এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা ? পর্ব-১

    bip
    অন্যান্য | ২০ জুলাই ২০১৩ | ৯৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • bip | 78.33.***.*** | ২০ জুলাই ২০১৩ ১২:৫৫617377
  • (১)
    প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস ( অক্টাভিয়ান) মৃত্যুশয্যায় শায়িত। পাশে কন্যা জুলিয়া। ঘটনাচক্রে জুলিয়া পিতৃবিরোধি বিদ্রোহী কন্যা। অগাস্টাসকে হত্যা করার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে সামিল। সাম্রাজ্য স্থিতিশীল করতে সম্রাট আগাস্টাস কন্যা জুলিয়াকে বাধ্য করেছেন টাইবেরিয়াসের সাথে বিবাহে। জুলিয়ার প্রেমিক ছিল লুলাস এন্টোনিয়াস। আগাস্টাস কন্যাকে বলেছিলেন, প্রেম যার সাথে খুশী কর-বিয়েটা টিবেরিয়াসকেই করতে হবে-কারন টিবেরিয়াস রোমের ভাবী সম্রাট। জুলিয়া হয়ে ওঠেন পিতৃবিদ্রোহী। ঘৃণা করতেন আগাস্টাসকে। আগাস্টাস তার পিতা না-এক ধুরন্ধর লোক যে রাজনীতির জন্য কন্যার প্রেমের বলি চড়িয়েছিল হাড়িকাঠে।

    কিন্ত মৃত্যুমুহুর্তে অগাস্টাস কিছু বলে যেতে চান কন্যাকে- অগাস্টাস বললেন ” “Did I play my part well in the comedy of life?” [ জীবনের নাটকে, আমার নিজের পাঠটা কি আমি ভাল করতে পেরেছি?]

    রাজনীতির ইতিহাসে কথাটি বহুল প্রচলিত। সম্রাট অগাস্টাস একজন সফল রোমান রাজনীতিবিদ। যিনি ছলে বলে কৌশলে বন্ধু প্রতিম মার্ক এন্টনিকে হারিয়ে রোমান সাম্রাজ্য দখল করেন। মৃত্যুর আগে যিনি স্বীকার করে যাচ্ছেন রাজনীতি হচ্ছে রঙ্গমঞ্চ-সেখানে সফল রাজনীতিবিদ মানে আসলে একজন সফল অভিনেতা।

    এথেন্সের সেই প্রাচীন গণতন্ত্র থেকে আজকের মোদি বা মমতাদি -পৃথিবীর প্রতিটি রাজনীতিবিদ, প্রথমে অভিনেতা, তারপরে অন্য কিছু। জর্জ ওয়াশিংটন , থমাস জেফারসন, মহত্মা গান্ধী, নেহেরু, নেতাজি বোস, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবর রহমান থেকে আজকের মোদি বা মমতা কেও এই অভিনয় বৃত্তের বাইরে না ।সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিনয়টা শুধু বিরোধি পক্ষের চোখেই ধরা পড়ে। ভক্তকূলের কাছে ইনারা ১০০% খাঁটি হিরে- তাদের কাছে এই অভিনয়ের প্রশ্ন উঠলে, আপনার পিঠে দুঘা পড়ার সম্ভাবনা আছে ।

    রাজনৈতিক অভিনয়ে মমতা ব্যানার্জি সবাইকে পেছনে ফেলেছেন

    দক্ষিন ভারতে অবশ্য এই কৃত্রিম বিভাজন ও অবলুপ্ত। সেখানের রাজনীতি সম্পূর্ন ভাবেই সিলভার স্ক্রীনের নেতা অভিনেতাদের দখলে। এনটি রামা রাও বা জয়ললিতাদের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির মতন ক্যাডবেরি খেয়ে অনশনের অভিনয় করতে হয় না । তারা সিলভার স্ক্রীনে সুপার হিরো ছিলেন। রাজনৈতিক অভিনয়টা তাদের কাছে স্মুথ ট্রানজিশন । মসৃন অভিযোজন। স্টুডিও থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে।

    এই প্রবন্ধে আমি রাজনীতিবিদদের সেই অন্ধকার দিকটাই আলোচনা করব। অধিকাংশ রাজনীতিবিদ গ্রীনরুম এবং স্টেজের সামনে সম্পূর্ন আলাদা ব্যক্তিত্ব। তাদের ভক্তকূল নারাজ হবেন। কিন্ত তাতে সত্য বদলাবে না । রাজনীতিবিদদের অন্ধভক্তকূল গণতন্ত্রের আপদ। নাগরিকদের নির্মোহ যুক্তিবাদি দৃষ্টীভংগী শক্তিশালী গণতন্ত্রের সূতিকাগৃহ।

    (২)
    গ্রীক গণতন্ত্র-৪০০/৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দঃ
    এথেন্স পৃথিবীর সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক নগর রাষ্ট্র। আজকের গণতন্ত্রের অনেক ধ্যান ধারনার উৎপত্তিস্থল এই এথেন্স। যেহেতু গণতন্ত্র মানুষের পূর্নাঙ্গ বিকাশ নিশ্চিত করে, খুব স্বাভাবিক ভাবে এথেন্সে প্রাচীন সভ্যতা বিকশিত হয়। গ্রীক দর্শন, সাহিত্য, নাটক-যা কিছু আজ বর্তমান আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি, তার মূল আকর ছিল এথেন্সের গণতন্ত্রে।

    ইক্লেসিয়া, এথেন্সের জনসভা, যেখানে নুড়ির মাধ্যমে ভোট হত । পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্র

    এথেন্স স্পার্টার অধীনে ছিল বহুদিন। গণযুদ্ধের মাধ্যমে স্পার্টানদের বহিস্কার করার সাথে সাথে, এথেন্সের গণযোদ্ধা বাহিনী গণতন্ত্রের সূচনা করে। আক্ষরিক অর্থে এটিই পৃথিবীর প্রথম গণজাগরন । ৪৬০ খৃষ্টপূর্বাব্দে এফিয়ালেটসের নেতৃত্বে এথেন্সে শুরু হয় গণতান্ত্রিক শাসন । এছিল সরাসরি গণতন্ত্র। সমুদ্রতটে বসত “ইক্লেসিয়া”-বা গণসভা। সাদা আর কালো নুড়ি ঘড়ায় ফেলে হত ভোট। এথেনিয়ানরা জানত রাষ্ট্রে কারুর ক্ষমতা বেশী হলে, সে গণতন্ত্র ধ্বংস করে, রাজতন্ত্র স্থাপন করবে। সুতরাং গণতন্ত্র বাঁচাতে এক অদ্ভুত প্রথা চালু করে গ্রীকেরা। এথেন্সে কেও রাজনৈতিক ভাবে খুব শক্তিশালী হলে, ইক্লেসিয়া গণভোটের সিদ্ধান্তে তাকে চিরনির্বাচনে পাঠানোর ক্ষমতা রাখত। শক্তিশালীর নির্বাসন ছিল গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। যা আজও আফ্রিকা বা পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতন দেশে নেই। সেই ৪৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে গণতন্ত্র এতটাই উন্নত -সেখানে থার্মোক্লিস্টের মতন বিজয়ী সেনাপতি, যিনি পার্শিয়ান সম্রাট জার্সির হাত থেকে এথেন্সকে বাঁচিয়েছিলেন, তাকে পর্যন্ত নির্বাসনে পাঠায় ইক্লেসিয়া। একদম গণভোটের মাধ্যমে। ভয় ছিল পাছে থার্মোক্লিস্ট মিলিটারি ক্যু করে গণতন্ত্র ধ্বংস করে। অথচ একবিংশ শতাব্দিতে পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মত অসংখ্য দেশে শক্তিশালী মিলিটারী লিডাররা ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে। এদের গণতান্ত্রিক ভিত সেই ৪৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দের এথেন্সের মতন দৃঢ় না ।

    কিন্ত গণতন্ত্রে অমৃতের সাথে গরলের সহাবস্থান। গণতন্ত্রের উষালগ্ন থেকেই রাজনীতি হচ্ছে নির্লজ্জ দলাদলি এবং তা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েই। সেই ব্যতিক্রম এথেন্সেও হয় নি।

    এথেন্সের রাজনৈতিক চিন্তার অধিকাংশটা আমরা পায় প্লেটোর গ্রন্থ “রিপাবলিকে” ।
    দেখা যাবে দুই দিকপাল দার্শনিক প্লেটো এবং সক্রেটিস গ্রীক গণতন্ত্র নিয়ে এতটাই বিরক্ত ছিলেন, এরা মডেল ব্যবস্থা হিসাবে গণতন্ত্রকে বাছেন নি। প্লেটোর রিপাবলিকে পাঁচ ধরনের রাজনৈতিক সিস্টেম আছেঃ

    এরিস্টোক্রাসি – বুদ্ধিমান দার্শনিক রাজার শাসন
    টোমোক্রাসি – বংশানুক্রমে পাওয়া রাজতন্ত্র
    অলিয়ার্গকি- কিছু সংখক ফ্যামিলিরা হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা-যেমন রোমের বা ক্যাথ্রিজের সেনেট।
    ডেমোক্রাসি- জনগণের শাসন
    টাইর‍্যানি বা স্বৈরাচার-অত্যাচারী রাজা বা সেনাপতির শাসন

    প্লেটো এথেন্সের রাজনীতিবিদদের নিয়ে এতটাই হতাশ ছিলেন, “রিপাবলিক গ্রন্থে” গণতান্ত্রিক শাসনকে স্বৈরাচারী শাসনের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।

    প্লেটো ছিলেন এক নবীন গণতন্ত্রের নাগরিক। তরুন ভারতীয়দের মতন গণতন্ত্রের শুধু কালোদিকটাই তার চোখে পড়েছিল। আজকের নবীন ভারতীয়রা যেমন স্বৈরাচারী নরেন্দ্রমোদির শাসনকে গণতান্ত্রিক শাসনের থেকে ভাল “হবে” বলে মনে করে, অনভিজ্ঞতার দরুন প্লেটোও সেই দলে ছিলেন।

    প্রশ্ন উঠবে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের মহাভগীরথ প্লেটো এথেন্সের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি এত ক্ষাপ্পা হলেন কেন?

    প্লেটো-রিপাবলিক গ্রন্থের রচয়িতা- যা পৃথিবীর প্রথম রাজনৈতিক ট্রিটিজ

    প্লেটোর সেটা ব্যখ্যা করেছেন এইভাবে-

    গণতন্ত্রে ধণী এবং দরিদ্র শ্রেনীর মধ্যে দ্বন্দ প্রকাশিত হবে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে । যেহেতু গরীবদের সংখ্যা বেশি, কিছু বুদ্ধিমান ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ গরীবদের ত্রাতা বিধাতা বলে নিজেদের জাহির করবে। গরীবদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে এরা নিজেদের সৈন্যদল বানাবে এবং ক্ষমতা দখলের পর স্বৈরাচারী সম্রাট হিসাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে জনগনের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাবে।

    অর্থাৎ প্লেটো বলছেন গণতন্ত্রে গরীবদের “ক্ষোভ” হচ্ছে পপুলিস্ট ডিমান্ড। এরং তা কাজে লাগায় রাজনৈতিক অভিনেতারা। কিন্ত আস্তে আস্তে তা স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত হয়।

    আশ্চর্য্য! আড়াইহাজার বছর আগে স্টালিন, লেনিনদের উত্থান কি অদ্ভুত ভাবে ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন প্লেটো। শুধু তাই না – পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম এবং মমতার উত্থান ও প্লেটোর রাজনৈতিক অভিজ্ঞানের চিত্রনাট্য মেনে। ৩৫ বছরের সিপিএম শাসনের পর এটা নিশ্চিত যে, গরীবদরদি হওয়াটা ছিল সিপিএমের অভিনয়-ঠিক যেমনটা প্লেটো বলে গেছেন ২৫০০ বছর আগে। ক্ষমতা দখলের পর পার্টির স্বৈরাচারী শাসনটাই ছিল মুখ্য।

    মমতা ব্যানার্জিও প্লেটোর সেই চিত্রনাট্যের আরেক অভিনেত্রী মাত্র। তিনিও নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরে গরীবদের মা মাটি মানুষ সেজে অসাধারন অভিনয় করেছেন। প্লেটোর রিপাবলিকের নিয়ম মেনে। তবে সিপিএমের ক্ষেত্রে যে অভিনয়টা বুঝতে জনগণের দুই দশক লেগেছিল, মমতার ক্ষেত্রে স্টেজ আর গ্রীনরুমের ফারাকটা দুবছরেই বোঝা যাচ্ছে।

    গণতন্ত্রের ইতিহাসটাই রাজনীতিবিদদের অভিনয়ের ইতিহাস। খাঁটি দুধ বলে কিছু নেই-গণতন্ত্র মানেই রাজনৈতিক অভিনয়ের ভেজাল।

    আমি পরের কিস্তিতে এই সব নেতা এবং তাদের রাজনৈতিক অভিনয় নিয়ে আলোচনা করব।

    রোমান সেনেট- ২০০ খ্রী পূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রীষ্টাব্দঃ

    অর্থশাস্ত্র, কৌটিল্য , ৩০০ খ্রীঃ পূর্বাব্দঃ

    জর্জ ওয়াশিংটন ঃ

    মহত্মা গান্ধীঃ

    নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোসঃ

    পন্ডিত নেহেরু ঃ

    স্টালিনঃ

    ইন্দিরা গান্ধীঃ

    শেখ মুজিবর রহমানঃ

    জ্যোতিবসুঃ

    নরেন্দ্রমোদিঃ

    মমতা ব্যানার্জিঃ

    শেখ হাসিনা ঃ

    খালেদা জিয়াঃ

    এটা স্যোশাল মিডিয়ার যুগ। আমি নিশ্চিত, পাঠক এদের অভিনয় কুশলতা আমার থেকে বেশি ভাল জানেন। তারা মন্তব্য লিখে এই ব্যাপারে যতটা জানাবেন, আমরা সবাই উপকৃত হব।
  • siki | 132.177.***.*** | ২০ জুলাই ২০১৩ ১৬:১৩617379
  • গুড। এগোক।
  • টাঙন | 233.18.***.*** | ২০ জুলাই ২০১৩ ১৬:৩১617380
  • অনেকে বলেন জীবনটাই নাকি অভিনয়।

    লেখক এখানে কোন ভুমিকায় অভিনয় করছেন?

    প্লেটো এবং মার্ক্স এর অভিনয় বিষয়েও বলবেন নাকি দুপয়্সা?
  • b | 135.2.***.*** | ২০ জুলাই ২০১৩ ১৭:৫৯617381
  • তালিকাটায় কি রকম যেন একটা কোয়ান্টাম জাম্প আছে।
  • bip | 78.33.***.*** | ২১ জুলাই ২০১৩ ০৬:৫৭617382
  • (৩)

    রোমান সেনেট - ২০০ খৃঃ পূঃ থেকে চতুর্থ শতাব্দিঃ

    রোমের শাসনকে গণতন্ত্র না বলে অলিয়ার্গকি বলা ভাল। কিছু মুষ্টিমেয় পরিবার জন্মসূত্রে সেনেটর হওয়ার অধিকার পেত। ১২৪ খৃঃপূঃ গ্রীস এবং ক্যাথ্রিজ রোমের হাতে পদানত হয় । রোম হয়ে ওঠে ভূমধ্য সাগরের একচ্ছত্র অধিপতি। ফলে রোমের রাজনীতি গোটা পৃথিবীর ইতিহাস নিয়ন্ত্রন করেছে প্রায় ছশতাব্দি ধরে।

    রোম শাসন করতেন কনসাল-যিনি সেনেটের প্রধান হতেন। কনসাল প্রতিবছর নির্বাচিত হত। রোমান কনসাল বর্তমান কালের নিরিখে একাধারে প্রধান সেনাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী। অনেকটা আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মতন ছিল তার ক্ষমতা । কনসাল পজিশনে জিততে গেলে শুধু ভাল রাজনীতিবিদ বা বক্তা হওয়া যথেষ্ট ছিল না । সফল মিলিটারি জেনারেল হওয়া ছিল প্রথম এবং মুখ্য যোগ্যতা।

    কনসাল হওয়ার জন্য রোমান সেনেটররা লবিং করতেন। কিন্ত রোম তখন শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যবাদি শক্তি। ফলে শুধু লবিং এ কিছু হত না। বাইরের একটা রাজ্য বা প্রদেশ মিলিটারি ক্যাম্পেইন করে জিততে না পারলে, কল্কে পেতেন না তারা। ফলে রোমের রাজনৈতিক অভিনয়টা গরীব দরদি ইমেজ বিল্ডিং এ ছিল না । রোমের রাজনৈতিক অভিনয়টা চলত কে কত ভাল মিলিটারি জেনারেল সেটাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। যদিও লুয়াস মামিয়াস, জুলিয়াস সিজার এর মতন জেনারেলরা এবং মার্কাস অরেলিয়াস এর মতন সম্রাটরা গরীব দরদি নেতার অভিনয় ও খারাপ করেন নি।

    রোমের সমগ্র ইতিহাসে রাজনৈতিক অভিনয়ের ভূমিকা বিশাল।

    রোমের সেনেটররা আসতেন ধনী পরিবার থেকে। এই সব আলালের দুলালরা, ভাল সেনানায়ক হতে পারতেন না-সেটা বলায় বাহুল্য। জুলিয়াস সিজার অবশ্য ব্যতিক্রম। কিন্ত সেনানায়ক সেজে অভিনয় করতে গিয়ে, সেনেটররা রোমকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছেন বারংবার-যেটা রোমান সেনেটের ক্ষমতা ধ্বংসের একটা বড় কারন।

    ২১৭ খৃষ্ট্রপূর্বাব্দে ক্যাথ্রিজ সেনাপতি হ্যানিবাল, রোম শহরের প্রায় ২০ মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়েন। ২১৮ খৃঃপূঃ ট্রিবিয়া এবং ২১৭ সালে লেক ট্রাসমিন হ্রদের যুদ্ধে হ্যানিবালের হাতে রোমানদের শোচনীয় পরাজয় হয়। দুটি যুদ্ধে রোমান সেনাবাহিনী প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। অবস্থা এমন -হ্যানিবাল রোমে ঢুকলে সবাই রোম ছেরে পালাবে। হ্যানিবাল কোন কারনে সেটা করেন নি। করলে পৃথিবীর ইতিহাসটাই বদলে যেত। কিন্ত এই দুই যুদ্ধে রোমানদের গোহারা হারার পেছনে মূল কারন ছিল সেনেটরদের মধ্যে যুদ্ধে "গ্লোরি" বা গরিমা অর্জন।

    হ্যানিবাল সেকালের সেরা সেনাপতি। খুব স্বাভাবিক ভাবে, তাকে হারাতে রোমের দরকার ছিল সুদক্ষ জেনারেল। কিন্ত হ্যানিবালকে হারাতে পারলে অনেক গরিমা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা আসবে এই ভেবে ট্রিবিয়ার যুদ্ধে রোমান সেনেটর টিবেরিয়াস সেম্প্রোনাস হ্যানিবালকে সম্মুখ সমরে আহবান করলেন। টিবেরিয়াস সবে সিসিলিতে ছোটখাট যুদ্ধ জিতে কনসাল পদ জিতে ছিলেন। কিন্ত হ্যানিবালের স্ট্রাটেজির কাছে সম্পূর্ন হেরে যান ট্রিবিয়াতে। ৪০,০০০ রোমান সৈন্যদল সম্পূর্ন ধ্বংস হয়। পরে সেনেটে ট্রিবেরিয়াসের ইম্পিচমেন্ট হয় । সেনেটে তার বিরুদ্ধে প্রমানিত হয়, তিনি শুধু নিজের গরিমার উদ্দেশ্যে হ্যানিবালের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেমেছিলেন যেখানে অভিজ্ঞ সেনাপতিরা হ্যানিবালের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

    এই ঘটনা রোমের ইতিহাসে বারবার ঘটবে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে। যুদ্ধক্ষেত্র হবে উচ্চাকাঙ্খী সেনেটরদের সব থেকে বড় রঙ্গ মঞ্চ। যুদ্ধ তারা জানুক বা না জানুক সেনাপতি সেজে এমন সব উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে রোমের অস্তিত্ব হবে সংকটাপন্ন। এই ব্যাপারে সব থেকে কুখ্যাত হচ্ছেন রোম সম্রাট ডমিশিয়ান। যিনি কোথাও কোন মিলিটারি অভিযানে গেলে, প্রথমেই রোমে একটি করে বিজয় দ্বার উত্তোলন করতেন। এমনটা করেছিলেন বৃটেন অভিযানে। বৃটেনে উনি কোন যুদ্ধ করেন নি-রোমান লিজিয়ন নিয়ে টাকা ছড়িয়ে আইসিনি এবং বারগেন্ডির আদিবাসিদের রাজাকে হাত করেছিলেন। রোমে ফিরে, সর্বত্র তার বৃটেন জয়গাথা ছড়িয়ে দেন। এই হচ্ছে সেই বৃটেন যাদের জুলিয়াস সিজার ও জব্দ করতে পারেন নি। অবশ্য, তার ধাপ্পাবাজি সহজেই ধরা পরেছিল। কিছুদিনের মধ্যে বৃটেনে রোমান শাসনের বিরুদ্ধে সর্বত্র বিদ্রোহ শুরু হয় এবং রোমানরা বুঝতে পারে বৃটেন জয় তখনো দূর অস্ত। ডমিশিয়ানের মৃত্যুর পর ঢপবাজির অভিযোগে তার সব বিজয়তোড়ন ভেঙে ফেলা হয়।

    এর সাথে গরীব দরদি হয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের ট্রাডিশন ও সমান ভাবে ছিল রোমে। এটা মূলত তারাই করেছেন, যারা সেনেটের ক্ষমতা খর্ব করে স্বৈরাচারি শাসক হওয়ার চেষ্টা করেছেন। বৈধতা হিসাবে জনগণের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা টাকা ছড়িয়ে, ট্যাক্স ব্রেক দিয়ে কিনেছেন।

    এই চেষ্টা করে প্রথম সফল হন লুয়াস মামিয়াস। লুয়াসের পরিবার অতটা এরিস্ট্রোক্রাটিক ছিল না। ফলে সেনেটররা তাকে নীচু ফামিলির সন্তান হিসাবে বিদ্রুপ করত। লুয়াস নিজেও অধিকাংশ সেনেটরদের আলালের ঘরের দুলাল -অপদার্থ রাজনীতিবিদ বলে মনে করতেন। লুয়াস রোমের ইতিহাসে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন মি্লিটারি জেনারেল। তার নেতৃত্বেই রোমানরা গ্রীস এবং ক্যাথ্রিজকে চিরতরে পরাজিত করে ইউরোপের সেরা মিলিটারি শক্তি হিসাবে উঠে আসে। শুধু তাই না লুয়াস একজন সফল প্রশাসক ও। কিন্ত সেনেট এবং গণতান্ত্রিক রঙ্গনাট্য তার পছন্দ ছিল না। মনে করতেন এইসব লুচ্চা নাটকের জন্য রোম একদিন উচ্ছন্নে যাবে। ফলে, সেনেটে ্যারা তার বিরোধি ছিল, তাদের এক এক করে গুপ্তহত্যা করান মামিয়াস। কিন্ত তাতে জনপ্রিয়তা কমে ্যেতে পারে দেখে, রোমের দরিদ্র শ্রেনীর মধ্যে নিজের প্রভাব বিস্তার করেন। তার দুটি ধাপ ছিল। প্রথমত স্পেন এবং গ্রীস থেকে আসা সম্পদের একটা অংশ তিনি গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। দ্বিতীয়ত গরীব রোমানদের সেনা বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেন। সেকালে রোমান সেনা বাহিনীতে কাজ করা মানে লুটপাটের দরজা খোলা। এর পূর্বে গরীব রোমানদের যাদের চাষের জমি নেই, তাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার অধিকার ছিল না । সেনেট মনে করত গরীবদের সেনাবাহিনীতে ঢোকালে তারা একদিন বিদ্রোহ করে এরিস্টক্রাসি ধ্বংস করবে। যেসব সেনেটর গরীবদের সেনাবাহিনীতে নেওয়ার বিরোধিতা করেছিল, তাদের সবাইকে হত্যা করেন লুয়াস। এই ভাবে সেনাবাহিনীর গরীব রিক্রুটদের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা সাংঘাতিক বাড়িয়ে ছিলেন লুয়াস।

    লুয়াসের এক শতাব্দির পর গরীব দরদির এই একই খেলা খুব সফল ভাবে খেলবেন প্রবাদ প্রতিম রোমান কনসাল জুলিয়াস সিজার। সিজার শুধু দক্ষ জেনারেল ই না-তুখোর বাগ্মীও। পম্পেই এর সাথে তার দ্বন্দ যখন তুঙ্গে-গৃহযুদ্ধের আসন্ন মূহুর্তপূর্বে রোমে ঢুকে গলে জেতা সম্পদের একাংশ দেদারসে জনগনের মধ্যে ছড়াতে থাকেন সিজার। পম্পেই তখন সেনাবাহিনী নিয়ে পালিয়েছেন। সিজারের উদ্দেশ্য ছিল পম্পেই এর সেনাবাহিনীর মনোবোল ভেঙ্গে দেওয়া। উনি দেখাতে চাইছিলেন রোমের জনতা তার সাথেই আছে। এর জন্য সিজার রোমে ছোট ছোট সভা করতেন এবং তার বক্তৃতাতে গরীবদের জন্য দরদ ফেটে পরত। এইভাবে গরীবদের পাশে দাঁড়ায় নি কোন কনসাল। ফলে রোমে সিজারের জনপ্রিয়তা দ্রুত তুঙ্গে ওঠে।

    তবে পুরোটাই ছিল সিজারের রাজনৈতিক চাল। সেনেটে সিজারের প্রচুর শত্রু। তাদের দমন করতে দরিদ্রের মাসিয়ার ভূমিকায় অবতীর্ন হোন সিজার। সেনেটের ক্ষমতা খর্ব করে নিজেকে আজীবনের জন্য ডিক্টেটর ঘোষনা করলেন। সেনেটে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ হল না। কারন জনতা সিজারের পাশে। কিন্ত গোপনে গোপনে ব্রুটাসের মতন সেনেটররা সিজারকে হত্যা করার খেলায় নামলেন গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে।

    অর্থাৎ দেখা গেছে, যখনই কারুর ডিক্টেটর হওয়ার সখ হয়েছে, তিনি সফল ভাবে ধণীদের বিরুদ্ধে গরীবদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে, প্রথমে জনপ্রিয় হয়েছেন। এবং সেই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে বিরোধিদের নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। অর্থাৎ দরিদ্রপ্রীতি এদের কাছে ছিল স্বৈরচারি শাসনের সিঁড়ি। শুধু সিজার কেন- সাদ্দাম হুসেন, মুসোলিনি, হিটলার থেকে লিবিবার গদ্দাফি, জেনারেল জিয়া, সব স্বৈরাচারের এক ইতিহাস।এদের কেও রুলিং এরিস্টক্রাটিক ফ্যামিলি থেকে আসেন নি। ক্ষমতা দখলের জন্য এরিস্ট্রক্রাসির বিরুদ্ধে গরীবদের ক্ষোভ এরা সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এরিস্টক্রাসির বিরুদ্ধে জেহাদ, গরীবদের প্রতি দরদটা এদের জীবনের সব থেকে বড় সফল রাজনৈতিক অভিনয়। নেপথ্যের আসল খেলাটা ছিল স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা।

    সর্বহারাদের দিদি থেকে স্বৈরাচারী মমতা ব্যানার্জির উত্থান দেখলেই বোঝা যাবে প্লেটোর রিপাবলিকের ভূত আজো আমাদের ঘারে।

    (4)
    কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র -তৃতীয় খৃষ্টপূর্বাব্দ

    গৌতম বুদ্ধের জন্মের আগে ভারতীয়রা লিখতে জানত না। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতার লিপি, আর্য্য সভ্যতাতে স্থান পায় নি। ফলে বুদ্ধের আগের ভারতের ইতিহাসের অধিকাংশটাই রূপকথা। ভারতের ইতিহাস ভাল করে আমরা জানতে পারি আলেক্সজান্ডারের আক্রমনের সময় থেকে। গ্রীক ঐতিহাসিকরা মূল সোর্স। এবং গ্রীকদের দেখা দেখি ভারতের রাজন্যবর্গ ও নিজেদের ইতিহাস লেখার জন্য লেখক নিয়োগ করার ট্র্যাডিশন চালু করে।

    প্লেটোর যেমন রিপাবলিক, ভারতে তেমন চানক্যের অর্থশাস্ত্র। চানক্যর পূর্বনাম বিষ্ণুগুপ্ত। পেশায় তক্ষশীলায় রাজনীতির অধ্যাপক। তার ছাত্ররা ভারতের বিভিন্নরাজ্যে মন্ত্রী হিসাবে বিশেষ নাম করেছেন। সেই সময় মন্ত্রী হওয়ার জন্য তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির পাঠ নিতে গোটা ভারত থেকে ছাত্ররা আসত।

    প্লেটো যেমন গণতন্ত্র দেখে যেতে পেরেছেন, এবং দেখেও এরিস্ট্রোক্রাসি বা দার্শনিক দয়াময় রাজার শাসনকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষনা করেছিলেন, চানক্য ও রাজনৈতিক ভাবে এই মত দর্শন করেছেন। এমন নয় গণতন্ত্র কি চানক্য জানতেন না। ভারতে ১৬ টি জনপদের অধিকাংশ তখনো গণরাজ্য বা গণতান্ত্রিক রাজ্য ছিল।

    গণরাজ্যগুলির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভরসা রাখতে পারেন নি কৌটিল্য। প্লেটোর মতন অর্থশাস্ত্রের ও আদর্শ সিস্টেম দার্শনিক রাজা ( philosopher king )। প্রশ্ন উঠবে কেন? চন্দ্রগুপ্তকে সম্রাট বানাতে গণরাজ্যগুলির সাথে বহু বৈঠক করেছেন বিষ্ণুগুপ্ত-তার অনেক শিষ্য গণরাজ্যগুলির নেতৃত্বেও ছিল। তবে কেন অর্থশাস্ত্রে স্থান পায় নি গণরাজ্যগুলির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা?

    এর একটা কারন অবশ্য এই যে চানক্য অর্থশাস্ত্র লিখেছিলেন, মূলত এক শক্তিশালী ভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যা গ্রীক বা পারসিক আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম। গণরাজ্যগুলির মধ্যে চুলোচুলি লাঠালাঠি এই পর্যায়ে ছিল-তাদের পক্ষে শক্তিশালী ভারতবর্ষের জন্ম দেওয়া সম্ভব না বলেই মনে করতেন চানক্য। এব্যাপারে প্লেটো বা সক্রেটিসের সাথে তার কোন বিরোধ নেই।

    সুতরাং অর্থশাস্ত্রে রাজনীতির অভিনয়ের খেলাটা রাজাকেই খেলতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এরজন্য সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য নিজে। পাটলিপুত্রে ক্ষমতা দখলের পরে, চন্দ্রগুপ্তর কোন স্বাধীনতা ছিল না। চানক্যের অঙ্গুলি হেলনে তাকে ক্রমাগত ভাবী সম্রাট হিসাবে অভিনয় করতে হয়েছে।

    ভারতের প্রথম সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত। কিন্ত মানুষ চন্দ্রগুপ্তকেও জানা দরকার। মাত্র ৪১ বছর বয়সে সাম্রাজ্য ত্যাগ করে জৈন ধর্মে দীক্ষা নেন। সন্ন্যাস নেওয়ার পর ভিক্ষুকের জীবন গ্রহণ করেন। সেই বছর প্রবল দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ভারতে। অধিকাংশ মানুষ অনাহারে প্রান হারাচ্ছিল। এই মহান সম্রাট জৈন ট্রাডিশন অনুসরন করে, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাথে সমব্যাথী হওয়ার জন্য, নিজেও ৩৬ দিনের অনশনে প্রান ত্যাগ করেন। তিনি মানুষ হিসাবেও মহান ছিলেন। ফলে চানক্যনীতি মেনে রাজনীতির অভিনয় -তার কাছে নীচুতা মনে হয়েছিল। মেনে নিতে পারেন নি। তবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গুরুবাক্য মেনেছেন। কিন্ত এই রাজনৈতিক অভিনয় নিয়ে গুরুর সাথে তীব্র বাদানুবাদ ও হয়েছে।

    যেবছর পাটলিপুত্রে চন্দ্রগুপ্তের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল, চন্দ্রগুপ্ত আগের রাজা ধননন্দের অনেকগুলো বাজে খরচ বাদ দিতে চাইলেন। রাজকোষের অবস্থা যুদ্ধবিগ্রহ এবং ধননন্দের বিলাসে বেশ খারাপ অবস্থায় ছিল। চানক্যর অনুমতি না নিয়ে পাটলিপুত্রের বৈশালী উৎসব বন্ধের নির্দেশ দিলেন চন্দ্রগুপ্ত। এই উৎসবে রাজকোষ থেকে বিরাট খরচ করা হত নর্তকী গায়ক ইত্যাদিদের জন্য। রাজা মূলত জনসংযোগ করতেন প্রজাদের সাথে উৎসবের মাধ্যমে।

    চানক্য জানতে পেরে ভর্ৎসনা করেছিলেন চন্দ্রগুপ্তকে। তার বক্তব্য ছিল রাজা কখনোই এই ধরনের জনসংযোগের সুযোগ হাতছারা করতে পারে না । উৎসবের চাকচিক্য না দেখালে, প্রজারা ভাববে রাজা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল। আর দুর্বলের প্রতি আনুগত্য অত সহজে আসে না । চন্দ্রগুপ্ত চেয়েছিলেন, উৎসবের পেছনে খরচ না করে চাষাবাদের সুবিধার জন্য কিছু খাল কাটাবেন। সেটা খরার সময়। কৃষকদের ভার লাঘব করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত পালটি খেতে বাধ্য হন গুরুর নির্দেশে। অর্থাৎ চানক্যনীতিতে রাজনৈতিক অভিনয়ের স্থান রাজহিতৈশী কর্মের ওপরে।

    তাহলে আর মমতাকে দোষ দিয়ে কি হবে? রাজ্যর রাজকোষ শুন্য। কিন্ত তিনি ধার করে একের পর এক উৎসবের আয়োজন করছেন । টলিঊডের গ্ল্যামার নিয়ে মচ্ছব অব্যাহত যখন কৃষক আত্মহত্যা বা চিটফান্ডের কবলে রাজ্যর লোক আত্মহত্যা করছে। কিন্ত তার সব রাজনৈতিক উৎসব চানক্যনীতিতে সিদ্ধ। রাজনীতিতে পি আর বা জনসংযোগ হচ্ছে সবার আগে। জনগণের চোখে ইমেজটা কি তৈরী হচ্ছে সেটাই লইয়ালিটি ফ্যাক্টরে মুখ্য।

    বর্তমানে এটা মিডিয়ার যুগ। সরাসরি বা মিডলম্যান ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে টিভি এবং নিউজপেপার রাজনৈতিক নেতাদের ইমেজ তৈরী করে। যে মোদিকে আপনি বা আমি জানি টিভি এবং নিউজপেপারের মাধ্যমে,আসল মোদি তার থেকে আলাদা। এটা সব উচ্চ রাজনীতিবিদদের জন্য- সব দেশে সত্য। স্টেজের পেছনের এই খেলাটা সব থেকে ভাল জানেন সাংবাদিকরা। কিন্ত তারা নীরব। পি আর মহাভোজের উচ্ছিস্ট খেতে ব্যস্ত। বলতে গেলে এটাই তাদের ইনকাম। এই ভাবেই গণতন্ত্রে গড়ে উঠেছে সাংবাদিক, পুলিশ, প্রশাসক আর রাজনৈতিক নেতৃবিন্দের দুষ্টচক্র। সাংবাদিকরা এই রাজনৈতিক অভিনয়ের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ।

    [চলবে]
  • bip | 78.33.***.*** | ২৮ জুলাই ২০১৩ ১০:০১617384
  • তিন নাম্বার পর্ব এখানেঃ
    *****************************
    খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামের উত্থান-ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির জন্মঃ

    মধ্যযুগে রাজনীতির ইতিহাসে বৃহত্তম ঘটনা খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্মের উত্থান। এই একেশ্বরবাদি ধর্মগুলির উত্থানের আগে রাজ্য এবং সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি ছিল নগর সভ্যতা। কার্থিজ, এথেন্স, রোম, মেসেডেনিয়ান-এই সব সাম্রাজ্যবাদি শক্তিগুলির ভিত্তি নগর পরিচিতি। অর্থাৎ আমরা রোমান, তাই গলদের সভ্য করার জন্য চাই লাখে লাখে গল রক্ত। এতেব গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, ওদের রোমান বানাও-মানে সভ্য কর। যদিও নেপথ্যের খেলাটা লুঠতরাজের।

    মধ্যযুগে এই আইডেন্টি পালটে গেল ধর্মে। আমরা খৃষ্ঠান, আমরা উন্নত, তাই বাকি পৃথিবীকে খ্রীষ্ঠান বানাবো । এটাই হল সাম্রাজ্যবাদের মূল মন্ত্র। যদিও আসলে পেছনে ছিল জমি এবং সম্পদ দখলের খেলা।

    খ্রীষ্ঠানদের সাফল্য দেখে, এই ধর্ম ভিত্তিক সাম্রাজ্যবাদকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যায় আরবরা। নাম ইসলাম। যেখানে ধর্মটাই তৈরী হল ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে। ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের এবং পরিচিতির রাজনীতি, যার ভুক্তভোগি আমরা আজো, তার মূলে গিয়ে বিশ্লেষন দরকার।

    ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্ম দুটি দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য মিথ এবং প্রপাগান্ডার ওপরে। এবং এদের দুটি ভিত্তি-প্রথমটি শ্রেনী চেতনা । এরিস্ট্রক্রাসির বা ধনীদের বিরুদ্ধে গরীবদের ক্ষোভ এই দুই ধর্মের প্রধান চালিকা শক্তি। ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্ম মার্ক্সবাদের দুই সফল সন্তান। এই দুই ধর্মের সাফল্যের খতিয়ানে, সোভিয়েত ইউনিয়ান কার্ল মার্ক্সের জারজ সন্তান। ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্ম ঐতিহাসিক ভাবে গরীবদের ক্ষোভকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছে ধর্মের মাদকে বা প্রফেটের চরিত্র তৈরী করে, সোভিয়েত ইউনিয়ান তার ধারে কাছেও যেতে পারে নি । ধর্মের প্যাকেজে এই শ্রেনী সংঘাত কিভাবে ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্মের বিপুল জনপ্রিয়তা তৈরী করল সেটা না বুঝলে আমরা কোন দিন বুঝতে পারব না কেন ইসলাম ভারত বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ পৃথিবীর সব মুসলিম দেশের রাজনীতিতে “মহান” শক্তি। বা এটাও বুঝবো না কেন ল্যাটিন আমেরিকাতে হুগো শাভেজ বা ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফেল ইকুয়েডর মার্ক্সিয় সমাজতন্ত্র ছেড়ে খ্রীষ্ঠান সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করা শুরু করেন।

    কি সেই মারাত্মক সমীকরন যার জন্য ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্ম সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরানোর সব থেকে বড় শক্তি হওয়া সত্ত্বেও, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের রাজনীতিতে তারা নির্নায়ক শক্তি?

    ইসলাম ই একমাত্র সঠিক ধর্ম বা খ্রীষ্ঠান ধর্ম একমাত্র সত্য-এটা হচ্ছে এই দুই ধর্মের প্রসারের মূল “আবেগ” ।
    এটিকে বলে আবেগপ্রবণ সাম্রাজ্যবাদ। যেমন আমেরিকানরা মনে করে, স্বাধীনতার বানী ছড়াতে অন্যদেশকে পরাধীন করার দরকার আছে! কিভাবে রোমান সাম্রাজ্যবাদ প্রথমে খ্রীষ্ঠান এবং তারপর ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদে রূপ নিল, সেই ধারাবাহিকতাটা জানা দরকার।

    ধর্ম দুটি এতটাই প্রপাগান্ডার ওপর দাঁড়িয়ে যে আদৌ যেখানে জিশু বা মহম্মদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব কোন ঐতিহাসিকরা খুঁজে পেতে ব্যর্থ, সেখানে যিশু এবং মহম্মদ নামে দুই কাল্পনিক প্রফেটের জন্য আজো অসংখ্য যুদ্ধ হচ্ছে, এবং হাজার হাজার লোক প্রাণ দিচ্ছে।

    কমিনিউজমের ব্যর্থতা এবং প্রায় একই রাজনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্মের সাফল্য দেখে আমি নিশ্চিত- Myth is more powerful than reality in politics! রাজনীতিতে মিথের ভূমিকা সর্বাধিক। বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে আওয়ামি লিগের কৃতকর্মা মেয়ররা হেরে ভূত হেফাজত, জামাত এবং বিএন পির মিথিক্যাল “ইসলাম বিপন্ন” প্রচারের কাছে। ভারতের রাজনীতিতে “রাম” বলে এক কাল্পনিক রাজার প্রভাবে বিজেপি দুটি আসন থেকে বৃহত্তম পার্টি হিসাবে অবতীর্ন হয়। তাই এর বিশ্লেষন প্রয়োজন।

    ঐতিহাসিক যিশু এবং মহম্মদের সন্ধানেঃ

    খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্মের রাজনীতি কতটা মিথ্যেচারের ওপর দাঁড়িয়ে, সেটা বোঝার জন্য প্রথমেই যে প্রশ্নটা করা উচিত-এই যে প্রফেটরা আদৌ ছিল, তার কি ঐতিহাসিক প্রমান আমাদের কাছে আছে?

    তার আগে বুঝি ঐতিহাসিক প্রমান কি? আলেক্সান্ডার বা চন্দ্রগুপ্ত ছিল তার ঐতিহাসিক প্রমান কি? এরা এসেছেন কিন্ত যিশু বা মহম্মদের কয়েকশো বছর আগে। নিশ্চিত প্রমানের জন্য ঐতিহাসিকরা এই প্রমান গুলির ওপর নির্ভর করেন

    ১ সমসাময়িক লেখক, ঐতিহাসিকদের বিবরন-যেমন আলেক্সাজান্ডারের সাথে ছিলেন খালিস্থানিস, টলেমি, ন্যাচারাস আরো অনেকে। আলেক্সজান্ডারের প্রতিটা যুদ্ধের বিবরন নিখুঁত ভাবে জানা যায়।

    ২ এডিক্ট বা যুদ্ধ বিজয়ের জন্য রাজারা পাথরের ওপর, রাজ প্রাসাদে বিজয় গাথা লিখে যেতেন। পারস্যের একামেনিড সাম্রাজ্য বা পৃথিবীর প্রথম “গ্লোবাল সম্রাট” সাইরাসের কথা এভাবেই জানা যায় উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে ইরানে বৃটিশ খনন কার্য্যের মাধ্যমে

    ৩ পোড়ানো ট্যাবলেট-যা রোমানদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল-রোমানরা সব রাজাদেশ, বা প্রশাসনিক কাজের রেকর্ড রাখত। প্রশ্ন উঠবে হজরত মহম্মদ বলে সত্যি যে একটা লোক ছিল, তার ১১ টা বৌ ছিল, সে ৮১ টা যুদ্ধের প্রতিটা তে জয় লাভ করেছিল, আরব জাতিকে একত্রিত করেছিল, বিবি আয়েশা নামে এক বাচ্চা বৌ ছিল-এর কি ঐতিহাসিক প্রমান আছে?

    ঐতিহাসিক উত্তর হচ্ছে নেই। কিস্যু প্রমান নেই।

    এই লিংকে তার বিস্তারিত তথ্য এবং প্রমান পাবেন-
    http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad [১]

    কোন স্বীকৃত ঐতিহাসিক মানতে রাজী নন– হজরত মহম্মদ বলে কেও ছিলেন সেটা ১০০% নিশ্চিত ভাবে বলা যায় !!

    ঐতিহাসিক হেরাল্ড মোজ্জাকি লিখছেন [১]
    At present, the study of Muhammad, the founder of the Muslim community, is obviously caught in a dilemma. On the one hand, it is not possible to write a historical biography of the Prophet without being accused of using the sources uncritically, while on the other hand, when using the sources critically, it is simply not possible to write such a biography

    অর্থাৎ ঐতিহাসিক মহম্মদকে পুঃননির্মান করা খুব কঠিন কাজ-অসম্ভব প্রায়।

    ভেবে দেখুন। ইতিহাসে মহম্মদ, আলেজান্ডারের সমতুল্য ফিগার। ৬৩২ সালে মারা গেলেন। আর ৬৩২ সাল ত দূরের কথা ৮৩৪ সাল লাগল তার প্রথম জীবনী লিখতে ( ইবনে হিসান)।
    যদিও তার গুরু ইস্ক হিসান মহম্মদের প্রথম জীবনী লিখেছিলেন প্রায় ৩০০০ হাদিসের ঘেঁটে [৭৬৮ খৃ] – তার আসল লেখা কারুর কাছে নেই!

    যেকারনে ঐতিহাসিকরা মহম্মদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব বা ইবনে হাসানের মহম্মদকে স্বীকার করছেন না

    (১) তখন সবে আরবিক আলফাবেট আসতে শুরু করেছে এবং আরবরা ব্যাবসার প্রয়োজনে সিরামিক লিপিতে আরবিক লিখতে জানত [https://en.wikipedia.org/wiki/Pre-Islamic_Arabia[২]।
    মহম্মদের সমসাময়িক আরবিকে লেখা পত্র আবিস্কার হয়েছে। কোন কিছুতে মহম্মদের উল্লেখ নেই! এটা অসম্ভব। সম্ভবতা দুটো-হয় মহম্মদ বলে কেও ছিল না। বা থাকলেও তিনি অতটা গুরুত্বপূর্ন কেও ছিলেন না ।

    ( এই যুক্তির বিরুদ্ধে কিছু ভুল তথ্য প্রমান বাজারে ছাড়ে ইসলামিক ঐতিহাসিকরা-বলা হয় হজরত মহম্মদ সিরিয়া ইয়েমেন কাষ্মীরের রাজা ইত্যাদি সবার কাছে, ইসলাম গ্রহনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং সেই চিঠির নাকি একটি কপি আছে। এক্টিনেম অব মহম্মদ বলে আরেকটি এডিক্টের সন্ধান পাওয়া ্যা্তে মহম্মদ সেইন্ট ক্যাথরিন মনাস্ট্রিতে খ্রীষ্ঠানদের স্বাধীন ভাবে ধর্মাচারনের অনুমতি দেন। কিন্ত এই দুই প্রমান-ভাষা বিশ্লেষনের মাধ্যমে জানা গেছে, পরবর্তীকালে কেও লিখেছিল

    http://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad%27s_letters_to_the_Heads-of-State

    http://en.wikipedia.org/wiki/Achtiname_of_Muhammad

    )

    এটা আরো স্পষ্ট হয় সিরিয়ান ইতিহাস থেকে। সিরিয়া সেই সময় জ্ঞান বিজ্ঞানের পীঠস্থান ছিল। সিরিয়া ইসলামের দখলে যায় ৬৪০ সালে। কিন্ত সিরিয়ার সাথে আরবের বাণিজ্য ছিল ঘনিষ্ঠ। সেখানে শুধু মাত্র ৬৩০ সালের একটি নথি পাওয়া যায় মহম্মদের সম্মন্ধে [http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad#cite_note-Cook_73.E2.80.9374-8[৩]।
    গ্রীক, বাইজেন্টাইন সব সোর্সেই মহম্মদের উল্লেখ আছে-কিন্ত সেটা ৭৫০ সালের পর থেকে। অর্থাৎ যখন মহম্মদ নামে একজন প্রফেট ইসলামিক সাম্রাজ্যে জনপ্রিয়! সমসাময়িক কিছু নেই।

    এখন প্রশ্ন উঠবে সেটা কি করে সম্ভব? লোকটা মদিনাতে ছিল, মক্কার কুরেশী ট্রাইবের সাথে একের পর যুদ্ধে জিতল, কাবাতে মূর্তি ধ্বংস এগুলো ও কি তাহলে গল্প? ইতিহাস না ?

    এখানেই ব্যাপারটা গোলমেলে। ইসলামের উত্থানের ইতিহাস নিয়ে দ্বিমত খুব বেশি নেই। কারন সেটা বাস্তব। আর সেই জন্য ইসলামের সিরিয়া, জেরুজালে্‌ম, ইয়েমেন বিজয়ের ওপর একাধিক সমসাময়িক নথি আছে। আরবিকেও আছে, অন্য ভাষাতেও আছে। কিন্ত কোনটাতেই মহম্মদ বা কোরানের উল্লেখ নেই [১]।

    সমস্যা হচ্ছে ইসলামের ইতিহাসে মহম্মদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিয়ে। এই সমস্যা নিয়ে সোভিয়েত ইতিহাসের মার্ক্সিস্ট স্কুলের ঐতিহাসিকরাও অনেক গবেষণা করেছেন। তাদের বক্তব্য আমার কাছে বেশি মনোজ্ঞ যেহেতু তারা ইসলামের উত্থানকে একটি আর্থ সামাজিক বিপ্লব হিসাবে দেখেছেন কল্পকাহিনীর কবর থেকে উদ্ধার করে [ http://en.wikipedia.org/wiki/Soviet_Orientalist_studies_in_Islam [৪] ]।

    সোভিয়েত ঐতিহাসিকদের মধ্যে ক্লিমোভিচ, ইসলামের জন্ম নিয়ে সমস্ত প্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের গবেষণা ঘেঁটে মহম্মদ সম্মন্ধে যে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন, তা ঐতিহাসিকদের কাছে অনেকটা গ্রহণযোগ্য [৪] এবং আমাদের বর্তমান বিশ্লেষনে কাজে আসবে। ক্লিমোভিচের মতে মক্কা তখন সবে আরব বাণিজ্যের কেন্দ্র হতে চলেছে। ব্যাবসার কারনে তাদের সাথে ভারত, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাইজেন্টাইন সব দেশের সাথে যোগাযোগ। সেখানকার আরবরা খ্রীষ্ঠান ধর্ম [ যা সিরিয়া, বাইজেন্টাইনে ছিল, মক্কাতেও খ্রীষ্ঠান ছিল] , গ্রীক দর্শন এবং ভারতীয় দর্শন নিয়ে বিস্তর পরিচিত ছিলেন। এইভাবে সমসাময়িক আরবে একটি প্রগতিশীল আন্দোলনের জন্ম হয়- এদের হানিফ বলত । এরা বিশুদ্ধু একেশ্বরবাদি – মধ্যবিত্ত মক্কাবাসীদের প্রগ্রতিশীল অংশ। অনেকটা যেভাবে মূর্তিপূজার বিরোধিতা করে প্রগতিশীল ব্রাহ্ম সমাজের সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালী রেনেঁসাসের সময়। হানিফরা সেকালের মক্কার ব্রাহ্ম সমাজ। এদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিল ইহুদি এবং খৃষ্ট ধর্ম। এই জন্য কোরানে এই দুই ধর্ম সত্য ধর্ম বলে স্বীকৃত।

    মক্কার উত্থানের সাথে সাথে একটা শ্রেনীদ্বন্দ কাজ করতে থাকে। মক্কায় দুই শ্রেনীর ব্যাবসায়ী ছিল- প্রথম শ্রেনী যারা ব্যাবসায় টাকা খাটাত-মক্কার মহাজন । এরা ছোট ব্যবসায়িদের টাকা ধার দিত সিরিয়া, ইউয়েমেনে ব্যবসা করার জন্য। মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা দেখল, টাকা আসছে মক্কায়, তাদের পরিশ্রমে আসছে, কিন্ত টাকাটা যাচ্ছে মহাজন শ্রেনীর হাতে। মহাজনরা কুরেশি ট্রাইবাল লিডার। প্যাগান ধর্ম এবং মিলিশিয়া এরাই নিয়ন্ত্রন করত। সম্পূর্ন অর্থনৈতিক কারনে হানিফদের সাথে প্যাগাননেতা, যারা মহাজনও বটে তাদের ঝামেলা শুরু হয়। সম্ভবত এরা সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন-এবং এই দুই শ্রেনীর মধ্যে মারামারি, গন্ডোগল বাড়ছিল। মহম্মদ ছিলেন হানিফদের নেতা। ফলে প্রাণ বাঁচাতে উনি হানিফ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মদিনাতে পালানেন।

    লক্ষ্য করুন কোরান মহাজন এবং সুদের বিরুদ্ধে নির্মম। এর মূল কারন ইসলামের জন্মের মূলেই আছে হানিফদের এই মহাজন বিরোধি আন্দোলন ।

    কিন্ত সাথে সাথে মক্কার গরীব অংশও আসতে আসতে মদিনাতে যোগ দেয় সম্পূর্ন ভাবে গণিমতের মাল বা ক্যারাভান লুট করার জন্য। লুঠ তরাজ সেকালের আরবে হারাম ছিল না- অন্য ট্রাইব থেকে লুঠ করে মালামাল, নারী ধরে আনা ছিল আরব ট্রাডিশন । মহম্মদ দেখলেন এদের নিয়ন্ত্রন করা খুব মুশকিল হবে যদি না তিনি একটি সুকঠোর সুশৃঙ্খল আধ্যাত্নিক ধর্মের মাধ্যমে এদের বাঁধতে না পারেন। এবং সেই ভাবেই আস্তে আস্তে কোরানের বিধিগুলি উনি আল ইসলামের সেনাদের জন্য তৈরী করেন। ইসলাম ধর্মের পেছনে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সুশৃঙ্খল আল ইসলামের সৈন্যবাহিনী।

    কোরান ঘাঁটাঘাঁটি করে সোভিয়েত স্কুলের ঐতিহাসিকরা আরো সিদ্ধান্তে আসেন, এটি ছিল আরবদের ব্যবসা সুনিশ্চিত করার কনট্রাক্ট ম্যানুয়াল। কারন কোরান প্রায় দুশ বছর ধরে সংগ্রহীত হয়েছে [ http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad#cite_note-15 [৫] এবং প্রথমের দিকের কোরানে ব্যবসা ও সমাজ সংক্রান্ত নির্দেশিকা গুলি অনেক বেশি । পরের দিকে প্রায় দুশ বছর ধরে কোরানে ধর্মীয় বিধানগুলি ঢোকে। কোরানের প্রথম দিকের সংকলনে স্যোশাল এবং বিজনেস কন্ট্রাক্টের ওপর এত বেশি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে, সোভিয়েত ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত, মক্কায় ব্যবসা বাণিজ্যে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কোরানে বিজনেস কন্ট্রাক্ট এবং অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়া হয় যেটা ধর্মগ্রন্থের জন্য অদ্ভুত। সেই জন্য তারা মনে করেন, আসলে হানিফদের তৈরী করা বিজনেস এবং স্যোশাল কন্ট্রাক্ট গুলি প্রথমে তৈরী হয় বানিজ্যিক চুক্তি হিসাবে-পরবর্তী একশো বছরে তা কোরানের সংকলনে স্থান করে নেবে।

    তবে ক্লিমোভুচ ও নিশ্চিত না-শুধু একা মহম্মদ এই কাজ করেছেন, না হানিফদের নেতারা মিলে এই ধর্মের জন্ম দিয়েছে।

    (২) মহম্মদের ইতিহাস বলতে সবটাই ওরাল ট্রাডিশন/ হাদিসের গল্পের মাধ্যমে এসেছে। ভাবুন একবার ২০০ বছর ধরে যে গল্পগুলো মুখে মুখে চলে আসছে, কেও লিখে যায় নি, সগুলোর মধ্যে কোন টা ঠিক বা বেঠিক জানবেন কি করে? এর জন্য হাদিস সায়েন্স আছে। সঠিক হাদিস কি জানার জন্য। কিন্ত সেটা কি সায়েন্স না ধান্দাবাজি? বিশেষত পরের খালিফারা ইসলামি সম্রাজ্যের ক্ষীর খাওয়ার জন্য মহম্মদের বায়োগ্রাফী নিজেদের মতন করে সাজাবেন না এর গ্যারান্টি কে দেবে? হাদিস থেকে কোন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া সম্ভব না। দুশো বছরে দুধে কতটা জল ঢুকেছে বার করা সম্ভব না । প্রবাদ প্রতিম প্রাচ্য ঐতিহাসিক বার্নাড লুইস লিখছেন [http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad#cite_note-FOOTNOTELewis196737-25]

    “The collection and recording of Hadith did not take place until several generations after the death of the Prophet. During that period the opportunities and motives for falsification were almost unlimited.”

    (৩) কোরানে মহম্মদের উল্লেখ আছে মাত্র চারবার। তাও কনটেক্সট পরিস্কার না । এখানে একটা কথা বলা দরকার। কোরানের ভাষা আদি আরবিক-যার মধ্যে হাজার হাজার সিরিয়ান, ক্যানানাইট, গ্রীক, রোমান শব্দ মিশে আছে। কোন ভাষাবিদ ছাড়া কোরানে আসল কি লেখা আছে, সেটা উদ্ধার করাই মুশকিল। সুতরাং কোরানকে ঐতিহাসিক সূত্র হিসাবে ব্যবহার করাও মুশকিল।

    এমন না মহম্মদের অস্তিত্ব সমস্যা নতুন। ক্লিমোভিচ সেই ১৯৩০ সাল থেকেই এই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে ইসলামি ফ্যানাটিকদের হাতে প্রাণ হারাবার ভয়ে অনেক প্রাচ্যবিদ সেই সব গবেষনা প্রকাশ করতে পারেন নি।

    মোটামুটি ভাবে ইতিহাসে যেটা উঠে আসছে -হানিফদের একটা প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা ছিলেন মহম্মদ। প্যাগান মহাজনদের কাছ থেকে মক্কার ব্যবসার দখল নেওয়ার জন্য আল ইসলাম সেনা বাহিনী গঠন করার দরকার হয়ে ওঠে এই একেশ্বরবাদি সম্প্রদায়ের। কারন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি শ্রেণীটি ছিল মহাজন দ্বারা শোষিত ও অত্যাচারিত। আল ইসলাম সেনাবাহিনী তৈরী করতে গিয়ে তারা দেখলেন মক্কার সর্বহারারা তাদের সাথে মদিনাতে আসতে চাইছে। প্রগতিশীল হানিফদের ধর্মচারন মক্কার গরীবদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। ফলে মহাজনদের সুদের শোষন থেকে বাঁচতে তারাও মদিনাতে দলে দলে ভীর করতে থাকে। কিন্ত সেনাবাহিনী বানাতে গিয়ে হানিফরা দেখল, এরা লুঠেরাগিরি করতে এসেছে। ফলে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সুষ্ঠভাবে ব্যবসা করার জন্য এই গোষ্ঠী যে নীতিমালা তৈরী করে, সেটা কোরান হিসাবে পরে সংগ্রীহিত হয় [৪]।

    তাহলে মহম্মদ চরিত্র? তিনি এই আল ইসলাম সেনাবাহিনীর নেতা । আরবে প্রগতিশীল আন্দোলনের ধারক। কিন্ত তার যে জীবনী আমরা জানি-যিনি গুহায় ঢুকে সাধনা করতে করতে ঐশী বানী শুনলেন এবং ইসলাম নাজিল হল-এসব আষাড়ে গল্প। এই ধর্মীয় মোরকটা তার মৃত্যুর অন্তত শখানেক বছর বাদে বাজারে ছাড়া হয়েছে। হাদিস এই সব গাঁজাখুরি গল্পের সংকলন । চরিত্রের নির্মান যদি শুধু লেনিনের মতন একটি সমাজ বিপ্লবের নেতার হত -তাহলে ইসলামের নামে যে রাজনীতি, সাম্রাজ্যবাদ, বাজার তৈরী হল-তার কোনটাই চলত না । ফলে সেই যুগের “লেনিন” মহম্মদের সাথে আরো অনেক গাঁজাখুরি ঐশ্বরিক গল্প জুরে, একটা মিথিক্যাল মহম্মদ চরিত্রর জন্ম হল সেই অষ্ঠম শতাব্দিতে-যার ধর্ম এবং ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের বাজারে কাটতি ভাল। মুসলমানদের কাছে মহম্মদ শ্রেষ্ঠ পুরুষ। অসুবিধা নেই। কারন তার চরিত্রের সবটাই কাল্পনিক নির্মান। আসল ঐতিহাসিক মহম্মদ কি ছিলেন তা জানা সম্ভব না বলেই অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন [১]।

    এবার আসল প্রশ্নে আসি। কেন ইসলাম সব দেশের রাজনীতিতে এত গুরুত্বপূর্ন? সোভিয়েত স্কুলের ইসলামের ইতিহাস থেকে একটা ব্যাপার পরিস্কার ইসলামের শুরু একটা প্রগতিশীল, গরীব দরদি, মহাজন বিরোধি আন্দোলন দিয়ে। এটা মদিনা সুরাগুলি থেকে সহজেই বোঝা যায়। কিন্ত পরবর্তীকালে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্রাজ্যবাদি এবং আধিপত্যকামী। প্লেটোর রিপাবলিকানের ভূত ইসলামের ইতিহাসেও বিদ্যমান। ইসলাম আসলে ছিল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা মহম্মদের মৃত্যুর দুশো বছর পর বিবর্তিত হতে থাকে ধর্মীয় রূপে। প্রতিটি মুসলিমদেশে দরিদ্র শ্রেনীর কাছে ইসলামের আবেদন অপ্রতিরোধ্য। তারা মনে করে ইসলামের জন্ম হয়েছে তাদের মতন দরিদ্র শ্রেনীর হেফাজত করতে-যা ঐতিহাসিক ভাবে ভুল কিছু না । মাক্সবাদের প্রয়োগে কমিনিউস্টরা ব্যর্থ- সেখানে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম হওয়া সত্যও , সেই শ্রেনী দ্বন্দের সুযোগ ঐতিহাসিক ভাবে ইসলাম নিয়েছে, এবং আজো নিচ্ছে। বাংলাতে কারা ইসলাম গ্রহণ করে? সবাই অন্ত্যজ, সমাজের দরিদ্রতম অংশ। সেখানে বৌদ্ধ ধর্মর ইতিহাসে দেখা যাবে, বৌদ্ধ ধর্ম প্রথমে বণিক শ্রেনীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়। যদিও ইসলামের নেতৃত্বে ছিল মক্কার বণিক শ্রেনী। যাইহোক দরিদ্র শ্রেনীর মধ্যে এই দুর্বার জনপ্রিয়তা যা সম্পূর্ন মিথের ওপর দাঁড়িয়ে, সেটাই ইসলামের আসল রাজনৈতিক শক্তি। যার ভিত্তি অবশ্যই শ্রেণী দ্বব্দ। শ্রেনী দ্বন্দ এবং ধর্মের মাদক-এই ডবল ডোজে রাজনীতিতে গরীব শ্রেনীর ওপর ইসলামের প্রভাব সাংঘাতিক বেশী । ইসলামে ধর্মটার ভিত্তিই হচ্ছে রাজনীতি। সুতরাং কোন ইসলামিক দেশে রাজনীতি থেকে ইসলামকে পৃথক করা সম্ভব হয় নি-হবেও না। তুরস্কে আইন করে যা হয়েছে তা স্বৈরাচারের মাধ্যমে-গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম রাজনীতিতে ঢুকবে-এবং সেটা তুরস্কে একটা ক্রমপ্রবাহমান পদ্ধতি।

    তাহলে কি ইসলামের হাত থেকে মুসলিম দেশগুলির রাজনীতির নিস্তার নেই? পরিস্কার উত্তর নিস্তার সেই দিন মিলবে যেদিন ইসলামিক দেশগুলিতে দরিদ্র দূরীকরন, জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার হবে। আস্তে আস্তে তারা দেখতে পাবে “ভাল মুসলমান” সেজে কিভাবে তাদের দেশের রাজনীতিবিদরা তাদের ঠকাচ্ছে। অর্থাৎ ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীল দিকটা তারা বুঝতে সক্ষম হবে।

    মুসলিমদেশের রাজনীতিবিদরা “ভাল” মুসলমান হওয়ার যাবতীয় অভিনয় রীতি রপ্ত করতে বাধ্য। উদাহরন সাদ্দাম হুসেন, গদ্দাফি, ইয়াসার আরাফাত। এরা প্রথম জীবনে বাম ঘরানার রাজনীতিতে ছিলেন। সাদ্দাম নামাজ পড়তেন না । আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা বাড়াতে, সাদ্দাম ইসলামিক জীবনে ঢোকেন যা টিভিতে ঘটা করে দেখানো হত । প্রতিটা মুসলিমদেশে প্রতিটা রাজনীতিবিদ/নেতারা তাদের ধর্মীয় জীবন টিভিতে দেখাতে উৎসুক -নইলে জনপ্রিয়তা হারাবেন। এটা ভারতে বা খ্রীষ্ঠানদের মধ্যেও আছে। তবে মুসলমানদেশ গুলির মতন এত দৃষ্টিকটূ ইঁদুর দৌড় অন্যত্র বিরল । গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশগুলিতে পার্টিগুলির মধ্যে কে কত ইসলামের হেফাজত করতে পারে তাই নিয়ে মিডিয়াতে প্রতিযোগিতা। আফগানিস্তানের সবকটা রাজনৈতিক পার্টির সাথে ইসলামটা জুরে দেওয়া হয়েছে- ন্যাশানাল ইসলামিক মুভমেন্ট অব আফগানিস্তান, জামাত ই ইসলামি, হিজবে ওয়াদাত ই ইসলামি, হেজবি ইসলামি ইত্যাদি ইত্যাদি। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলাম রক্ষকের এই অভিনয়, উন্নয়ন ভিত্তিক রাজনীতির বাধা স্বরূপ। বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের মেয়ররা যদি দেখেন শহরগুলির উন্নয়ন করার পরেও, যারা ইসলামি হেফাজতের ভাল অভিনয় করতে পারে লোকে তাদেরই ভোট দেয়, তাহলে নেক্সট টাইম তারাও উন্নয়ন ছেরে দাড়ির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে মসজিদ স্থাপনেই বেশি মনোযোগী হবেন। সেটাই যেহেতু ভোট টানার উপায়। এইভাবেই মুসলিম দেশগুলিতে উন্নয়নের রাজনীতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না । রাজনীতিতে ইসলামের অবস্থান তাদের পা টেনে নামাচ্ছে। রাজনীতি থেকে ইসলামকে বাদ দেওয়াও অসম্ভব-কারন তাহলে ইসলাম বলে কিছুর অস্তিত্ব থাকে না [চলবে]
  • bip | 78.33.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৩ ০০:২৪617386
  • রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা-পর্ব ৪ ( খ্রীষ্ঠান ধর্মের সাম্রাজ্যবাদ)
    ***********************
    আমরা আগের পর্বে দেখেছি কিভাবে আরবের আর্থসামাজিক আন্দোলনের একজন নেতা, দুশো বছরের বিবর্তনে ক্রমশ এক রূপকথার প্রফেট চরিত্রে উত্তীর্ণ হলেন। কিভাবে ইসলামের মতনএকটি প্রগতিশীল আন্দোলন ক্রমশ শাসক শ্রেনীর যন্ত্রে পরিণত হয়ে, চূরান্ত প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধর্মরূপে বিবর্তিত হল।

    যেকোন ধর্মের জন্মর নাড়ি বাঁধা থাকে সমকালীন ইতিহাস এবং ভূগোলে। খ্রীষ্ঠ ধর্মের নড়ি বাঁধা প্রায় দুহাজার খৃষ্ঠপূর্বাব্দ ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্যের ধর্ম আন্দোলনের সাথে। ক্যানানাইট, পার্সিয়ান, গ্রীস, সিরিয়ান এবং ইহুদি ধর্মের ধারা এবং মিথগুলি (রূপকথা) একসাথে মিশে তৈরী হল খ্রীষ্ঠান ধর্ম।

    তাহলে খ্রীষ্ঠধর্ম মহান ঈশ্বরের সন্তান জিশুর প্রচারিত ধর্ম না? একদম ই না। ইসলাম যেমন মহম্মদ প্রচলিত ধর্ম বলে তার মৃত্যুর দুশো বছর বাদে চালানো হল ( তৃতীয় পর্ব দেখুন ), যীশু খ্রীষ্ট্রের ধর্ম বলতে যা আজকে আমরা জানি-সেটাও যীশুর জন্মের দুহাজার বছর আগে থেকে চলে আসে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় রূপকথাগুলির সংকলন ছাড়া কিছু না । এবং চালানোর কৃতিত্ব মোটেও যীশুর না -তা প্রাপ্য রোম সম্রাট কনস্টানটাইনের (৩০৬-৩৩৭)।

    মূলত তিনিই রোমান সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে খ্রীষ্ঠান ধর্মের বর্তমান রূপের প্রবর্তক। যীশু সেই রোমান সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে জন্মানো ধর্মের এক কেন্দ্রীয় মিথিক্যাল চরিত্র।

    যীশু বলে কি কেও ছিলেন? যীশু বলে একজনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জুডাইয়ার শাসক পন্টিয়াস পিলেট ৩৩ খৃষ্ঠাব্দে শুলে চড়িয়েছিলেন এটা রোমান ঐতিহাসিকরা লিখে গেছেন। এই যীশু ইহুদি শিক্ষক বা রাব্বাই ছিলেন। এই টুকুই শুধু ইতিহাস {[1] Van Voorst, Robert E. (2000). Jesus Outside the New Testament: An Introduction to the Ancient Evidence. Wm. B. Eer

    খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রচলক কনস্টান্টাইন
    dmans Publishing Co.. ISBN 0-8028-4368-9 pages 65-68}।

    যীশু সম্পূর্ন এক কাল্পনিক চরিত্র

    হোরাস-মিশরের দিনের দেবতা যিনি সব মধ্যপ্রাচ্যের প্রফেটদের পূর্বসূরী

    বাকী ২৫শে ডিসেম্বর কুমারী মাতার গর্ভে জন্ম, ছুতোর পরিবারের যীশু, গরীবের বন্ধু যীশু, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি যীশু-এর কোন কিছুর কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। কিন্ত মিশরীয়, গ্রীস এবং পার্শিয়ান রূপকথা ঘাঁটলে দেখা যাবে, যীশু নামে যে রূপকথার পয়গম্বরকে আমরা জানি, সেই প্রফেট চরিত্র আসলেই মিশরের হোরাস, গ্রীকদের এটিস এবং পারস্যের জথুরাষ্ট্র [ ইরানের সূর্য উপাসক ধর্মের প্রফেট] , এই তিন চরিত্রের সংশ্লেষন। এবং সেই সংশ্লেষন কাল যীশুর জম্মের তিনশো বছর বাদে কনস্টানটাইনের রাজত্বকালে {[২] Peter Brown, The Rise of Christendom 2nd edition (Oxford, Blackwell Publishing, 2003) }

    কেন এমন সিদ্ধান্তে এলেন, ঐতিহাসিকরা?

    যীশুর মিথিক্যাল চরিত্রের সব থেকে কাছাকাছি মিশরের দেবতা হোরাস {[3]http://proud-a.blogspot.com/2012/09/jesus-vs-horus.htm /http://www.andrew.cmu.edu/user/jksadegh/A%20Good%20Atheist%20Secularist%20Skeptical%20Book%20Collection/Parallels_between_Jesus_and_Horus_an_Egyptian_God.pdfl}।

    হোরাসের জন্ম ২৫ শে ডিসেম্বর। কেন ২৫ শে ডিসেম্বর?

    হোরাস ছিলেন দিনের দেবতা । মিশরের লোকজন মনে করতে দিন রাত হয়- হোরাস নামে দিনের দেবতা আর অসিরিস নামে রাতের দেবতার যুদ্ধে। সকালে হোরাস জিতলে দিন , সন্ধ্যাবেলায় অরিসিস জিতে রাত নামে। হোরাস মিশর শুধু না-গ্রীক এবং রোমান যুগেও প্রভাবশালী দিনের দেবতা হিসাবে টিকে গেছেন। তবে রোমে হোরাসে নাম হয় এর পর থেকে মধ্য প্রাচ্যে যত প্রফেট এসেছে-সে আব্রাহাম ই হৌক বা জথুরাষ্ট্র হৌন, সবার ওপর হোরাসের পৌরানিক চরিত্রের প্রভাব অসীম।

    কিন্ত ২৫ শে ডিসেম্বরে মধ্য প্রাচ্যের সব প্রফেটরা পাইকেরি হারে জন্মালেন কেন?

    কারন সেই হোরাস। ২২ শে ডিসেম্বর দিন সব থেকে ছোট হয়। এরপর ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে দিন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এটা মিশরীয়রা জানত-এবং তাদের থেকে গ্রীক-রোমানরাও শেখে। ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিন হচ্ছে হোরাসে্র জন্মদিন। কারন সে দিনের দেবতা-আর ঐ দিন থেকে দিন বড় হতে থাকে বলে, মিশরীয়রা বহুদিন থেকে ২৫ শে ডিসেম্বরকে হোরাসের জন্মদিন বা পবিত্রদিন হিসাবে পালন করত। হোরাস যেহেতু গ্রীক-রোমান সভ্যতায় দেবতা হিসাবে ঢুকে পড়ে, সেহেতু মধ্যপ্রাচ্য, রোম এবং গ্রীসে খ্রীষ্ঠ জন্মের বহুদিন আগে থেকেই বড়দিন হচ্ছে সব থেকে পবিত্র দিন। রোমে ঐ দিন পালন করা হত ব্রুমালিয়া উৎসব হিসাবে [http://en.wikipedia.org/wiki/Brumalia]

    তাহলে, যীশু ২৫ শে ডিসেম্বর জন্মালেন কি করে? এই মিথটার ইতিহাস সুলিপিবদ্ধ। যীশুর জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর পালন করা শুরু হয় তার জন্মের ৩০০ বছর বাদে। প্রথম খ্রীষ্ঠান সম্রাট কনস্টানটাইন, ২৫ শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্মদিন বলে চালিয়ে দিলেন । কিন্ত কেন ?

    কনস্টানটাইন খ্রীষ্ঠান ধর্ম নিয়েছিলেন সাম্রাজ্যের স্বার্থে, নিজে ছিলেন ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ। আসলে বড়দিন রোমান সম্রাজ্যের একটা বড় প্যাগান উৎসব -ব্রুমালিয়ার দিন। কনস্টানটাইন ওইদিনটাতেই যীশুর জন্মদিন হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য রোমান প্যাগানরা যাতে সেই উৎসবে যোগ দিতে পারে । এমনিতেই রোমান প্যাগানরা তার খ্রীষ্ঠ ধর্মগ্রহনে বা চার্চের পেছনে রাজানুগ্রহে খুশী ছিল না । গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন, ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিনের উৎসব বাতিল করলে রোমান সম্রাজ্যে কনস্টানটাইনের জনপ্রিয়তা আরো নামত । ফলে যা ছিল দিনের দেবতার জন্মদিনের উৎসব -তা যীশু জন্মদিন হিসাবে রাজানুগ্রহে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যীশু নামে এক ধর্মপ্রচারকের মিথ, তার জন্মের তিনশো বছর বাদে বিবর্তিত হয়েছে।

    এবার আসল প্রশ্নে আসা যাক। কিভাবে খ্রীষ্ঠান ধর্ম মধ্যযুগের রাজনীতিতে নির্নায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হল। কেন কন্সটানটাইন রোমান জাতীয়তাবাদ ছেড়ে খ্রীষ্ঠান জাতিয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদে এলেন? কি দরকার ছিল ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদে? কেন রোমান সাম্রাজ্যবাদের থেকে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হল কনস্টানটাইনের?

    এটা বুঝতে আমরা বর্তমানের কিছু উদাহরনের দিকে তাকাতে পারি। ভারত বা বাংলাদেশের মুসলমানদের একটা বৃহত্তর অংশ, ইসলামের পালন বলতে বোঝে বোরখা পড়া, আরো লম্বা দাড়ি, আরবের প্রচলিত শরিয়া আইন, রমজান মাসে উপবাস ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাক ইসলামিক ইতিহাসের ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে বোরখা পড়া থেকে রমজান মাসে উপবাস-এসব কিছুই আরবে ইসলামের পূর্বেও ছিল। যেহেতু ইসলামের জন্ম আরবে, সময়ের সাথে সাথে তা ইসলামিক সংস্কৃতি বা ধর্মীয় সংস্কৃতি হিসাবে ঢুকে গেছে।

    কিন্ত মজার ব্যপার হচ্ছে, এই মধ্যযুগীয় আরবীয় সংস্কৃতিকে ভারত বা বাংলাদেশের ধর্মভীরু মুসলিমরা "ইসলামিক সংস্কৃতি ভেবে" নিজেদের দেশের, নিজের মাটির সংস্কৃতি ছেড়ে গ্রহণ করতে চাইছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে কাফির বা বিধর্মী সংস্কৃতি ভাবা শিখছে।

    কি আজব চিজ দেখুন! আরবদের একটুও যুদ্ধ বিগ্রহ করতে হচ্ছে না বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যেকোন মুসলিম দেশে!! অথচ বিশ্বাসের ভাইরাস তারা এমনভাবে ইসলামের মধ্যে ঢুকিয়েছে- ইসলামের মধ্যে দিয়ে আরব সংস্কৃতি পৃথিবীর প্রতিটা মুসলিমপ্রধান দেশ গ্রহণ করছে। অর্থাৎ দেশগুলি আরবের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ হয়ে গেছে বা হতে চাইছে!! মুসলিম দেশগুলি নিজেদের দেশের হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে "কাফির" বা বিধর্মী সংস্কৃতি বলে ঘোষনা করতে চাইছে!! এর থেকে একটি সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বড় বিজয় আর কি হতে পারে ?

    ইসলামের মধ্য দিয়ে এই সফল আরব সাম্রাজ্যবাদ বোঝা বেশ সহজ। এবং সেটা থেকে বোঝা যাবে কেন কনস্টানটাইন রোমান জাতিয়তাবাদ ছেরে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদের প্রচলন করলেন। কেন "রোম মহান" থেকে "খ্রীষ্ঠ ধর্ম মহান" তার সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হল।

    সাম্রাজ্যবাদ মানে শুধু যুদ্ধে দেশ জেতা না । সেই দেশে শোষন বজায় রাখতে, ভৃত্য প্রভুর সম্পর্কটা সবল করার দরকার হয়েছে সব সময়। অর্থাৎ বিজিত দেশগুলি থেকে লাভ করতে হলে, সেই দেশে, এমন একটা শ্রেণী তৈরী করতে হবে-যারা হবে বিজয়ী দেশের তাবেদার। তারা যেন বোঝে বিজয়ীদেশ উন্নত এক সভ্যতা-তারা নিজেরা আসলেই অনুন্নত জাতি। এবং তাদের উন্নতির জন্য, বিজয়ী জাতির প্রভুত্ব বা অনুকরন মানা দরকার। ভারতের ইতিহাসে এটা আমরা বিশেষ ভাবে দেখেছি। জমিদার, ভারতীয় রাজন্যবর্গ, এবং তার সাথে আমাদের স্বনামধন্য রেনেসাস চরিত্ররা ( যার মধ্যে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ , স্যার সৈয়দ আহমেদ সবাই ছিলেন) বরাবর মনে করতেন, ভারতে বৃটিশ শাসন আর্শীবাদ। অভিশাপ না । এই "তাবেদার" শ্রেনীর নির্মান হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদি শক্তির সব থেকে বড় সফলতা ।

    খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ গ্রহণ করার আগে, রোম কিভাবে এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ ( যে রোমান শাসন হচ্ছে আর্শীবাদ-তা উন্নত সভ্যতার শাসন ) চালাতে সক্ষম হত? কি ছিল তাদের সাম্রাজ্যবাদি নিয়ন্ত্রনের ম্যাজিক গল, গথ, ভিসিগথ, জার্মেনিয়া, চেরোকি ইত্যাদি ইউরোপিয়ান আদিবাসিদের ওপর?

    শুধু মিলিটারি দিয়ে এটা সম্ভব না । রোমানরা তা জানত বিলক্ষণ । যেসব আদিবাসি গ্রুপদের ওরা যুদ্ধে হারাত বা যারা রোমের বশ্যতা স্বীকার করত, রোমানরা এক অদ্ভুত "রোমানাইজেশন" প্রথা চালু করে তাদের জন্য। এইসব আদিবাসিদের নেতাদের সন্তানদের দশ বছর বয়সে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাওয়া হত রোমে । আদিবাসি নেতাদের বাধ্য করা হত তাদের সন্তানদের রোমের অভিজাত মিলিটারি স্কুলে পাঠাতে।

    উদ্দেশ্য? যাতে এই সব অভিজাত সন্তানরা তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রোমান অভিজাত মিলিটারি লিডার হিসাবে বড় হয় । রোমে এদের শিক্ষার অঙ্গ হচ্ছে-সেই তাবেদারি শ্রেনী তৈরী- রোম সভ্যতার সূর্য্য। আর এই অভিজাত সন্তানদল রোমান সভ্যতাকে রক্ষা সৈন্য হিসাবে নিবেদিত প্রাণ। তাদের নিজেদের জাতি হচ্ছে বর্বর । তবে তারা রোমান ! এরপর এরা রোমের সেনাবাহিনীর অঙ্গ হিসাবে যুদ্ধ করে নিজেদের প্রতিভা প্রতিষ্ঠা করার সু্যোগ পেত। রোমান বশ্যতা প্রদর্শনের নিরঙ্কুশ প্রমাণের পর - জন্মস্থানে রোমের গর্ভনর বা সহকারী গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হত এই আদিবাসি রাজপুত্রের দল । তারা এসে তাদের স্বজাতিকে বোঝাত- রোম মহান-রোমের প্রতিবিশ্বস্ত থাকলে, তাদের উন্নতি। যেভাবে ভারতের রাজন্য এবং মধ্যবিত্ত বর্গ বৃটিশ শাসন নিয়ে বহুদিন আপ্লুত ছিল। আসলে এটাই সাম্রাজ্যবাদের চিরচারিত ট্যাকটিস এবং সব থেকে শক্তিশালী পিলার। বিজিত দেশের লোকেদের মধ্যে একটা অনুগামী শ্রেনীর সৃষ্টি। আমরা এটাই দেখব, এই শ্রেনীর সৃষ্টি ধর্মের মাদকে যত সফল ভাবে সম্ভব-অন্য কোন রাজনৈতিক ফর্মুলাতে তা অসম্ভব!!

    কিন্ত নিয়ন্ত্রনের এই পদ্ধতি খুব যে ভাল কাজ করত তা না । উদাহরন জার্মেনিয়া বা জার্মানির আদি আদিবাসী গোষ্ঠি চাট্টিদের বাটাভি বিদ্রোহ (৬৯-৭০ খৃষ্টাব্দ)।

    এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে এক "পরিবর্তিত রোমান" গায়াস জুলিয়াস সিভিলিস। যিনি ছিলেন বাটাভি রাজপরিবারের সন্তান । কিন্ত ছোটবেলায় তাকে রোমে মিলিটারী স্কুলে নিয়ে গিয়ে রোমান অভিজাত বানানো হয়। বয়স যখন ত্রিশ, রোমান গর্ভনর মামিয়াস লুপেক্রাসের সহকারি হিসাবে তিনি নিজের জন্মস্থান চাট্টিতে ফিরে আসেন। কিন্ত ফিরে এসে সিভিলিস দেখলেন, রোমান আইন আসলেই তাদের আইনের থেকে অমানবিক। রোমান সৈন্যরা, সমৃদ্ধ চাট্টিদের কাছ থেকে ট্যাক্সের নামে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। চাট্টি আইনে চুরি ডাকাতির জন্য মৃত্যদন্ড ছিল না- রোমানরা শুধু রুটি চুরির জন্য, চাট্টিদের শুলে চড়াত। সিভিলিস বুঝলেন শুধু রোমান চাকচিক্য থাকলেই সভ্য হয় না । চাট্টি আদিবাসিদের আইন, রোমান আইনের থেকে অনেক বেশি মানবিক এবং উন্নত । জার্মেনিয়ার আদিবাসি নেতারা কখনোই বুভুক্ষদের থেকে তাদের শেষ খাবারটা ট্যাক্সের নামে ছিনিয়ে নেয় না ।

    জুলিয়াস সিভিলিস রোমের সৈন্যদল ত্যাগ করে চাট্টি বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিলেন। সিভিলিস রোমানদের যুদ্ধ কৌশল জানতেন। ফলে সম্মুখ সমরে না নেমে গেরিলা আক্রমনে মামিয়াস লুপেক্রাসের তিন লিজিয়ন সেনাবাহিনীকে ( প্রায় কুড়ি হাজার সেনা) সম্পূর্ন ধ্বংস করেন। এই মামিয়াস লুপেক্রাস ছিল, তার পালিত পিতার মতন । কিন্ত যিনি সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ একবার বুঝেছেন এবং স্বজাতির দুঃখকে অনুভব করেছেন, তিনি তার পালিত রোমান পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হলেন। জুলিয়াস সিভিলিস আজও জার্মানির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল চরিত্র। জার্মান জাতিয়তাবাদ জুলিয়াস সিভিলিসে মগ্ন ।যিনি জার্মানীকে রোমের কাছ থেকে স্বাধীন করেছিলেন।

    সাম্রাজ্যবাদের সব থেকে বড় খেলাটা হচ্ছে কিভাবে বোঝানো যায় বিজিত জাতির সংস্কৃতি, আইন নিম্নমানের। যেমন বাংলাদেশ সহ সব মুসলিম দেশের ইসলামিস্টরা শরিয়া আইন চাইছে নিজেদের দেশে। শরিয়া আইনের সাথে কোরানের বিশেষ সম্পর্ক নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই আইনের উৎপত্তি আসলেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আইনের ধারা থেকে-যার মধ্যে ক্যানানাইট, সিরিয়ান থেকে আরবের ইসলামপূর্ব আইন ও অনেক আছে। অর্থাৎ শরিয়া বলে যা চালানো হচ্ছে তা আসলে মধ্যযুগীয় আরব আইন। কি যুক্তি শরিয়া প্রেমীদের? সেটা এই-বাংলাদেশের আইন হচ্ছে মানুষের তৈরী আইন। আর শরিয়া হচ্ছে আল্লার আইন (!) সুতরাং শরিয়া আইন শ্রেষ্ঠতর -এবং তা বাংলাদেশ ধর্ষনপূর্বক চালাতেই হবে!!!

    শুধু কি তাই! অধিকাংশ ভারতীয় এবং বাংলাদেশী মুসলিমদের ধারনা, ভারতে মুসলিম আক্রমনের আগে এই দেশ ছিল বর্বর !! এই ধরনের হাস্যকর ধারনা প্রতিটি বিজয়ী সংস্কৃতির মধ্যেই থাকে। বাস্তব সত্য হচ্ছে বিজয়ী জাতিগুলি ছিল বর্বর -এবং বিজিতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক বেশি মানবিক উন্নত সভ্যতার অধিকারি ছিল। এটা রোম, স্পেইন, ইসলাম থেকে আর্য্য-সব বিজয়ীদের ইতিহাসে সত্য। এই সামরিক শক্তিগুলি আসলেই বর্বর লুটেরা শক্তি ছাড়া কিছু ছিল না । এরা উন্নততর সভ্যতাগুলিকে ধ্বংস করেছে -এবং বিজিতদের বর্বর আখ্যা দিয়েছে।

    প্রিয় পাঠক এবার একবার ভাবুন। ভাবুন এই শরিয়া আইন, যা আসলেই আরবীয় আইন ছাড়া কিছু না -তা যদি আরবের লোকেরা বাংলাদেশের ওপর অস্ত্রের জোরে " আরবের আইন " বলে বলবৎ করত, তাহলে ফলটা কি দাঁড়াত? বাংলাভাষি প্রেমী মানুষরা নিসন্দেহেই আরবের আইন শুনলে হা রে রে করে তেড়ে এদের বিদায় করতেন!!

    কিন্ত সেই আরবের আইনকে আল্লার আইন বলেতেই ধর্মভীরু মুসলিমদের মনে ঢুকছে ভয়। তারা ভাবছে, শরিয়া আইনে সাত পাঁচ ব্যাঙ ঘোঁড়া যা খুশি থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ। কারন তা আল্লার আইন-আল্লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া!!

    অর্থাৎ নিজেদের আইনটাকে যদি "রোমান আইন" বলে না চালিয়ে, মামিয়াস লুপেক্রাস ঈশ্বরের আইন বলে চালাত- এই ধরনের আদিবাসি বিদ্রোহ হত না। কিন্ত শুধু ঈশ্বরের আইন বললেই হবে না । সেই ঈশ্বর আদিবাসিদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও হতে হবে। শরিয়া আইন কৃষ্ণের আইন বলে চালালে হবে না-তা আল্লার আইন বলেই চালাতে হবে!! কারন বাংলাদেশের মানুষ আল্লাকেই একমাত্র আসল ঈশ্বর বলে মানে। নইলে কে ঔ মধ্যযুগীয় আরব আইনের হেফাজত করবে?

    সুতরাং কনস্টানস্টাইন প্রথম শ্লোগান তুললেন এক সাম্রাজ্য-এক ঈশ্বর । সে হচ্ছে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বর। হ্যা সবাই যদি খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে একমাত্র সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানে, তাহলে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরের আইনের নামে, ইউরোপের সব বিদ্রোহী আদিবাসিদের মধ্যে রোমান আইনের প্রচলন সম্ভব। রোমের আইন বললে কেও মানবে না । রোমের আইন লোকে তখন ই মানে যখন রোমান সেনাদের তারা ভয় পায়। কিন্ত রোমের তখন ক্ষয়িষ্ণু সেনাবল। শুধু সেনাবলের ভয়ে, আর রোমান সাম্রাজ্য টেকানো যাবে না এটা বুঝতেন কনস্টানস্টাইন। ফলে দরকার হল একেশ্বরবাদের ঈশ্বর বা আল্লার ভয়। ঈশ্বর বা আল্লা নামক সুপার মাফিয়ার ভয় টেকাতে কোন লজিস্টিক লাগে না । বিশ্বাসের ভাইরাসের মতন এই ভয় মানুষের মনে, সমাজের মনে একবার গেঁথে গেলেই হল। ব্যাস! এই মহান ঈশ্বর বা আল্লার নামে তখন নিজেদের আইন বলবৎ করতে সক্ষম হয় বিজয়ী জাতি। কনস্টানটাইন ঠিক সেটাই করলেন। রোমান সংস্কৃতি এবং আইন, আস্তে আস্তে খ্রীষ্ঠান আইনে রূপান্তরিত হল । খ্রীষ্ঠান সংস্কৃতি বলতে আজ আমরা যা বুঝি বা দেখি, তা আসলে রোমান সংস্কৃতি।

    কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্মকে বা খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে কেন এক মাত্র সত্য ঈশ্বর হিসাবে চালাতে চাইলেন কনস্টানস্টাইন? সেটা কি খ্রীষ্ঠধর্ম প্রীতি?

    কনস্টাইনের মা হেলেনা ছিলেন খ্রীষ্ঠান-কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট কনস্টানটাইন মোটেও ধার্মিক টাইপের লোক ছিলেন না। ছিলেন বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ। রোমের অধিকাংশ লোক তখন ও প্যাগান। তাদের চটানোর উদ্দেশ্য কোন কালেই তার ছিল না। সম্রাটের রোমের সেনেটে যারা ছিল, তারা প্রায় সবাই প্যাগান।

    তাহলে কেন গরীবদরদি ধর্মকে সাম্রাজ্যবাদের ধর্মে রুপান্তরিত করন?

    সামাজ্যবাদের ধর্মকে গরীব দরদি হতেই হবে। কারন অধিকাংশ লোকের মধ্যে এই ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা না এলে তারা এই ধর্মর ঈশ্বরকে সত্যিকারের ঈশ্বর বলে মানবে কেন? আমার ঈশ্বর সত্য, তোমার মিথ্যে-এটাই ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের আসল চাবিকাঠি।

    প্যাগান ধর্ম কোন কালেই আর্থ রাজনৈতিক না । হিন্দু জমিদাররা পূজো করে। গরীব প্রজারা দুদিন আনন্দ করে। আনন্দ আমোদ আহ্লাদ হচ্ছে প্যাগান ধর্ম। রোমেও প্যাগান ধর্ম বলতে সেই আনন্দ স্ফূর্তি। আর উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বলি দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মধ্যে সেই "সার্বজনীন" আবেদন কোথায় যা সবার , সব দেশের সব শ্রেনীর গরীব মানুষের নিজের ধর্ম হয়ে উঠবে? যার জন্য তারা, সেই ধর্মের ঈশ্বরকে সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানবে? দেবী দূর্গাকে আদিবাসিদের মধ্যে দেবতা বলে চালানো কঠিন-কিন্ত যিশুকে সত্যকারের ঈশ্বরপুত্র বলে আদিবাসিদের মধ্যে চালানো অনেক সহজ। কারন খ্রীষ্ঠান মিথগুলি দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে এই ঈশ্বরপুত্র গরীবদের, নির্যাতিতদের সেবা করেছেন-অত্যাচার থেকে বাঁচাতে। জমিদারদের বিলাস ব্যসনের বৈভবের দেবী দূর্গার মধ্যে কি খুঁজে পাবে আদিবাসিরা যাতে তারা দূর্গাপূজাতে অনুপ্রাণিত হবে? রোমেও সেকালে সমস্যা ছিল এক। রোমাণ প্যাগান দেবতারা রোমান অভিজাতদের আমোদ স্ফূর্তির দেবতা -তারা কোনকালে ইউরোপে আদিবাসিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয় নি।

    সেই জন্য খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামের নির্মানে একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান- "আমরা শত্রু দ্বারা নির্যাতিত অপমানিত" ।

    গোটা খ্রীষ্ঠান ধর্মটা দাঁড়িয়ে আছে সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের ওপর । এটি হচ্ছে ধর্মীয় একতার মূল নির্যাস। আমরা ভাল মানুষ, আমরা নির্দোষ, আমাদের শত্রুরা আমাদের ওপর নির্যাতন করে। ফলে এক সত্য ঈশ্বরের তলে এক হও! যীশুর ক্রসবিদ্ধ হওয়া থেকে পুরাতন টেস্টামেন্টের গল্পের সেই এক সুর-আমাদের ধর্মের লোকেদের ওপর অত্যাচার এবং অবিচার!!

    আজকে গোটা বিশ্ব জুরে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের মূল নির্যাস ও এটাই। চেচেনিয়া, প্যালেস্টাইন, কাশ্মিরে মুসলিমদের পেটানো হচ্ছে-তাই সমস্ত ইসলামি ভাতৃত্ববোধ উছলে পড়ছে। অথচ এই কাষ্মীরেই, কাশ্মীরি পন্ডিতদের সম্পূর্ন ভাবে তাড়িয়েছে মুসলিমরা। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ ইতিহাসের ধারাবাহিক পক্রিয়া। পাকিস্তানে মাত্র ২% হিন্দু টিকে আছে-যা দেশভাগের সময় ছিল ২২%।
    এসব মডারেট মুসলিমদের ও চোখে পড়ে না -চোখে পড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে অন্যদেশের মুসলিমদের দুর্ভোগ। এটাই আসল শক্তি সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের। যা সব থেকে বেশি কাজে লাগিয়েছে খ্রীষ্ঠানরা।

    কনস্টানস্টাইন যখন রোমের সম্রাট হলেন -বিশাল রোম সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখায় মহাদায়। চারিদিকে ইউরোপের আদিবাসিরা বিদ্রোহ করছে পাইকেরি হারে। তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে অবতীর্ন। সুতরাং রোম সেরা বলে সেই সাম্রাজ্য টেকানোর দিন শেষ। উনি দেখলেন খ্রীষ্ঠান ধর্মে সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশন কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় সেই ভাতৃত্ববোধ যা দিয়ে একটি সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায়। আদিবাসিদের বশে আনা সম্ভব।

    শুধু ইসলাম বা খ্রীষ্ঠানরা কেন? আজকের ভারতের হিন্দুত্ববাদিরাও সেই "সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন" কেই কাজে লাগাচ্ছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের প্রচারের মূল হাতিয়ার বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, পাকিস্তানে হিন্দু মেয়েদের বলাৎকার আর কাশ্মীরে পন্ডিত বিতাড়ন। ঘরের পাশের মুসলিমটি যে আর্থ সামাজিক কারনে আরো বাজে অবস্থায় আছে-সে ব্যাপারে তার হুঁস নেই। তাহলে সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন বা হিন্দু ভাতৃত্ববোধ কাজ করবে না । আর এই ধর্মীয় ভাতৃত্ববোধ হচ্ছে ধর্মীয় রাজনীতির মূল শক্তি-যার উৎপত্তি খ্রীষ্ঠান ধর্ম থেকে। ইসলামে সেই ভাতৃত্ববোধ আর সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের আর্টটা আরো উন্নত, আরো বেশী রাজনৈতিক। এই ব্যপারে লিখছি পরের পর্বে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন