এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কবিগুরু এবং শিল্পী রবীন

    দীপ
    অন্যান্য | ০৮ মে ২০১৬ | ৫২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 11.39.***.*** | ০৮ মে ২০১৬ ১৯:৫২707039
  • কবিগুরু এবং শিল্পী রবীন

    রোদ টা পড়ে আসতে সমরেশ বাবু দোতালার বারান্দার বেতের চেয়ারটাতে এসে বসে ছিলেন। রাস্তার ওপারের বাড়িটা রবীন দাস-এর। বাড়ি মানে, ক্ষয়ে যাওয়া ইঁট বের হওয়া দেয়ালের ওপর টিনের চাল। দেয়ালে যত্রতত্র গজানো বট আর অশ্বত্থ।রাস্তার ধারেই একটু দালান মত। মাঝখানে একটুকরো ফাঁকা জমিতে একটা প্রাচীন আমগাছ। আম আর বিশেষ হয় না সেটায়। সেই জমির ওপারে দুটো ঘর, একপাশে রান্নাঘর, অন্যদিকে বাথরুম-পায়খানা। সমরেশ বাবু বারান্দায় বসেই দেখতে পান এ সব। অস্বস্তি লাগে একটু। বিশেষ করে যখন রবিনের বউ তীক্ষ্ণ স্বরে গালমন্দ করে তাকে। ঝগড়া চলে বেশিরভাগ সময়ই। অভাবের সংসার। দুটো ছেলেমেয়ে, তাদের পড়াশুনা, শখ-আহ্লাদ। রবিনের বউ দুবেলা রান্না করতে বেরোয়। রবিন বসে থাকে বাইরের দালান টায়। ওই দালান টুকুই রবীনের জগৎ। রবীন শিল্পী। দালানের দেয়ালে টাঙানো আছে থার্মোকল কেটে, " আমি শিল্পী। কল্পনায় রঙীন আমার মন। চাই শিল্পীর সম্মান। "
    রবীন শিল্পী। রাস্তার ধারে যে দালান টুকু রবিনের জগৎ, সেখানে রবীন এরকম আরো অনেক কিছু আটকে রাখে থার্মোকল কেটে, বা কাগজে এঁকে। সমরেশ বাবু দেখেন সে সব। সবই খুব সস্তা ধরনের কাজ। একবার যেমন, দুর্গাপূজার সময় রবীন থার্মোকল কেটে কতগুলো থামের মত বানালো। সেগুলো পরস্পর থার্মোকলের-ই শেকল দিয়ে বাঁধা। মাঝখানে একটা বোর্ড মত তৈরি করে তাতে লিখে দিল, " চোখ মেলে দেখ শিল্পীর কল্পনা। " সবাই হাসাহাসি করে। বউ উঠতে বসতে গাল মন্দ করে। রবীন নির্বিকার। উদাস ভঙ্গীতে দালানে বসে থাকে পা ঝুলিয়ে, বিড়ি টানে। ছেলে মেয়েরা স্কুলে বেড়িয়ে যায়। বউ বেরিয়ে যায় রান্নার কাজে। রবীন তখন রং-তুলি নিয়ে নেমপ্লেট লিখতে, বা কোন দোকানের বিজ্ঞাপনী পোস্টার লিখতে। সমরেশ বাবু বারান্দায় বসে বসে দেখেন। কি রকম মগ্ন হয়ে রবিন ফুটিয়ে তুলছে অক্ষরগুলো আর্টপেপার বা কাঠের ওপর। একটা লাইন লিখে একটু দূর থেকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে সেটার দিকে। কখনো বা গান গেয়ে ওঠে।
    " মানুষ খুন হলে প'রে,
    মানুষ ই তার বিচার করে।
    তবে কেন পায়না বিচার
    নিহত গোলাপ?
    বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে নেওয়া
    নিহত গোলাপ?"

    এই একটা গানই রবীন গায়। বিশেষ করে এই কটা লাইন। চোখ বুজে আসে ভাবে। একটু সরু গলা করে রবীন গেয়ে চলে। রাস্তা দিয়ে অনবরত লোকজন, গাড়িঘোড়া, কলরব - রবীনের গানে তার কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।
    আজ সকালে সমরেশ বাবু একটু অন্যরকম দৃশ্য দেখলেন। রবীনের দালান জুড়ে এক বিশাল সাইজের রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙানো। জোব্বা পরিহিত পিছনে হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ানো সেই বিখ্যাত ভঙ্গী। পাশে একটা বড় আর্টপেপারে আরো ছোট ছোট কিছু ছবি কেটে লাগানো। দুটোতেই দুখানা গাঁদাফুলের মালা দেওয়া। ছবির নীচে কুচোফুলের পাপড়ি ছড়ানো। দেখে সমরেশ বাবুর মনে পড়ে যায়, আজ তো ২৫শে বৈশাখ !
    এখন এই বিকেল বেলায় বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন সমরেশ বাবু। একসময় ২৫ শে বৈশাখ মানেই ছিল ভোরবেলা রবীন্দ্রসদন। কে না আসতেন সেখানে এই দিন টায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা কেটে যেত রবীন্দ্রসদন, জোড়াসাঁকো - গান শুনতে শুনতে। অবশ্যই একা নয়। খুব ভোরে না হলেও, আটটার মধ্যে চলে আসত শংখমালা। জীবনানন্দ থেকে নেওয়া নাম, কিন্তু রবি ঠাকুরের জন্যে পাগল ছিল সেই মেয়ে। নীল বা সবুজ ডুরে শাড়ি, একটু উঁচু করে চুল বাঁধা। রবীন্দ্রসদনের প্রাঙ্গনে বসে সমরেশ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতেন শংখমালার গ্রীবার কাছে কেমন কুচোচুলের মায়া। সুচিত্রা মিত্র তখন গাইছেন -

    " তুমি কোন্‌ কাননের ফুল, তুমি কোন্‌ গগনের তারা ।
    তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্‌ স্বপনের পারা ॥ "

    চমকে ওঠেন সমরেশ। শংখমালা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনও তেমনি আছে সেই আঙুলের ছোঁয়া। সামনে রবীনের দালান থেকে গান ভেসে আসছে ভাড়া করে আনা সি ডি প্লেয়ারে। সেই কন্ঠ! সেই সুরেলা মায়াভরা উচ্চারণ!

    " কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে
    ভুলে গিয়েছি ।
    শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥
    তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও ।
    এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ’লে যাও ।
    আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,
    তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥"

    আস্তে আস্তে নিজের ডান হাতখানি রাখেন সমরেশ, শংখমালার ডান হাতে। এবং আশ্চর্য, তিনি উচ্চারণ করেন জীবনানন্দ থেকে -

    " এ পৃথিবী একবার পায় তাকে
    পায় নাকো আর।। "
  • | ০৮ মে ২০১৬ ২১:০৭707040
  • পড়লাম। মন্দ লাগল না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন