এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • achintyarup | 59.94.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০১১ ০৫:০৪483631
  • এক ছিল রাজধানী

    আলেকজাণ্ডার যখন পুরুরাজকে জিগ্যেস করছিলেন আমার কাছে তুমি কেমন ব্যবহার আশা কর, আর পুরু গম্ভীরভাবে জবাব দিচ্ছিলেন রাজার কাছে রাজার মত ব্যবহার আশা করি, ঠিক সেই সময়ে আরেকজন পুরু (কিম্বা যথেষ্ট পুরু নয়) ঝোপজঙ্গল ডিঙিয়ে মাঠঘাট পেরিয়ে দুদ্দাড় করে পালাচ্ছিলেন পুবের দিকে। ভদ্দরলোক নিজেও ছিলেন রাজা এবং সম্পর্কে প্রথম পুরু রাজার ভাইপো বা ভাগ্নে এরকম কিছু একটা ছিলেন। সিকন্দর খবর পেলেন তিনি পালিয়েছেন গণ্ডারিডাই রাজ্যে। এই গণ্ডারিডাই-ই বলুন, কি গঙ্গারিডি, কিম্বা গঙ্গারিটাই, অথবা গঙ্গারাইড কিম্বা গঙ্গারিডাম -- এ এক অতি রহস্যময় রাজ্য। ভারতীয় ভাষায় লেখা কোনো প্রাচীন সাহিত্যে এর কোনো উল্লেখ পাওয়া গেছে বলে এখনো পর্যন্ত শুনিনি। ইস্কান্দারের সময়ের এবং তার কাছাকাছি সময়ের গ্রীক লেখকরাই এই জায়গার বিষয়ে লিখে গেছেন। কিন্তু ঠিক কোথায় ছিল জায়গাটা? বিস্তীর্ণ সেই রাজ্যের রাজধানী ছিল নাকি গঙ্গে নামের এক বন্দর। সে বন্দরই বা ছিল কোথায়? [এ নিয়ে অতি চমৎকার আলোচনা হয়েছিল প্রাচীনকালে, পুরনো বাংলা (যখন তিনোমুল ছিলোনা, এমনকি সিপিয়েম ও না) নামের টইয়ে। উৎসাহী পাঠকের জন্য লিঙ্ক দেওয়া গেল: http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1269371258849&contentPageNum=8 ] এই টই থেকে মাঝে মাঝেই হয়তো টুকতে হবে এখানে।
  • achintyarup | 59.94.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০১১ ০৫:০৭483632
  • Name:kallolMail:Country:

    IPAddress:115.242.142.159Date:22Jun2010 -- 12:15AM

    এ তো গেলো আমাদের ইতিহাস। এবার, চলো মন পশ্চিমে।
    যিশু জন্মাতে তখনো ৪০০ বছর বাকি থেকে ওনার মারা যাবার ২০০ বছর পরে পর্যন্ত গ্রীক আর রোমানদের লেখায়, মানচিত্রে গঙ্গাহৃদৈ বা গঙ্গাহৃদাই বা গঙ্গাহৃদ বা গঙ্গাহৃদি নামে একটা দেশের / জাতির উল্লেখ বারবার আসে।
    গ্রীক ডিওডরাস লিখছেন - এই নদী ৩০ স্টাডিও মতো চওড়া (১ স্টাডিও = ২০০ মিটার)। দক্ষিণপ্রবাহিনী এই নদী সমুদ্রে এসে মিলিত হয়। এই নদীর পূবে গঙ্গাহৃদি জাতির বাস।
    যিশু জন্মাতে তখনো ৩২৬ বছর বাকি। গ্রীক মহাপন্ডিত অ্যারিস্টটলের ছাত্র সিকন্দর শাহ দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে এসেছেন সিন্ধু পেরিয়ে পঞ্জাবে। যুদ্ধ জয় চলছে বটে, কিন্তু শরীর আর দিচ্ছে না। প্রায় ৮ বছর ধরে ক্রমাগত যুদ্ধ আর যুদ্ধ। সৈন্যরা হাক্লান্ত, ওরা ঘরে ফিরতে চায়। আরও এগোবেন কি না ভাবছেন সিকন্দর। খবর নিচ্ছেন ভারতবর্ষের অন্য রাজত্বের শক্তি পরাক্রমের। মগধ, সেখানে আছেন নন্দ। তারপর গঙ্গাহৃদি আর প্রাগজ্যোতীষ। এই দুই জাতির সৈন্যবল অগণিত যুদ্ধনিপুন গজবাহিনী নিয়ে গড়া। জাতি হিসাবেও এরা মহাপরাক্রন্ত। নাহ। ঐ পাহাড়ের মতো গজবাহিনীর সাথে এই ঘরকাতুরে হয়ে পরা বাহিনী নিয়ে লড়া মানেই অবিমৃষ্যকারীতা। একথা অনুধাবন করতে সিকন্দর শাহের মতো পোড়খাওয়া যুদ্ধবিশারদের ভুল হলো না। অতএব ফিরে চলো নিজ নিকেতনে। যাওয়া আর হয়নি তার। তবে, সে অন্য কিস্‌সা।
    সেই সিকন্দর শাহের সময় থেকে তারও প্রায় তিনশ বছর পরে এক পরিচয়হীন নাবিকের লেখা পেরিপ্লৌস তেস ইরিথ্রাস থালাসেসস (পেরিপ্লাস অফ দ্য ইরিত্রিয়ান সি)। সেখানেও গঙ্গে বন্দরের কথা, যেখান থেকে বিদেশে পাড়ি দিতো অতি সূক্ষ্ম কার্পাস বস্ত্র। কিংবা তারও ১০০ বছর পরে টলেমী তাঁর জিওগ্রাফিতে লিখছেন - গঙ্গার গোটা মোহনা অঞ্চলটি জুড়েই গঙ্গাহৃদিদের রাজত্ব। নগর-গঙ্গা তাদের প্রধান পুর।
    এভাবে টুকরো টুকরো পাওয়া যায় প্রায় ৬০০ বছরের হিসাব। এরই মধ্যে চলে আসে ""বাঙ্গালীর ছেলে বিজয় সিংহ / লঙ্কা করিল জয়""। শ্রীলঙ্কার ইতিহাস বলে বিজয় তাদের প্রথম নায়ক, যিশু জন্মানোর ৫০০ বছর আগেকার কথা। সে তো সেই সময়েরই কথা - যখন, গঙ্গার গোটা মোহনা অঞ্চলটি জুড়েই গঙ্গাহৃদিদের রাজত্ব। কিংবা চাঁদ। এ কি চাঁদ বণিকের দেশও নয়? যেখান থেকে সপ্তডিঙ্গা ভাসতো মধু, সূক্ষ্ম কার্পাস বস্ত্র, হাতির দাঁত নিয়ে। ফিরে আসতো দামাস্কাসের তরবারী, রোমের সুগন্ধী, বালি দ্বীপের দারুচিনি আর লঙ্কার চন্দন কাঠ নিয়ে। ডিঙ্গা ভিড়েছে বন্দরে। তাকে বরণ করার গান গায় ওঠে কোন সে মেয়েটি আজও - ডিঙ্গা বরণ করে মা সনকা / তরী বরণ করে লো / ট্যাকা লিবো পয়সা লোবো আমি / লিবো কুচিকানি সাড়ি লো ...........
  • achintyarup | 59.94.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০১১ ০৬:১১483633
  • কল্লোলদা এই পোস্টে ডিওডোরাসের লেখা এবং পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সি-র কথা বলেছেন। এগুলি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি পুরোনো লেখায় গঙ্গারিডাই-এর উল্লেখ আছে। প্রয়োজন হলে সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আপাতত আর এক ভদ্রলোকের কথা এখানে একটু লিখতে চাই। তিনি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণমিশনের প্রাক্তন শিক্ষক প্রসিতকুমার রায়চৌধুরী। বহু বছর আগে বেড়াচাঁপা-চন্দ্রকেতুগড় নিয়ে পড়াশুনো করতে গিয়ে গঙ্গে বন্দরের নাম জানতে পারেন প্রসিতবাবু। জানতে পারেন গঙ্গারিডাই/গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী ছিল এই গঙ্গে বন্দর। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর একে তাকে জিগ্যেস করে, নানা প্রাচীন পুথিপত্র ঘেঁটেও সে রাজ্যের সম্পর্কে আর কিছুই খুঁজে পেলেন না। শেষে একদিন সোজা চলে গেলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। ভাষাচার্যের সঙ্গে তাঁর যা কথাবার্তা হল সেটা প্রসিতবাবুর লেখা থে টুকে দিচ্ছি:

    "গঙ্গারিডি' -- নামটা শুনেই বললেন -- খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রীক বীর আলেকজাণ্ডারের সৈন্যরা এই "গঙ্গারিডিদের' ভয়েই পূর্ব ভারতের দিকে এগুতে সাহস করেনি। গ্রীক লেখকদের রচনায় এই "গঙ্গারিডির' বানান লেখা "Gangaridai' -- এই গ্রীকদের কাছ থেকে রোমানরা শব্দটা নেয়। তারা ল্যাটিন ভাষায় লেখে "Gangaridae'.

    "গঙ্গারিডি' রাজ্যের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে মনে হয় গঙ্গার মোহনার কাছেই এই রাজ্যটি ছিল -- (এখনকার দ: ২৪ পরগণা জেলা)। রোমক ঐতিহাসিক প্লিনির লেখায় "গঙ্গারিডি' জাতির উল্লেখ আছে।

    প্রশ্ন করলুম -- "গঙ্গারিডি' শব্দটির উৎস ইন্দো-এরিয়ান না দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠী?

    আচার্য বললেন,-- দেখুন, ভারতীয় প্রাচীন পুঁথিপত্র এ ব্যাপারে একেবারে নীরব। এটির সঠিক অর্থ কি তা অনুমান সাপেক্ষ। এটি একটি -- Puzzle and Problem. তবে এটির উৎস "ইন্দোএরিয়ান' ভাষা বলেই মনে হয়।

    প্রশ্ন-- "গঙ্গা-রাঢ়' থেকে গঙ্গারিডি শব্দটি তৈরী হতে পারে কিনা?

    উত্তর-- না, তা হতে পারে না এই জন্য, "রাঢ়' শব্দটি অর্বাচীন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এ শব্দটি পাওয়া যায় না।

    প্রশ্ন-- কবি সত্যেন দত্ত বলেছেন--

    "ধ্যানে তোমার রূপ দেখিগো
    স্বপ্নে তোমার চরণ চুমি
    মূর্তিমন্ত মায়ের স্নেহ
    "গঙ্গাহৃদি' বঙ্গ ভূমি।'

    এই "গঙ্গাহৃদি' শব্দটির সঙ্গে "গঙ্গারিডির' কি একটি ধ্বনিগত সাদৃশ্য নেই কি?

    উত্তর-- "গঙ্গাহৃদি' শব্দটির অর্থ The heart of the Ganges. এটি আধুনিক কালে গঠিত বাংলা শব্দ। ধ্বনি সাদৃশ্য থাকলেও অর্থ সাযুজ্য কোথায়? ঐতিহাসিক কোন মূল্যই এর নেই।-- যেমন "গঙ্গারিডির' আছে। তবে অনেকে মনে করেন "গঙ্গা' এই মূল শব্দের সঙ্গে গ্রীক বিভক্তি "id' এর বহুবচনে "idai' যোগ হয়েছে আর "r' এই বর্ণটির euphonic insertion ঘটেছে এটা মানা যায় না এই জন্য যে গ্রীক ভাষায় "r' এর euphonic insertion হয় না।

    "গঙ্গারিডি' বলতে বঙ্গ দেশের গঙ্গার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি জাতিকে বোঝায়। উত্তর ভারতের ভাষায় Gangar-এর উল্লেখ নেই বরং দক্ষিণ ভারতের কানাড়া ও তেলেগু দেশে Ganga বলে জাতির দেখা মেলে। কলিঙ্গে ছিল বিখ্যাত "গঙ্গে' রাজবংশ। এদের সঙ্গে বাংলা "গঙ্গারিডিদের' সম্পর্ক ছিল।

    প্রাচীন দ্রাবিড় ভাষায় বহুবচনের বিভক্তি চিহ্ন "r' বা ar -- Ganga শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে Gangar or Ganga people, এই Gangar থেকেই "গঙ্গারিডি' শব্দটি গঠিত।

    প্রশ্ন-- তবে কি গ্রীকরা দক্ষিণ ভারতীয়দের সংস্রবে এসেছিল? নইলে এ শব্দ গ্রীকরা পেল কি করে?

    উত্তর-- দ্রাবিড় ভাষাভাষী কিছু উপজাতি খ্রীষ্ট জন্মের অনেক আগে থেকেই উত্তর ভারতে বিশেষত: পাঞ্জাব অঞ্চলে বসবাস করতো। পাঞ্জাবের অধিবাসীরা তাদের কাছ থেকে শব্দটা নিয়েছিল। গ্রীকরা এদের মারফতই শব্দটা পায়।

    প্রশ্ন-- কিন্তু শব্দটার উৎস যে ইন্দোএরিয়ান ভাষা এ সিদ্ধান্তে আপনি এলেন কেমন করে?

    উত্তর-- বৈদিক পূর্ব যুগে উত্তর ভারতের তিনটি উপভাষাই ছিল ইন্দোএরিয়ান ভাষার অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে পশ্চিমী বা পাঞ্জাব অঞ্চলের ভাষায় "L'র ব্যবহার নেই আছে "R' এর। আর পূর্ব অঞ্চল বা বঙ্গ দেশের ভাষায় "L' আছে, "R' নেই।

    পূর্ব অঞ্চলের ভাষায় ala = আল প্রত্যয়ের বহুল প্রয়োগ আছে। যেমন -- বঙ্গ+আল = বঙ্গাল, পঞ্চ+আল= পাঞ্চাল। উপনিষদে পাঞ্চাল নাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাঁকাল, দাঁতাল, মাথাল, দুধাল, প্রভৃতি শব্দ বাংলা ভাষায় দেখা যায়। অনুমান করা যেতে পারে গঙ্গার সঙ্গে "আল' প্রত্যয় যোগে গঙ্গাল শব্দটি গঠিত হয় যার অর্থ People of Ganga. এখন এই পাঞ্জাব অঞ্চলের অধিবাসীদের মুখে পরিবর্তিত হয়ে হয় আর (ara)। যার ফলে Gangala হয়ে যায় Gangara। এটাই গ্রীকরা গ্রহন করে এবং Plurala affix -- idai সহযোগে Gangaridai শব্দটি সৃষ্টি করে। পরে রোমানরা ল্যাটিন ভাষায় এর বানান লেখে Gangaridae। ভার্জিলের কাব্যে এই বানানই দেখা যায়।

    প্রশ্ন-- পূর্ব ভারতের ভাষায় গঙ্গাল Gangala শব্দটি গেল কোথায়?

    উত্তর-- অনেক সময় শব্দ হারিয়ে যায় নতুন নামের কাছে। যেমন পুরানো "গল' (Gaul) দেশের নাম আজ ফ্রান্স। জার্মান Frankia উপজাতির নাম থেকে এর উদ্ভব।

    সেমেটিক নাম হিব্রু Mizzarim থেকে মিশর, আজ পুরাতন নাম খেম্‌ (Khem) নামকে ঢেকে দিয়েছে। জাপানের পুরাতন নাম যে যামাতো (Yamato) তা আজ কজন জানেন? চৈনিক উৎসের নিপ্পনের কাছে তা চাপা পড়ে গেছে।
  • ranjan roy | 14.99.***.*** | ০১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:১৫483634
  • অচিন্ত্য,
    খুদা কী কসম্‌, মজা আ গয়া!
  • gandhi | 203.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১২ ১৫:৪১483635
  • নতুন টই না খুলে এটাকে তুলে দিলাম। চন্দ্রকেতুগড় নয়, আর একটি স্থান ঘুরে এলাম - মোঘলমারি
  • gandhi | 203.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১২ ২১:৪৯483636
  • "মোঘলমারি" , স্থানীয় নাম " মনোহরপুর "

    পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন অঞ্চলে. ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬০ দিয়ে ধরে এগোলে খরগপুরের ছাড়িয়ে অধ ঘন্টাটাক এগোলে দাঁতন. তার একটু আগেই মনোহরপুর বা মোঘলমারি . আর ট্রেনে যেতে চাইলে? খরগপুর-ভুবনেশ্বর লাইনে এক্সপ্রেস থামে বেলদা স্টেশনে. বেলদার পরের লোকাল স্টেশন "নেকুরসেনি" , তারপর "দাঁতন" . দাঁতন স্টেশন থেকে মনোহরপুর ৭ কিমি আর নেকুরসেনি থেকে 2 কিমি. দাঁতন থেকে ট্রেকার পাবেন আর নেকুরসেনি থেকে ??? ভাগ্য সহায় থাকলে ভ্যান পাবেন, কিন্তু ফেরার সময় পাবেন না, রোদ্দুরের মধ্যে হাঁটতে হবে, তাও আবার হাইওয়ের পিচের গরমে :(

    তো মনোহরপুর পৌছালে দেখা যাবে একটা বোর্ড . ডিরেকসন দেওয়া কথায় মোঘলমারি.. ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে ডানদিকে একটা মরমের রাস্তা নেমে গেছে . কিছুদুর গিয়ে একটা খেলার মাঠ.. যার কাছ থেকে ডিরেকসন পাওয়া তার কথা হুবহু মিলে গেল :) মাঠের পরই একটু এগিয়ে একটা উঁচু ঢিবি মতন. ঢিবির উপর একটা মন্দির (প্রথমে মন্দিরই মানে হয়েছিল, পারে জানলাম সেটা মিউজিয়াম)

  • Blank | 59.93.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১২ ২৩:৫৮483637
  • তারপর ?
  • gandhi | 203.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০১২ ১২:১৮483638
  • ঢিবির সামনে কতগুলো সিমেন্টের উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা জায়গা, উপরে ঢালাই করা ছাদ, খালি চারপাশটা লোহার জলের মত কিছু একটা দিয়ে ঘেরা যাতে লোকে দেখতে পায়. প্রথমে সেটা কি বুঝতে না পেরে জানি সেদিকে... দেখলাম সেই মন্দিরের সামনে কিছু ত্রিপল বাঁশে বাঁধা.. আর কয়েকজন লোক সেগুলো খুলছে বা লাগছে... আগেরদিন রাতেই এই বছরের প্রথম কালবৈশাখী হয়ে গেছে.. সেখানে গেলাম... দুজন গ্রামের লোক মিলে ত্রিপল গুলো উপর থেকে সরাচ্ছেন আর একজন তদারকি করছেন...

    গিয়ে বুঝলাম.... প্রায় দেড় মানুষ গর্ত খোঁড়া হয়েছে ... কিছুটা বুঝতে পারছিলাম... একটা দেওয়ালের অংশবিশেষ... যিনি তদারকি করছিলেন তিনি একটু অপেক্ষা করতে বললেন.. বললেন যে পুরো কভারটা সরালে বোঝা যাবে... ওয়েট করছিলাম.. হঠাত হই-হই করে প্রায় গোটা ২০ বাচ্ছা সেখানে উপস্থিত হলো.. ক্লাস ৭-৮ এর হবে... কদিন আগেই কাগজে মোগলমারির নাম বেরিয়েছে...তাদের টিউসনের স্যার ঘুরতে নিয়ে এসেছে... দেখে আমরা একটু পিছনে চলে গেলাম... বাচ্ছাদের একটু দেখার সুযোগ দেওয়া ভালো... যাই হোক ৩০ মিনিট মত ছিল, তারপর বোর হয়ে তারা পালালো...

    যিনি তদারকি করছিলেন তিনি স্থানীয স্কুলের শিক্ষক ... আর দুজন যারা কাজ করছিলেন, তারা গ্রামের বাসিন্দা আর ক্লাবের মেম্বার... তাদের থেকে জানা তথ্য অনুযায়ী.. মোঘলমারিতে গোটা গ্রামে অনেক পুরাতাঙ্কিÄক বস্তু পাওয়া যায় বহুদিন ধরেই... গ্রামের কোথাও কোথাও বহু পুরানো পাঁচিল দেখা যায়, তো কোথাও মাটিতে ইঁটের স্তুপ. ২০০১-০২ নাগাদ ঢিবিটিতে খোঁড়া-খুঁড়ির কাজ শুরু হয় .. শুরু করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অশোক দত্ত. এখানো পর্যন্ত মোঘলমারির কাজ উনিই দেখছেন.. ২টি সাইটে কাজ শেষ (যেগুলো ঘেরা আছে..) বাকি একটিতে খননকার্য চলছে.. কিছুটা কাজ হয় কিছুটা বন্ধ.. কারণ ফান্ড নেই... কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া কিছু পয়সা আর রক্ষনাবেক্ষনের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কিছু পাওয়া যায়... তাও বেশ কম... দান্তানের ভান্তার কলেজ থেকেও কিছু হেল্প পাওয়া যায়...

    এবার সেই পাঁচিল ভালো করে দেখলাম... প্রায় ১২-১৩ ফুট লম্বা একটা গর্ত খোঁড়া হয়েছে .. সেখানে একটা পাঁচিল, পাঁচিলের গায়ে নানান মূর্তি.. মানে হলো পোড়া মাটি.. আমার ইতিহাস বা বাকি সবকিছুরই জ্ঞান সামনি ... অতসত বুঝিনা.. তবে আমার দুই বন্ধুর দাবি অনুযায়ী ওগুলো পোড়ামাটির .. মূর্তি-গুলোর মধ্যে কিছু ধ্যানরত বুদ্ধমূর্তি, নর্তক-নর্তকী, বীণা হাতে গায়কের মূর্তি .. আরো কিছু ছিল... দু-তিন ধরনের ইঁট দেখতে পেলাম ... পাঁচিলের ইঁটগুলো লম্বাটে ধরনের... মেঝের ইঁটগুলোর সাইজ আর সেপও একটু অদ্ভূত.. চ্যাপ্টা-পাতলা... অনেকটা আজকালকার টাইলস, মার্বেল যেমন হয়... সেরকম শেপের.. আর কিছু আরবিট শেপের ... মানে কিছু জায়গায় মনে হচ্ছে যা পেরেছে লাগিয়ে দিয়েছে...
  • rokeya | 203.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০১২ ১৭:২১483639
  • গান্ধীবাবু, পোড়ামাটি না, স্টাকো।
  • gandhi | 203.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০১২ ১৭:২৫483641
  • নিজেই নিজের পিঠ চাপরালুম :)

    @ rokeya

    ভুল তো আমি লিখবই। এটা আমার রুটিন। ভুল লিখলে ঠিক করে দিস।
  • gandhi | 203.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০১২ ১৭:২৭483642
  • পুরোটা কভার সরানো হল .. একটা লম্বা পাঁচিল, তার গায়ে মূর্তি, পাঁচিলের নিচের দিকে বিম-এর মত কিছু একটা যেগুলোতে ফুল বা অন্যান্য কিছুর নকশা আছে. পাঁচিলটা শেষ হচ্ছে সেখানে একটা কলাম-এর মত .. তারও গায়ে নকশা করা... বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে বাঁশ কেটে ত্রিপল দিয়ে ক্লাবের মেম্বাররা একটা অস্থায়ী ছাউনি বানিয়েছেন.. কিন্তু আগেরদিনের ঝড়ের দাপটের কাছে সে কিছুই নয়... উনাদের কাছ থেকেই শুনলাম যে মোটামুটি একটা ছাউনি বানাতে খরচ প্রায় ১৫০০০ টাকা, কিন্তু অত টাকা তো নেই.. ফলে?? নিজেরাই কোনো রকমে টিকিয়ে রাখছেন.. বহুবার আর্কীয়লোজিকাল সার্ভে তে বলার পরও নাকি কোনো ব্যবস্থা হয়নি.. কিন্তু মোগলমারীর গুরুত্ব বোধয় অনেক বেশি..

    বাকি দুটি সাইটও দেখলাম..

    তারপর গেলাম মিউসিয়াম দেখতে .. ছোট্ট একটা ঘর.. এখান থেকে যা যা পাওয়া গেছে মোটামুটি পুরোটাই গেছে এশিয়াটিক সোসাইটি আর কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে... কিছু রাখা হয়েছে ঐ ঘরে... ওখানে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের ইঁট, মুদ্রা, নকশা করা পাথর, কিছু শীলও পাওয়া গেছে যেগুলি ব্রাম্ভীতে লেখা... কিছু পাথর তোলা আছে, সেগুলোতে টিকিট লাগানো, কবে কোথায় পাঠানো হবে.. কিছু ইউনিভার্সিটি তো কিছু এশিয়াটিক-এর ... কিন্তু নিরাপত্তার হল খুব খারাপ.. স্কুলের বাচ্ছাগুলো যখন এসেছিল তাদের মধ্যে একজন পাথর নিয়ে পকেটে ঢোকাছিল..
    .
    মোগলমারীর বৌদ্ধ-বিহারটি নাকি ৬০*৬০ ফুটের... যেখানে নালন্দা ৭০*৭০ (শোনা কথা... সত্যি-মিথ্যার দায় আমার নয়) .. যদি এটা তাই হয়ে থাকে তাহলে এর গুরুত্ব নেহাত কম নয়... নেট হাতে পাওয়া তথ্য অনুসারে হিউ-এন-সাং- এর রচনায় তাম্রলিপ্তর আশেপাশে ৫-৬ টি বৌদ্ধ বিহার ছিল.. কিন্তু আজ অব্দি একটাও আবিস্কার হয়নি... আশা করা হচ্ছে মোগলমারী সেই কয়েকটির অন্যতম.... এর সময়কাল বোধয় গুপ্ত যুগ...

    এরপর গ্রামটা এক চক্কর মারলাম... একটা এঁদো পুকুরের মধ্যে একটা গাছ আর সেই গাছ উঠছে একটু পুরনো পাঁচিলে .. সেই পাঁচিলের ইঁট দেখেও মানে হাছিল যে সেই একই সময়ের.... একটা জায়গায় মোরামের রাস্তার পাশেই ইঁট দিয়ে বানানো কলাম যেরকম ছিল সাইটে .. দেখা বোঝাই গেল যে পুরো গ্রামেই এরকম অনেক কিছু থাকবে... তবে আমাদের জ্ঞানের খিদে প্রায় শেষ হয়ে আসছিল, আর পেটের খিদের টানে আর বেশিক্ষন সেখানে থাকতে পারলাম না ...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন