এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মনোজ ভট্টাচার্য | 229.64.***.*** | ১৯ মে ২০১৫ ১৬:৫০676002
  • রাজরাপ্পার ছিন্নমস্তায় !

    রাঁচি থেকে যে কি করে রাজরাপ্পা এসে পড়লাম তা আজ আর মনে পড়ছে না । কিন্তু চ্ছিন্নমস্তা মন্দিরে গিয়ে পড়েছিলাম এই রকমই ঘুরতে ঘুরতে ! আগে জানতামই না - এখানে দুটো নদ নদীর সঙ্গমস্থল আছে ! - সকালে একটা বাস আসে আর বিকেলে ফিরে যায় - এখন ঠিক মনে করতে পারছি না কোত্থেকে !

    অধুনা ঝারখন্ড এর রামগড় জেলায় রাজরাপ্পা বলে একটা সুন্দর জায়গা আছে - সেখানে ভৈরবী ( ভেরা ) নদী এসে দামোদর নদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে - প্রচন্ড গর্জন করে ! এখানেই মনে পরিয়ে দেয় – ‘ভয়ংকর সুন্দর’ কথাটা ! নদী হেটে পার হওয়া যায় পাথরের ওপর দিয়ে । ওপারে সুন্দর জঙ্গলে ঘেরা দুটো মন্দির আছে । একটা হলো ছিন্নমস্তা , আরেকটা কালী মন্দির । নদী পেরোলেই কতগুলো ছোটো ছোটো ঝুপড়ি গোছের চা-তেলেভাজার দোকান !

    পিতা দক্ষ রাজার শিব-হীন-যজ্ঞে যাবার জন্যে সতী শিবকে দশ মহাবিদ্যার রূপ দেখিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল ! তার মধ্যে ষষ্ঠজন হলেন ছিন্নমস্তা ! রতি-ক্রীড়ারত শিব-সতীর সৃষ্ঠি স্তব্ধ করার জন্যে কালী নিজের মুন্ড কেটে নিজেরই রক্ত পান করছে তাদেরই ওপর দন্ডায়মান হয়ে ! যারা এই মূর্তি দেখেছে - তারাই জানে - একটু ভয়াল ধরনের রূপ এই ছিন্নমস্তার ! আর যেহেতু নদ-নদীর সংগম স্থলে এই মন্দির - তাই রাজরাপ্পা খুবই প্রসিদ্ধ ও তাৎপর্যপূর্ণ ! মন্দিরের মধ্যে যে মূর্তি আছে - তা দেখে কিছুই বোঝা যায় না !

    একটা দোকানে বসে আলাপ করে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম - ওপরে কোনো থাকবার জায়গা পাওয়া যাবে কিনা ! বলল - এখানে রাতে কেউ থাকে না - দিনে দিনে পুজো দিয়ে সবাই ওপারে চলে যায়। - কেন ? - না বাঘ আসে মন্দিরে ! - পুজো করতে ? - না - রক্ত খেতে। মন্দিরে সকালে পশু বলি হয় - তার রক্ত নালী দিয়ে নদীতে পড়ে- সেই রক্তের লোভে নাকি বাঘ আসে ! তবে মানুষ মারে না !

    তাহলে দোকানের লোকেরা কোথায় থাকে ! তারা সব নদী পেরিয়ে ওপারে চলে যায় - ওপারে ওদের বাড়ি ঘর।

    আমার কিরকম জেদ চেপে গেল ! দেখি না কি হয় ! মুফতে যদি বাঘ দেখতেই পাওয়া যায় ! - দোকানদারের সঙ্গে বলে কয়ে রাতে এই খোলা ঝুপরিতেই থাকব ঠিক করলাম । ওখানেই চারপাশটা ঘোরাঘুরি করে - যা পাওয়া যায় তাই খেয়েই দিনটা কেটে গেল । দিন থাকতে থাকতে সব পুন্যার্থীরা ফিরে গেল । তারপর একে একে দোকানদাররাও সব ঝুপড়ির ঝাঁপ নামিয়ে আলো নিয়ে ওপারে চলে গেল । আমাকে অবশ্য ওপারে চলে যাবার সৎ পরামর্শ দিয়ে গেল ।

    আমি জেদ করে একা বসে রইলাম ওই ঝুপড়ি দোকানে । - দেখি - সত্যি বাঘ আসে কিনা ! এপাড়ে ক্রমশ অন্ধকার হামাগুড়ি দিয়ে আসছে ! - কিন্তু তবু গাছপালা - মানুষ দেখা যায় । ওপারের দোকানগুলোয় তখনো আলোর রেশ দেখা যাচ্ছে । একেবারে যে ভয় পাই নি - তা অস্বীকার করি কিকরে !

    প্রায় আধঘন্টা কেটে গেছে - হঠাত দেখি একটা টর্চের আলো এগিয়ে আসছে - আমার দিকেই । তখনই আমার গা টা ছম ছম করে উঠলো – এই রে ! বাঘের কথাই ভেবেছি - কিন্তু মানুষের কথা তো চিন্তা করি নি ! - এ আবার কে রে !

    '- বাবুজি, আপনি এখনো বসে আছেন এখানে ? ওপাড়ে বাস তো ছেড়ে গেছে !' - মিশ্রিত ভাষাতে একজন কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ।

    '- আমি তো আজ এখানে থাকবো ! রাত্তিরেও এখানেই থাকবো !' - সকাল থেকে ঘোরাঘুরির ফলে এখানকার লোকগুলোর সঙ্গে একটু-আধটু আলাপ মুখ-চেনা হয়ে গেছে । আর সবাই জেনে গেছে যে আমি কলকাতা থেকে এসেছি !

    ' - আপনাকে বাবু ডাকতেছেন ! '

    ' - কোন বাবু ?' আমি বেশ অবাক - এখানে আবার কোন বাবু আমায় ডাকবে !

    ' - ওই মন্দিরে আছেন । আসেন আমার সঙ্গে - বাবু কথা বলবেন ।' - বলে পেছন ফিরে এগুতে লাগলো !

    অগত্যা আমি আর কি করি - ওরই পিছু পিছু যেতে লাগলাম - রাজি না হলে যদি কিছু করে বসে ! জায়গাটা তো ওদেরই !

    '- এই, নদীর ধারে বসে কি করছিলি ? নাম কি তোর্ ? কোত্থেকে এসেছিস ?'

    পরিস্কার বাংলায় প্রশ্ন শুনে চমকে উঠেছি - আবার তুই-তোকারি করছে ! দেখি ধুতি-পাঞ্জাবি গায়ে এক বয়স্ক ভদ্রলোক একটা চৌকিতে বসে - আরেক জন লোক তার পা টিপে দিচ্ছে। আমি নাম - ঠিকানা বলে জানালাম কেন দোকানে বসে আছি ।

    ওনার নাম - সুকুমার বোস - উনি নাকি এই কালী মন্দির করিয়েছেন । কলকাতায় আমাদের পাড়ার কাছেই নিকাসী পাড়ায় থাকেন । আমার চিকিৎসক পিতামহর রুগী - এদের বাড়ির সবাই । আমাদের সবার কুশল জানতে চাইলেন ! মজার খবর হলো - 'ছিন্নমস্তা' বলে একটা সিনেমা হয়েছিল - উনিই নাকি প্রযোজক ! যাইহোক, এই পরিচিতির ফলে - আমার আর বাইরে থাকা হলো না – আর এখানে ভোগ হওয়ার দরুন এক গোবিন্দভোগ চালের ঘী সহযোগে সদ্ব্যবহার আমাকে করতে হলো - ভট্টাচার্য নামের খাতিরে !

    আর আমার আধ্যাত্মিক চেতনা জাগরণের জন্যে মন্দিরে গিয়ে একাকী ধ্যান করতে হলো - যদি কোনো উপলব্ধি হয় ! ওনার হয়ত আমাকে ভবিষ্যতের স্বামী মনোজানন্দ বলে ধারনা হয়েছিল ! - তা হিরণ্যকশিপুর ভাগ্যে আর দিব্য লাভ হলো না ! কিন্তু রাত্রিবাস হলো মন্দিরের ভেতর স্টোর রুমে দস্তুর মতন লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে !

    পরের দিন সকালে ফিরছি যখন - তখন রামানুজ নামে ওই মন্দিরেরই একজন পুজারী কথায় কথায় জানালো - ওরা আমাকে নকশাল ভেবেছিল - তাই সুকুমার বাবু আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল ! দরকার পরলে পুলিশে দিতে হত !

    সে যাত্রা খুব বেঁচেছি ! বাঘ অথবা পুলিশের থাবা থেকে !
  • সে | ১৯ মে ২০১৫ ১৭:১৬676003
  • বাহ!
  • | 213.132.***.*** | ১৯ মে ২০১৫ ১৭:৩৪676004
  • ২০১৪ র এপ্রিলে রাজরাপ্পা গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর জায়গা।

    মনোজ বাবু র লেখা ভালো লাগলো।
  • ranjan roy | 132.176.***.*** | ২০ মে ২০১৫ ০০:২০676005
  • বেশ লেগেছে। আরো হোক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন