এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.96.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৪২619605
  • হরেকরকম হাপু দা=১
    রামায়ণের রচনাকাল
    [হাপুদা হলেন হারাধন পুরকায়স্থ।সারাজীবন নানা পেশা গ্রহণ করেছেন।এখন অখন্ড অবসর।সত্তরের কাছাকাছি বয়স,কিন্তু সটান চেহারা এবং আড্ডাবাজ মানুষ।আর পুরাণে অগাধ পান্ডিত্য।বাড়িতে একটি ছোটখাটো লাইব্রেরির আশি শতাংশ বই পুরাণ বিষয়ক।এখনও নিয়মিত বই-পত্র কেনেন,নিজেকে আপডেট রাখেন।আমাদের,মানে পাড়ার ছেলে-পুলেদের সঙ্গ করেন।সকলের দাদা।-মাই ডিয়ার লোক।তাঁর সাথে আড্ডায় যখন পুরাণ উঠে এসেছে,তা আমি হুবহু ধরে রেখেছি মগজবাক্সে।সেগুলোই আপনাদের পরিবেশন করব।]
    সক্কালবেলা ভাটুর চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চটাতে হাপুদাকে নিয়ে আড্ডা চলছে।বাজার ফেরত পাড়ার নুটুদা জিজ্ঞাসা করলেন হাপু দাকে,’হারাধন বাবু,আপনি কি বলতে পারেন রামায়ণটা ঠিক কোন সময়ে লেখা হয়েছিল?
    হাপু দা-র তৎক্ষণাৎ উত্তর, ‘খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় বা দ্বিতীয় শতকের কাছাকাছি রামায়ণ রচনার সূত্রপাত।খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় বা ততৃীয় শতকে,কারো মতে চতুর্থের প্রথমাংশে রামায়ণ বর্তমান কলেবর ধারণ করে।সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কাহিনীর বিভিন্ন অংশ অবলম্বনে নানা স্থানে প্রক্ষিপ্ত কিছু গাথা রচিত হ’তে থাকে।খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় বা দ্বিতীয় শতকে কিছু কিছু গাথা পরস্পর সংপৃক্ত হয়ে রামায়ণের কান্ডগুলির কাঠামো প্রস্তুত করে।খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে বাল্মীকি বা অন্য কোনো মহাকবি এইগুলিকে সংহত রূপ দেন।তারই শ’খানেক বছরের মধ্যে অর্থাৎ,খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতকের শেষদিক থেকে খ্রীষ্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে মূল রামায়ণ অর্থাৎ,অযোধ্যা থেকে লঙ্কাকান্ড পযর্ন্ত গ্রন্থটি বর্ণনা ও অলঙ্কার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।এর পর এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রথম ব্রাহ্মণ্য বা ভার্গব প্রক্ষেপ অর্থাৎ,আদিকান্ডের প্রথমার্ধ ও উত্তরাকান্ড,যা সমাপ্ত হয় খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে।পরের প্রক্ষেপ সম্ভবত দ্বিতীয় শতকে এবং হয়ত চতুর্থের শুরুতে এর শেষতম প্রক্ষেপ।আর কিছু জানতে চাও?’
    -‘প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পেয়েছি।ধন্যবাদ দাদা।’-নুটুদার একটু দ্রুতই প্রস্থান।
    -‘ বুইলি, আমাকে বাজিয়ে দেখলে।এসব নুটুর কোনো দরকার নেই।ওর শালা আবার রামায়ণে কখন মতি-গতি হ’ল!’-হাপুদা কথাটা শেষ করেই একটা সিগারেট ধরালেন।
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.96.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৫২619613
  • হরেকরকম হাপু দা=২

    লক্ষ্মণকান্ড(প্রথম পর্ব)

    ডাক হরকরা
    পিঞ্চের নাকের উপর ভ্রমরার সাইজে ফোড়া।বেচারি খুব কষ্ট পাচ্ছে।ভাটুর চায়ের দোকানে সকালে চা খেতে এসেছে।সে বেচারি বলবি তো বল সদ্য চা খেতে আসা হাপু দাকেই বলে বসল-ধুর!নাকটাকেই কেটে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
    আমি বললুম,ওরে পিঞ্চে,লক্ষ্মণকে খবর দে।ও নাক কাটায় ওস্তাদ।
    কথাটা বলেই হাপুদার পাল্লায় পড়ে গেলুম।
    -বুইলি মাস্টার,লক্ষ্মণের মহিলাদের নাকের প্রতি একটা অদ্ভূত ক্রোধ বা দুর্বলতা ,যাই বলিস না,কিছু একটা ছিল।বল দিকিনি লক্ষ্মণ কটা মহিলার নাক কেটে ছিল?
    -মহিলাদের আবার কোথায় দেখলে?ওই তো শুধু শূর্পনখার নাক কেটে ছিল।
    -আমি আজ কনফার্মড্ হলাম।
    -কি ব্যাপারে?
    -তুই রাজনীতি করে স্কুলে ঢুকেছিস।শালা কিছুই জানিস না!
    উত্তর দেওয়া মূর্খতা।চেপে গেলাম।ভাটু মুচকি হাসল।বেচারা পঞ্চু হাসতেও ভুলে গেছে।
    -শোন মূর্খ মাষ্টার,লক্ষ্মণ তিন তিনটি মহিলার নাসিকা কর্তন করেছিলেন।
    -বল কি গো?কপালে হাত দিয়ে দেখেলিলুম চোখটা ঠিক যায়গায় আছে কিনা!
    -প্রথমে তারকারাক্ষসীর নাক আর কান কাটলেন,তারপর শূর্পনখার নাক,আবার মতঙ্গমুনির আশ্রমে রাক্ষসী অয়োমুখী লক্ষ্মণকে জড়িয়ে ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারও নাক,কান,স্তন কেটে দিয়েছিলেন....সত্যি বুইলি পুরুষপুঙ্গব!তুমি বিয়ে করবেনা তো ভালো বাপু,তুমি কেন তাদের এমন অবস্থা করে দেবে যে আর কেউই তাদের বিয়ে করবে না?বেটা হাড় বজ্জাত।
    -আচ্ছা,শূর্প মানে তো কুলো,শূর্পনখা মানে কুলোর মত সুন্দর নখ।তা নিশ্চয়ই নখের জন্য সবচেয়ে গর্বিতা ছিলেন শূর্পনখা।তা লক্ষ্মণ তো অনায়াসেই নাক না কেটে নখগুলোই উপড়ে নিলে পারতেন।এক্কেবারে থার্ডডিগ্রি।
    -ওই জন্যই তো বললাম নাকের উপর বেশি দুর্বলতা ছিল,তিনজনের নাক ছাড়েননি!
    -সেদিন ফেসবুকে দেখলাম লক্ষ্মণ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছিল।লক্ষ্মণ নাকি বৌদি বাজি করতেন...বৌটার দিকে খেয়াল করেননি....আরো আনেককিছু।
    -এতো গলদা চিংড়ি কেস....এই জন্য ওটা ফেসবুক নয়,কেসবুক....একবার নেশায় পড়লে কেস খেলে।
    -গলদা চিংড়ি কেসা বুঝলুম না!
    -আরে মুড়ো-ল্যাজা বাদ দিয়ে ধর নিয়ে টানাটানি...আগে পরে কিছুই বুঝলুম না,কিছু আলপটকা মন্তব্য করলুম।
    -একটু খোলসা করে দিননা বস্....
    - রামের শালী,জনকের অরিজিনাল কন্যা উর্মিলা।জনকের নাম ছিল বুইলি সীরধ্বজ।৮০% লোক তা জানেন না।তার ভাই কুশধ্বজের এক মেয়ে মান্ডবীর সাথে বিয়ে হ’ল ভরতের,অন্য মেয়ে শ্রুতকীর্তির সঙ্গে বুইলি বিয়ে হ’ল শত্রুঘ্নের...
    -লোক খাওনোর পয়সা বেঁচে গেল,একবারে পরিবারের চার মেয়ের একটা বিয়ের কার্ডে নেমন্তন্ন,আবার এক প্লেটে চারটে বিয়ের ভোজ..কত আর গিলবি?আচ্ছা হাপু দা কোন ক্যাটারার কনট্রাক্ট পেয়েছিল?
    -আরে বল্মীকি অত ডিটেলে যাননি।গেলে এইসব প্রশ্নই উঠত না।জানিস আমার একসময় বুইলি মনে হয়েছিল,লক্ষণ আসলে বিয়েই করেননি।ওই উর্মিলা প্রক্ষিপ্ত।নয়ত একবার শুধু বিয়ের কথা কয়েকটা লাইনে বলেই বাল্মীকি একেবারে চুপ!এমন কি ধর সীতা যখন বায়না করছেন বনে যাবে বলে,রাম তো বুইলি বলতেই পারতেন –তুমি গেলে উর্মিলাও বায়না করবে, বা উর্মিলাকে তো লক্ষণ রেখে যাচ্ছে,তা তুমি কেন থাকবেনা?তুমি কোথাকার কোন লাটের বেটি হে?
    -হ্যাঁ সে তো ঠিকই।আমি যতদূর জানি,রাম যখন বনে যাবার সময় কৌশল্যার অনুমতি নিচ্ছেন তখন বলেছিলেন ‘আপনার,আমার,বৈদেহীর,লক্ষ্মণের এবং সুমিত্রার শ্রেষ্ঠ ধর্ম এই যে,আমরা বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব’।বুঝুন,সবাই আছে,রাম দুটো ক্লিয়ার ডিভিশন করে দিচ্ছেন অযোধ্যার রাজনীতির,কে কোন টিমে থাকবে।দ্বিতীয় টিমে তাহলে থাকল গিয়ে দশরথ,কৈকেয়ী,ভরত,শত্রুঘ্ন,মান্ডবী,শ্রুতকীর্তি।দ্বিতীয় টিমের নামোচ্চারণ করেনি বটে, কিন্তু ফার্স্ট তিমের নাম এনাউন্সড্। একটিবার ও উর্মিলার নাম নেই!অথচ তার তো প্রথম টিমেই থাকার দরকার কথা!
    -রাজনীতি করে ঢুকেছিস বটে,কিন্তু একটু আধটু জানিস দেখছি!আবার দেখ,রাম বিবাহিত জেনেও শূর্পনখা তাঁকে বিয়ে করতে চাইল।রাম কিন্তু বুইলি বলতে পারতেন,লক্ষ্মণ বৌ নিয়ে আসেনি, তুমি বরং তাকেই বিয়ে কর।এই বন-জঙ্গলে ও একটা সঙ্গী পাবে।কিন্তু সত্যবাদী রাম কী বললেন?-‘এহচ্ছে আমার ছোট ভাই লক্ষ্মণ।খুব চরিত্রবান ছেলে আর সুদর্শন।ও বিয়ে-থা করেনি।রূপের বিচারে ওই তোমার তুল্য।
    - আচ্ছা,রাম তো সত্যবাদী,একথা একাধিকবার বলা হয়েছে।সীতা স্বয়ং সার্টিফাই করেছেন। সুতীক্ষ্ণের আশ্রম থেকে যাত্রাকালে সীতা রামকে কিঞ্চিত জ্ঞান বিতরণ করেন, ‘মিথ্যে কথা বলা,অন্যের স্ত্রীকে ভোগ করা আর অকারণে হিংস্রতা প্রকাশ করা-এই তিনটে কারণেই লোকে অধর্মগ্রস্ত হয়ে পড়ে।রাঘব,প্রথম দুটো দোষ আপনার আগেও ছিলনা,পরেও হবেনা।’
    -তা হলেই বোঝ,আমার কেন ধারণা হয়েছিল?তাহলে তো ধরে নিতে হয়,রামের সত্যবাদিতা আপেক্ষিক!সে সবার কাছে সত্য কথা বলেনা।অথচ যাঁর নেচার সত্যি কথা বলা,সে তো বুইলি সর্বত্র সত্যি কথাই বলবেন,এমন রেশনিং করবেন না!!আবার অয়োমুখীও লক্ষ্মণকে অবিবাহিত জেনেই বিয়ে করতে চেয়েছে!
    -যত্তসব ঘাঁটু কেস!
    -আবার লক্ষ্মণ ফিরে এসে উর্মিলার কোনো খোঁজই নিলেন না,এমন কি মায়ের কাছেও না!সারা রামায়ণে একটি বারের জন্য উর্মিলার নাম উচ্চারণ করলেন না.বনবাসে দেখছিস দাদা বৌটাকে নিয়ে মস্তিতে আছেন,তোর কি একমুহুর্তের জন্যও বুইলি কোনো জীবন সঙ্গিনীর জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেললি না রে!আশ্চর্য কান্ড বটে!কিছু হর্মোনাল প্রবলেম ছিল কিনা কে জানে!
    -তাহলে তোমার এই ধারণা ভাঙ্গল কী করে?লক্ষ্মণের আর উর্মিলার সন্তান আছে বলে?
    -সে তো আরেক কেস!ঋষিকেশ মুখুজ্জের গোলমাল সিনেমাটা দেখেছিলি?
    পিঞ্চে এতক্ষণ চুপটি হয়ে চা খাচ্ছিল।হঠাৎ বলে বসল,হ্যাঁ দেখেছি।আজয় দেবগন ছিল..
    -তুই থামবি?এই গোলমালের সময় তুই জন্মাসনি।এটা অমল পালেকর আর উৎপল দত্তের....
    -ওফ্,ও সব আদ্যিকালের বই-পত্তর দেখিনা-পিঞ্চের সাফ জবাব।
    -আর একবার কিছু বললে আমিই তোকে বুইলি নাক ফাটিয়ে দেব উইথ ফোঁড়া...আর বই তো পড়ে পাঁঠা,ফিল্ম বা সিনেমা বলতে পারোনা মূর্খ?
    -হ্যাঁ হ্যাঁ আমি দেখেছি-আমি চিঁকার করে বলে উঠলুম,কি বলবে বল...
    -আরে ওখানে উৎপল দত্ত মিসেস শ্রীবাস্তবকে বলেছিলেন না-আপকো ফামিলিমে ক্যয়া জরুয়া কা পরম্পরা হ্যঁয়?এখানেও বুইলি তাই কেস।রামের যমজ ছেলে-লব কুশ।আবার লক্ষ্মণেরও যমজ ছেলে-অঙ্গদ আর চন্দ্রকেতু।
    -বা:!
    -ওরে এখানেই শেষ নয়।ভরত-মান্ডবীর ও যমজ ছেলে-তক্ষ আর পুষ্কল।
    -অ্যঁ!
    -ওই বেটা শত্রুঘ্নেরও যমজ রে-সুবাহু আর শত্রুঘাতী।
    -এ মা একটাও মেয়ে নেই?মেয়ে বাড়িতে না থাকলে চলে?
    -ভালোই হয়েছে বুইলি?ওই সময় মেয়েদের হালত কি ছিল দেখত!কোনো মান-ইজ্জত ছিল?প্রতিশোধ নিতে রাবণের কোনো নাতি যদি লক্ষণের মেয়ের নাক উড়িয়ে দিত?
    -আরিব্বাপ,রামায়ণ পার্ট-২ .......পিঞ্চু বলেই চুপ।
    -তা এবার বল,তোমার ধারণা ভাঙলো কিসে?
    -না,আজ আর না...বাজারে যাই।নয়ত হোমফ্রন্টে লঙ্কাকান্ড ঘটবে।আবার বিকেলে আড্ডা হবে।তখন বলব।
    একটা সিগারেট ধরিয়ে হাপু দা বাজারের দিকে হাঁটা লাগালেন,আমিও স্কুলে জন্য রেডি হব বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম।কিন্তু মনে নানা প্রশ্নের লড়াই ও চলতে লাগলো.....(চলবে)
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.96.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৫২619612
  • হরেকরকম হাপু দা=২

    লক্ষ্মণকান্ড(প্রথম পর্ব)

    ডাক হরকরা
    পিঞ্চের নাকের উপর ভ্রমরার সাইজে ফোড়া।বেচারি খুব কষ্ট পাচ্ছে।ভাটুর চায়ের দোকানে সকালে চা খেতে এসেছে।সে বেচারি বলবি তো বল সদ্য চা খেতে আসা হাপু দাকেই বলে বসল-ধুর!নাকটাকেই কেটে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
    আমি বললুম,ওরে পিঞ্চে,লক্ষ্মণকে খবর দে।ও নাক কাটায় ওস্তাদ।
    কথাটা বলেই হাপুদার পাল্লায় পড়ে গেলুম।
    -বুইলি মাস্টার,লক্ষ্মণের মহিলাদের নাকের প্রতি একটা অদ্ভূত ক্রোধ বা দুর্বলতা ,যাই বলিস না,কিছু একটা ছিল।বল দিকিনি লক্ষ্মণ কটা মহিলার নাক কেটে ছিল?
    -মহিলাদের আবার কোথায় দেখলে?ওই তো শুধু শূর্পনখার নাক কেটে ছিল।
    -আমি আজ কনফার্মড্ হলাম।
    -কি ব্যাপারে?
    -তুই রাজনীতি করে স্কুলে ঢুকেছিস।শালা কিছুই জানিস না!
    উত্তর দেওয়া মূর্খতা।চেপে গেলাম।ভাটু মুচকি হাসল।বেচারা পঞ্চু হাসতেও ভুলে গেছে।
    -শোন মূর্খ মাষ্টার,লক্ষ্মণ তিন তিনটি মহিলার নাসিকা কর্তন করেছিলেন।
    -বল কি গো?কপালে হাত দিয়ে দেখেলিলুম চোখটা ঠিক যায়গায় আছে কিনা!
    -প্রথমে তারকারাক্ষসীর নাক আর কান কাটলেন,তারপর শূর্পনখার নাক,আবার মতঙ্গমুনির আশ্রমে রাক্ষসী অয়োমুখী লক্ষ্মণকে জড়িয়ে ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারও নাক,কান,স্তন কেটে দিয়েছিলেন....সত্যি বুইলি পুরুষপুঙ্গব!তুমি বিয়ে করবেনা তো ভালো বাপু,তুমি কেন তাদের এমন অবস্থা করে দেবে যে আর কেউই তাদের বিয়ে করবে না?বেটা হাড় বজ্জাত।
    -আচ্ছা,শূর্প মানে তো কুলো,শূর্পনখা মানে কুলোর মত সুন্দর নখ।তা নিশ্চয়ই নখের জন্য সবচেয়ে গর্বিতা ছিলেন শূর্পনখা।তা লক্ষ্মণ তো অনায়াসেই নাক না কেটে নখগুলোই উপড়ে নিলে পারতেন।এক্কেবারে থার্ডডিগ্রি।
    -ওই জন্যই তো বললাম নাকের উপর বেশি দুর্বলতা ছিল,তিনজনের নাক ছাড়েননি!
    -সেদিন ফেসবুকে দেখলাম লক্ষ্মণ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছিল।লক্ষ্মণ নাকি বৌদি বাজি করতেন...বৌটার দিকে খেয়াল করেননি....আরো আনেককিছু।
    -এতো গলদা চিংড়ি কেস....এই জন্য ওটা ফেসবুক নয়,কেসবুক....একবার নেশায় পড়লে কেস খেলে।
    -গলদা চিংড়ি কেসা বুঝলুম না!
    -আরে মুড়ো-ল্যাজা বাদ দিয়ে ধর নিয়ে টানাটানি...আগে পরে কিছুই বুঝলুম না,কিছু আলপটকা মন্তব্য করলুম।
    -একটু খোলসা করে দিননা বস্....
    - রামের শালী,জনকের অরিজিনাল কন্যা উর্মিলা।জনকের নাম ছিল বুইলি সীরধ্বজ।৮০% লোক তা জানেন না।তার ভাই কুশধ্বজের এক মেয়ে মান্ডবীর সাথে বিয়ে হ’ল ভরতের,অন্য মেয়ে শ্রুতকীর্তির সঙ্গে বুইলি বিয়ে হ’ল শত্রুঘ্নের...
    -লোক খাওনোর পয়সা বেঁচে গেল,একবারে পরিবারের চার মেয়ের একটা বিয়ের কার্ডে নেমন্তন্ন,আবার এক প্লেটে চারটে বিয়ের ভোজ..কত আর গিলবি?আচ্ছা হাপু দা কোন ক্যাটারার কনট্রাক্ট পেয়েছিল?
    -আরে বল্মীকি অত ডিটেলে যাননি।গেলে এইসব প্রশ্নই উঠত না।জানিস আমার একসময় বুইলি মনে হয়েছিল,লক্ষণ আসলে বিয়েই করেননি।ওই উর্মিলা প্রক্ষিপ্ত।নয়ত একবার শুধু বিয়ের কথা কয়েকটা লাইনে বলেই বাল্মীকি একেবারে চুপ!এমন কি ধর সীতা যখন বায়না করছেন বনে যাবে বলে,রাম তো বুইলি বলতেই পারতেন –তুমি গেলে উর্মিলাও বায়না করবে, বা উর্মিলাকে তো লক্ষণ রেখে যাচ্ছে,তা তুমি কেন থাকবেনা?তুমি কোথাকার কোন লাটের বেটি হে?
    -হ্যাঁ সে তো ঠিকই।আমি যতদূর জানি,রাম যখন বনে যাবার সময় কৌশল্যার অনুমতি নিচ্ছেন তখন বলেছিলেন ‘আপনার,আমার,বৈদেহীর,লক্ষ্মণের এবং সুমিত্রার শ্রেষ্ঠ ধর্ম এই যে,আমরা বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব’।বুঝুন,সবাই আছে,রাম দুটো ক্লিয়ার ডিভিশন করে দিচ্ছেন অযোধ্যার রাজনীতির,কে কোন টিমে থাকবে।দ্বিতীয় টিমে তাহলে থাকল গিয়ে দশরথ,কৈকেয়ী,ভরত,শত্রুঘ্ন,মান্ডবী,শ্রুতকীর্তি।দ্বিতীয় টিমের নামোচ্চারণ করেনি বটে, কিন্তু ফার্স্ট তিমের নাম এনাউন্সড্। একটিবার ও উর্মিলার নাম নেই!অথচ তার তো প্রথম টিমেই থাকার দরকার কথা!
    -রাজনীতি করে ঢুকেছিস বটে,কিন্তু একটু আধটু জানিস দেখছি!আবার দেখ,রাম বিবাহিত জেনেও শূর্পনখা তাঁকে বিয়ে করতে চাইল।রাম কিন্তু বুইলি বলতে পারতেন,লক্ষ্মণ বৌ নিয়ে আসেনি, তুমি বরং তাকেই বিয়ে কর।এই বন-জঙ্গলে ও একটা সঙ্গী পাবে।কিন্তু সত্যবাদী রাম কী বললেন?-‘এহচ্ছে আমার ছোট ভাই লক্ষ্মণ।খুব চরিত্রবান ছেলে আর সুদর্শন।ও বিয়ে-থা করেনি।রূপের বিচারে ওই তোমার তুল্য।
    - আচ্ছা,রাম তো সত্যবাদী,একথা একাধিকবার বলা হয়েছে।সীতা স্বয়ং সার্টিফাই করেছেন। সুতীক্ষ্ণের আশ্রম থেকে যাত্রাকালে সীতা রামকে কিঞ্চিত জ্ঞান বিতরণ করেন, ‘মিথ্যে কথা বলা,অন্যের স্ত্রীকে ভোগ করা আর অকারণে হিংস্রতা প্রকাশ করা-এই তিনটে কারণেই লোকে অধর্মগ্রস্ত হয়ে পড়ে।রাঘব,প্রথম দুটো দোষ আপনার আগেও ছিলনা,পরেও হবেনা।’
    -তা হলেই বোঝ,আমার কেন ধারণা হয়েছিল?তাহলে তো ধরে নিতে হয়,রামের সত্যবাদিতা আপেক্ষিক!সে সবার কাছে সত্য কথা বলেনা।অথচ যাঁর নেচার সত্যি কথা বলা,সে তো বুইলি সর্বত্র সত্যি কথাই বলবেন,এমন রেশনিং করবেন না!!আবার অয়োমুখীও লক্ষ্মণকে অবিবাহিত জেনেই বিয়ে করতে চেয়েছে!
    -যত্তসব ঘাঁটু কেস!
    -আবার লক্ষ্মণ ফিরে এসে উর্মিলার কোনো খোঁজই নিলেন না,এমন কি মায়ের কাছেও না!সারা রামায়ণে একটি বারের জন্য উর্মিলার নাম উচ্চারণ করলেন না.বনবাসে দেখছিস দাদা বৌটাকে নিয়ে মস্তিতে আছেন,তোর কি একমুহুর্তের জন্যও বুইলি কোনো জীবন সঙ্গিনীর জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেললি না রে!আশ্চর্য কান্ড বটে!কিছু হর্মোনাল প্রবলেম ছিল কিনা কে জানে!
    -তাহলে তোমার এই ধারণা ভাঙ্গল কী করে?লক্ষ্মণের আর উর্মিলার সন্তান আছে বলে?
    -সে তো আরেক কেস!ঋষিকেশ মুখুজ্জের গোলমাল সিনেমাটা দেখেছিলি?
    পিঞ্চে এতক্ষণ চুপটি হয়ে চা খাচ্ছিল।হঠাৎ বলে বসল,হ্যাঁ দেখেছি।আজয় দেবগন ছিল..
    -তুই থামবি?এই গোলমালের সময় তুই জন্মাসনি।এটা অমল পালেকর আর উৎপল দত্তের....
    -ওফ্,ও সব আদ্যিকালের বই-পত্তর দেখিনা-পিঞ্চের সাফ জবাব।
    -আর একবার কিছু বললে আমিই তোকে বুইলি নাক ফাটিয়ে দেব উইথ ফোঁড়া...আর বই তো পড়ে পাঁঠা,ফিল্ম বা সিনেমা বলতে পারোনা মূর্খ?
    -হ্যাঁ হ্যাঁ আমি দেখেছি-আমি চিঁকার করে বলে উঠলুম,কি বলবে বল...
    -আরে ওখানে উৎপল দত্ত মিসেস শ্রীবাস্তবকে বলেছিলেন না-আপকো ফামিলিমে ক্যয়া জরুয়া কা পরম্পরা হ্যঁয়?এখানেও বুইলি তাই কেস।রামের যমজ ছেলে-লব কুশ।আবার লক্ষ্মণেরও যমজ ছেলে-অঙ্গদ আর চন্দ্রকেতু।
    -বা:!
    -ওরে এখানেই শেষ নয়।ভরত-মান্ডবীর ও যমজ ছেলে-তক্ষ আর পুষ্কল।
    -অ্যঁ!
    -ওই বেটা শত্রুঘ্নেরও যমজ রে-সুবাহু আর শত্রুঘাতী।
    -এ মা একটাও মেয়ে নেই?মেয়ে বাড়িতে না থাকলে চলে?
    -ভালোই হয়েছে বুইলি?ওই সময় মেয়েদের হালত কি ছিল দেখত!কোনো মান-ইজ্জত ছিল?প্রতিশোধ নিতে রাবণের কোনো নাতি যদি লক্ষণের মেয়ের নাক উড়িয়ে দিত?
    -আরিব্বাপ,রামায়ণ পার্ট-২ .......পিঞ্চু বলেই চুপ।
    -তা এবার বল,তোমার ধারণা ভাঙলো কিসে?
    -না,আজ আর না...বাজারে যাই।নয়ত হোমফ্রন্টে লঙ্কাকান্ড ঘটবে।আবার বিকেলে আড্ডা হবে।তখন বলব।
    একটা সিগারেট ধরিয়ে হাপু দা বাজারের দিকে হাঁটা লাগালেন,আমিও স্কুলে জন্য রেডি হব বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম।কিন্তু মনে নানা প্রশ্নের লড়াই ও চলতে লাগলো.....(চলবে)
  • ন্যাড়া | 219.13.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ২৩:১৯619614
  • গুড হচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০১:৩৭619615
  • চলুক! চলুক!
  • PM | 222.159.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০২:১৫619616
  • বাঃ
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.99.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০৭:৫৫619617
  • হরেকরকম হাপুদা-৩

    লক্ষ্মণকান্ড(দ্বিতীয় পর্ব)

    ডাক হরকরা

    বাড়ি ফিরে থেকে হাপু দার অপেক্ষায় রয়েছি।বৌ চিকেন পাকাওড়া আর কফি খাওয়াবে,সেই টোপ ফেলতেই হাপুদা বাড়িতে আসতে রাজি-আহা,বৌমা পাকাওড়াটা জবরদস্ত পাকায়।যাব না মানে?
    সেই আশায় বসে আছি।সাতটায় বেল বাজল....
    হাপুদা ঘরে ডুকেই নাকটেনে কিছুর একটা গন্ধ নিলেন।বললেন-ওকে.....
    নিজেই চেয়ার টেনে বসে ডান পকেট থেকে গোল্ড ফ্লেক আর বাম পকেট থেকে দেশলাই বার করে ফস করে সিগারেট ধরিয়ে একটা মস্তির টান মেরেই বলতে আরম্ভ করলেন-যখন দেখলুম যে রাম সীতাকে উদ্ধার করার জন্য অতকিছু করলেন,অথচ সীতাকে সরাসরি বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না যে বংশের গৌরব বক্ষার জন্য বুইলি তিনি এই ‘অপারেশন লঙ্কা’ চালালেন কম্যান্ডো বাহিনী চিফ সুগ্রীব আর ডি-ফ্যাক্টো হনুমানকে নিয়ে,বৌটি কোনো ফ্যাক্টরই নয়,তখন আমার ভুল ভাঙল।ভাবলুম,আমি তো আমার বৌকে সীতা আর আমাকে রামচন্দর ভেবে ব্যাপারটা বিচার করছি....তাই ভাবছি রাম বেটার হিম্মত হ’ল কি করে?আমাদের বুইলি এটাই সমস্যা,পৌরাণিক কালকে আজকের বোধবিশ্বাস দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ভুলটা করে বসি।এই যে কে বেশ আপাতবই-তে বলেছিলেন,লক্ষ্মণ বৌদি বাজি করতে বনে গেছিলেন-সে একদম ভুল...
    -এই আপাতবইটা কী?
    -ওই তোদের ফেসবুক।ফেসভ্যলু হ’ল গিয়ে আপাতমূল্য,তাই ফেসবুক হ’ল গিয়ে আপাত বই।
    -আপনি জিনিয়াস-বলেই পদধূলি নিলাম।
    -বেঁচে থাক বাবা।হাপুদা আশীর্বাদ করলেন।আবার বলতে আরম্ভ করলেন-আজ পরকীয়া যথেষ্ঠ সহজলভ্য।ওই সমস্ত প্রেম-টেম নিয়ে লেখালিখিও হচ্ছে।তাছাড়া বুইলি পরের বৌ সবসময়ে সুন্দর।
    -হাপুদা...
    -ওহ,সরি...আরেকটা মস্তির টান....আবার আরম্ভ করলেন-কিন্তু রামায়ণের সময় এমনটি ছিলনা,এই সব হৃদয়ের ব্যাপার পুরুষেরা বুঝত না।মেয়েরা জানে এসব পুরুষের বোঝা কাজ নয়..তাই পরকীয়া মানেই শুধু ফিজিক্যালিটি...
    -হ্যাঁ,পুরাণে তো হাপুদা হরদম দেখেছি। একজনের বৌকে অন্য জন হরণ করে নিয়ে গিয়ে ভোগ করছেন।তখন নারী মানেই তো সম্পত্তি আবার ভুক্ত বৌ-রা সংসারে ফিরেও আসছে...চন্দ্র বৃহস্পতির বৌ তারাকে তুলে নিয়ে গেলেন,জন্ম হ’ল বুধের আবার তারা সংসারে ফিরেও এল,বৃহস্পতি তাঁর গর্ভাবতী বৌদি দীর্ঘতমাকে ধর্ষণ করলেন,রাবণ গর্ব করে সীতাকে বলেছিলেন তিনি অনেকের বৌকে তুলে এনেছেন,কিন্তু সীতা হবে রাজমহিষী!
    -একশত ভাগ ঠিক।অতিথি সৎকার হ’ত বাড়ির মেয়ে-বৌকে বিছানায় পাঠিয়ে....সব্বাই কলি যুগকে বদনাম করে,কারণ এই যুগে এই সব বেলেল্লাপনা বেআইনি,তাই আমরা অনেক বেআইনী কাজ দেখি।একটু ভালো করে পুরাণটা পড়,দেখবি কলিযুগই সত্য যুগ।একটা ধর্ষণকে নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায়।আর সত্য-ত্রেতা-দ্বাপরে নারীরা ছিল চাষযোগ্য জমি,যে কেউ লাঙ্গল চালাতে পারত।ক্ষেত্রজ সন্তান কথাটা এসেছেই তো সেখান থেকে!ওই সকালে বললুম সীতা বলেছে পরের স্ত্রীকে ভোগ করা অধর্ম,সেখানে প্রেমের কোনো সিন নেই....ডাইরেক্ট ভোগ।তারজন্য চৌদ্দবছর বনবাসের কষ্ট?নৈব নৈব চ।
    -অহল্যা-ইন্দ্রের কেসটাও শুধু ফিজিক্যালিটি জানি,আমি বললাম,কিন্তু রাধা-কৃষ্ণ?
    -জানতাম তুই কৃষ্ণের পরকীয়ার কথা তুলবি।এটা কী ডেডিকেটেড পরকীয়া?এটলিস্ট কৃষ্ণের দিক থেকে?একাধিক সখির সাথে লটঘট করছেন।তা রাধা শেষের দিকে কৃষ্ণের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনের পরে ভালোবাসায় পড়ে গিয়েছিল বটে।কিন্তু কৃষ্ণ?নেভার।মথুরায় এলো,রাধা টোটাল ইরেজড্।লক্ষ্মণ বনে এলেন.উর্মিলা ইরেজড্। -হ্যাঁ,সে তো ঠিকই।এদিকে দেখ ,অর্জুণ আলরেডি দ্রৌপদী আর চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে করেছেন,উলূপীরে সাথে সঙ্গম করেছেন,এইগুলো অফিসিয়ালি।কৃষ্ণ জানেন।অথচ কৃষ্ণ সেই অর্জুনকে লেলিয়ে দিল নিজের বোনের পেছনে.একটি বারের জন্য জিজ্ঞাসা করলনা.বোনটিকে সে কি চায়!সেখানেও ছিল সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা।
    -আর লক্ষণের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।লক্ষ্মণের বনে আসাটাও বুইলি রাজনীতি।কেন তা বলছি ।এখন শোন,এই মধ্যযুগেও তো পরাজিত রাজার বৌয়েরা বুইলি অন্যান্য সম্পত্তির সঙ্গে জয়ী রাজারসম্পদে পরিণত হ’ত আর তাদের পাত্র-মিত্র-আমীর-ওমরাহ দের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হ’ত বা হেরেমে রাখা হ’ত।তা্হলে সে যুগে তুই ভাব কেন লক্ষ্মণ উর্মিলার কথা ভাববেন?রাম সীতার কথা ভেবেছেন?রাম নিয়ে যেতেই চাননি।
    -তাছাড়া,যে সীতা আগামী দিন অল্প সময়ের জন্য হলেও রাজরাণী হবেন,যাকে ঘিরে মূল ঘটনাটা ঘটবে,তাঁকে কবিতো একটু বেশি পাত্তা দেবেনই।দ্রৌপদীও তাই।
    -ভেরিগুড।পুরোটা রাজনীতি ন্য়,তোর পেটে কিছু আছে।তুই যে কথাটা বললি,সেটা সাহিত্যের দিক।দশরথের তিনশ পঞ্চাশজন স্ত্রী।তার মাত্র টেন পার্সেন্টকে কাব্যে আনলেই মহাভারতের চেয়ে বড় সাইজের হয়ে যাবে।একটা জীবৎকালে তো মহাকবিকে কাব্য শেষ করতে হবে!তাই চিরকালই কাব্যে উপেক্ষিত-উপেক্ষিতারা থাকবেন।আর সীতা-দ্রৌপদীরা হাইলাইটেড হবেনই।
    -শুনেছি বা পড়েছি অযোধ্যায় নাকি পারিবারিক রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছিলেন স্বয়ং কৌশল্যা?
    -একদম।তবে সে কথা এখানে নয়,অন্যদিন।এদিকে সীতা তো রামের সাথে ক্রমাগত তর্ক চালিয়েছেন।এই যে লোকে বলে,ইশ সীতা কী মুখরা ছিলেন।দাদার খোঁজ আনতে গড়িমসি করছে বলে দেওরকে যা মুখে এসেছে তাই বলেছেন!হ্যাঁ,বলেছেন।তবে দুপক্ষের আচরণেই একটা যুক্তি ছিল।সেটা পরে বলছি।এখন ঘটনাটা হ’ল,সীতাকে যখন বনবাসে নিয়ে যেতে ক্রমাগত অস্বীকার করেছেন রাম,সীতাকে বলছেন -অযোধ্যায় থেকে তুমি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ভরত আর শত্রুঘ্নকে ভাই আর সন্তানের মতো দেখভাল করবে,তখন কিন্তু বুইলি সীতা মুখরা হয়েই রামকে বলেছিলেন-‘আপনি আমাকে সামান্যা নারী ভেবে এই সব বলছেন।আপনার কথা শুনে আমার হাসি পাচ্ছে।’,বৌ-রা আমাদের যেমন ভয় দেখায়,তেমন রামকে ভয়ও দেখালেন,যদি আপনার সঙ্গে বনে না নিয়ে যান ,তবে আমি বিষ খেয়ে বা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে বা জলে ডুবে সুইসাইড করব’।
    -কী থ্রেট্ রে বাবা!
    - তা সীতা তো বুইলি গিয়ে রমের কানের সামনে শুনিয়ে চলেছেন,তাঁর যখন বিয়ে হ’ল তখন ছয় বছর বয়স,রামের তেরো।তারপর দীর্ঘ বারো বছর সুখের দাম্পত্যজীবন কাটালেন।এখন কেন ,অভিনেতাদের মতো তাঁকে রামচন্দ্র অন্যের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছেন?
    -তখন অভিনয় হ’ত?
    -আবকোর্স।মেয়েরাই অভিনয় করতা।সেও নয় একদিন হবে।শোন,তার পরে এক্কেবারে রামের পৌরুষে আঘাত করলেন, ‘আমার বাবা মিথিলাধিপ যদি জানতেন যে,তাঁর জামাইটি আকারে পুরুষ,কিন্তু কাজে স্ত্রী-তা হ’লে তিনি কী ভাবতেন’।ব্যাস রামচন্দ্র ক্লিন বোল্ড।আর এর থেকে বুইলি দুটো কথা বেরিয়ে আসে-প্রথমত,সীতা যে ভাবে নিজের মতকে ব্যক্ত করেছেন,বা জেদ করেছেন,তা উর্মিলা করেননি।এই টেনাসিটি আর কোনো বউ এর ছিলনা।এখানেই সীতা নায়িকা।যেমন পঞ্চপান্ডবেরর অনেক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ভ্রৌপদী নায়িকা।এঁরা ব্যতিক্রম,এঁরা নিজেদের কে প্রকাশ করেন,নিজেদের ভালো-মন্দকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।
    -তাই তো এঁরা ফোকাসড্,উর্মিলা-সুভদ্রা বা মান্ডবী-হিড়িম্বা-রা নন।মানে,পান্ডবভাইদের মোট ১৪টি স্ত্রী ছিল।কিন্তু মহাভারতে তারা কোথায়?
    -গুড।আর পুরুষাধিপত্য দেখাতে মহাকবিরাও একটা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন।বুঝিয়ে দিয়েছেন,মেয়েদের স্বাধীন চিন্তা –ভাবনা শুধু বিপদই টেনে আনে।এটাও প্রমাণ করেছেন যে মেয়েরা তাদের সীমারেখা অতিক্রম করলেই,নিজের সত্ত্বাকে জানান দিতে গেলেই বুইলি বিপদ-মৃত্যু-ধ্বংস অনিবার্য,সে ভারতের সীতা-দ্রৌপদী হোক বা ইউরোপের হেলেন হোক বা ইলেকট্রা হোক!দ্বিতীয়ত, বোঝ কেন সীতা লক্ষ্মণকে বলেছিলেন যে দেওরটির ধান্দা খারাপ,দাদা মরলে বৌদিকে বাগাবে বলে এই বিপদে দাদকে বাঁচাতে যাচ্ছেন না?সীতা জানতেন লক্ষ্মণ অত্যন্ত সাদাসিধে লোক,ওঁর ভেতর কোনো জটিলতা নেই।একথা ঠিক যে বৌদি বা ভ্রাতৃবধূকে ভোগ করাটা এমন কিছু বিষয় নয়।কিছুদিন বাদে বুইলি দেখব তো পাবোই বানর সমাজেও এই প্র্যাকটিশ আছে।কিন্তু,লক্ষ্মণ এমনটা নয়।বরং দাদার জন্য প্রাণ দিতেও কার্পণ্য করবেন না।আবার বুইলি দাদাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও কোনো মূল্যে ভাঙবেন না।
    -বুঝেছি।তাই অনুজ দ্রৌপদীর মতো সীতাও বুঝতেন পুরুষদের কোন দুর্বলতায় আঘাত করতে হয়!
    -আমার কাছে থাকলেই মাইরি তোর বুদ্ধি খোলে।বনবাসে আসার সময় রামকে প্রেস্টজে আঘাত করেছিলেন,কারণ রামকে ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না,আবার সেই রামের জন্যই বুইলি লক্ষ্মণের ইগোতে আঘাত করলেন সীতা।রামের প্রতি উভয়ের আনুগত্য প্রশ্নাতীত,আর পিওরলি এই আনুগত্য থেকেই দেওরটি বনবাসে আসা এটা সীতার কাছে জলের মতো সোজা।মোদ্দা কথা অযোথ্যার রাজনীতি লক্ষ্মণকে রাজবাড়ি থেকে জঙ্গলে টেনে এনেছে।কিন্তু সীতা আরো বড় খেলোয়ার।লক্ষ্মণ তো ভীমের পূর্বজ।একটু একরোখা মাথা মোটা টাইপের।ফিজিক্যাল লেবর বুইলি বেশি দেয়।বনবাসে সব খাটাখাটনি ওই তো করল।
    -এই ধরণের মানুষের কিন্তু মনটা খুব সাফ হয়,মনের জটিলতা থাকেনা।
    -হ্যাঁ,তাই সীতা জানতো লক্ষ্মণ যেটা স্বপ্নেও ভাবেনা.সেখানটাতে আঘাত করলেই কাজ হবে।এই মার্কা মানুষগুলোর মাথায় তো বুইলি কূটনীতিটা ঠিকঠাক ঢোকেনা।ঝট্ করে সেন্টু খেয়ে যায়।আর হ’লও তাই।
    -তুমি বলছিলে লক্ষ্মণের বনে আসাটাও রাজনীতি?
    হঠাৎ ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে লোকমাতা রমার প্রবেশ।হাপুদার কথা স্টপ।চোখদুটো জ্বলজ্বল করে বড় কাচের প্লেটের ওপর যেন সার্চ লাইট ফেলছে।সুতরাং.....(চলবে)
  • aka | 81.14.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০৮:২১619618
  • চলুক চলুক।
  • ঐশিক | 213.2.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০৯:২৯619619
  • বেশ লাগছে, পরের কিস্তি?
  • de | 190.149.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ১৫:৩২619606
  • ভালো হচ্ছে!
  • siki | 127.213.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ২৩:০০619607
  • পড়ছি :)
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.96.***.*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ২০:৪৭619608
  • হরেকরকম হাপুদা-৪

    লক্ষ্মণ কান্ড(তৃতীব পর্যায়)

    অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা)

    ছটি পাকাওড়া আর কফি খেয়ে,একটি সিগারেট ধরিয়ে আবার আরম্ভ করলেন হাপু দা।
    -লক্ষ্মণ স্ট্রেটওয়ে রামের কাছে তিনটি প্রপোজাল থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি লক্ষ্মণের বনবাসে যাওয়াটা নেহাত পারিবারিক রাজনীতির ফল।কারণ,লক্ষ্মণ বনবাসে কখনোই যেতে চায়নি।সুতরাং,নিজের বৌকে ছেড়ে পরকীয়া করতে যাবার কোনো প্রশ্ন ওঠেনা।আর লক্ষণের কাছে রামনছিলেন বেসিক্যালি পিতার বিকল্প।তাই সীতা লক্ষ্মণের বৌদি নন,মায়ের মতই।
    লক্ষ্মণ রামকে কী উপদেশ দিলেন?
    প্রথমত,লোক-জানজানি হওয়ার আগেই রাজ্য অধিকার করে নেওয়া উচিত।কেউ বাধা দিতে এলে,লক্ষ্মণ তাঁর তীর দিয়ে অযোধ্যাকে মনুষ্যহীন করে দেবে।যারা ভরতের পক্ষ নেবে,তাদের সকলের স্থান হবে যমালয়।মিনমিনে স্বভাব দেখানো মানেই পরাজিত হওয়া।
    দ্বিতীয়ত,বাপের বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে।ওই স্ত্রৈণ বুড়োটার কথা পাত্তাদেবার দরকার নেই।বরং বাবা এগেনস্টে গেলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হবে।প্রবোজন বোধে তাঁকে মেরে ফেলাও যেতে পারে।অর্থাৎ,ভাবটা এই যে রাম আমার বাবা-কাম-দাদা,টু-ইন-ওয়ান।তাঁর জন্য জন্মদাতাকে মেরে ফেলাটাও কোনো ব্যাপার নয়।
    -তাহলে লক্ষ্মণের দাদার প্রতি ডেডিকেশনের ডিগ্রিটা বোঝ একবার!
    -এর পর রামকে দাদাকেও একহাত নিলেন লক্ষ্মণ।বনছেন,ধর্ম-ধর্ম করে দাদার বুদ্ধিভ্রম হয়েছে।যে ধর্ম মানুষকে উচিত-অনুচিত জ্ঞান লোপ পাইয়ে দেয় সেই ধর্মকে লক্ষ্মণ পাত্তা দেয়না।কী দাদা তখন থেকে দৈব-দৈব করে চলেছেন?যে বীর্যহীন,সেই শুধু দৈব-টৈবের দোহাই দেয়।আত্মবিশ্বাসীরা এই সবের ধার ধারেনা।আজ লোকে দেখুক,যে দৈব ওঁর দাদাকে রাজ্যাভিষেক থেকে বঞ্চিত করেছে,সেই দৈব ব্যাটাকে পুরুষকার দিয়ে এখনি তুড়রুতুং করে উড়িয়ে দেবে।মনে রাখতে হবে কৌশল্যা কিন্তু লক্ষ্মণের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন!
    -তাহলে হাপুদা,লক্ষ্মণের মোদ্দা কথা,বাবাটাকে জেলে পুরতে হবে,তেমন প্রয়োজনে মেরে ফেলতে হবে।ভরত-শত্রুঘ্নকে মেরে পাট করে দেতে হবে,যাতে ত্রিসীমানায় যাতে দোবারা দেখা না যায়।আর যে হতচ্ছাড়ারাভরতের পোঁ ধরতে আসবে,এক্কেবারে যমালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।ওই সব ধর্ম-টর্ম ওরা মানেনি,আমাদেরও ওই সব ধর্ম-টর্ম কপচিয়ে লাভ নেই।এই কারণেই আমি বলেছিলাম,লক্ষ্মণ হলেন ভীমের পূর্বসূরী! –করেকট্,এই তো তুই আমার ভাষায় কথা বলতে শিখে গেছিস!
    -ধ্যাৎ,কোথায় তুমি ,আর কোথায় আমি?একটি প্রণাম ঠুকে দিলুম।

    -এমন লোক যাকে ভালোবাসে,তাকে অন্ধের মত অনুসরণ করে,আর ওই সব হৃদয়াবেগ এদের ধাতে নেই,পরকীয়া দূরাস্ত।এরা মুহুর্তের মধ্যে একটা বটবৃক্ষ উরে ফেলতে পারবে,কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও ফেসবুকে দেওয়ার চেয়ে একটা উন্নতমানের কবিতা লিখতে পারবেন না।এইতো যখন দশরথের আদেশে চোদ্দ বছরের জন্য সীতার ব্যবহারযোগ্য শাড়ি-গয়না একটা চামড়ার পেটিকায় দেওয়া হ’ল,তখন সেই পেটিকাটি একাই ল্ষ্মণ বয়ে নিয়ে চলেছিল,সঙ্গে প্রচুর ভারি ভাড়ি অস্ত্র-শস্ত্র।
    -রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা এমন লোককেই অনুচর পেতে চায়।সৌভাগ্য,এমনই কর্মীই বেশি পায়।
    -তাই লক্ষণের বনে যাওয়াটা নেহাত রাজনৈতিক।তাঁর ধারণা ছিল বনেও ভরত রামকে চোরাগোপ্তা আক্রমনে খতম করে দিতে পারেন।তাই আমার টিমকে লক্ষ্মণকে রক্ষা করতে হবে।লক্ষ্মণ একশতভাগ মনে করেন তাঁর টিম-ই অযোধ্যার একমাত্র লিগল-মানে,টিম অযোধ্যা। তাই যখন দশরথের মৃত্যুসংবাদ নিয়ে ভরত ভরদ্বাজমুনির আশ্রমে আসছেন,তখন একটা বড় শালগাছে চড়ে তা দেখেই রামকে বললেন,‘দাদ!আগুণ নেবান!সীতা ঘরে যান।দাদা তাড়াতাড়ি বর্ম পরুন,ধনুক আর বান হাতে নিন।নিষ্কন্টক রাজ্যভোগ করবেন বলে ভরত আমাদের মারতে আসছেন।আগে যে আমাদের এই ক্ষতি করেছেন,তাঁকে হত্যায় কোনো অধর্ম নেই।আজ আমি সব সৈন্য সমেত ভরতকে বধ করব।মন্থরার সাথে ওই কৈকেয়ীকেও বধ করব।এই জগতকে মহাপাপ থেকে মুক্ত করব।’তারপর রামের ধমক খেয়ে শান্ত হলেন।-এই হ’ল ল্ষ্মণ![আরো 'হরেকরকম হাপু দা আসছে।পরেরটা 'রাম-রসায়ন]
  • sp | 105.172.***.*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ২০:৫৩619609
  • এটা গোলা হচ্ছে, পরের কিস্তির অপেক্ষায় আছি।
  • অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা) | 24.99.***.*** | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ২৩:২৫619610
  • হরেকরকাম হাপুদা-৫

    অঞ্জন ঘোষ(ডাক হরকরা)

    "সমুদ্রের জল কেন নোনতা?"

    পুরী থেকে সকালেই ফিরেছি।পাড়ার মোড়ে এই প্রশ্নটা হঠাৎ আমার দিকে ছুড়ে দিলেন হাপু দা।আড়চোখে আমাকে মাপতে মাপতে সিগারেটে একটা পরম তৃপ্তিতে টান দিলেন ।ভাব -সাবেই বোঝা যাচ্ছে উনি বুঝে নিয়েছেন আমাকে পেড়ে ফেলেছেন এক্কেবারে।
    -এতো সব্বাই জানে ।আমার মুখ খোলার আগেই ঝটাং করে বলে ফেলল পিঞ্চু-'লবনের ভাগ বেশি থাকে।'
    -'কেন বেশি থাকে?'
    -'নিশ্চই এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে!আমার ছোটকা জানে।'পিঞ্চুর ছোটকা বেলেঘাটার এক স্কুলের সায়েন্সের টিচার,এলাকায় বেশ নাম -ডাক,মাঝরাতেও নাকি টিউশন করেন!! ওর পপুলারিটির কাছে আমি বিকেল সাড়ে পাঁচটার সূর্য ।
    -সবই তোর ওই ছোটকা জানে!!!ওটাও তো একটা অপদার্থ মাস্টার।তোরা মাইরি এই বিজ্ঞান বিজ্ঞান করেই মল্লি।আরে বাবা বেদ-পুরাণ হ'ল বিজ্ঞানের অনেক আগে।আর তখন থেকেই সমুদ্দের জল নোনা।পরে তোদের বিজ্ঞান এই সব ব্যাখা-ট্যাখ্যা দিচ্চে,বুইলি?টিকির আবার বিজ্ঞান কী?
    -এমন কথার সমনে যুক্তি -তক্কো সবসময়ে ল্যাগ-ব্যাগ করে আছাড় খায়।তাই তর্কে বহুদূর-এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে মৌন থাকলাম।
    এই ম্যাস্টর শালা কিচ্ছুটি জানেনা রে ভটকা!!!!ভটকা,ওরফে ভাটু চায়ের দোকানের ছেলে।তার বিশেষ হেলদোল হ'ল না।সে জানে হাপু দা ডাক্তারকেও বলে টুকে পাশ ।
    -পুরাণ -টুরাণ তো ভুলেই মেরে দিয়েছিস!শোন তবে-
    সিগারেটে একখানা মেগা টান মেরেই হাপু দা আরম্ভ করল।
    বৃত্রাসুরের নাম তো শুনেছিস?মহা ডেঞ্জারাস অসুর।তোদের তো আবার জেনারেল নলেজ তলানিতে ।শুনে রাখ,এই যে মাঝে মাঝেই পেপারে বেরোয় না যে বজ্রাঘাতে মৃত্যু,তা পৃথিবীতে প্রথম বজ্রাঘাতে শহীদ হ'য়েছিল এই ব্যাটাচ্ছেলে বৃত্র।কেন বুইলি না?আরে ওকে মারবে বলেই তো দধীচিটা সুইসাইড্ করলেন,আর তাঁর হাড়েই তৈরি হ'ল বজ্র,আর তার প্রথম ভিক্টিম ওই হালা বৃত্রাসুর।
    যাক্,সেই বৃত্রাসুরের চামচা ছিল কশ্যপ আর কালকার ৬০,০০০ দানব পুত্র ।তা যখন ইন্দ্র বৃত্রাসুরের নামের আগে বুইলি চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে দিল,তখন নেতা বিনা এই অনুচরেরা প্রাণের ভয়ে সমুদ্রের তলায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তো বাজ-বাবাজির কেরামতি শেষ।আর বজ্জাতগুলো রাতের বেলায় বেড়িয়ে এসে মুনি-ঋষিদের আশ্রমে র্যানসাক চালায়।তা, বৈকুন্ঠলোকে এমারজেন্সি মিটিং ডাকা হ'ল।সকল দেবতারা বক্তব্য রাখলেন যে তাঁদের ভ্যলুড ভোটারদের জীবন বিপন্ন!বিষ্ণু এডভাইস দিলেন, অগস্ত্যমুনির সাথে ইমিডিয়েট কন্ট্যক্ট করতে।তিনি এসে সমুদ্রের জল পান করবেন ।বিষ্ণুর রেফারেন্সে গেলে ফেরায় কার সাধ্য?তা অগস্ত্য এসে এক গন্ডুষে সমুদ্দিরের জল খেয়ে ফেললেন।ব্যাস্,ওই ষাটহাজার লুম্পেন দেখল চারদিক ভোঁভাঁ...আর একদম টাইম লস্ না করে বাজ ঝেড়ে দেবরাজ সবকটাকে পরলোকে ভেজে দিলেন।এখন শোন,অগস্ত্য মহর্ষি-টহর্ষি টাইটেল পেলেও তো মানুষের শরীর ধারণ করেছেন।তাই মিনিট খানেক বাদেই মারাত্মক প্রস্রাবের চাপ!তা ইমপুট আনুযায়ী তো আউটপুট হবে কি না?তা সেটা যাবে কোথায়?সামনে ওতো বিশাল ধরিত্রির ফাঁকা পাত্রটি থাকতে চিন্তা কী?আবার তিনি চায়ের কাপেই চা ফেরৎ দিলেন।আবার সমুদ্দরটি টইটুম্বর...তবে সেই মিষ্ট জল আর শালা থাকলো নি রে...এবার তো জল নোনতা.......
    এই কাহিনী শোনার পর আমার সমুদ্রস্নানের সেখানেই ইতি ঘটেছে।
  • siki | 212.62.***.*** | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১৬:০৫619611
  • এইটা আর এগোবে না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন