এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২১:৩৭700846
  • কাক শুনলেই যে কতিপয় ব্যক্তির কল্পনায় কেবলমাত্র কৃষ্ণকায়, কদাকার, কাঠখোট্টা, কুৎসিত, কর্কশকণ্ঠী এক কাঙাল পাখির ছবি ভেসে ওঠে দোহাই, তাঁরা এ লেখা পড়বেন না। বিপরীতে যে বিপুলসংখ্যক বিজ্ঞানমনস্ক বঙ্গভাষী ‘কাক’ শোনামাত্র তাকে বিজ্ঞানসম্মত বংশপরিচয়, পরিবেশ রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিশালাকার খাঁচায় বন্দি করতে চাইছেন – বলা বাহুল্য, তাঁরাও এ লেখা পড়ে বেজায় বেকুব বনতে পারেন। তার চেয়ে বরং আসুন কাক, কাগ, কাউয়া, ক্রো কিংবা কর্ভাস নামে বিখ্যাত এই কর্ভিদি বংশীয় পাখিটিকে দেখি কিঞ্চিৎ অন্য চোখে।

    গ্রাম কিংবা শহর – আমাদের সঙ্গেই থাকে কাক অথচ আমরা অধিকাংশই কাক দেখে নাক সিঁটকাই। এ কথা হলফ করে বলা যায় যে কাক, কোকিল, কাকাতুয়া আর কাঠঠোকরাকে নিয়ে কোনও কাল্পনিক বর্ণাশ্রম গড়ে তুললে শূদ্রের ভূমিকায় কাকের নির্বাচন অনিবার্য ! যাই হোক, কাককথা লিখতে বসে ‘কাক কয় প্রকার ও কী কী’ এমত প্রশ্নের জবাব দিতেই হয়। বেশ, সাহিত্যপ্রেমিকরা তবে পাতা ওলটান অবনীন্দ্রনাথের ‘বুড়ো আংলা’-র : “ আমাদের মধ্যে যেমন ডোম চাঁড়াল তেলি মালি যুগি কায়েত বামুন এমনি নানা জাত, কিন্তু দেখতে চেহারায় মানুষ, তেমনি কাকেদের মধ্যেও দেখতে কাক কিন্তু জাত হরেক রকমের রয়েছে – যেমন ডোমকাক বা যোমকাক, ধাড়িকাক বা দাঁড়াকাক বা দাঁড়কাক, ধোড়াকাক, ঝোড়োকাক, ঢোঁড়াকাক, পাণিকাক বা পাতিকাক, শ্বেতকাক বা ছিটেকাক, ভুষোকাক বা ভুষুণ্ডেকাক ”। আর তথ্যনিষ্ঠ, পক্ষিপ্রেমিক পাঠক দেখুন অজয় হোমের ‘বাঙলার পাখি’ (প্রথম খণ্ড) : “ বায়সবংশের ৮টি গণ – কাক (কর্ভাস), কৃশকুট (ডেন্ড্রাকিট্টা), ফলভজুক (ন্যুকিফ্রাগা; ইং. নাটক্র্যাকার), কূট (পাইকা; ম্যাগপাই), হরিৎকূট (কিট্টা; গ্রিন ম্যাগপাই), জল্পাক (গ্যাররুলাস; জে), ভূকাক (পোডোকেস; হিউমস গ্রাউন্ড চাফ্) ও সুবর্ণকাক ( পাইরহোকরাকস; আলপাইনচাফ্‌) ”। এখানেই পাচ্ছি আরও কাক, যেমন কৃষ্ণোত্তমাঙ্গ কাক বা হুডেড ক্রো, পলপ্রিয় কাক বা ক্যারিয়ন ক্রো, সংঘচারী কাক বা রুক কিংবা চোরকাক বা জ্যাক্‌ড।

    যাক, কাক পরিচিতি না হয় হল কিন্তু ‘কাক’ মানে কি শুধুই পাখি ? আজ্ঞে না, বাংলা ভাষার বিভিন্ন অভিধানে দেখছি এক ‘কাক’ শব্দেরই অন্তত সাতটি অর্থ : ১. বায়স, ২. যা শব্দ করে, ৩. যে নিজের উপস্থিতি ঘোষণা করে, ৪. কড়ার চারভাগের একভাগ, ৫. তিলক, ৬. খঞ্জ এবং ৭. ছিপি বা কর্ক। ‘কাক’ যে কতকিছুর প্রতিশব্দ তা তো জানলাম কিন্তু কাকের প্রতিশব্দ ? কেন, বায়স বা পরভৃৎ ! হ্যাঁ, ও-দুটো তো আছেই, আছে আরও অন্তত তিরিশটি শব্দ – অরিষ্ট, আত্মঘোষ, কটখাটক, করট, করটক, কাণ, কৃষ্ণ, কৌশিকারি, খর, গূঢ়মৈথুন, গ্রামীণ, চলাচল, চিরঞ্জীবী, চিরায়ু, দ্বিক্‌, দীর্ঘায়ু, ধুলিজঙ্ঘ, ধাঙ্ক্ষ, নাগবীরক, নিমিত্তকৃৎ, পিন্ডন, বল, বাতজব, মহালোল, মুখর, রতজ্বর, লন্টাক, শ্রাবক, সকৃৎপ্রজ, সূচক ইত্যাদি (নগেন্দ্রনাথ বসুর ‘বিশ্বকোষ - ৩য় খণ্ড’ দ্রষ্টব্য)। মোদ্দা কথা কাক হল একমাত্র পাখি যাকে এত নামে ডাকা যায়।

    শুধুমাত্র প্রতিশব্দই নয়, কাক এক বিশাল স্থান দখল করে নিয়েছে বাংলা শব্দভাণ্ডারেও। কাকের চেহারা-চরিত্র সম্পর্কিত প্রত্যক্ষ শব্দ এবং কাকের সঙ্গে আপাত-সম্পর্কহীন পরোক্ষ শব্দ মিলিয়ে চল্লিশ কিংবা তারও বেশি সংখ্যক শব্দ একা কাকেরই দখলে এবং এই কৃতিত্বও কিন্তু অন্য কোনও পাখির নেই। প্রত্যক্ষভাবে গঠিত শব্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য — কাকের চোখের তুল্য স্বচ্ছ কোনও বস্তু বোঝাতে ‘কাকচক্ষু’; কাকের ডাক, ডিমসংখ্যা প্রভৃতি হিসাব করে তৈ্রি হয়েছে যে গণনাপদ্ধতি তা হল ‘কাকচরিত্র’ বা ‘কাকতন্ত্র’; ভোরভ্রমে যে জ্যোৎস্নায় কাক ডেকে ওঠে অথবা অল্প জ্যোৎস্না বোঝাতে ‘কাকজ্যোৎস্না’; কাকের ঘুম পাতলা – তাই অগভীর, সতর্ক নিদ্রা অর্থে ‘কাকতন্দ্রা’ বা ‘কাকনিদ্রা’; কাকের পাখা বা পালক তুলনীয় আমাদের জুলফির সঙ্গে, তাই জুলফির অন্য নাম ‘কাকপক্ষ’। কাকের পা বা ‘কাকপদ’ একাধিক বাংলা যতিচিহ্নের জনক। এরই সাহেবি সংস্করণ ‘crow’s feet’ আবার চোখের কোণে কুঞ্চিত চামড়ার দাগ বোঝাতে ব্যবহৃত। কোকিলের লেজ যেহেতু কাকের মতো তাই কোকিল হল ‘কাকপুচ্ছ’, আবার কাকের বাসায় বড় হয় বলে সে ‘কাকপুষ্ট’ও বটে। ‘কাকপেয়’ মানে কাক তীরে বসে যে নদীর জল পান করতে পারে আর ‘কাকভোর’ হল সাতসকাল। স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে বলে একপর্ভা নারী হলেন ‘কাকবন্ধ্যা’। কাকের সঙ্গে পেঁচার অহি-নকুল সম্পর্ক। সেজন্য পেঁচা যেমন ‘কাকারি’ (কাক+অরি) তেমনই সে ‘কাকভীরু’। শুভাশুভসূচক কাকরব ‘কাকরুত’ নামে খ্যাত আর কাক আনীত বীজ থেকে যে গাছের জন্ম তার নাম ‘কাকরুহা’। কাক অত্যন্ত অল্প জলে কোনওরকমে স্নান করে। ফলে অফিস-আদালতে যাওয়ার সময় আপনি যে স্নানপর্ব সমাধা করেন তা ‘কাকস্নান’। তবে ভুল করে ‘কাকোদর’ অর্থে কাকের পেট ভাববেন না যেন। ওর অর্থ কিন্তু কাক (বক্র) উদর যার অর্থাৎ কিনা সর্প !

    পরোক্ষভাবে একা কাকই যে বিপুল ও বৈচিত্র্যময় বাংলা শব্দ সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে তার তালিকাও নেহাত কম নয়। যেমন ধরা যাক — ‘কাকেক্ষু’ হল হেয় ইক্ষুবৎ তৃণ বা নলখাগড়া, ‘কাকছদ’ মানে খঞ্জন পাখি, ক্ষুদে জামের অন্য নাম ‘কাকজম্বু’, কার্যকারণ সম্বন্ধহীন দুই ঘটনার সমাপতন হল ‘কাকতালীয়’, গিলটি করা পেতল বোঝাতে ‘কাকতুণ্ডী’, সম্যক অবগত হয়েও বৃথা বিচার বা তর্ক এককথায় ‘কাকদন্ত’, ‘কাকধ্বজ’ অর্থে সমুদ্রমধ্যস্থ অগ্নি, নিমগাছ বা নিমফলের অপর নাম ‘কাকফল’, ‘কাকযব’ মানে শাঁসহীন শস্য কিংবা ‘কাকশীর্ষ’ হল বকফুলের গাছ। এতেই শেষ নয়, আছে ‘কাকতিন্দুক’ (গাবজাতীয় গাছ), ‘কাকনামা’ (লতা), ‘কাকলক’ (গলগন্ড) জাতীয় আরও অজস্র শব্দ।

    চলবে...
  • avi | 125.187.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২১:৪১700857
  • জিও। দারুণ।
  • সে | 198.155.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২১:৫২700866
  • খুব সুন্দর লেখাটা। বাকিটুকুর অপেক্ষায় রইলাম।
  • Debabrata Chakrabarty | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২১:৫৭700867
  • তাহলে এতদিনে এই লেখাটি দেবার সময় হল ? ফেসে গেলে গুরুতে ! এইবার রাত জাগো আর লেখ । খুব সুন্দর !
  • আত্মঘোষ | 149.72.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২২:১০700868
  • নামগুলো চমৎকার, আত্মঘোষ নামটাতো তুমুল।
  • dc | 132.164.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২২:১২700869
  • কাকের আরেক উপকারিতা হলো তার ছবি আঁকা যায়। কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন কিন্তু মা সারদার কৃপায় ইদানিং তাঁকে বেশী দেখা যাচ্ছে না, এটাও উল্লেখ করে দেবেন।
  • | 127.194.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২২:৩৬700870
  • স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে?
    কাকীদের সম্পর্কে শব্দতাত্ত্বিকরা এত কম জানতেন? বিশ্বাস হয় না।
    দেবোত্তম, ‘কাকদন্ত’ হচ্ছে না তো?
  • | 127.194.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৬ ২২:৩৮700871
  • কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন, আর তিনি শুভকাজ প্রসন্ন হয়েই কত্তেন।
    হুতোম কি কাক নিয়ে কিচ্ছু বলেন নি?
  • avi | 125.187.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০০:০৩700872
  • দেখুন, কাক নিয়ে লেখার আগে এই কথাগুলো না লিখলে হিসেব টেকে না। লিখুন, "ইয়াদি কির্দ অত্র কাকালতনামা লিখিতং শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে কার্যঞ্চাগে। ইমারৎ খেসারৎ দলিল দস্তাবেজ। তস্য ওয়ারিশাগণ মালিক দখলিকার সত্ত্বে অত্র নায়েব সেরেস্তায় দস্ত বদস্ত কায়েম মোকরবী পত্তনী পাট্টা অথবা কাওলা কবুলিয়ৎ। সত্যতায় কি বিনা সত্যতায় মুনসেফী আদালতে কিম্বা দায়রায় সোপর্দ আসামী ফরিয়াদী সাক্ষী সাবুদ গয়রহ মোকর্দমা দায়ের কিম্বা আপোস মকমল ডিক্রিজারি নিলাম ইস্তাহার ইত্যাদি সর্বপ্রকার কর্তব্য বিধায়ঃ"
    - ঠিক চৌকসমতো কাজ করতে হলে গোড়ায় এইসব বলে নিতে হয়। নইলে হাতে পেনসিলও থাকতে পারে, হ্যারিকেনও।
  • Tim | 140.126.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:০১700847
  • কাকদন্ত তো হীরভ, তৃপবুভূ এইসব টইতে হয়
  • sosen | 177.96.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৬700848
  • স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে?
  • Atoz | 161.14.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:২৪700849
  • কী সাংঘাতিক! স্ত্রী-কাক সারাজীবনে মাত্র একটা শাবক জন্ম দেয়? প্রতি বসন্তে বাসা বানিয়ে কর্তাগিন্নী এত খেটেখুটে খাবার এনে এনে খাইয়ে খাইয়ে তাইলে কি সব কোকিল ছা বড় করে????
  • dd | 116.5.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৮:১৬700850
  • কাক বিষয়ে আরো দুটি। এক তো কাকপদ এক রতিবন্ধেরও নাম। কালিদাস "রঘুবংশ" এ শয্যার অবস্থান দেখে এই আসনের ইংগিত করেছিলেন। ফেমিলি মেগেজিন তো, তাই বিশদে লিখলেম না।

    আর মহাভারতের কর্ণপর্বে আছে কাকের উড়িবার নানান পদ্ধতির লিস্টি।

    যথা উড্ডীন,অবডীন,প্রডীন,ডীন,নিডীন, সঙ্ডীন, তির্যগডীন, বিডীন, পরিডীন, পরাডীন, সুডীন ,অতিডীন,মহাডীন, নির্ডীন, ডীনডীন, সম্পাত, সমুর্দীর্ণ। এই তো গেলো পনেরো রকমের উড়ান। কিন্তূ টীকাকার বলেছেন "কেহ পঞ্চবিংশতি, কেহ ষড়বিংশতি, কেহ ষট্সপ্ততি, আবার কেহ কেহ শত প্রকার ভেদ প্রদর্শন করিয়া থাকেন"।
  • Tim | 108.228.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৮:৫০700851
  • হ্যাঁ অনেকরকম ডীন হয় তো। সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ, বিজনেস স্কুল, মেডিকেল স্কুল, পাবলিক পলিসি, হেলথ, পারফর্মিং আর্টস। সবই ওড়ার রকমফের।
  • b | 135.2.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৯:০২700852
  • "স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে?"

    এটা মিথ বোধ হয়।
  • meghnad | 47.49.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৯:২২700853
  • আপনাদের বোকা পেয়ে ঢপ দিল আর আপনারাও খেলেন। ছোঃ।

    স্ত্রী কাকের যদি একটাই বাচ্চা হয় তো পরের জেনারেশনে মোট কাকের সংখ্যা কমে যাবে (মোট স্ত্রী কাক - মোট পুরুষ কাক)। কয়েক জেনারেশন বাদে কাক বলে কিছু আর থাকবে না।
  • d | 144.159.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ১০:২৭700854
  • বাঃ লেখাটা বেশ। পরের পর্ব লিখুন তাড়াতাড়ি।

    কিন্তু কাক সারা জীবনে একটা নয় বেশ অনেকগুলো শাবক প্রসব করে, তাদের অনেকগুলো বেঁচেও থাকে। আমার ছোটবেলায় নারকেলগাছে ছিল মোটাকাক আর সরুকাক। এই সরুকাক বা কাকীর তিনটে আলাদা বছরের তিন সন্তান ধেঁয়োকাক, জোলোকাক আর বোতলকাক আমাদেরই অন্য নারকেলগাছ আর আমগাছে বাসা বাঁধত। তাদেরও সন্তান সন্ততিরা দিব্বি জন্মাত, কিছু মরত কিছু বেঁচেবর্তে থাকত।

    আর শুধু কাক নয় প্রায় সব পাখীই অল্পজলে চান করে। বেশীজল ম্যানেজ করতে পারে না বেচারীরা।

    অফ টপিকঃ দেবোত্তম আর দেবব্রত দুজনে আত্মীয় নাকি? নামের বেশ মিল আছে।( এর উত্তর না দিলেও চলবে।, এমনিই আজাইরা প্যাচাল। )
  • Abhyu | 85.137.***.*** | ০৯ মার্চ ২০১৬ ১০:৪২700855
  • হ্যাঁ বুনুও শুনেছি অল্পজলে চান করে
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ১৫ মার্চ ২০১৬ ২৩:২৪700860
  • নেটের গণ্ডগোল, সামান্য পেশাগত ব্যস্ততা এবং স্বভাব আলস্য – এই ত্রহস্পর্শে উত্তর দিতে এ -কটু দেরি হল। এর জন্য দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আন্তরিকভাবেই।

    জ কে অসংখ্য ধন্যবাদ ‘কাকবন্ধ্যা’ শব্দটি নিয়ে সবার আগে সংশয় প্রকাশ করার জন্য। না, শব্দতাত্ত্বিকরা ভুল কিছু বলেননি। প্রায় সমস্ত চলতি অভিধানেই ( চলন্তিকা,সংসদ কিংবা সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’) ‘কাকবন্ধ্যা’ অর্থে একগর্ভা নারীর কথা বলা হয়েছে । এমনকি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’(১ম খণ্ড) -এও দেখছি কাকের মতো এক প্রসবিনী নারীই ‘কাকবন্ধ্যা’: “ কাকীর যেমন একবার শাবক হয়, সেইরূপ যে স্ত্রীর একটি সন্তান হয় ”। তাই স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে – এটা তথ্যগত ভুল। ও হ্যাঁ, লেখাটা পড়তে পড়তে প্রচুর ‘কাকদন্ত’ করুন -এমনটাই চাই। sosen, Atoz এবং b আপনারা প্রত্যেকেই উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করি।

    “হুতোম কি কাক নিয়ে কিচ্ছু বলেন নি?” – সঠিক জানিনা, তবে ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ কাক-সম্পর্কীয় প্রবাদ-প্রবচনের সাহিত্যিক সুপ্রয়োগ রয়েছে যথেষ্ট।

    “কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন, আর তিনি শুভকাজ প্রসন্ন হয়েই কত্তেন” – আসবে , সবই আসবে। টাইপ করার সময়টা দিন অন্তত। এই প্রসঙ্গে dc কেও একই কথা। তবে এ লেখায় মা সারদা কিংবা বাবা রামকৃষ্ণ কেউই আসবেনা – গ্যারান্টি !

    avi কেও একই কথা। এট্টু সবুর করেন কত্তা ! আপাতত হাতে পেনসিলই থাকুক, পরে হ্যারিকেনের কথা ভাবব না হয়।

    dd ‘কাকপদ’ রতিবন্ধবিশেষ এটুকুই জানতাম। ‘রঘুবংশ’ এবং মহাভারতের কর্ণপর্ব – দুটোই দারুণ ইনফো। আগে কিচ্ছুটি শুনিনি। আরও শোনাবেন আশা রাখছি।

    d - “ দেবোত্তম আর দেবব্রত নামের বেশ মিল আছে ” – ‘ ভাবো, ভাবো। ভাবা প্র্যাকটিস কর ’ ! প্রসঙ্গত ,প্যাচাল তো জানি। ‘আজাইরা’ প্যাচালটা ঠিক কী ?
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ১৫ মার্চ ২০১৬ ২৩:২৪700859
  • নেটের গণ্ডগোল, সামান্য পেশাগত ব্যস্ততা এবং স্বভাব আলস্য – এই ত্রহস্পর্শে উত্তর দিতে এ -কটু দেরি হল। এর জন্য দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আন্তরিকভাবেই।

    জ কে অসংখ্য ধন্যবাদ ‘কাকবন্ধ্যা’ শব্দটি নিয়ে সবার আগে সংশয় প্রকাশ করার জন্য। না, শব্দতাত্ত্বিকরা ভুল কিছু বলেননি। প্রায় সমস্ত চলতি অভিধানেই ( চলন্তিকা,সংসদ কিংবা সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’) ‘কাকবন্ধ্যা’ অর্থে একগর্ভা নারীর কথা বলা হয়েছে । এমনকি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’(১ম খণ্ড) -এও দেখছি কাকের মতো এক প্রসবিনী নারীই ‘কাকবন্ধ্যা’: “ কাকীর যেমন একবার শাবক হয়, সেইরূপ যে স্ত্রীর একটি সন্তান হয় ”। তাই স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে – এটা তথ্যগত ভুল। ও হ্যাঁ, লেখাটা পড়তে পড়তে প্রচুর ‘কাকদন্ত’ করুন -এমনটাই চাই। sosen, Atoz এবং b আপনারা প্রত্যেকেই উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করি।

    “হুতোম কি কাক নিয়ে কিচ্ছু বলেন নি?” – সঠিক জানিনা, তবে ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ কাক-সম্পর্কীয় প্রবাদ-প্রবচনের সাহিত্যিক সুপ্রয়োগ রয়েছে যথেষ্ট।

    “কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন, আর তিনি শুভকাজ প্রসন্ন হয়েই কত্তেন” – আসবে , সবই আসবে। টাইপ করার সময়টা দিন অন্তত। এই প্রসঙ্গে dc কেও একই কথা। তবে এ লেখায় মা সারদা কিংবা বাবা রামকৃষ্ণ কেউই আসবেনা – গ্যারান্টি !

    avi কেও একই কথা। এট্টু সবুর করেন কত্তা ! আপাতত হাতে পেনসিলই থাকুক, পরে হ্যারিকেনের কথা ভাবব না হয়।

    dd ‘কাকপদ’ রতিবন্ধবিশেষ এটুকুই জানতাম। ‘রঘুবংশ’ এবং মহাভারতের কর্ণপর্ব – দুটোই দারুণ ইনফো। আগে কিচ্ছুটি শুনিনি। আরও শোনাবেন আশা রাখছি।

    d - “ দেবোত্তম আর দেবব্রত নামের বেশ মিল আছে ” – ‘ ভাবো, ভাবো। ভাবা প্র্যাকটিস কর ’ ! প্রসঙ্গত ,প্যাচাল তো জানি। ‘আজাইরা’ প্যাচালটা ঠিক কী ?
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ১৫ মার্চ ২০১৬ ২৩:২৪700858
  • নেটের গণ্ডগোল, সামান্য পেশাগত ব্যস্ততা এবং স্বভাব আলস্য – এই ত্রহস্পর্শে উত্তর দিতে এ -কটু দেরি হল। এর জন্য দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আন্তরিকভাবেই।

    জ কে অসংখ্য ধন্যবাদ ‘কাকবন্ধ্যা’ শব্দটি নিয়ে সবার আগে সংশয় প্রকাশ করার জন্য। না, শব্দতাত্ত্বিকরা ভুল কিছু বলেননি। প্রায় সমস্ত চলতি অভিধানেই ( চলন্তিকা,সংসদ কিংবা সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’) ‘কাকবন্ধ্যা’ অর্থে একগর্ভা নারীর কথা বলা হয়েছে । এমনকি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’(১ম খণ্ড) -এও দেখছি কাকের মতো এক প্রসবিনী নারীই ‘কাকবন্ধ্যা’: “ কাকীর যেমন একবার শাবক হয়, সেইরূপ যে স্ত্রীর একটি সন্তান হয় ”। তাই স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে – এটা তথ্যগত ভুল। ও হ্যাঁ, লেখাটা পড়তে পড়তে প্রচুর ‘কাকদন্ত’ করুন -এমনটাই চাই। sosen, Atoz এবং b আপনারা প্রত্যেকেই উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করি।

    “হুতোম কি কাক নিয়ে কিচ্ছু বলেন নি?” – সঠিক জানিনা, তবে ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ কাক-সম্পর্কীয় প্রবাদ-প্রবচনের সাহিত্যিক সুপ্রয়োগ রয়েছে যথেষ্ট।

    “কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন, আর তিনি শুভকাজ প্রসন্ন হয়েই কত্তেন” – আসবে , সবই আসবে। টাইপ করার সময়টা দিন অন্তত। এই প্রসঙ্গে dc কেও একই কথা। তবে এ লেখায় মা সারদা কিংবা বাবা রামকৃষ্ণ কেউই আসবেনা – গ্যারান্টি !

    avi কেও একই কথা। এট্টু সবুর করেন কত্তা ! আপাতত হাতে পেনসিলই থাকুক, পরে হ্যারিকেনের কথা ভাবব না হয়।

    dd ‘কাকপদ’ রতিবন্ধবিশেষ এটুকুই জানতাম। ‘রঘুবংশ’ এবং মহাভারতের কর্ণপর্ব – দুটোই দারুণ ইনফো। আগে কিচ্ছুটি শুনিনি। আরও শোনাবেন আশা রাখছি।

    d - “ দেবোত্তম আর দেবব্রত নামের বেশ মিল আছে ” – ‘ ভাবো, ভাবো। ভাবা প্র্যাকটিস কর ’ ! প্রসঙ্গত ,প্যাচাল তো জানি। ‘আজাইরা’ প্যাচালটা ঠিক কী ?
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ১৫ মার্চ ২০১৬ ২৩:২৪700856
  • নেটের গণ্ডগোল, সামান্য পেশাগত ব্যস্ততা এবং স্বভাব আলস্য – এই ত্রহস্পর্শে উত্তর দিতে এ -কটু দেরি হল। এর জন্য দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আন্তরিকভাবেই।

    জ কে অসংখ্য ধন্যবাদ ‘কাকবন্ধ্যা’ শব্দটি নিয়ে সবার আগে সংশয় প্রকাশ করার জন্য। না, শব্দতাত্ত্বিকরা ভুল কিছু বলেননি। প্রায় সমস্ত চলতি অভিধানেই ( চলন্তিকা,সংসদ কিংবা সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’) ‘কাকবন্ধ্যা’ অর্থে একগর্ভা নারীর কথা বলা হয়েছে । এমনকি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’(১ম খণ্ড) -এও দেখছি কাকের মতো এক প্রসবিনী নারীই ‘কাকবন্ধ্যা’: “ কাকীর যেমন একবার শাবক হয়, সেইরূপ যে স্ত্রীর একটি সন্তান হয় ”। তাই স্ত্রী কাক সারা জীবনে একটি মাত্র শাবক প্রসব করে – এটা তথ্যগত ভুল। ও হ্যাঁ, লেখাটা পড়তে পড়তে প্রচুর ‘কাকদন্ত’ করুন -এমনটাই চাই। sosen, Atoz এবং b আপনারা প্রত্যেকেই উত্তর পেয়ে গেছেন আশা করি।

    “হুতোম কি কাক নিয়ে কিচ্ছু বলেন নি?” – সঠিক জানিনা, তবে ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ কাক-সম্পর্কীয় প্রবাদ-প্রবচনের সাহিত্যিক সুপ্রয়োগ রয়েছে যথেষ্ট।

    “কাক এঁকে একজন অনেক নাম করেছিলেন, আর তিনি শুভকাজ প্রসন্ন হয়েই কত্তেন” – আসবে , সবই আসবে। টাইপ করার সময়টা দিন অন্তত। এই প্রসঙ্গে dc কেও একই কথা। তবে এ লেখায় মা সারদা কিংবা বাবা রামকৃষ্ণ কেউই আসবেনা – গ্যারান্টি !

    avi কেও একই কথা। এট্টু সবুর করেন কত্তা ! আপাতত হাতে পেনসিলই থাকুক, পরে হ্যারিকেনের কথা ভাবব না হয়।

    dd ‘কাকপদ’ রতিবন্ধবিশেষ এটুকুই জানতাম। ‘রঘুবংশ’ এবং মহাভারতের কর্ণপর্ব – দুটোই দারুণ ইনফো। আগে কিচ্ছুটি শুনিনি। আরও শোনাবেন আশা রাখছি।

    d - “ দেবোত্তম আর দেবব্রত নামের বেশ মিল আছে ” – ‘ ভাবো, ভাবো। ভাবা প্র্যাকটিস কর ’ ! প্রসঙ্গত ,প্যাচাল তো জানি। ‘আজাইরা’ প্যাচালটা ঠিক কী ?
  • Debabrata Chakrabarty | ১৫ মার্চ ২০১৬ ২৩:৪৬700861
  • নেটের বেশ গণ্ডগোল বুঝলাম -একই পোস্ট তিনবার পোস্ট হয়ে যাচ্ছে !
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ১৭ মার্চ ২০১৬ ১৮:২২700862
  • শব্দের পাশাপাশি শব্দগুচ্ছের বিশিষ্টার্থে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও অন্য সব পাখিকে টেক্কা দিয়েছে কাক। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় — দুই বস্তুর মধ্যে ভেদজ্ঞান বোঝাতে ‘কাক কাঁকুড় জ্ঞান’; গোপনীয়তা রক্ষা করা অর্থে ‘কাকপক্ষীতে টের না পাওয়া’; ভালোমন্দের প্রভেদ ব্যাখ্যা করতে ‘কাক কোকিলের একদর’; কুৎসিত হস্তাক্ষরের তুলনা ‘কাকের ছা বকের ছা’; শান্ত প্রকৃতির লোকের বিপর্যস্ত অবস্থার জুতসই বিবরণ ‘ঝড়ো কাক’ অথবা পরানুগ্রহপ্রত্যাশী লোভী ব্যক্তি সম্বন্ধে ‘তীর্থের কাক’ হল যথাযথ বিশেষণ। কাকের এক শত্রু পেঁচা হলে অন্য শত্রু হল ফিঙে। কাক দেখলেই ফিঙে তার পিছু লেগে উত্যক্ত করে ছাড়ে। তাই কাউকে ক্রমাগত বিরক্ত করা হল ‘কাকের পিছে ফিঙে লাগা’। এলোমেলো, অবিন্যস্ত কেশরাজি বোঝাতে ‘কাকের বাসা’ কিংবা অগোছালোভাবে খাবলে খাওয়াকে ‘কাগা-বগা করে খাওয়া’ তো আমরা হামেশাই বলি। কাক কোনও খাবার নিয়ে এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখে যে একটু পরে সে নিজেই তা আর খুঁজে পায় না। কাকের এই স্বভাবই স্থান পেয়েছে ‘কাকের লুকানো’-য়। আর সম্মানজনক পদে অযোগ্য ব্যক্তির মনোনয়ন কিংবা নির্বাচন সুন্দর (বি) শ্লেষিত হয়েছে ‘সোনার দাঁড়ে কাক বসানো’ বাগ্‌ধারাটিতে।

    তবে শব্দ বা শব্দবন্ধকে ছাপিয়ে কাকের প্রবল দাপট লক্ষ্য করা যায় বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে। সুশীলকুমার দে’র ‘বাংলা প্রবাদ’-এর পাতায় পাতায় ডানা ঝাপটাচ্ছে এরকমই অন্তত সত্তরটি কাক সম্বন্ধীয় প্রবাদ। লৌকিক জনজীবন থেকে সৃষ্ট এই প্রবাদগুলিতে কাক স্বাভাবিকভাবেই বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য এবং শ্লেষের শিকার। আমরা কাককে যেরকম তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞান করি, প্রবাদগুলিতেও তার স্বতঃস্ফুর্ত বহিঃপ্রকাশ। একঘেয়ে লাগতে পারে ভেবে সমস্ত প্রবাদের উল্লেখ এখানে করা সম্ভব নয়, তবে বাছাই করা কয়েকটা প্রবাদের মধ্যে অবশ্যই স্থান পাবে — অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে কাজ করলে আমরা বলব ‘কাকে নিয়ে গেল কান, কাকের পিছে ধাবমান’। যা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব তা প্রকৃতপক্ষে সম্ভব হতেই পারে এমন বোঝাতে ‘কাকেরও ডিম সাদা হয়, বিদ্বানেরও ছেলে গাধা হয়’। ভণ্ড তপস্বী তো আমাদের চারপাশেই। তাদের উদ্দেশে বলাই যায় ‘এ কি বিধির লীলাখেলা, কাকের গলায় তুলসিমালা’। অধ্ম ব্যক্তির সংস্পর্শে উত্তম ব্যক্তির অধঃপতনের চমৎকার উদাহরণ ‘কাকের সঙ্গে গিয়ে হাতিও পাঁকে পড়ে’। যোগ্য ব্যক্তিকে সরিয়ে অযোগ্য ব্যক্তির পদদখলকে আমরা ব্যঙ্গের সুরে বলব ‘ময়না টিয়ে উড়িয়ে দিয়ে, খাঁচায় পোষে কাক’। অমিতব্যয়িতার উদাহরণ হিসাবেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে। আর মশা মারতে কামান দাগার মতই ‘কাকের ওপর কামানের চোট’ বা ‘কাক মারতে কামান পাতা’। তাছাড়া ‘বেল পাকলে কাকের কী’ অথবা ‘ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না’ জাতীয় প্রবাদ তো আমাদের সকলের জানা। সমধর্মীর অনিষ্ট কেউ করে না বোঝাতে ‘কাকের মাংস কাকে খায় না’। অবশ্য ‘কায়েতের মড়া কাকেও ঠোকরায় না’ কেননা প্রবাদে পাচ্ছি ‘কাক ধূর্ত আর কায়েত ধূর্ত’ অর্থাৎ সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি ! অকারণ আদিখ্যেতার উদাহরণ হিসাবে ‘কামরূপেতে কাক মরেছে, কাশীধামে হাহাকার’ প্রবাদটিও চমৎকার। কাক থাকলেই বক থাকবে, তাই প্রবাদে একের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো বোঝাতে দেখছি ‘কাকে খায় কাঁঠাল, বকের মুখে আঠা’। মন্দ স্বভাবের লোক শতচেষ্টায় ভালো হতে পারেনা তাই ‘সাত বার করে সিনান, কাক নয় বকের সমান’। কাক-পেঁচার বৈরিতার সূত্রে পেয়ে যাই ‘চুলের শত্রু টাক, পেঁচার শত্রু কাক’ বা ‘কাক মরল ঝড়ে, / পেঁচা বলে – আমার শাপ লাগল হাড়ে-হাড়ে’। তবে বাংলা প্রবাদ সোনা ফলিয়েছে কাক-কোকিল সম্পর্কিত প্রবাদমালায়। দুই পাখিরই গায়ের রং কালো অথচ কণ্ঠস্বর আলাদা, সুতরাং বৈপরীত্য বোঝাতে এদের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া বাংলা প্রবাদ তার কাঙ্ক্ষিত অনুপ্রাসও পেয়ে যায় এই দুটি পাখিতে। তার প্রতিফলন ‘কাক কোকিল একই বর্ণ, কিন্তু স্বরে ভিন্ন ভিন্ন’ বা ‘কাক হয়ে কোকিলের মত ডাকতে করে আশা / বামন হয়ে চাঁদে হাত, ছার কপালের দশা’। কাকের বাসায় কোকিলের জন্ম এবং বড় হয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে ‘কাকের বাসায় কোকিল হল, দিন পেয়ে সে উড়ে গেল’ ইত্যাদি প্রবচনে।

    শব্দ, বাগ্‌ধারা বা প্রবাদের আঙিনায় যথেষ্ট কেরামতি দেখালেও ছেলেভোলানো ছড়ায় কাক কিন্তু সত্যিই কাত হয়েছে। হয়তো কাকের কুচকুচে কালো রং কিংবা কর্কশ কণ্ঠস্বর শিশুর নিজস্ব জগৎ থেকে কাককে দূরে ঠেলে দিয়েছে, হয়তো ছোঁ মেরে খাবার কেড়ে নেওয়ার ভীতিপ্রদ অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য শিশুর কাছে কাক যথেষ্ট কাছের পাখি হয়ে উঠতে পারেনি। খোকনকে সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়িয়ে দিতেই মা ডেকে ওঠেন “ খোকন খোকন ডাক পাড়ি / খোকন মোদের কার বাড়ি ? / আয়রে খোকন ঘরে আয়, / দুধ মাখা ভাত কাকে খায় ”। শিশুকে ঘরে ফিরে আসার আকুল অনুরোধের সময়ও ফিরে আসে কাক-প্রসঙ্গ “ খোকন খোকন করে মায় / খোকন গেল কাদের নায় ? / সাতটা কাকে দাঁড় বায়, / খোকন রে তুই ঘরে আয় ”। শুধু সামান্য স্বস্তি এই যে যোগীন্দ্রনাথ সরকার তাঁর ‘হাসিখুসি’র প্রথম ভাগে যে ছড়াটির মাধ্যমে শিশুদের বর্ণের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটিয়ে দেন সেখানে স্থান দেন কাককে “ কাক ডাকে কা কা, / আগে অ পরে আ ”।

    তবে ছেলেভোলানো ছড়ায় সামান্য ছেতরে পড়ে ঈশপের গল্পে আবার বীরদর্পে উঠে দাঁড়ায় কাকবাবাজি ! নীতিকথামুলক এই গল্পগুলিতে কখনও সে ধীমান ও ধৈর্যশীল, কখনও সে অন্যের প্রশংসায় ভুলে নিজের বিপদ ডেকে আনে। নুড়ি ফেলে কলসি থেকে জলপান, ময়ূরপুচ্ছধারী দাঁড়কাক কিংবা মুখে মাংসের টুকরো নিয়ে শিয়ালের ছদ্ম প্রশংসায় বিগলিত কাকের গল্প এতই জনপ্রিয় যে বিদ্যাসাগর মহাশয় যে অল্প কয়েকটি গল্প অনুবাদ করে ‘কথামালা’ প্রকাশ করেছিলেন তাতে এই তিনটি কাককাহিনিই ছিল। ঈশপের গল্পের মতো পঞ্চতন্ত্রের গল্পেও কাকের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। ‘মিত্রপ্রাপ্তি’ নামক দ্বিতীয় তন্ত্রে যে চার বন্ধুর মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের সূত্রে গল্প এগিয়ে চলে তারা হল লঘুপতনক নামে এক বিজ্ঞ কাক, হিরণ্যক ইঁদুর, মন্থরক কচ্ছপ আর চিত্রাঙ্গ হরিণ। আর তৃতীয় তন্ত্র ‘কাকোলূকীয়’-তে যথেষ্ট বিবেচক এবং বুদ্ধিমান কাক হিসাবে চিত্রিত কাকরাজ মেঘবর্ণর সঙ্গে পেচকরাজ অরিমর্দনের লড়াইকে কেন্দ্র করে গল্পগুলি আবর্তিত হতে থাকে।

    কাক আছে জাতকের গল্পেও। ‘বাবেরু জাতক’-এ পাচ্ছি যে বাবেরু রাজ্যে পাখি নেই। তাই বণিকরা যখন কাক নিয়ে প্রথমবার বাবেরু রাজ্যে উপস্থিত হন তখন সেখনকার অধিবাসীরা একশো মুদ্রার বিনিময়ে কাকটিকে কিনে নেন। খাঁচায় পোষেন, যত্নআত্তি করেন। পরবর্তী সময়ে বণিকরা ময়ূর নিয়ে গেলে বাবেরু-বাসিন্দারা এক হাজার মুদ্রা দিয়ে ময়ূরটি কেনেন এবং আগের কেনা কাক অযত্নে, অবহেলায় একসময় মারা যায়। গল্পটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝতে বুঝতে আমরা যে নতুন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হই তা হল ‘দিশাকাক’। জানতে পারি সমুদ্রে নাবিকরা দিক হারিয়ে ফেললে সঙ্গে রাখা কাকটিকে উড়িয়ে দিত আর সেই কাক তার সহজাত ক্ষমতা অনুসারে ডাঙার দিকে উড়ে গিয়ে নাবিকদের সাহায্য করত। বাইবেলেও দেখি মহাপ্লাবনের চল্লিশ দিন পর সম্ভবত দিশা ঠিক করতেই নোয়া তাঁর তৈরি জাহাজের জানলা দিয়ে একটা দাঁড়কাক ছেড়ে দেন। ইংরেজিতে কাকের এই বৈশিষ্টের কথাই ব্যক্ত হয়েছে ‘as the crow flies’ বাগ্‌ধারাটিতে। এ কথা বলা হয়ত অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে ‘crow’s nest’ শব্দবন্ধের অর্থ হল জাহাজের মাস্তুলের উপরিস্থিত পাটাতন যেখান থেকে নাবিকরা স্থলভাগের দিকে লক্ষ্য রাখেন।

    চলবে...
  • ranjan roy | 229.64.***.*** | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:৪৪700864
  • দেবোত্তম,
    আজাইরা= ফালতু, খামোখা, মাগনা ইত্যাদি। ময়মনসিংহ বা ঢাকার উপভাষায় ব্যবহৃত।
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১৬ ২২:০৪700865
  • ধন্যবাদ রঞ্জন। বাংলা ভাষাটা সত্যিই কত কম জানি আজও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন