এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে

    সে
    নাটক | ২১ অক্টোবর ২০১৩ | ৬১৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 37.63.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৬ ১২:০০620805
  • সে দি, এখুনি পড়ে শেষ করলাম তোমার হলদিয়া কাহিনী।খুব ভালো । খুব ভালো।

    তোমাকে বলি ইয়েস আমরা অনেক সময় সত্যি কথা টা বলতে পারি না। কারণ ভয়ঃ-

    ১। অ্যাপারজালের ভয়
    ২। প্রজেক্ট লিডারের /প্রেজেক্ট ম্যানেজার র চোখে "পড়ে" যাবার ভয়

    যারা একেবারে পারে না তাদের ক্ষেত্রে একটা ই অপশ্যান ঃ-

    ১। গেট আউট অফ অফ দ্যাট কোম্পানী
    কন্টিনুয়্যু যত দিন না একেবারে অসহ্য হয়ে উঠছে।

    আমরা বেশীর ভাগ লোক যে ডবল স্ট্যান্ডার্ড। তার একটা বড় প্রমান। ওপরের পোস্ট টি যিনি করেছেন তার নেওয়া নিক টি ঃ)))))))))))))))))))))))))
  • সে | 198.155.***.*** | ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:২১620806
  • গন্ধের গল্প
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৬ ২০:২৬620807
  • মর্নিং স্কুল
    ----------
    আস্তে ধীরে এবার লিখব ইস্কুলের গল্পর একটা পার্ট। দুবছর মর্নিং ইস্কুলে পড়েছিলাম। সেই গল্প। যদিও গল্প কেবল ইস্কুলের মধ্যে থাকবে না। বা হয়ত খুব কমই থাকবে ইস্কুলের মধ্যে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৩:২৩620808
  • মর্নিং স্কুলে যাবার আগেই আমি কয়েক মাসের তফাতে দুটো মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে ফেলি। জীবনের প্রথম এবং দ্বিতীয়, মানে দুজন মানুষের মৃতদেহ খুব কাছ থেকে দেখা, যারা আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিল, যাদের জড়িয়ে ধরে বলতে পারতাম তোমাকে আমি সবার থেকে বেশি ভালোবাসি, মা বাবার থেকেও অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। মানুষ মরে গেলে বাড়িতে লোকসংখ্যা কমে যায়, রান্নার সময় কম চাল মেপে নিতে হয়, ঘরগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। প্রথম প্রথম মনে থাকে না যে মানুষটা আর নেই, পুরোনো অভ্যাসে কিছু জিগ্যেস করতে ভেতরের বারান্দা দিয়ে দৌড়ে উত্তরের ঘরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়বার পরে খেয়াল হত ওঘরে কেউ নেই, ঠাকুমা মরে গেছে। যেদিন সে মরে গেছল, সেদিন বাড়িতে অনেক লোক এসেছিল, সেই অনেক লোকের ভীড়ে টেরই পাইনি যে সে মরে যাওয়ায় আমার কতটা কেমন দুঃখ হয়েছে, সত্যিই বুঝিনি তখন, খুবই ছোটো ছিলাম বলে হয়ত। কিন্তু, এই যে বারে বারে ভুলে যাওয়া যে সে নেই, এবং বারবার সেই ভুল ভেঙে বুঝতে পারা হাজারবার মাথা কুটে মরলেও সে ফিরবে না, এই জিনিসটাই আমাকে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে দেয় মৃত্যু একটা পার্মানেন্ট মত ব্যাপার। দুটো মৃত্যুর মধ্যে ব্যবধান ছিল সাড়ে দশ মাস, এবং মধ্যিখানের সেই সময়টুকুও ছিল ঘটনাবহুল। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছল পূর্ব পাকিস্তানে। স্বাধীনতার যুদ্ধ। নকশাল আমল বলেও একটা ভয়ের ব্যাপার ছিল তখন, সে ভয়টা নকশালদের থেকে না কংগ্রেসদের থেকে না পুলিশের থেকে, নাকি সবার থেকেই ভয়, সেটা বুঝতে পারতাম না। শুধু পরিষ্কার মনে আছে, যুদ্ধ শুরু হবার পরে মন্তেস্যরী স্কুলে একদিন ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছিল সবার হাতে হাতে। সেই ফর্দ মিলিয়ে বেশ কয়েক প্যাকেট হরলিক্স বিস্কুট, সম্ভবত একসেট জামা কাপড়, আরো কীসব যেন জমা করে আসতে হল ইস্কুলে। ইস্কুলে আমাদের শেখানো হত যদি বোমা পড়ে তবে কী কী করতে হবে, কেমন করে শুয়ে পড়তে হয়। আরেকটা জিনিস খুব হতো তখন, ব্ল্যাকাউট। সন্ধেবেলা আলো জ্বালানো চলত না। প্রথম দিকে সাইরেন বাজিয়ে ব্ল্যাকাউটের অভ্যেস করানো হচ্ছিলো, তারপরে আর সাইরেন বাজত না। যুদ্ধের ভয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রাণের ভয়ে দলে দলে রিফিউজি, এসব নিয়ে সবাইকেই খুব চিন্তিত দেখতাম। তারপর, পরের বছর থেকে আমায় মর্নিং স্কুলে যেতে হবে - এইটাও ছিল খুব উদ্বেগের ব্যাপার। মর্নিং ইস্কুল মানেই দুপুরে একা থাকতে হবে বাড়িতে। ঠাকুমা মরে গেছে, তার কমাস পরে গরমের ছুটির একটু পরে পিসীমা (আমার বাবার দিদি, যাকে আমি কোনোদিনো পিসীমা বলে ডাকিনি, দিদিমণি বলে ডাকতাম) এক রবিবারের সকালে আমার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে কোথায় যেন চলে গেল। দিদিমণি এরকম মাঝেমাঝেই কোথায় কোথায় চলে যেত, আবার ফিরে আসত একদুমাস পরে। কখনও যেত দেওঘর, কখনও হয়ত দেরাদুন, কি পুরী, কি অন্য কোথাও। আমরা ধরেই রেখেছিলাম, যে রাগ পড়ে গেলে দিদিমণি আবার ফিরে আসবে। দিদিমণির ঘরে তার খাট, তার জিনিসপত্র ট্রাঙ্ক গরদের শাড়ী সব পড়ে রইল। পুজোর ছুটি শেষ হয়ে ইস্কুল খুলল। একা থাকা কাকে বলে তা সেই ছবছর বয়সে বুঝতে পারিনি। কেউ কেউ বলল মাকে চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আমাদের মানুষ করতে, কেউ বলল একটা এমন স্কুলে আমায় ভর্তি করে দিতে, যেটা ডে ইস্কুল। আমার নিজেরো ইচ্ছে করছিল না মর্নিং স্কুলে যেতে। সত্যি কথা বলতে কি ইস্কুলে যেতে আমার একদম ভাল লাগত না ছোটোবেলায়। ক্রিসমাস ইত্যাদি এবং বর্ষশেষের ছুটি পড়বার আগেই এক সন্ধেবেলায় একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়েছিল।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৪:১৫620809
  • পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পরিবার আমাদের বাড়ীর একতলার রোয়াকে থাকতে শুরু করে। সম্ভবত পূর্ব পাকিস্তানেও এরা বেশ গরীবই ছিলো, এদের আঞ্চলিক ভাষার টান আমরা সহজে বুঝতে পারতাম না। বাড়ীর দুদিকের রোয়াকে গোটা তিনেক পরিবার এবং মেইনগেট দিয়ে ঢুকবার পরে ভেতরের প্যাসেজে আরো একটা সংসার। আমরা ভাবতাম মুক্তযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে এরা সবাই আবার নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যাবে। কাঠ ঘুঁটে জোগাড় করে ঐ রোয়াকেই তারা আলাদা আলাদা উনুন ধরাতো, রান্না করত। ছুটির দিনে দোতলার পশ্চিমের ব্যালকনি থেকে ঝুঁকে পড়ে দেখতাম উনুনে চাপানো অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে টগবগ করে জল ফুটছে। সেই জলে চাল ছাড়ত না তারা ভাত ফোটানোর জন্য। একটা কলাই করা গামলায় আটা মাখা হয়ে রয়েছে আগেই। এবার সেই মাখা আটার থেকে ছোটো ছোটো লম্বাটে লেচি কেটে কেটে হাঁড়ির ফুটন্ত জলে ছেড়ে দিত পরিবারের বৌ। অল্পক্ষণ ফুটিয়ে নিয়ে হাতায় করে তুলে নিত সেই সেদ্ধ হওয়া আটার লেচিগুলো। পরিবারের অন্য সদস্যরা দলবেঁধে বসত গোল হয়ে সেখানে। কোনো ডাল তরকারি ঝোল নেই, কোনো ভাজা নেই শাক নেই মাছ মাংস কিচ্ছুটি নেই, আচার চাটনিও নেই। সেদ্ধ করা আটার দলা গপগপ করে খেত তারা ওপর থেকে দেখতাম। ওদের মেয়েরা বৌয়েরা পাড়ায় নানান বাড়িতে কাজ করে দিত, কোনোকোনোদিন সেসব বাড়ি থেকে ভাত তরকারি নিয়ে এসে খেত তা ও দেখেছি।
    সন্ধে হয়ে গেলেই তো অন্ধকার। তখন আর কিছু দেখা যাবে না। কোনো বাড়িতে ভুল করে কেউ লাইট জ্বালিয়ে ফেললে পাড়ার লোকেরা চেঁচাবে, লাইট নেবান, লাইট নেবান। আলো জ্বালালেই নাকি আকাশের ওপর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যরা আমাদের শহরটা দেখতে পেয়ে যাবে। দেখতে পেলেই দুম করে বোমা ফেলবে। তাই সন্ধে হলেই আমরা সব অন্ধকার করে লুকিয়ে থাকি। কিন্তু ওরা যদি দিনের বেলায় বোমা ফেলে তখন কী হবে? দিনের বেলায় তো ওরা আমাদের শহরটা এমনিতেই দেখতে পাবে। পাবে না? এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে চায় না। বলে, চুপ চুপ, খবর শোন, নিউজ। নিউজে শুধু যুদ্ধের খবর আর পরিবার পরিকল্পনা নিয়েও অনেক কিছু বলে রেডিওতে। বলে ইয়াইয়া খান, জুলফিকারালি ভুট্টো, মুজীবুর রহমান, আরো অনেকের কথা। খবরের কাগজেও বেরোয় যুদ্ধের খবর। বীরত্বের খবর। শিরিন বানু বলে একটা মেয়ে কেমন করে নিজের গায়ে বোমা বেঁধে রেখেছিল, তারপরে সে নিজের প্রাণ দিয়ে শত্রুর ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছে, এসব খবর শুনে দুর্গাপুজোর সময় ঠাকুরের কাছে প্রার্থনাও করেছি মনে হয় জয় বাংলারা যেন যুদ্ধে জিতে যায়।
    সত্যিই তাই হলো। শীতের সন্ধেয় মশার ভয়ে জানলা দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে ছিলাম ঘরের ভেতরে। বাইরে খুব হৈ চৈ। জানলা একটু ফাঁক করে দেখা হলো কী ব্যাপার।
    পাড়ার লোকেরা, মুরুব্বিরা খুব চেঁচাচ্ছে, আলো জ্বালান, আলো জ্বালান। ব্ল্যাক আউট আর নেই। যুদ্ধ শেষ।
    দৌড়ে গিয়ে ঠাকুমাকে কথাটা বলব ভেবেই মনে পড়ল ঠাকুমা তো মরে গেছে। ঠাকুমা জানতেই পারল না, জয় বাংলা হয়ে গেছে। যুদ্ধের আগেই তো মরে গেছে, মুক্তিযুদ্ধও জানল না, জয বাংলাও না।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৫:১১620810
  • ক্রিসমাসের ছুটির আগেও বেশ কদিন ইস্কুল হয়েছে। ডে স্কুল। বাংলাদেশ বলে একটা নতুন দেশ তৈরী হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান বলে আর কিছু নেই। চার নম্বর হরিনাথ দে রোডে থাকত আমার ক্লাসমেট রিনি। ঘর একতলায়। রিকশা করে ইস্কুলে যাবার সময় অনেকদিন দেখতাম ও তখনো জানলার ধারে বসে আছে, একটু পরে বেরোবে বাড়ি থেকে। রিনি আমার পাশের সীটে বসত ক্লাসে। সেদিন আমাদের জমা দেওয়া বিস্কুটের প্যাকেটগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসে। বিস্কুটগুলো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে, মিইয়ে নরম হয়ে গেছে। আরো জিনিসপত্র ফেরৎ নিচ্ছিলাম আমরা। রিনি মর্নিং স্কুলে যাবে, তবে ওর সেকশন আলাদা আমার থেকে। আমাকে দিয়েছে সি সেকশান। রিনিকে বি। প্রজ্ঞা পারমিতাকে এ সেকশান, আরো অনেককে বি সেকশান দিয়েছে। আমার মনখারাপ হয়ে যায়। একেই মর্নিং স্কুল। ভোরে উঠতে হবে, ইউনিফর্ম পরতে হবে, এতদিন ইউনিফর্ম ছিলো না ইস্কুলে। তারপর একা থাকতে হবে সারা দিন, সারা দুপুর। বিকেল পাঁচটা অবধি প্রায়। সি সেকশানে আরও দুজনকে দিয়েছে যদিও। অম্বালিকা আর পত্রলেখাকে। কিন্তু ওরা আমার তেমন বন্ধু নয়। আমি ঠিক করে ফেলি অন্য ইস্কুলে ভর্তি হব। ডে স্কুল।
    সেদিনই আমাদের ইস্কুলে শীতবুড়োর উৎসব হয়। শীতবুড়ো মানে সান্টা। আসলে আমাদের লীলাদি লাল আলখাল্লা পরে শীতবুড়ো সাজে। লীলাদি টিচার নয়, আয়া গোছের। খুব বুড়ো আর গরীব মতন। লীলাদিকে আমরা কোনোদিনো ফর্সা কাপড় পরতে দেখিনি। অন্যদিন কাঠের হাতলওলা পুরোনো একটা কাপড়ের বটুয়া হাতে লীলাদিকে দেখা যেত, শীতবুড়ো সাজলে লীলাদির হাতে থাকে লম্বা একটা ঝোলা। সেই ঝোলার মধ্যে থেকে খেলনা বের করে করে সবাইকে বিলিয়ে দেয় শীতবুড়ো। খেলনা হাতে নিয়ে রিনির সঙ্গে অনেক সিরিয়াস আলোচনা হয় আমার। আমরা দুজনেই পোলিটিক্স যুদ্ধ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়ে খুব ওয়াকিবহাল। আমার আলোচনার মূল টপিক তখন মুজিবুর রহমান। বেশ কিছুদিন থেকেই রেডিওতে অনেক দেশাত্মবোধক গান হয়, সবই প্রায় মুক্তিযুদ্ধকে লক্ষ্য করে। তাতে একটা গান আছে, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ... আকাশে বাতাসে... ইত্যাদি ইত্যাদি। গানটা সবাই শুনেছে। রিনি আমাকে বোঝায়, মুজিবুর রহমানকে কেন পাকিস্তানীরা মেরে ফেলেনি জানিস? যেই মেরে ফেলবে, ওমনি লাখ লাখ মুজিব হয়ে যাবে।
    কেমন করে? আমি জিনিসটা বুঝতে পারিনা। কেউ মরে গেলে তো একেবারেই শেষ হয়ে যায়, মেরে ফেললেও সেরকমই হওয়া উচিৎ। লাখ লাখ হবে কীকরে?
    রিনি আমাকে ঠিক গুছিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারে না। তবে আমার বক্তব্যটা ও বুঝেছে। এমনিতে মরে গেলেই শেষ। কিন্তু মুজিবরের ব্যাপারটা অন্যরকম। সেই জন্যেই ভয় পেয়ে পাকিস্তানীরা মুজিবকে মারে নি। মেরে ফেললেই যে লাখ লাখ মুজিবুর তৈরী হয়ে যাবে। তারপরে এই গানটার রেফারেন্স দেয়।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৫৪620811
  • সত্যি সত্যিই একটা ডে স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা হয়েছিল আমাকে। ইস্কুলে ছুটি পড়বার একদুদিনের মধ্যেই একদিন সকাল বেলা আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ মায়ের সঙ্গে ট্রাম থেকে নামলাম ধর্মতলা লোরেটোর উল্টোফুটে। ইস্কুল প্রায় ফাঁকা, নয়ত ছাত্রীদের ছুটি পড়ে গিয়ে থাকবে। মেম সাহেবের মতো দেখতে এক মহিলা, পরনে শাড়ির বদলে ফুলহাতা ফ্রক, মাথায় কেমন একটুকরো কাপড় বাঁধা, আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। আমার এমনিতেই কেমন ভয় ভয় করছিল। তারপর সে আমাকে কী যে বলল, তার বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারলাম না। এরপরে মাকে ডেকে নিয়ে এলো সেখানে, যা বুঝলাম ভর্তির পরীক্ষায় আমি পাশ করিনি। অথচ আমি কিন্তু ইংরিজি জানি। লিটল মিস্ মাফেট থেকে শুরু করে হামটি ডামটি ইত্যাদি, মানে ঐ সিরিজের যাবতীয় কবিতা আমার মুখস্থ। ছোটো ছোটো সেন্টেন্স বলতে পারি, বানান ঠিক লিখি, হাতের লেখাও মন্দ নয়। তবু আমি ফেল হয়ে গেলাম। ঐযে সে যে কী বলল, তা বুঝতেই পারিনি। পরে জেনেছিলাম সে নাকি আমাকে আমার নাম জিগ্যেস করেছিল, কিন্তু ঐরকম উচ্চারণে আমার কান অভ্যস্থ ছিলো না। হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম।
    আর কী করা যাবে। ভাগ্যে আছে মর্নিং স্কুল। আরো অনেক কিছু ভাগ্যে আছে। তারা এক এক করে আসছে। বাবার অফিস থেকে বদলির অর্ডার চলে এলো। বাবা চলে যাবে কোলকাতা ছেড়ে। দিদিমণি এখনো ফিরছে না। জানুয়ারী মাসে বাবা চলে গেলে আমাকে ইস্কুলে নিয়ে যাবে কে? আমি ইস্কুল থেকে ফিরব কীকরে? বুকলিস্ট পেয়ে গেছি। নতুন বই সব কেনা হয়ে গেছে। শুধু বাবার শরীরটা সেরকম ভালো নেই মনে হয়। জ্বর হয়েছে। ক্রিসমাসের পরে ডাক্তারও দেখিয়েছে, কাশির সঙ্গে রক্ত উঠছিলো। তাই বাবা আলাদা অন্য ঘরে শুচ্ছে। দিদিমণির ঘরে। ঊনত্রিশে ডিসেম্বরের সকাল। মা একটু পরেই বেরিয়ে যাবে অনেকদূর, সেই যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে, পড়াশুনোর কীসব কাজ আছে, ফিরবে বিকেলে বা রাত্রে। উত্তরের সেই ঘরটায় উত্তরের তিনটে জানলাই বন্ধ কারন বাইরে থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকছে। আমি খাটের পায়ের দিকটায় বসে আছি। কে একজন যেন এসেছে বাড়িতে কথা বলছে বাহার সঙ্গে। বাবা শুয়ে শুয়েই কথা বলছে। ডাক্তার বলেছে একদম বেডরেস্ট দরকার। এমন সময় নাটকের দৃশ্যের মত সেঘরে ঢুকলো আমার জেঠতুতো দাদা। সে সেবছর শিবপুরে ফাইনাল ইয়ার। আমাদের কারো দিকে সে তাকায় না। সোজা বাবার কাছে খাটের মাথার কাছটায় চলে যায়। তারপর বাবার কানে কানে কী যেন বলে। ঘরের সবাই চুপ। বাবা আস্তে আস্তে উঠে বসে। তারপর দাঁড়ায়। কেউ একজন বোধয় জিগ্যেস করে, কী হয়েছে?
    হুবহু কথাগুলো মনে পড়ে না, তবে জানা যায়, কিছুক্ষণ আগে দিদিমণি মরে গেছে।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:a5fb:4f99:e9ac:***:*** | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:২৫735709
  • এটা তুলে দিলাম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন