এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পার্থপ্রতিম ভৌমিক | 160.107.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৮692016
  • ব্যানার্জি দাকে লোকে আড়ালে কানা বাঁড়ুজ্জে বলে ডাকত। কারণ ওঁর বাঁ চোখটা ছেলেবেলায় কোন দুর্ঘটনায় বা চিকিৎসা বিভ্রাটে কুঁচকে ছোট হয়ে গিয়েছিল। তবে অধিকাংশ সময় সম্বোধনে বাঁড়ুজ্জের উজ্জেটা উহ্য থেকে যেত এবং নামটা অন্য আ কার নিত। সেটা মূলত ওঁর স্বভাবের জন্য।খুব খিট খিটে ছিলেন আর ছিলেন রাম কিপ্টে। দাদা বললেও প্রায় বাপের বয়েসি ছিলেন আমাদের। পয়সা কড়ি কম জমাননি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করে। কিন্তু খরচার ব্যাপারে ওয়ান পাইস ফাদার মাদার।

    বাজার যেতেন বেলা করে।কারণ তখন দোকানিরা ঝরতিপড়তি মাল সস্তায় ঝেড়ে দিয়ে বাড়ি যাবার তাড়ায় থাকে। দীর্ঘ দেহি ব্যানার্জিদা হাঁটু মুড়ে উইকেট কিপিং এর ভঙ্গীতে বসে খারাপের মধ্যে ভাল বাছার অমেয় ক্লেশ সইতে সইতে সারতেন তাঁর বিলম্বিত বাজার পর্ব।
    বাড়িতে সকালে চাএর সাথে রুটি দিয়ে সারা হত জলখাবার পর্ব। সেই চা ছাঁকা হত ন্যাকড়ায় করে আর ছাঁকা হয়ে গেলে সেই ন্যাকড়ার মধ্যেই থেকে যেত ব্যবহৃত চাপাতা। পরের বার ঐ একই চাপাতায় চা হত। একবার তৃতীয় পর্বের চা খাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সৌভাগ্যই বটে। অমন বস্তু আর কোনদিন কোনখানে খাইনি।
    বিজয়াদশমীর পর ওঁকে পেন্নাম করা মুশকিল ছিল। বিপদের গন্ধ পেলে মানে অযাচিত শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সম্ভাবনা দেখলেই পালাবার চেষ্টা করতেন পাছে মিস্টি খাওয়াতে হয়। একদিন নাছোরবান্দা মন্টু প্রণাম করবেই আর উনিও এড়াবেন। এই লুকোচুরি বেশ খানিক্ষণ চলার পর একেবারে মুখোমুখি দুজন। ব্যাস দৌড়োতে শুরু করল লুঙ্গি পরা লম্বু আর পেছন পেছন মন্টু। সে এক দৃশ্য। শেষ অবধি পয়সা বেঁচেছিল কিনা তা আজ আর মনে নেই।

    ব্যানাজ্জি দার বাড়ির লাগোয়া একচিলতে ফাঁকা জমি ছিল। সেখানে গ্যারেজ জাতিয় কিছু একটা করার জন্য কেউ একটা চালা মত করেছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। ফাঁকাই পড়েছিল।একদিন হঠাৎ সেখানে এক বৃদ্ধার আবির্ভাব হল। আসলে ভিখারিনী। পায়ে কোন চোট থেকে ঘা হয়ে আর হাঁটতে পারছেনা তাই চালার নীচে আশ্রয় নিয়েছে।পায়ে গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যান্ডেজের মত কিছু জড়ানো - অতীব নোঙরা মাছি ভন ভন - দুর্গন্ধ।কেউ কিছু দিলে খাবার চেষ্টা করে।আর শুয়ে শুয়ে কোঁকায়।ব্যানার্জিদা প্রথমে বকে ঝকে তুলে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু বুড়ি তো নড়তেই পারেনা। একদিন দেখি খুব বকা ঝকা চলছে। আমাকে দেখেই বললেন, 'দ্যাখোনা আমাকে আবার খোকা বলচে।বলচে খোকারে পাডা ভাল হলিই চলি যাব। আরে খোকা তো বলত আমার মা। কবে মরে গ্যাচে। এখন ইনি এয়েচেন আমার মা। যত্তসব! কাল থেকে যেন আর না দেখি ত্রিসীমানায়।' বুড়ি শুধু মাছি তাড়ায় আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট দুটো ঈষৎ কাঁপে কোন নিরুচ্চারিত কথার আবেগে।

    এভাবেই চলছিল। একদিন ঝড়ের পর অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছে। বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দিয়ে ফিরছি বৃষ্টি মাথায় করেই। ব্যানাজ্জিদার বাড়ির কাছে এসে বৃষ্টিটা যেন বেড়ে গেল হঠাৎ। ভাবলাম চালাটার নীচে দাঁড়াই। এগোতেই দেখি সেখানে ঐ বুড়ি কাত হয়ে আঃউঃ করছে আর ঢ্যাঙ্গা কানা বাঁড়ুজ্জে উবু হয়ে বসে পরম মমতায় বুড়ির পায়ের ব্যান্ডেজ বদলে দিচ্ছেন। পাশে ব্যান্ডেজের গজকাপড়,তুলো, মলমের টিউব, আরো কত সামগ্রী। বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে চরাচর, ভেসে যাচ্ছে লালিত ধারণা।

    ***** ****** পার্থ প্রতিম ভৌমিক।
  • সে | 204.23.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:১৮692017
  • সুন্দর গল্প। মন ভাল করে দেয়।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৬:০১692018
  • বেশ। আরো হোক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন