এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে - টুক করে বিষ্ণুপুর

    Ben Arfa
    অন্যান্য | ২১ আগস্ট ২০১২ | ৫৪০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শ্রাবণী | 127.239.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ১২:১৮569243
  • পরের গন্তব্য দিনের বেলার মাইসোর প্যালেস, ভেতরে ঢুকে। প্যালেসে ঢোকার মুখে প্রচুর আসল চন্দনের নানা সম্ভার সাজিয়ে বিক্রেতারা বসে আছে, সেসব কিনতে চাইলে কেনাই যায় তবে চন্দন আসল হবার সম্ভাবনা বেশ কম।
    আমরা যখন প্যালেসে ঢুকছি, আকাশজুড়ে তখন ঘন কালো মেঘ। আগের দিন আলো জড়ানো প্যালেসের এক রূপ দেখেছি, এদিন ঐ কালো আকাশের পটভূমিকায় সাদা প্যালেসকে এত অপূর্ব দেখাচ্ছিল যে দেখে দেখে আশ মেটেনা। ভেতরে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যায়না, জুতোও খুলে যেতে হয়। বাইরে সরকার অনুমোদিত গাইড ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের দরদামে না গিয়ে আমরা অডিও গাইড নিলাম ভেতরের কাউন্টার থেকে। এই প্যালেস আদত প্যালেস নয়, আদি প্রাসাদটি পুড়ে নষ্ট হয়ে যাবার পরে সেই জায়গাতেই আবার তৈরী করা হয় আজকের প্যালেস।
    দেওয়ালের গায়ে নানা চিত্র, তার অনেকগুলিই মাইসোরের দশেরার শোভাযাত্রার ওপর, এছাড়া যুদ্ধ ও রাজাদের নিয়েও আঁকা আছে। দরজায় দরজায় হাতীর দাঁতের কারুকার্য, চন্দন কাঠের কাজ, দেখতে ভালোই লাগে। বিয়ের মন্ডপ, কুস্তির আখাড়া, দরবার কক্ষ। মাইসোরের রাজারা ব্রিটিশদের অনুগ্রাহী ছিল, তাদের সহায়তায় ভারতের স্বাধীনতা লাভ অবধি রাজত্ব করেছে, তাদের প্রাসাদের ধরণধারনে সেই হিসেবে অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া, সে আমলের লিফট ফ্রিজ ইত্যাদি। রাজাদের পারিবারিক ছবির মধ্যে একটি দুটি রাজা রবি বর্মার আঁকা ছবি দেখলাম।

    বেরোবার মুখে দেওয়ালে টিপু সুলতানের তলোয়ারের ছবি টাঙানো আছে। টিপুর বাবা আদতে ছিল এই ওয়াদেয়ার রাজাদের মুলাজিম বা সেনাবাহিনীর মাইনে করা কর্মচারী। পরে হায়দার আলি ও টিপু সুলতান মাইসোরের সিংহাসন দখল করে, ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করে ফরাসীদের সহায়তায়। টিপু সুলতানকে পরাস্ত করে ব্রিটিশরা ওয়াদেয়ার রাজাকে মাইসোরের রাজ সিংহাসন ফিরিয়ে দেয়। অন্যান্য প্রিন্সলি স্টেটের মত ব্রিটিশের প্রতিভু হয়ে এরা মাইসোর শাসন করতে থাকে স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত এবং স্বাধীনতার পরেও পঞ্চাশের দশক অবধি মাইসোর একটি আলাদা স্টেট ছিল যা পরে কর্ণাটকে আসে।

    তা সেই প্রাসাদে ঐ এক জায়গায় তলোয়ারের ছবি ছাড়া টিপু সুলতান বা হায়্‌দার আলির আর কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। অবশ্য ইতিহাস দেখলে থাকার কথাও নয়। তবে এ যাত্রায় আমার কেমন খুঁটিয়ে ইতিহাস দেখতে ইচ্ছেও হয় না কোথাও। যা শুনি লোকের মুখে, সাধারণ পথচলতিদের জানা ইতিহাস, যা কিছুটা গল্প কিছু লোকগাথা, বাকীটা বিশ্বাস বা চলতে চলতে বানানো। আমার এই বেশ লাগে, এসব কোনো বইয়ে বা নেটে পাওয়া যাবেনা, হয়ত দেখলে দেখা যাবে পন্ডিতদের তথ্যের সাথে আদপেই কোনো মিল নেই, গরমিলে ভরা। তা আমি কোন ইতিহাসের পন্ডিত, আমি তো এদের মতোই একজন, এদের কথা শুনতেই ভালো লাগে আমার!

    বৃষ্টির কথা ভেবে খুব গুছিয়ে দুখানা ছাতা এনেছি যদিও, তাকে রেখে এসেছি হোটেলের ঘরে। মেঘ কালো আগেই ছিল, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হতে ক্যামেরা সামলে গাড়ির দিকে দৌড়ই। ফিলোমেনা চার্চ অবধি যাওয়া গেলনা, বৃষ্টিতে সামনে কিছু দেখা যাচ্ছিলনা, গাড়ি দাঁড় করালো স্টেট গভমেন্টের আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস এম্পোরিয়ামে। শাড়ি, কাঠের ওপরে কর্ণাটকী পেন্টিং, চন্দনের নানা সামগ্রী, তবে দামী জিনিস সব, তাই কেনাকাটা টুকিটাকি, দেখাই বেশী। দোকানের পেছন দিকের ঘরে কারিগরদের কাজের জায়গা, স্টোর। কাঠের গুঁড়ো পায়ে মেখে যন্ত্রপাতি, পেরেক ইত্যাদি সামলে ঘুরে ঘুরে কাজ দেখি। কাঠের ওপরের রঙ সব ন্যাচরাল, ভেজিটেবল ডাই, সাদা শুধু প্লাসটিক। আমার আবার কেমন মনে হত দামী পেন্টিংয়ে সাদা হাতির দাঁত বা আইভরি দিয়ে হত। এরা অবশ্য তা বলল না।
    বৃষ্টি ধরে এসেছিল, তবু দোকানের মহিলা আমাদের ছাতা ধরে গাড়ি অবধি দিয়ে গেল। কানাড়া আর মালয়ালাম নাকি অনেকটা বাংলা ও ওড়িয়ার মত, কথ্য ভাষায় উচ্চারণ আলাদা হলেও শব্দ ইত্যাদিতে অনেক মিল আছে, স্ক্রিপ্ট তবে একেবারে আলাদা। তাই আমি আমার মালয়ালাম আর ইংরেজী মিশিয়ে বেশ গল্প করে যাচ্ছিলাম সবার সাথে, সেটা দেখলাম ওরা হিন্দির চেয়ে বেশী পছন্দ করছে, হিন্দি শুনলে ওরা কেমন নার্ভাস হয়ে পড়ে।
    ফিলোমেনা চার্চ দক্ষিণ ভারতের বেশ পুরনো রোমান ক্যাথলিক চার্চ। ইচ্ছে থাকলেও বাইরেটা বেশী ঘুরে দেখতে পারলাম না, বৃষ্টির জন্যে।

    ওখান থেকে বেরিয়ে রওনা হই শ্রীরঙ্গপটনার উদ্দেশ্যে। তবে বেলা হয়েছে, খেতে হবে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের দেখে বিজয়ের মনে হয়েছে যে আমরা কট্টর শুদ্ধ শাকাহারী জীব। সে খুব কুন্ঠার সঙ্গে জানায়, পথে কাবেরী তীরে একটি খাবার ঠাঁই আছে, বেশ ভালো, কিন্তু সমস্যা হল সেখানে ননভেজও বিক্রি হয়।খুব গম্ভীর মুখে তাকে আশ্বস্ত করি যে এটুকু অসুবিধে আমরা সহ্য করে নেব। ভাগ্যিস আমরা আলাদা বসি, নদীর ঘাটের সিঁড়ির পাশের চাতালে ডুমুর গাছের তলায় টেবিল পাতা, সেখানে। বিজয় খেতে বসে অন্য কোথাও তাই আমাদের প্লেটের মাছ ভাজা আর চিকেন কারী তার চোখে পড়েনা।
    এরকম একটা জায়গা কোথাও পেলে একখানা কুটীর বাঁধতামই। দুরে নতুন ও পুরনো ব্রিজ পাশাপাশি হাত ধরে, হাইওয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ির সারি কিন্তু কোনো শব্দই পাইনা। নদী একদম শান্ত, এই ভরা বর্ষায়ও, জলের মাঝে মাঝে উঁকি মারে পাথরের ঠাঁই, তার ওপরে বিশ্রামে মগ্ন বুনোহাঁস, আকাশে উড়িছে বক। নদীতীরের সবুজের কথা আর আলাদা করে বললাম না, আকাশের র ঙে নীল কালো আর সাদার মাখামাখি।
  • প্পন | 126.5.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ১২:২৭569244
  • জ্জিও, টু গুড হচ্ছে।

    চেনা বাস, চেনা রুট,চেনা রুটি বিস্কুট
    চেনা চেনা চায়ের গেলাস......
  • শ্রাবণী | 134.124.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ১২:৩৮569245
  • পরবর্তী গন্তব্য হল শ্রীরঙ্গপটনায়,টিপু সুলতান নির্মিত গুম্বজ বা সহজ বাংলায় গম্বুজ। হায়দর আলীর স্মৃতিসৌধ, তৈরী করেন টিপু, পরে টিপুকেও এখানেই সমাধি দেওয়া হয়। পরিবারের আরো অনেকের সমাধিক্ষেত্র এটি।
    শান্ত চারিদিক, শহরের ভীড় কোলাহল থেকে দুর। ঢোকার মুখে গাছের তলায় কিছু বিক্রেতা পসরা সাজিয়ে, কাঠের খেলনা, চন্দনকাঠের সামগ্রী ইত্যাদি। সবুজ ঘাসজমি,গাছপালা ভর্তি অনেকটা জায়গা,মধ্যিখানে কালো কাঠের থামে ঘেরা শ্বেত সৌধ। সামনে উড়ছে টিপুর নিশান লাল কালো কাপড়ের ওপরে বাঘের চিহ্ন। কাঠের কারুকার্য বেশী নেই তবে যা দেখা গেল অতি সুন্দর। মূল ঘরে ঢোকার দরজায় কাঠের ওপর আইভরির কাজ, দেওয়ালে খোদাই করা আয়াতের পংক্তি।
    আকাশ তখন নীলে নীল, মাঝে মাঝে সাদা কালো মেঘের বাহারে দিন আরো রোদ ঝলমল। তার সাথে জমিনে ঐ সবুজের সমারোহ। এরকম একটা পরিবেশে ঐ গুম্বজ চত্বরে দাঁড়িয়ে দেহে মনে অনাবিল শান্তির অনুভূতি আসে, সত্যিকারের শান্তি, তা বর্ণনার ভাষা নেই আমার। সব চলা যেন থেমে যায় সেখানে।

    গুম্বজ আর দরিয়া দৌলত, টিপুর সামার প্যালেস, এই দুই ছাড়া টিপু সুলতানের আর কোনো নির্মাণই আস্ত নেই এখন। সামার প্যালেসের বাইরেটাও অনেকটা গুম্বজের স্টাইলের, সেই একই সবুজ, গাছপালা। এই দুই জায়গারই গাছপালা বাগান অর্থাৎ ল্যান্ডস্কেপে বিদেশী ছাপ, হয়ত কোনো ফরাসী বা ইংরেজ স্থপতির পরিকল্পনা। দরিয়া দৌলত বাগ আদর্শ সামার প্যালেস। বিশাল স্থাপত্য নয়, বড়লোকের বাগানবাড়ি ধরণের, তবু ছোটর ওপর চোখ টানে। চারদিক খোলা কাঠের তৈরী বাড়ি,কাবেরীর সঙ্গে কিভাবে যেন যোগ আছে নালা বা পরিখা জাতীয় কিছুর মাধ্যমে যার ফলে গরমের সময় ঠান্ডা থাকত এই জায়গা। দেওয়ালজুড়ে টিপু ও হায়দার আলির বিভিন্ন যুদ্ধের ফ্রেসকো। ভেতরে মিউজিয়াম, অনেক ছবি, পোষাক, অস্ত্রশত্র রাখা আছে। ঘুরে ঘুরে দেওয়ালের ফ্রেস্কো দেখছি মন দিয়ে এমন সময় এক মহিলা এসে সামনে দাঁড়িয়ে গড়গড় করে ফুটিফাটা ইংরেজীতে টিপুর কাহিনি বলতে শুরু করে দিল, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
    স্থানীয় মহিলা, খুবই সাধারণ, ইংরেজী পুরো কন্নড় বলার মতই শোনাচ্ছে তবু যা বুঝলাম ঐতিহাসিক তথ্যাদিগুলো মোটামুটি ঠিকঠাকই বলছে (মানে যা আমাদের জানা আর কী), কিছু গল্প মেশানো। গাইড নয় অফিশিয়াল বা আন অফিশিয়াল কোনোটাই। আমরা স্লাইট ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া,কারণ মহিলার পেশা বুঝতে পারলাম না, বারান্দায় একটি বেঞ্চে বসেছিল, কোনো ইউনিফর্ম পরেনি, ওখানকার কর্মচারী হলেও হতে পারে। তবে এমন নয় যে জনে জনে ধরে গল্প শোনাচ্ছে, ঘটনার আগে পরে ঐটুকু জায়গায় বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেছিলাম, সেই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কাউকে গল্প শোনাতে দেখিনি। অবশ্যই গল্প শেষে একটু হেসে বলল স্বামী পঙ্গু, এক বোনের মাথাখারাপ,খুবই কষ্টে সৃষ্টে সংসার চলে, কিছু যদি দিই।
    আর কিছু নয়, ঘটনার পর বেশ মুষড়ে গেলাম। প্রথমে মহিলার গল্প যাতে টিপুর বংশধরেরা কলকাতায় বস্তিতে থাকে রিক্শা চালায় ইত্যাদি শুনে বেশী দুঃখ পাব, না মহিলার সাংসারিক অবস্থা শুনে, না আমাদের দেখেই কি মনে হয় এদের অনায়াসে গপ্প শুনিয়ে টাকা আদায় করা যায়, সেই কথা ভেবে, বুঝতে না পেরে ইষৎ কনফিউজড হয়ে রইলাম।

    এরপরের গন্তব্য হল মাইসোর ব্যাঙ্গালোর হাইওয়ে পেরিয়ে উল্টো দিকে, টিপুর প্যালেসের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে এখন সব ঘরবাড়ি উঠে গেছে, লোকের বাস, সে প্যালেসের একখানা আস্ত ইঁটেরও কোনো চিহ্ন নেই কোথাও। শ্রীরঙ্গপটনা দুর্গের ভাঙা পাঁচিল অবশ্য জায়গায় জায়গায় দেখা যায়। প্যালেসের জায়গা থেকে কিছু দুরে রঙ্গনাথস্বামী মন্দির, ভেতরে ঢুকিনি। জুম্মা মসজিদও বাইরে থেকে দেখলাম। যুদ্ধক্ষেত্রে যেখানে টিপু সুলতানের মৃত্যু হয় সে জায়গায় একটা বোর্ড আছে।
    এরপরে গেলাম কাবেরীর ধারে টিপুর জেলে। যেখানে টিপু তার বন্দীদের ধরে নানারকম অত্যাচার করত। সঙ্গের কেরালাবাসী বলল যে টিপু কেরালার বহু জায়গা আক্রমণ করে ব্রাহ্মন নায়ার দের ধরে ধরে অত্যাচার করে তাদের বাধ্য করে ইসলামে কনভার্ট হতে।
    কেরালার অনেক মুসলিমদের বাড়িতে নাকি এখনো ভেতরে তুলসী মন্ডপ দেখা যায়, পুজো করে, নায়ার মুসলিমরা বিয়ে দেয় নায়ার মুসলিমদের সঙ্গেই, বিবাহিত মহিলারা গলায় পরে মঙ্গলসূত্র, সিঁথিতে সিঁদুর। মোটকথা তাদের হিসেবে কেরালার অধিকাংশ মুসলিমই নাকি টিপুর কীর্তি এবং টিপুর ওপর কেরালার লোকেদের ইন জেনারেল তাই বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই।
    জেলটা মাটি থেকে নীচে, ওখানে ব্রিটিশ বন্দীদেরও রাখা হত এবং অত্যাচার করা হত। তবে নীচের জেল দেখে এসে ওপরে দাঁড়ালে মন ভালো হয়ে যায়, কাবেরীকে এত সুন্দর লাগে, স্বচ্ছ জল, জলের আয়নায় আকাশের নীল, কালো মেঘ। যতটুকু কাবেরীকে দেখছি বেশ লাগছে, কেমন একটা ঘরোয়া ব্যাপার, আটপৌরে মেয়ে,চারপাশের প্রকৃতিকে মানিয়ে গনিয়ে দিব্যি যেখানে যেমন সেখানে তেমন হয়ে বয়ে চলেছে। কোথাও শান্ত, কোথাও অল্প স্রোত, জল কোথাও সবুজ, নীল অথবা ঘোলা।
    তবে টিপুর বন্দীদের নিশ্চয়ই কাবেরীর শোভা দর্শন করে নিজেদের যন্ত্রনা লাঘব করার কোনো উপায় ছিলনা সেযুগে। তারা ওই চোরাকুঠরি থেকে ছাড়া পেত কখন!
  • শ্রাবণী | 134.124.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৫২569246
  • সেই দিন এক দিন ছিল, রোজকার জীবনের মাঝে এক অন্য রোজ, তাই প্রতিটা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতেই কাউকে না কাউকে সেই জায়গার চলতি আঁখো দেখা হাল শোনাতে হচ্ছিল, ফোন আসছিল যে সবার!
    আর সঙ্গী বোধহয় সেইসব ফোনকলের মাঝে রুমালে গিঁট বাঁধ্ছিল, বিগত অনেক বছরের ভুলের হিসেব একদিনেই চুকতা করবে এই অঙ্গীকারে।
    আগেই শুনেছিলাম বৃন্দাবন গার্ডেনের সেই পুরনো জৌলুস আর নেই, আমাদের সব শহরের আনাচে কানাচে নাকি এখন ওর চেয়ে অনেক বেশী ঝাঁ চকচকে আধুনিক মনোহরন বাগবাগিচা দেখা যায়।
    তবু চেন্নাপটনার খেলনা ব্যাগে ভরে মা বাবার হাত ধরে বৃন্দাবন গার্ডেনে নৌকাবিহারের স্মৃতিভরা যে মন সে তো অন্য বাগানে জাগবেনা বা ভরবেও না।
    তাই মাইসোরে এসে বৃন্দাবন গার্ডেনে ঢুকবো না এমনটা তো হতেই পারেনা।
    শুধু কী ছোটবেলা, কলেজবেলায়ও তো আসা হয়েছে এক ঝাঁক সবুজের দলবেঁধে ট্যুরে, সেইসব স্মৃতি ক্ষনে ক্ষনেই জেগে ওঠে, আমার দিব্যি লাগে এই স্মৃতিচারণ। শুধু আমিই ভুগিনা নস্টালজিতে, স্থান কাল উপযোগী হলে ও রোগে দেখি সবারই মরন!

    আমার ভালোই লাগে, আমি তো সেই প্রথম দেখলাম বৃন্দাবন গার্ডেন, বিশেষ করে জলের নানা রূপ, ফোয়ারার ঘনঘোর। শুধু বাগানগুলোর যদি একটু যত্ন নিত, এ জায়গা এখনো সুন্দর। ন্যাড়া ন্যাড়া বাগান, চারিদিকে প্রকৃতি যেসময় সবুজ ঢেলে দিয়েছে সেসময় এই রুক্ষ পরিবেশ বড় চোখে লাগে।
    সাতটায় রঙীন ড্যান্সিং ফাউন্টেনের শো, সেও দেখতেই হবে, নস্টালজির ব্যাপার বলে কথা, তা রইলাম বসে, যদিও ক্লান্তপ্রাণ, তবু খারাপ লাগেনা। চারিদিকে ফোয়ারার জল ঝরে যায়, সামনে বিশাল উঁচু কৃষ্ণরাজসাগর বাঁধ, লেকের জল, সবমিলে এক শীতল অনুভূতি।
    ভেবেছিলাম ঐ ফাউন্টেন শো দেখতে খুব বোকা বোকা লাগবে কিন্তু ভালো লাগল। ভিড় বেঁধে ওঠার আগেই স্পীডবোটে করে পৌঁছলাম সেখানে। হেঁটে ব্রিজ পেরিয়েও যাওয়া যেত। তবে অভিজ্ঞতা বলল, পৌঁছতে দেরী হলে বসার জায়গা পাওয়া যাবেনা।
    এক প্যাকেট চাল গুঁড়ির তৈরী একরকম পাঁপড় কিনে নিয়ে গ্যালারিতে বসা হল।
    আমি পাশে এক কলেজ হৃদয় অনুভব করতে পারছিলাম, যদিও সেই সময়ে আমি পাশে ছিলাম না। চোখ দুখানি পুরনো ছবিতে মেলে এমন খুশী আর উজ্জ্বল!
    অন্ধকার হয়েছে কী হয়নি এক এক করে রঙীন আলো জ্বলে উঠল একটি একটি ফোয়ারায়, শুরু হল উচ্ছ্বল হিট দক্ষিণী গান আর তার তালে তালে আলোর জলের রঙের মিলেমিশে নাচ। নানা রকমের আওয়াজ, কমবয়সী ছেলেদের হুল্লোড়ের, হয়ত পাশের জনের উচ্ছাসেরও, অন্ধকারে ভালো দেখিনি।
    নমকিন খেতে খেতে খোলা আকাশের নীচে এক অনবদ্য সন্ধ্যে কাটালাম, এতক্ষণে আমিও যেন কেমন সেই না দেখা সময়ে পৌঁছে গিয়ে সেই রঙীন দিনগুলোকে আমার মনের সুরে বাঁধতে পারলাম।
    শেষ হল রহমানের বন্দেমাতরমে। আরো অনেকের সাথে আমরাও হাত ধরে উঠে দাঁড়ালাম, তারপরে অন্ধকারে ভিড়ের সঙ্গে এক হয়ে ব্রিজ পেরিয়ে হেঁটে হেঁটে বাইরে এলাম।

    মন রঙীন ছিল, দিল দরিয়া। তাই বোধহয় ঘোরা শেষে রিসর্টে ফিরেই খুব তেড়েফুঁড়ে যা কোনোকালে সে করেনি তাই করতে লেগে গেল।
    শুধু ঘর থেকে হেঁটে রেস্তরাঁ অবধি যেতে যেতে ওই রিসর্টের লোকেরা দেখলেই একগাল হেসে "হ্যাপি বার্থডে" করছে, এটা বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার, তবে এমন দিনে রাগ করা যায়না, আর কেকটা বোধহয় ওয়ান অফ দ্য বেস্ট b'day cake আমার লাইফের!
  • hu | 22.34.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ২১:২৭569247
  • ভীষন ভালো লাগছে। জন্মদিনে এমন উপহার সত্যিই তো বছর বছর হয় না।
  • Rit | 213.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ২১:৪২569248
  • শ্রীরঙ্গপত্তনম গেছ্লাম ২০০৫ এ। মনে পড়ে গেল সব কিছু আবার।
  • kumu | 132.16.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০১২ ১৯:০৭569249
  • হীরের টুকরো ছেলে আমাদের এই সতীশ-তার তুলনা নাই। আরেকটু শোনার ইচ্ছে ছিল,থাগ্গে,গুরুজন হই-
  • PT | 213.***.*** | ০৬ অক্টোবর ২০১২ ১৪:৩৩569250
  • কল্যাণী যেতে গিয়ে বাঁশবেড়িয়াতে দেখা হয়ে গেল হংসেশ্বরী মন্দির। প্রায় ১৯৮ বছরের পুরোনো। কালীমূর্তির চারহাত, গায়ের রং উজ্জ্বল নীল কিন্তু সাধারণ কালীমূর্তির মত লজ্জায় জিভ-কাটা নয়। গায়েই লাগোয়া অনন্ত বাসুদেব মন্দির। প্রায় ৩৩০ বছরের পুরোনো। মনে হবে বিষ্ণুপুর থেকে কোন একটি টেরাকোটার মন্দিরের তুলে এনে এখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। গায়ে অসামান্য সুন্দর কাজ। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় বেশী সময় কাটাতে পারিনি। মন্দিরদুটো পুরাতত্ব বিভাগ সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করেছে। অবশ্য দর্শনীয়।
  • kd | 69.93.***.*** | ০৬ অক্টোবর ২০১২ ১৪:৫৬569251
  • ছোটবেলায় একবার হাজারহাত কালীর মূর্তি দেখেছিলুম কলকাতার কোন উপকন্ঠে। কেউ বলতে পারবেন মন্দিরটি কোথায়।
  • kumu | 132.16.***.*** | ০৬ অক্টোবর ২০১২ ১৫:১৮569253
  • কেডিদার জন্য,উইকিম্যাপ থেকে
    Hazar Haat Kali Tala (KOLKATA (GREATER KOLKATA AREA))

    Hazar Haat Kali Mandir
    16,Olabibi Tala Lane,Shibpur,
    Howrah - 711102

    Godess Kali with thousand Hands, famous in Bengalis as well as within South Indian Communities. Special Day of Puja on Buddha Purnima.
  • kd | 69.93.***.*** | ০৬ অক্টোবর ২০১২ ১৫:৫০569254
  • ডান্কা।
  • . | 152.176.***.*** | ০৪ জুন ২০১৩ ১৯:৪২569255
  • .
  • | 116.218.***.*** | ০৪ জুন ২০১৩ ২০:১৫569256
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন