগে খাওয়ানো যায়, যারা চোখের সামনে অসাম্য, অত্যাচার দেখে বড় হচ্ছে-তারা সহজেই জীবনের একটা মিনিংফুল উদ্দেশ্য পেয়ে যেতে পারে।

    ফুলের মতন নিস্পাপ শিশুগুলো জঙ্গী হল কেন? কারন তারাও চোখের সামনে অনাচার, বৈষম্য, দুর্নীতি দেখে বিশ্বাস করতে শিখল শরিয়ার মাধ্যমে এক ইউটোপিয়ান রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেওয়া সম্ভব যেখানে অন্যায় অবিচার থাকবে না! বার্নি সমর্থক থেকে হিন্দুত্ববাদি, কমিনিউস্ট কিম্বা জঙ্গী-সবাই কিন্ত সেই ইউটোপিয়ান সিস্টেমের আশার ছলনে ভুলি, আগুনে ঝাঁপাচ্ছে। শরিয়া বা বৈদিক সমাজ বা কমিনিউস্ট সমাজের ক্রীটিক্যাল এনালাইসিস না করেই। এবং যত এদের মধ্যে ওই চিন্তাটা দৃঢ় হয় যে ওইরকম ইউটোপিয়ান রাষ্ট্র বানানো সম্ভব-তত এদের জঙ্গীপনা বাড়ে। নিজেদের মুসলমান বা কমিনিউস্ট প্রমান করার প্রবণতা বাড়ে।

    কিন্ত ধর্ম কি তাই বলে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে? যে ইউটোপিয়া, সামাজিক ধর্মীয় পরিচিতির দিকে ছোটা-তা কি ধর্ম সাধনা হতে পারে? কেন নিজেকে আবদ্ধ করা ধর্মের ক্ষুদ্র পরিচয়ে? সুফীগুরুরা কি তাই বলেন ? জালালুদ্দিন রুমীর কয়েকটা লাইন তুলে দিই —

    মুক্তহৌক আমার এ আত্মা, রাতের অন্ধকারে, দিনের সকালে
    উড়ে যাও পাখি-এ দেহের খাঁচা ছেড়ে
    মুছে সাফ
    সাদা কাগজের মতন পরিস্কার মনন
    সেই কাগজে লেখ, আর মোছ, লেখ আর পরিস্কার কর

    গভীর রাতে কেউ কেউ মুক্ত হয়ে যায়
    মুক্ত মাঠে বন্দী মানুষ অন্দরে ঘুমায়
    প্রতাপশালী বাদশাহ তখন বড়ই অসহায়
    দম্ভ-দাপট প্রাসাদ ছেড়ে অরণ্যে পালায়
    সুখের নদী তরঙ্গহীন দুঃখ ডুবে তল
    মোহ-মায়ার পৃথিবীটা পাথর জগদ্দল
    নিদ্রাহীন এক সাধু দেখো মগ্ন অচেতন
    কেউ জানে না এই ঘুমে তার কাটবে কতক্ষণ

    ধর্ম সাধনা, নিজেকে মুক্ত করার সাধনা। সমস্ত রিপু ইহজাগতিক ইচ্ছার মাহামোহ কাটিয়ে-ওই যে রুমি লিখলেন-সব মুছে আবার সাদা কাগজের মন করে দাও-সেই মুক্তির জন্যই লোকে ধর্ম সাধনা করে। রবীন্দ্রনা আবার মুক্তি খুঁজেছেন ইহজাগতিক ছন্দে, সৌন্দর্য্যে –

    আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
    আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ॥
    দেহমনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে,
    গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ॥
    আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,
    দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।
    বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা–
    জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।

    সেখানে নিজেকে ক্ষুদ্র ধর্মীয় পরিচয়ের গন্ডীতে আবদ্ধ করাটাও একটা বন্ধন। এই যে আমার অস্তিত্ব-পরিচিতি-ইঞ্জিনিয়িয়ার, হিন্দু মুসলমান, বাংলাদেশী, ভারতীয় অমুক কমিটির প্রেসিডেন্ট-ইত্যাদি-প্রতিটা পরিচয়ের পেছনেই আছে বন্ধন-অনেক দ্বায়িত্ব, গর্ব ইত্যাদির বন্ধন। তা অবশ্যই সাধন পথের অন্তরায়। তাই রুমি বলছেন

    মুসলিমরা, আমাকে বল কি করা উচিত
    আমি জানি না নিজেকে কিভাবে সনাক্ত করবো
    না আমি খ্রিস্টান, না ইহুদী, না প্যাগন, না মুসলিম
    আমি অভিবাদন করি না, পূর্বে কিংবা পশ্চিম হতে
    আমি আসিনি ভূমি কিংবা সাগর থেকে
    আমি এই পৃথিবীর কোন সৃষ্টি নই!”

    নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, লালন এরা ধর্মীর পরিচয়ের গন্ডী কাটিয়ে মুক্তির স্বাদ নিয়েছেন। হিন্দু মুসলমান হিসাবে যে পরিচিতি, তার বন্ধন ও একধরনের মায়া-তারা বাঁধন কাটাই ধর্ম সাধনা। লালন সাঁই এর গানে

    এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে
    যে দিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃস্টান
    জাতিগোত্র নাহি রবে ।।
  • ranjan roy | 192.68.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৪:৪২717833
  • বিপ বলছেনঃ
    "বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে পরের জন্মে।"

    --তাই? হীনযানী বা সর্বাস্তিবাদী/সৌত্রান্তিকরা তো অনাত্মবাদিন-- আত্মাতেই বিশ্বাস করে না। তাহলে পরজন্মে বিশ্বাসী কী করে হবে যদি একটু ক্লিয়ার করেন?
  • সে | 198.155.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৮:০০717834
  • রঞ্জনদা, পরজন্মে যদি বিশ্বাস না ও করেন বৌদ্ধরা তাতে কিছু এসে যায় না, কোন একটা কিছুতে বিশ্বাস করেন, বিপ সেটাই বলতে চেয়েছেন। পরজন্ম কি পূর্বজন্ম (যেমন, জাতকের গল্প), কি অনাত্মাবাদ, সেটা ইরেলেভ্যান্ট। বিপের লেখাটার মূল বক্তব্য তাতে পরিবর্তিত হচ্ছে না।
  • ranjan roy | 192.68.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৯:২৫717835
  • সে,
    পয়েন্ট টেকেন। সরি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন