এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাহুল দেব চক্রবর্তী | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:১৮657006
  • শুনিয়াছি ভূমিষ্ঠ হইবার পরমুহুর্তে আমার নাম ঠিক হইবারও পূর্বে মা ষষ্ঠীর পূজা ইত্যাদি হইয়াছিল।অতএব পিতা মাতা হিন্দু বলিয়া সমাজ আমাকে হিন্দু বলিয়া গণ্য করিল। ইহাতে আমার মতামতের প্রয়োজন আছে বলিয়া আমার পিতা মাতা ভাবেন নাই। নিজ পিতামাতার হইতে এইরূপ অগণতান্ত্রিক আচরণ আশা করি নাই। এখন প্রশ্ন হইলো যদি পিতৃপুরুষ হিন্দু হইলে এমনি এমনি কিছু না করিয়া হিন্দু হওয়া যায়, তবে আমার পিতা সেনাবাহিনীতে দীর্ঘকাল চাকুরী করা সত্তেও কেন আমি ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাং তুলিয়া সেনাবাহিনীতে Lieutenant হইলাম না?
    যাহা হউক...ইদানিংকালে দেখিতেছি আপনি অটোচালক হইলে যাত্রীকে আঘাত করিয়া পার পাইয়া যাইবেন; তৃনমূল ছাত্র পরিষদ (যাহার গুন্ডারা পরিবর্তনের পূর্বে Das Capital মাথার নিচে রাখিয়া ঘুমাইত) করিলে অধ্যাপককে চ্যাংদোলা করিয়া ফেলিয়া পার পাইয়া যাইবেন; কিন্তু কাহারো ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া চলিবে না। বোধ হইতেছে ধর্মীয় ভাবাবেগ বস্তুটি ইশান্ত শর্মার calf muscle এর ন্যায়; দুইদিন বাদে বাদেই চোট পাইয়া থাকে। PK, 'ওয়াটার' এইসকল চলচিত্র কিভাবে হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত দিয়াছে তাহা আমরা দেখিয়াছি। জনৈক সনাল এদামারকু মুম্বাইয়ে এক ক্রন্দনরত যিশু মূর্তি যে আসলে উক্ত মূর্তির নিচের এক পুরানো জল বাহির হইবার নালীর কৈশিক ক্রিয়া, সে রহস্য ফাঁস করিতেই চার্চ এক্কেরে রেরে করিয়া উঠিয়াছিল; উহাতে নাকি তাহাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগিয়াছে। আসলে আরশোলার নিকট baygon spray যেইরূপ,ধর্মের নিকট ব্যাঙ্গচিত্র, চলচিত্র, সাহিত্যও সেইরূপ। এইসকল ব্যবহার করিয়া কেহ ধর্ম লইয়া প্রশ্ন তুলিলে ধর্মের ক্ষয়কাশি শুরু হইয়া যায়, উচ্চ রক্তচাপ আর নিম্নগামী হইবার উপায় থাকে নাই (আসলে বয়স তো কম হইলো না!)। তবে উপায় ? উপায় একটিই...রাতে মশক আসিবার পূর্বেই সন্ধ্যায় all out জ্বালাইয়া দাও। সমালোচনা প্রকাশ্যে আসিবার পূর্বেই মুখ বন্ধ করিয়া দাও। অতএব আরএসএস, জামাত, খোমেইনি, ভ্যাটিকান দেশ ও দশ রক্ষার্থে পথে নামিল। নামিয়া কি করিল? তসলিমা নাসরিনকে দেশ থেকে দূর করিল,মকবুল ফিদা হুসেনকে ভিনদেশী করিল,Da Vinci Code এর বিরুদ্ধে মামলা হইলো, সালমান রুশদির জয়পুরে সাহিত্য সম্মেলনে আসা আটকাইলো, পেরুমাল মুরুগানের সাহিত্যকর্মের অপমৃত্যু ঘটাইল, রয়িফ বাদাওই এর পিঠে হাজার ঘা চাবুক মারিয়া সমাজকে "বাকস্বাধীনতা"র অভিশাপ হইতে মুক্ত করিল তারা। ইহারা ধর্ম লইয়া প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন; তাহাতে ভাগবান/আল্লাহ /God ইহাদের কিছু না যায় আসিলেও তাহাদের নামে যাহারা দুইচার পয়সা করিয়া খাইতেছেন, তাহাদের ব্যবসায় ক্ষতি হইলে তাহা চলিবে কেমনে? অতএব ইহাদের পেছনে ধর্মীয় ভাবাবেগের ফেউ লেলাইয়া দাও...দেশের মানুষ দুবেলা খাইতে না পারিলেও ধর্মের আফিম খায় ভালোই...এবং খাইতেছেও। অতএব তিরুপতি মন্দিরের কোটি কোটি টাকা লইয়া কেউ প্রশ্ন তুলিলে সে ম্লেচ্ছ; শান্তির প্রতিক হজরত মহম্মদ কেন বাণী কুরায়জিয়াতে ইহুদি নিধন যজ্ঞের আদেশ দিয়াছিলেন সে লইয়া প্রশ্ন তুলিলে সে কাফের। অতএব..."হউক ক্যালানি"।
    এখন দেখা যাউক যাহারা ধর্মীয় ভাবাবেগ লইয়া লাফালাফি করেন, তাহাদের ধর্ম নিজে কিভাবে অন্যের ভাবাবেগের খেয়াল রাখিয়া থাকে। ইসলামের ইতিহাসে পাইয়াছি ইসলামের আদিপুরুষ ইব্রাহিম ছিলেন ব্যাবিলনের উর শহরের আজহারের পুত্র। আজহার ছিলেন মূর্তিপূজারী। ইহা লইয়া ইব্রাহিমের সহিত তাহার বাওয়াল বাধিল। ইব্রাহিম শহরের মূল মন্দিরের সমস্ত মূর্তি একদিন ভাঙ্গিয়া দিলেন। ইহাছাড়াও হজরত মহম্মদ স্বয়ং কাবা জয় করিয়া সেই সময় পূজিত হুবল এর মূর্তি ভাঙ্গিবার আদেশ দিয়াছিলেন। তো যে ধর্মের জয়যাত্রা শুরুই হইলো মূর্তিপুজারীদের ধর্মবিশ্বাসে কাঠি করিয়া, তাহার অনুগামীরা কেন ভাবাবেগ লইয়া কান্নাকাটি করিয়া থাকেন তাহা একটু বোঝা মুশকিল (হেই ধেয়ে আসে কমরেডদের খিস্তি / 'ইসলাম নিয়া কথা কইসিশ, পাইসিশ নাকি মস্তি?')।
    এইদিকে মধ্যপ্রদেশ নিবাসী আরএসএস কর্মী এসএসকে জৈন তাহার বিস্তৃত গবেষনায় পাইয়াছেন যে যাহারা পলান্ন ভক্ষণ করিয়া থাকে, তাহারা অতিশয় নির্বোধ, চরিত্রহীন। ইহা কি পলান্নভোগীদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া নহে? বিজ্ঞান কংগ্রেসে আনন্দ বোদাস ঘোষণা করিলেন আজ হইতে সাত সহস্র বত্সর পূর্বেই মহর্ষি ভরদ্বাজ এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে তাহার বিমান লইয়া দিব্যি ঘুরিয়া বেড়াইতেন। আধা ঘন্টার কম সময়ে ভারত হইতে হাওয়াই দ্বীপে গোবর মিশ্রিত Pizza সরবরাহ করিতেন কিনা ইহা লইয়া গবেষনা চলিতেছে; ফলাফল পরবর্তী বিজ্ঞান কংগ্রেসে জানানো হইবে। বর্তমান শাসকদল প্রাচীন ভারতের সমাজব্যবস্থা ফিরিয়া আনিতে চাহে। সকল নাগরিককে ২০২০ সালের মধ্যে হিন্দু করিতে চাহে। উত্তম প্রস্তাব। প্রশ্ন হইল আমাদিগের প্রধানমন্ত্রীর, যিনি গুজরাতে বিধর্মী নিধনকান্ডে নেতৃত্ব দিয়া একজন প্রকৃত আরএসএস গুন্ডার/গান্ডুর দায়িত্ব পালন করিয়াছিলেন, তাহার তো এই বিষয়ে মার্গদর্শক হইবার কথা। তবে তিনি ৬৪ বত্সর বয়সেও বানপ্রস্থে না গিয়া ৯.৫ লক্ষ টাকার কুর্তা পরিয়া fashion parade করিতেছেন কেন ?(এইবারের ছড়া---অ এ অমিত শাহ আসছে তেড়ে/ ত্রিশুল দেবে গুঁজে গা*)।

    ভারতে আর এক অদ্ভুত প্রাণীর বাস রহিয়াছে। যাহারা সেকুলার বলিয়া পরিচিত। ইহাদের আচার-আচরণ, ভাষা সকলই ইউরোপীয় ঘরানার। সাহেব হইতে গিয়া জিনের বিচিত্র খেলায় ইহাদের দেখিতে ভারতীয় হইয়া গিয়াছে; উদাহরণ -পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং পরিবারবর্গ। সেই অন্যায় এরা ভোলেন নাই। যাহা হউক ; তাড়াহুড়োয় ইউরোপ হইতে সেকুলারিসম টুকিতে গিয়া ইহারা ভারতীয় সমাজে তাহা ব্যবহার করিতে গেলে যে উহাকে ভারতীয় সমাজের উপযোগী রূপ দিতে হইবে তাহা আর খেয়াল করেন নাই। যখন পাশ্চাত্য হইতে 'সিনেমা' এদেশে আসিল তখন আমরা ভাবিলাম যে ক্যামেরার সামনে যাত্রা পালাকেই সিনেমা কহে। তাহাই আমাদিগের সিনেমায় নাচ, গান ইত্যাদি আজও বিরাজমান। সেইরুপেই সেকুলারিসম টুকিতে গিয়া গান্ধী উহাকে সমস্ত ধর্ম লইয়া লোকদেখানো আদিখ্যেতা করা ভাবিয়াছিলেন (যদিও তিনি নিজে কোনদিনই নিজের হিন্দু জীবন যাত্রার ঊর্ধে উঠিতে পারেন নাই, রামরাজ্য-টাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা কহিয়াছিলেন )। তাহার মূল্য আমরা চুকাইয়াছি। তো এই সেকুলারদিগকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যাইতে পারে। যেরকম ক) হিন্দু সেকুলার, খ) মুসলিম সেকুলার, গ) খ্রিস্টধর্মী সেকুলার ইত্যাদি। ইহারা মোটের উপর সকলেই বোঝেন যে ধর্মকথা কহিয়া ধর্মের মুখ আর রক্ষা হইবে না কারণ হিংসার মূল কারণ যে ধর্মের ইতিহাসেই নিহিত তাহা সকলেই বোঝেন। তাই নিজ নিজ ধর্ম রক্ষার্থে এনারা রণকৌশল পাল্টাইয়াছেন। এখন ইহাদের দাবি যদি কেহ কোনো সেকুলারের ধর্ম লইয়া কোনো সমালোচনা করে, তবে তাহকে অন্য ধর্ম লইয়াও সমালোচনা করিতে হইবে; যেমন ইনকাদিগের সূর্যদেব, জরাস্ত্রিয়ানদিগের আহুর মাজদা, রোমানদিগের জুপিটার ইয়াদিগকেও আলোচনায় টানিতে হইবে; নচেত আপনি উক্ত সেকুলার হইতে ফেকুলার, bigot ইত্যাদি আখ্যা পাইবেন। এনারা নিজ নিজ ধর্ম লইয়া বেশ চিন্তিত। কিছুকাল পূর্বে আমি শার্লি এদবোর ব্যাঙ্গচিত্র ফেসবুকে ভাগ করায় এক মুসলিম ভদ্রমহিলা তো প্রায় কাঁদিয়াই ফেলিলেন। তাহার দাবি আমাকে তখ্খুনি হিন্দুদিগকেও গালাগাল করিতে হইবে, না করিলে আমি একজন bigot । আমি কহিলাম হিন্দুদিগকে খিস্তি করিলে তাহা ইসলাম ধর্মের সমস্যার কেমন করে সমাধান হইবে? কোনো উত্তর নাই। অপরপক্ষে কিছুকাল পূর্বে কোচিতে আমার সমবয়সী যুবক-যুবতিদিগের প্রেম করিবার অধিকারের উপর আরএসএস এর গুন্ডাবাজী এবং ইহাকে ভারতীয় সংস্কৃতির নামে চালাইবার বিরুদ্ধে আমরা কজন বন্ধুরা কিছু কথা বলায় হিন্দু সেকুলাররা আমাদিগক কহিলেন আমরা ইসলামী চরমপন্থাকে সমর্থন করি, আমরা ফেকুলার, আমরা দেশের তালিবানিকরণ চাহি। আমি উহাদের বিচার মাথা পাতিয়া মানিয়া লইলাম।
    তবে ইহা অপেক্ষাও মারাত্মক প্রাণীরা হইলেন লেফট লিবারেলরা। পূর্বে ভাবিতাম ছেঁড়া পাঞ্জাবি, একগাল দাড়ি, স্কন্ধে ঝোলা ব্যাগ হইল কমরেড দাদাদিগের (শুধু SFI নহে, অন্য বামপন্থী ছাত্র-ছাত্রী দলগুলিও) ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। পরে দেখিলাম ইহাসকল ছাড়াও মুসলিমতোষণ ইহাদের গুরুত্বপূর্ণ Attire। পাঠক খেয়াল করিয়া দেখিবেন ৯২এর বাবরি মসজিদ ধংস ইহারা প্রতি বত্সর স্বরণ করেন (করা উচিতও ) অথচ ৪৬ এর ১৬ই আগস্টের 'Direct Action Day' লইয়া ইহাদের কোনো বক্তব্য নাই কারণ উহা নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইহারা ক্লাস বয়কট করিয়া থাকেন অথচ ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পরেও কতবার যে নারকীয় আক্রমন ঘটিয়াছে সংখ্যালঘুদিগের উপর, তাহা লইয়া ইহারা নিশ্চুপ। ইহারা আফগানিস্তান লইয়া গলা ফাটান কিন্তু শাহরিয়ার কবির যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদিগের উপর অত্যাচার লইয়া দিস্তা দিস্তা লিখিলেন, সে লইয়া কথা বলিলে এনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দোহাই দিয়া কাট মারিবেন। আমার এক পরিচিত বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী তো দাবি করিয়াছিলেন যে ২৬/১১ মুম্বাই হামলা নাকি আসলে আরএসএস-এর করানো, নিজেদের অপকর্ম হইতে নজর ঘোরানোর জন্য। আরএসএসকে কোনরূপ সমর্থন না করিয়াও একটি প্রশ্ন -আরএসএসকে খিস্তি করিলেই এবং পাকিস্তান হইতে আগত সন্ত্রাসবাদীদিগকে হিন্দু বলিয়া চালাইলেই কি মুসলিমদিগের মন জয় করা যাইবে? সংখ্যালঘুরা নিজেরাই যখন শিক্ষা এবং রোজগারের সুযোগ করিয়া দিবার দাবি তুলিতেছেন, তখন এরা তাহাদিগকে মাদ্রাসায় আটকাইয়া রাখিতে চাহে। আমার এই বন্ধুটি বোধয় ভারতীয় রাজনীতির অঙ্ক অনেক অল্প বয়সেই শিখিয়া লহিয়াছে।

    মহাবিদ্যালয়ে পরিবার কালে দেখিতাম শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি করার অনুমতি দিতেন কিন্তু কোনদিন দেখি নাই তাহারা অতিউত্সাহ দিতে গিয়া নিজেরা ছাত্র-ছাত্রীদের সহিত কোমর দোলাইতেছেন। একটি রাষ্ট্র হইতেও অনুরূপ ব্যবহার আশা করা গিয়াছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ভারত কাহাকেও ধর্মাচরণে বাধা দিবে না আবার ধর্মকে জড়াইয়া ধরিয়া চুম্বন করিবে না ইহাই প্রত্যাশিত। আমাদের দেশের মতো জটিল পাঁচমেশালী বহুত্ববাদী সমাজে একটি Religion less State এর বড় প্রয়োজন ছিল (অবশ্যই স্তালিনের রাশিয়ার বা এরিক হনেকারের পূর্ব জার্মানির মতো নহে )। তাহা না হইয়া ভারত রাষ্ট্র সকল ধর্মকে কোলে তুলিয়া লইয়াছে এবং ইহাদের ভার রাখিতে না পারিয়া দরদর করিয়া ঘামিতেছে। রাষ্ট্র পরিচালনা যে এক বিজ্ঞান এবং ইহা যে ধর্ম নামক কিম্ভূত প্রকরনটির সাথে মেশাইলে যে কি মারাত্মক হইতে পারে, ইহা আমাদের দেশভাগের ইতিহাস হইতে শেখা উচিত ছিল। গান্ধীজি ধর্মীয় সম্প্রীতি নামক বাঘের পিঠে সওয়ার হইয়া রাজনীতি করিতে গিয়াছিলেন; খিলাফত আন্দোলনের সর্বধর্ম সমন্বয়ের পরীক্ষার ফল কি হইয়াছিল তাহা আমাদিগের মনে আছে (উক্ত আন্দোলন পরবর্তী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, স্বামী শ্রধ্ধানন্দের হত্যা, রঙ্গিলা রাসুল কান্ড এবং আরও অনেক ) । ইহা হইতে কিছু মাত্র না শিখিয়া ভারত রাষ্ট্র বর্তমানে মন্দিরে সংকীর্তন ভজিতে গিয়া, মসজিদে নামাজ পড়িতে গিয়া এবং গির্জায় ক্রিসমাস ক্যারল গাহিতে গিয়া তাল হারাইয়া ফেলিয়াছে। হজ যাত্রায় ভর্তুকি দেওয়া হইতেছে; এইতো সেইদিন DRDO একটি ব্যাটারি চালিত রথ বানাইয়া দিয়াছে পুনের এক মন্দিরের জন্যে। গত বত্সর জুন মাসে দিল্লি উচ্চ আদালত এক মুসলিম পরিবারের ১৫ বত্সরের বালিকার বিবাহে সম্মতি দিয়াছিল কারণ উহা নাকি মুসলিম ধর্ম অনুসারে বৈধ। নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমান করিবার তাড়নায় আমাদিগের প্রশাসন সকল ধর্মকেই প্রশয় দিতেছে। ফলস্বরূপ শ্রদ্ধেয় দীননাথ বাত্রা ওয়েন্ডি ডনিগরের লেখা নিষিদ্ধ করাইতে পারেন; মৌলবিরা 'বিশ্ব রুপম' চলচিত্রটিতে কাটছাঁট করিতে পরিচালককে বাধ্য করিতেই পারেন। ভারত রাষ্ট্রের কাহাকেও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। শিল্প-সংস্কৃতি পিছন মাড়াইয়া খাউক; দেশের মানুষ পাঁচবেলা নামাজ এবং পন্চাঙ্গে অমাবস্যা, একাদশী এইসব তিথি লইয়া থাকিতে পারিলেই রাষ্ট্রধর্ম পালন হইয়াছে।

    ফুচকার সহিত ফাউএর মতো শেষে একটি পুরানো ঘটনা--রিচার্ড নিয়েভ একজন বিখ্যাত forensic facial reconstruction (ইহার বাংলা প্রতিশব্দ আমি ঠিক করে উঠতে পারি নাই) শিল্পী। তো তিনি একবার ঐতিহাসিক বিবরণ এবং তত্কালীন সময়ের স্থানীয় মানুষের দৈহিক গঠন অনুসরণ করিয়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যিশুর মুখমন্ডলীর পুনর্গঠন করেন। দেখা যাইল যিশুকে নানা পাটেকারের মতো দেখিতে ছিল। ভ্যাটিকান পথে নামিল। তাহাদিগের ভাবাবেগে আঘাত পড়িয়াছে। বটেই তো--যিশু তাহাদের ব্যবসার প্রতিক; যে ব্যবসার অধিকাংশটাই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা থেকে পরিচালিত হয়। তাহাকে অবশ্যই সাদা চামড়ার, নীল্ চক্ষু, লম্বা চুল বিশিষ্ট এবং দৈহিক গঠন টম ক্রুজের মতো হইতে হইবে। এতকালেও ভ্যাটিকান কোনো কৃষ্ণাঙ্গকে পোপ বানাইল না, তাহাদের নায়ক কি করিয়া কৃষ্ণবর্ণ হইতে পারেন?

    গত ২৮ জানুয়ারী একটি ছবি দেখিলাম সংবাদপত্রে। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে একটি যান্ত্রিক শকটে বেশ কিছু ভিন্নধর্মী মানুষ একসাথে চড়িতেছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারত রাষ্ট্রের ইহার চাইতে ভালো বিজ্ঞাপন আর হয় না। সকল ধর্ম ভারতের মাথায় উঠিয়া নাচিতেছে। চালকের আসনটি শুন্য। যান্ত্রিক শকটটি যেকোনো মুহুর্তে মুখ থুবড়িয়া পড়িতে পারে।
    যাত্রীগণ সাবধান।
  • রাহুল দেব চক্রবর্তী | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:১৮657005
  • শুনিয়াছি ভূমিষ্ঠ হইবার পরমুহুর্তে আমার নাম ঠিক হইবারও পূর্বে মা ষষ্ঠীর পূজা ইত্যাদি হইয়াছিল।অতএব পিতা মাতা হিন্দু বলিয়া সমাজ আমাকে হিন্দু বলিয়া গণ্য করিল। ইহাতে আমার মতামতের প্রয়োজন আছে বলিয়া আমার পিতা মাতা ভাবেন নাই। নিজ পিতামাতার হইতে এইরূপ অগণতান্ত্রিক আচরণ আশা করি নাই। এখন প্রশ্ন হইলো যদি পিতৃপুরুষ হিন্দু হইলে এমনি এমনি কিছু না করিয়া হিন্দু হওয়া যায়, তবে আমার পিতা সেনাবাহিনীতে দীর্ঘকাল চাকুরী করা সত্তেও কেন আমি ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাং তুলিয়া সেনাবাহিনীতে Lieutenant হইলাম না?
    যাহা হউক...ইদানিংকালে দেখিতেছি আপনি অটোচালক হইলে যাত্রীকে আঘাত করিয়া পার পাইয়া যাইবেন; তৃনমূল ছাত্র পরিষদ (যাহার গুন্ডারা পরিবর্তনের পূর্বে Das Capital মাথার নিচে রাখিয়া ঘুমাইত) করিলে অধ্যাপককে চ্যাংদোলা করিয়া ফেলিয়া পার পাইয়া যাইবেন; কিন্তু কাহারো ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া চলিবে না। বোধ হইতেছে ধর্মীয় ভাবাবেগ বস্তুটি ইশান্ত শর্মার calf muscle এর ন্যায়; দুইদিন বাদে বাদেই চোট পাইয়া থাকে। PK, 'ওয়াটার' এইসকল চলচিত্র কিভাবে হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত দিয়াছে তাহা আমরা দেখিয়াছি। জনৈক সনাল এদামারকু মুম্বাইয়ে এক ক্রন্দনরত যিশু মূর্তি যে আসলে উক্ত মূর্তির নিচের এক পুরানো জল বাহির হইবার নালীর কৈশিক ক্রিয়া, সে রহস্য ফাঁস করিতেই চার্চ এক্কেরে রেরে করিয়া উঠিয়াছিল; উহাতে নাকি তাহাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগিয়াছে। আসলে আরশোলার নিকট baygon spray যেইরূপ,ধর্মের নিকট ব্যাঙ্গচিত্র, চলচিত্র, সাহিত্যও সেইরূপ। এইসকল ব্যবহার করিয়া কেহ ধর্ম লইয়া প্রশ্ন তুলিলে ধর্মের ক্ষয়কাশি শুরু হইয়া যায়, উচ্চ রক্তচাপ আর নিম্নগামী হইবার উপায় থাকে নাই (আসলে বয়স তো কম হইলো না!)। তবে উপায় ? উপায় একটিই...রাতে মশক আসিবার পূর্বেই সন্ধ্যায় all out জ্বালাইয়া দাও। সমালোচনা প্রকাশ্যে আসিবার পূর্বেই মুখ বন্ধ করিয়া দাও। অতএব আরএসএস, জামাত, খোমেইনি, ভ্যাটিকান দেশ ও দশ রক্ষার্থে পথে নামিল। নামিয়া কি করিল? তসলিমা নাসরিনকে দেশ থেকে দূর করিল,মকবুল ফিদা হুসেনকে ভিনদেশী করিল,Da Vinci Code এর বিরুদ্ধে মামলা হইলো, সালমান রুশদির জয়পুরে সাহিত্য সম্মেলনে আসা আটকাইলো, পেরুমাল মুরুগানের সাহিত্যকর্মের অপমৃত্যু ঘটাইল, রয়িফ বাদাওই এর পিঠে হাজার ঘা চাবুক মারিয়া সমাজকে "বাকস্বাধীনতা"র অভিশাপ হইতে মুক্ত করিল তারা। ইহারা ধর্ম লইয়া প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন; তাহাতে ভাগবান/আল্লাহ /God ইহাদের কিছু না যায় আসিলেও তাহাদের নামে যাহারা দুইচার পয়সা করিয়া খাইতেছেন, তাহাদের ব্যবসায় ক্ষতি হইলে তাহা চলিবে কেমনে? অতএব ইহাদের পেছনে ধর্মীয় ভাবাবেগের ফেউ লেলাইয়া দাও...দেশের মানুষ দুবেলা খাইতে না পারিলেও ধর্মের আফিম খায় ভালোই...এবং খাইতেছেও। অতএব তিরুপতি মন্দিরের কোটি কোটি টাকা লইয়া কেউ প্রশ্ন তুলিলে সে ম্লেচ্ছ; শান্তির প্রতিক হজরত মহম্মদ কেন বাণী কুরায়জিয়াতে ইহুদি নিধন যজ্ঞের আদেশ দিয়াছিলেন সে লইয়া প্রশ্ন তুলিলে সে কাফের। অতএব..."হউক ক্যালানি"।
    এখন দেখা যাউক যাহারা ধর্মীয় ভাবাবেগ লইয়া লাফালাফি করেন, তাহাদের ধর্ম নিজে কিভাবে অন্যের ভাবাবেগের খেয়াল রাখিয়া থাকে। ইসলামের ইতিহাসে পাইয়াছি ইসলামের আদিপুরুষ ইব্রাহিম ছিলেন ব্যাবিলনের উর শহরের আজহারের পুত্র। আজহার ছিলেন মূর্তিপূজারী। ইহা লইয়া ইব্রাহিমের সহিত তাহার বাওয়াল বাধিল। ইব্রাহিম শহরের মূল মন্দিরের সমস্ত মূর্তি একদিন ভাঙ্গিয়া দিলেন। ইহাছাড়াও হজরত মহম্মদ স্বয়ং কাবা জয় করিয়া সেই সময় পূজিত হুবল এর মূর্তি ভাঙ্গিবার আদেশ দিয়াছিলেন। তো যে ধর্মের জয়যাত্রা শুরুই হইলো মূর্তিপুজারীদের ধর্মবিশ্বাসে কাঠি করিয়া, তাহার অনুগামীরা কেন ভাবাবেগ লইয়া কান্নাকাটি করিয়া থাকেন তাহা একটু বোঝা মুশকিল (হেই ধেয়ে আসে কমরেডদের খিস্তি / 'ইসলাম নিয়া কথা কইসিশ, পাইসিশ নাকি মস্তি?')।
    এইদিকে মধ্যপ্রদেশ নিবাসী আরএসএস কর্মী এসএসকে জৈন তাহার বিস্তৃত গবেষনায় পাইয়াছেন যে যাহারা পলান্ন ভক্ষণ করিয়া থাকে, তাহারা অতিশয় নির্বোধ, চরিত্রহীন। ইহা কি পলান্নভোগীদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া নহে? বিজ্ঞান কংগ্রেসে আনন্দ বোদাস ঘোষণা করিলেন আজ হইতে সাত সহস্র বত্সর পূর্বেই মহর্ষি ভরদ্বাজ এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে তাহার বিমান লইয়া দিব্যি ঘুরিয়া বেড়াইতেন। আধা ঘন্টার কম সময়ে ভারত হইতে হাওয়াই দ্বীপে গোবর মিশ্রিত Pizza সরবরাহ করিতেন কিনা ইহা লইয়া গবেষনা চলিতেছে; ফলাফল পরবর্তী বিজ্ঞান কংগ্রেসে জানানো হইবে। বর্তমান শাসকদল প্রাচীন ভারতের সমাজব্যবস্থা ফিরিয়া আনিতে চাহে। সকল নাগরিককে ২০২০ সালের মধ্যে হিন্দু করিতে চাহে। উত্তম প্রস্তাব। প্রশ্ন হইল আমাদিগের প্রধানমন্ত্রীর, যিনি গুজরাতে বিধর্মী নিধনকান্ডে নেতৃত্ব দিয়া একজন প্রকৃত আরএসএস গুন্ডার/গান্ডুর দায়িত্ব পালন করিয়াছিলেন, তাহার তো এই বিষয়ে মার্গদর্শক হইবার কথা। তবে তিনি ৬৪ বত্সর বয়সেও বানপ্রস্থে না গিয়া ৯.৫ লক্ষ টাকার কুর্তা পরিয়া fashion parade করিতেছেন কেন ?(এইবারের ছড়া---অ এ অমিত শাহ আসছে তেড়ে/ ত্রিশুল দেবে গুঁজে গা*)।

    ভারতে আর এক অদ্ভুত প্রাণীর বাস রহিয়াছে। যাহারা সেকুলার বলিয়া পরিচিত। ইহাদের আচার-আচরণ, ভাষা সকলই ইউরোপীয় ঘরানার। সাহেব হইতে গিয়া জিনের বিচিত্র খেলায় ইহাদের দেখিতে ভারতীয় হইয়া গিয়াছে; উদাহরণ -পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং পরিবারবর্গ। সেই অন্যায় এরা ভোলেন নাই। যাহা হউক ; তাড়াহুড়োয় ইউরোপ হইতে সেকুলারিসম টুকিতে গিয়া ইহারা ভারতীয় সমাজে তাহা ব্যবহার করিতে গেলে যে উহাকে ভারতীয় সমাজের উপযোগী রূপ দিতে হইবে তাহা আর খেয়াল করেন নাই। যখন পাশ্চাত্য হইতে 'সিনেমা' এদেশে আসিল তখন আমরা ভাবিলাম যে ক্যামেরার সামনে যাত্রা পালাকেই সিনেমা কহে। তাহাই আমাদিগের সিনেমায় নাচ, গান ইত্যাদি আজও বিরাজমান। সেইরুপেই সেকুলারিসম টুকিতে গিয়া গান্ধী উহাকে সমস্ত ধর্ম লইয়া লোকদেখানো আদিখ্যেতা করা ভাবিয়াছিলেন (যদিও তিনি নিজে কোনদিনই নিজের হিন্দু জীবন যাত্রার ঊর্ধে উঠিতে পারেন নাই, রামরাজ্য-টাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা কহিয়াছিলেন )। তাহার মূল্য আমরা চুকাইয়াছি। তো এই সেকুলারদিগকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যাইতে পারে। যেরকম ক) হিন্দু সেকুলার, খ) মুসলিম সেকুলার, গ) খ্রিস্টধর্মী সেকুলার ইত্যাদি। ইহারা মোটের উপর সকলেই বোঝেন যে ধর্মকথা কহিয়া ধর্মের মুখ আর রক্ষা হইবে না কারণ হিংসার মূল কারণ যে ধর্মের ইতিহাসেই নিহিত তাহা সকলেই বোঝেন। তাই নিজ নিজ ধর্ম রক্ষার্থে এনারা রণকৌশল পাল্টাইয়াছেন। এখন ইহাদের দাবি যদি কেহ কোনো সেকুলারের ধর্ম লইয়া কোনো সমালোচনা করে, তবে তাহকে অন্য ধর্ম লইয়াও সমালোচনা করিতে হইবে; যেমন ইনকাদিগের সূর্যদেব, জরাস্ত্রিয়ানদিগের আহুর মাজদা, রোমানদিগের জুপিটার ইয়াদিগকেও আলোচনায় টানিতে হইবে; নচেত আপনি উক্ত সেকুলার হইতে ফেকুলার, bigot ইত্যাদি আখ্যা পাইবেন। এনারা নিজ নিজ ধর্ম লইয়া বেশ চিন্তিত। কিছুকাল পূর্বে আমি শার্লি এদবোর ব্যাঙ্গচিত্র ফেসবুকে ভাগ করায় এক মুসলিম ভদ্রমহিলা তো প্রায় কাঁদিয়াই ফেলিলেন। তাহার দাবি আমাকে তখ্খুনি হিন্দুদিগকেও গালাগাল করিতে হইবে, না করিলে আমি একজন bigot । আমি কহিলাম হিন্দুদিগকে খিস্তি করিলে তাহা ইসলাম ধর্মের সমস্যার কেমন করে সমাধান হইবে? কোনো উত্তর নাই। অপরপক্ষে কিছুকাল পূর্বে কোচিতে আমার সমবয়সী যুবক-যুবতিদিগের প্রেম করিবার অধিকারের উপর আরএসএস এর গুন্ডাবাজী এবং ইহাকে ভারতীয় সংস্কৃতির নামে চালাইবার বিরুদ্ধে আমরা কজন বন্ধুরা কিছু কথা বলায় হিন্দু সেকুলাররা আমাদিগক কহিলেন আমরা ইসলামী চরমপন্থাকে সমর্থন করি, আমরা ফেকুলার, আমরা দেশের তালিবানিকরণ চাহি। আমি উহাদের বিচার মাথা পাতিয়া মানিয়া লইলাম।
    তবে ইহা অপেক্ষাও মারাত্মক প্রাণীরা হইলেন লেফট লিবারেলরা। পূর্বে ভাবিতাম ছেঁড়া পাঞ্জাবি, একগাল দাড়ি, স্কন্ধে ঝোলা ব্যাগ হইল কমরেড দাদাদিগের (শুধু SFI নহে, অন্য বামপন্থী ছাত্র-ছাত্রী দলগুলিও) ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। পরে দেখিলাম ইহাসকল ছাড়াও মুসলিমতোষণ ইহাদের গুরুত্বপূর্ণ Attire। পাঠক খেয়াল করিয়া দেখিবেন ৯২এর বাবরি মসজিদ ধংস ইহারা প্রতি বত্সর স্বরণ করেন (করা উচিতও ) অথচ ৪৬ এর ১৬ই আগস্টের 'Direct Action Day' লইয়া ইহাদের কোনো বক্তব্য নাই কারণ উহা নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইহারা ক্লাস বয়কট করিয়া থাকেন অথচ ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পরেও কতবার যে নারকীয় আক্রমন ঘটিয়াছে সংখ্যালঘুদিগের উপর, তাহা লইয়া ইহারা নিশ্চুপ। ইহারা আফগানিস্তান লইয়া গলা ফাটান কিন্তু শাহরিয়ার কবির যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদিগের উপর অত্যাচার লইয়া দিস্তা দিস্তা লিখিলেন, সে লইয়া কথা বলিলে এনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দোহাই দিয়া কাট মারিবেন। আমার এক পরিচিত বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী তো দাবি করিয়াছিলেন যে ২৬/১১ মুম্বাই হামলা নাকি আসলে আরএসএস-এর করানো, নিজেদের অপকর্ম হইতে নজর ঘোরানোর জন্য। আরএসএসকে কোনরূপ সমর্থন না করিয়াও একটি প্রশ্ন -আরএসএসকে খিস্তি করিলেই এবং পাকিস্তান হইতে আগত সন্ত্রাসবাদীদিগকে হিন্দু বলিয়া চালাইলেই কি মুসলিমদিগের মন জয় করা যাইবে? সংখ্যালঘুরা নিজেরাই যখন শিক্ষা এবং রোজগারের সুযোগ করিয়া দিবার দাবি তুলিতেছেন, তখন এরা তাহাদিগকে মাদ্রাসায় আটকাইয়া রাখিতে চাহে। আমার এই বন্ধুটি বোধয় ভারতীয় রাজনীতির অঙ্ক অনেক অল্প বয়সেই শিখিয়া লহিয়াছে।

    মহাবিদ্যালয়ে পরিবার কালে দেখিতাম শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি করার অনুমতি দিতেন কিন্তু কোনদিন দেখি নাই তাহারা অতিউত্সাহ দিতে গিয়া নিজেরা ছাত্র-ছাত্রীদের সহিত কোমর দোলাইতেছেন। একটি রাষ্ট্র হইতেও অনুরূপ ব্যবহার আশা করা গিয়াছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ভারত কাহাকেও ধর্মাচরণে বাধা দিবে না আবার ধর্মকে জড়াইয়া ধরিয়া চুম্বন করিবে না ইহাই প্রত্যাশিত। আমাদের দেশের মতো জটিল পাঁচমেশালী বহুত্ববাদী সমাজে একটি Religion less State এর বড় প্রয়োজন ছিল (অবশ্যই স্তালিনের রাশিয়ার বা এরিক হনেকারের পূর্ব জার্মানির মতো নহে )। তাহা না হইয়া ভারত রাষ্ট্র সকল ধর্মকে কোলে তুলিয়া লইয়াছে এবং ইহাদের ভার রাখিতে না পারিয়া দরদর করিয়া ঘামিতেছে। রাষ্ট্র পরিচালনা যে এক বিজ্ঞান এবং ইহা যে ধর্ম নামক কিম্ভূত প্রকরনটির সাথে মেশাইলে যে কি মারাত্মক হইতে পারে, ইহা আমাদের দেশভাগের ইতিহাস হইতে শেখা উচিত ছিল। গান্ধীজি ধর্মীয় সম্প্রীতি নামক বাঘের পিঠে সওয়ার হইয়া রাজনীতি করিতে গিয়াছিলেন; খিলাফত আন্দোলনের সর্বধর্ম সমন্বয়ের পরীক্ষার ফল কি হইয়াছিল তাহা আমাদিগের মনে আছে (উক্ত আন্দোলন পরবর্তী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, স্বামী শ্রধ্ধানন্দের হত্যা, রঙ্গিলা রাসুল কান্ড এবং আরও অনেক ) । ইহা হইতে কিছু মাত্র না শিখিয়া ভারত রাষ্ট্র বর্তমানে মন্দিরে সংকীর্তন ভজিতে গিয়া, মসজিদে নামাজ পড়িতে গিয়া এবং গির্জায় ক্রিসমাস ক্যারল গাহিতে গিয়া তাল হারাইয়া ফেলিয়াছে। হজ যাত্রায় ভর্তুকি দেওয়া হইতেছে; এইতো সেইদিন DRDO একটি ব্যাটারি চালিত রথ বানাইয়া দিয়াছে পুনের এক মন্দিরের জন্যে। গত বত্সর জুন মাসে দিল্লি উচ্চ আদালত এক মুসলিম পরিবারের ১৫ বত্সরের বালিকার বিবাহে সম্মতি দিয়াছিল কারণ উহা নাকি মুসলিম ধর্ম অনুসারে বৈধ। নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমান করিবার তাড়নায় আমাদিগের প্রশাসন সকল ধর্মকেই প্রশয় দিতেছে। ফলস্বরূপ শ্রদ্ধেয় দীননাথ বাত্রা ওয়েন্ডি ডনিগরের লেখা নিষিদ্ধ করাইতে পারেন; মৌলবিরা 'বিশ্ব রুপম' চলচিত্রটিতে কাটছাঁট করিতে পরিচালককে বাধ্য করিতেই পারেন। ভারত রাষ্ট্রের কাহাকেও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। শিল্প-সংস্কৃতি পিছন মাড়াইয়া খাউক; দেশের মানুষ পাঁচবেলা নামাজ এবং পন্চাঙ্গে অমাবস্যা, একাদশী এইসব তিথি লইয়া থাকিতে পারিলেই রাষ্ট্রধর্ম পালন হইয়াছে।

    ফুচকার সহিত ফাউএর মতো শেষে একটি পুরানো ঘটনা--রিচার্ড নিয়েভ একজন বিখ্যাত forensic facial reconstruction (ইহার বাংলা প্রতিশব্দ আমি ঠিক করে উঠতে পারি নাই) শিল্পী। তো তিনি একবার ঐতিহাসিক বিবরণ এবং তত্কালীন সময়ের স্থানীয় মানুষের দৈহিক গঠন অনুসরণ করিয়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যিশুর মুখমন্ডলীর পুনর্গঠন করেন। দেখা যাইল যিশুকে নানা পাটেকারের মতো দেখিতে ছিল। ভ্যাটিকান পথে নামিল। তাহাদিগের ভাবাবেগে আঘাত পড়িয়াছে। বটেই তো--যিশু তাহাদের ব্যবসার প্রতিক; যে ব্যবসার অধিকাংশটাই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা থেকে পরিচালিত হয়। তাহাকে অবশ্যই সাদা চামড়ার, নীল্ চক্ষু, লম্বা চুল বিশিষ্ট এবং দৈহিক গঠন টম ক্রুজের মতো হইতে হইবে। এতকালেও ভ্যাটিকান কোনো কৃষ্ণাঙ্গকে পোপ বানাইল না, তাহাদের নায়ক কি করিয়া কৃষ্ণবর্ণ হইতে পারেন?

    গত ২৮ জানুয়ারী একটি ছবি দেখিলাম সংবাদপত্রে। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে একটি যান্ত্রিক শকটে বেশ কিছু ভিন্নধর্মী মানুষ একসাথে চড়িতেছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারত রাষ্ট্রের ইহার চাইতে ভালো বিজ্ঞাপন আর হয় না। সকল ধর্ম ভারতের মাথায় উঠিয়া নাচিতেছে। চালকের আসনটি শুন্য। যান্ত্রিক শকটটি যেকোনো মুহুর্তে মুখ থুবড়িয়া পড়িতে পারে।
    যাত্রীগণ সাবধান।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:০০657007
  • বেড়ে হয়েছে।
  • potke | 126.202.***.*** | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:২৪657008
  • ফাটাফাটি!
  • adhuli | 190.148.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৪৬657009
  • খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। সব ধর্মের তথাকথিত ধজ্জাধারীরা তো পুরোপুরি সর্বনাশ করছে-ই আমাদের, এই মেকি সেক্যুলার-রা তার থেকেও সাংঘাতিক। ভগবান আছেন কি জানিনা, থাকলে তিনি আগে নিজে এদের নাগপাশ থেকে পালাতেন।
  • সে | 188.83.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৫৮657010
  • ভালো হয়েছে।
  • দেব | 133.63.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৯657011
  • "আসলে আরশোলার নিকট baygon spray যেইরূপ,ধর্মের নিকট ব্যাঙ্গচিত্র, চলচিত্র, সাহিত্যও সেইরূপ।"

    "যখন পাশ্চাত্য হইতে 'সিনেমা' এদেশে আসিল তখন আমরা ভাবিলাম যে ক্যামেরার সামনে যাত্রা পালাকেই সিনেমা কহে।"

    অসাধারণ।
  • Manush | 59.249.***.*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৮:৫৯657013
  • Super like !!! সত্যি প্রকৃত সেকুলারের মত লেখা , সব ধর্মের মেকী ধজ্জাধারীদের বিরুদ্ধে লেখা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন