এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sudip | 59.9.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ১৬:৩৬480889
  • ছোটোবেলায় শোনা অদ্ভুত অদ্ভুত সুরে ফেরীওয়ালাদের আওয়াজ কি মনে পড়ছে? মনে পড়লেই লিখে ফেলুন এই টইয়ে।

    আমার ছোটোবেলায় শোনা এক ফেরীওয়ালার সুর ছিলো এই রকম।

    'চিঁড়া আছিলো ভালো।

    ভদ্রলোক ঢেকী ছাটা চিঁড়া বিক্রি করতেন।
  • kk | 69.245.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ২৩:৩১480900
  • এই থ্রেডে আমি লিখবো। সায়নের দেওয়া লিংকে না, ওখানে শুধু কলকাতার রাস্তার আওয়াজ। আমার আওয়াজেরা কেউ কলকাতার নয়।

    ফেরিওয়ালাদের ডাক শুনেছি আমার তেরো থেকে আঠেরো বছরে সবচেয়ে বেশি। তার আগে বার্ণপুরে ইস্কো হাসপাতালের লাগোয়া বাংলোয় থাকতাম। সেখানে ফেরিওয়ালাদের দেখিনি। রাতদিন শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনই শোনা যেতো। তেরোয় চলে এলাম আসানসোলে,রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায়। নতুন জায়গায় প্রথমদিন ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন শব্দ ডানা মেলে ঝটপটিয়ে কানে এসে বসলো। সক্কালবেলা তখনো অনেক বাড়িতে উনুন ধরানো হতো, তোলা উনুন জিনিষটা এখন এক্সটিংট্‌ প্রজাতি হয়ে গেছে বোধহয়। যেমন আমার তেরো বছর বয়সটা এক্সটিংট্‌ হয়ে গেছে।
    সেই উনুন ধরানোর সময়টিতেই ফেরিওয়ালারা ডেকে যেতো .... অনভ্যস্ত কানে প্রথমে শুনেছিলাম 'চী লো ও ও ও'। খুব অবাক লেগেছিলো,' চী' জিনিষটা ঠিক কি? জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম মস্ত ঝুড়ি মাথায় নিয়ে সে যাচ্ছে, ঝুড়ি ভর্তি ঘুঁটে। আবার ভালো করে শুনে বোঝা গেলো 'গৈঠা লো ও ও ও'। কোন অ্যাকসেন্টে গৈঠা চী হয়ে যায় কে জানে? কিন্তু যারা ঘুঁটে কিনতো তাদের নিশ্চয়ই বুঝতে কোনো অসুবিধে হতোনা।

    আরেকটু বেলা হতে শুনলাম 'লাগবে মাছ? টাটকা মাছ', সুশান্তকাকু ব'লে একজন মাছওয়ালা (বাবার রুগি, তাই আমাদের চেনা) না ডাকতেই এসে কাতলা আর ছোট ছোট খয়রা মাছ বিক্রি করে গেছিলেন। আমার কান ছোট থেকেই খারাপ কি না কে জানে, সুশান্তকাকুর ডাক আমি শুনতাম 'আ-আ-আ-ছ'!

    এগারোটা বারোটা নাগাদ যেতো লোহা-লক্কড়ের ঠেলাগাড়ি। তার ডাক ছিলো 'ভাঙাচোরা লোহা দিলে রসুন পেঁয়াজ পাবেন, নারকেল পাবেন।' দিব্যি ব্যবস্থা কিন্তু না? সেই পুরোনো দিনের বিনিময় প্রথার মতো।

    ঐ রকম সময়েই কোনকোনদিন দেখতাম একজন ভদ্রলোক মস্ত দুটো চটের থলি নিয়ে যেতেন। আর খুবই মৃদু স্বরে বলতেন 'লেবুর আচার আছে, লংকার আচার আছে, আমের আচার আছে।'। অত আস্তে বললে কি ক'রে কেউ শুনতে পাবে আমি ভেবে কূল পেতামনা। আমি ওনার কথা শুধু শুনতে পেতাম যদি কোন কারণে রাস্তায় সামনাসামনি পড়ে যেতাম তখনই। কিন্তু, বলেছি তো হয়তো আমার কানেরই গন্ডগোল আছে। নাহলে দিনের পর দিন উনি ঐ ভাবে বিক্রি করছেন কি করে?

    এক একদিন আসতো বইওয়ালা। 'মেয়েদের ব্রতকথা আছে-এ-এ। লক্ষ্মীর পাঁচালী পাবি-ই-ই-ন'। এরকম ব্যকূল ভাবে ডাকতে আমি কোনদিন কাউকে শুনিনি। প্রথম প্রথম একটু অবাক হয়েছিলাম যে ক্রেতাদের সরাসরি তুই তোকারি করতে কাউকে তো শুনিনি (বলা বাহুল্য, ঐ 'পাবিন' কথাটাকে আমি 'পাবি' শুনতাম)। পরে ভুল ভেঙে যাবার পরে ঐ গলার মধ্যে আর সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু ঐ অতল ব্যকূলতাটুকুই কানে আসতো। আমার কেমন যেন মনে হতো গরমের দুপুরে যেন ঘুঘু ডাকছে।

    দুপুরেই আরো দুজন ফেরিওয়ালা যেতো। কাগজওয়ালা। একজন ডাকতো 'কা-গা-জ'। ফেরিওয়ালা সুলভ ডিসটর্শনের ফলে নাকি আমার সেই 'দুরন্ত ঈগল' ম্যানিয়ার দিনগুলোর কারণে জানিনা,মনে হতো যেন 'তা-গা-ই'। আরেকজন বলতো 'অ্যায়-কারে- কাগাজ'। এই ডাকটার মানে আমি আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারিনি। মাধ্যমিক চলা কালীন পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসেই ঐ 'কারে কাগাজ' শুনতে শুনতে একটু শুয়ে থাকার চেষ্টা করতাম। মাধ্যমিকের পরে, আঠেরো বছরের পরে, শান্তিনিকেতনে আমূল বদলে যাওয়া জীবনের মুখোমুখি হবার পরে মাঝে মাঝে ছুটিতে বাড়ি এলেও দুপুরে ঠিকই একই ভাবে শুনতে পেতাম 'অ্যায়-কারে-কাগাজ'। আমার কেমন যেন মনে হতো ঠিক ঐ দুপুর দুটো বেজে চল্লিশ মিনিটটায় যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ মুহুর্তাটার বয়স বাড়েনা,কাল ওখানে বাঁধা পড়ে গেছে।

    আমার বাবা মা এখন আর ঐ বাড়িতে থাকেনা। এখন ছুটিতে বাড়ি গেলে দুপুরে কিচ্ছু শুনতে পাইনা। ফেরিওয়ালারা শুধু আমার তেরো থেকে আঠেরো বছর বয়সের মধ্যেই ছিলো, বলেছি না? সময় কোথাওই বাঁধা পড়েনা। আমিই খালি ভুলভাল ভাবি অমনি। চিরকাল।
  • Nina | 12.149.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ২৩:৫০480901
  • জাস্ট চুরি করে উঁকি মেরে চলে যাব আবার সেই ঘ্যানঘ্যানে কাজে--এই ভেবে আসা---
    কান জুড়িয়ে গেল---নানাডাকে --

    বাতাসভরা ডাক ছড়িয়ে থাকে
    সবাই কি শুনতে জানে ?!!

    অনেক্কদিন পর তোমার লেখা পেলাম--আমার দুপুর সাজিয়ে নিয়ে আবার ফিরে গেলুম কাজে:-))
  • hu | 12.34.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ২৩:৫২480902
  • বাসনউলি আসতো না? কাপড়ের বদলে স্টিলের বাটি কি প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে যেত না?

    আমাদের পাড়ায় আরেকটা জিনিস হয়। সেটা ফিরিওলার ডাক না। দুপুরের কথা বলতে মনে পড়ে গেল। এই গরমের সময়টা দিয়ে তারকেশ্বর যাত্রীদের ভিড় হয় খুব। শেওড়াফুলি পর্যন্ত ট্রেনে এসে গঙ্গায় একটা ডুব দিয়ে, গঙ্গামাটির তিলক কেটে দলে দলে মানুষ বাঁক কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে তারকেশ্বর যায়। ভোলেবাবা পার করেগা ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না তখন। শুধু কি ভোলেবাবা! একদল শুনি বলছে - ঝিঙে আলু পোস্ত/ বাবা ভালোবাসত। ভগবতীর তো শুনি টানাটানির সংসার। এদিকে পোস্তর যা দাম!
  • pipi | 129.74.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ২৩:৫৪480903
  • বাহ! এক দৌড়ে আমার ছেলেবেলাটায় ফিরে গেলাম!
  • Tim | 198.82.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১১ ২৩:৫৬480904
  • আমাদের ওদিকে তো তারকেশ্বর নেই, তবে দক্ষিণ রায়ের একটা মন্দির আছে। জায়গাটারে সম্ভবত কয় ধবধবি দক্ষিণেশ্বর (ব্ল্যাঙ্কি কনফার্ম করবে, দ: চ: প: র অন্তর্গত)। সেথায় সবাই বাঁক নিয়ে যেত। স্লোগান যে কি দিত এখন আর মনে নেই। তবে সেও দুপুরের দিকেই বেশি শুনতে পেতাম।
  • Su | 86.16.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ০০:২১480905
  • ট্রেনের ফেরিওয়ালারা? ঝালমুড়ি, ডটপেন? টাইগার বাম, সেফটি পিন? এদের কথাও যেন বাদ না যায়!

  • sayan | 115.184.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ০০:৩৮480879
  • অনবদ্য কেকে!
    যাক আমি লিং দিয়েছিলাম বলে তবু লিখলো ;-)
  • Manish | 59.9.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ১০:২০480880
  • kk এর লেখা অসাধারন। ছোটোবেলা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
  • Manish | 59.9.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ১০:২২480881
  • শিল কাটাও,শিল কাটাও
  • t | 203.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ১১:৩০480882
  • kk-র লেখা খুব ভালো লাগলো। মনে পড়ে গেলো, আমাদের ছোটোবেলায় গলি দিয়ে একজন প্রায়ই যেত, ঘুগনী বিক্রি করতো। কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনতাম সে হাঁক পাড়ছে "শাঁ-ও-নি-ই-ই-ই-ই" আর দাদা বলতো না না ও বলছে "অ-নি-ই-ই-ই-ল"। মোটকথা তার নাকিসুরের ঐ হাঁক শুনে ঘুগনী কথাটা একেবারেই বোঝা যেত না।
  • Nina | 68.45.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ১৭:২৫480883
  • কৃষ্ণকলি, আরও লেখ প্লিজ----
  • kk | 67.187.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ২৩:০৩480884
  • সেকি? আর কেউ লিখবে না?

    নিনাদি, এই লেখাটা তো এখানেই শেষ। আবার অন্য কিছু নিয়ে হয়তো লেখা এসে যাবে। তখন নিশ্চয়ই লিখবো।
  • Titir | 128.2.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১১ ২৩:৪৭480885
  • ফেরিওয়ালা হাঁক, সে তো অনেক যুগ আগের কথা। মাঝে মাঝে পসরা নিয়ে হাক দিয়ে যেত এপাড়া ওপাড়ায়। খুব ছোটবেলায় দেখেছি "আলতা লিবে, সিঁদুর লিবে' বলে একজন লোক মাথায় একটা বড় ঝুড়ি নিয়ে আসত, দুপুর গড়িয়ে একটু বিকেলের দিকে। ঝুড়িতে থাকত আলতা, সিঁদূর, চিরুনি, কাজল লতা আরো হাবিজাবি অনেককিছু। ঘীয়ের বাতির প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই কাজল লতাতে কাজল তৈরী হত। আর সেই কাজল লাগানো হত কুচোকাঁচা সব বাচ্চাদের। ধেবড়ে যাওয়া সেই কাজল কতোবার যে বড়দের হাসির খোরাক হয়েছে তার সীমা নেই। আসত আইস্ক্রীমওয়ালা। যদিও সেটা কাঠি বরফ, লাল নীল রঙের, কিন্তু বরফ বলা চলবে না। আইসক্রীমওয়ালার ভারী রাগ হত তাতে। হেঁকে বলত আস্ক্রিম আছে, নারকেল ও দুধ দেওয়া মালাই আস্ক্রিম। পাঁচ ও দশ পয়সা দাম হত তাদের। (এখন তো সিকির দাম নেই তো পাঁচ দশ পয়সা প্রাগৈতিহাসিক)। বাবা খুব গজগজ করত না কিনে দেবার জন্য, কিন্তু মায়ের কাছে একটু কিচির মিচির করলে পয়সা মিলে যেত। বরফওয়ালা এক পাড়া থেকে আর এক পাড়ায় চলে "আস্ক্রিম আছে" বলে হাঁকতে হাঁকতে। সঙ্গ নিত কচি কাঁচার দল।

    আর বেশীর ভাগ দিন বিকেল বেলা আসত ঘুগনিওয়ালা। সে আমাদের প্রহ্লাদ কাকু। আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনে ছিল তাদের বাড়ি। অবস্থা ভালো ই। তবুও প্রহ্লাদ কাকু ঘুগনি বেচতে আসত পায়ে ঘুঙুর বেঁধে গান করতে করতে।
    প্রহ্লাদের ঘুগনি,
    খেতে কি মন হয় নি।
    এমন আরো কতো গান করত। একপাক নেচে মা বড়মাদের ডাক পাড়ত ঘুগনি কেনার জন্য। লাল শালু কাপড়ে ঢাকা থাকত অ্যালুমিনিয়ামের ঘুগনির হাঁড়ি। শাল পাতার ছোট ছোট ঠোঙায় করে ঘুগনি দিত পাঁচ পয়সা দশ পয়সার। সেই ঘুগনি খেতে হত তালপাতার ছোট চামচ দিয়ে। কেউ বেশী করে কিনতে চাইলে বাড়ি থেকে বড় জামবাটি নিয়ে আসত কিনতে। শাল পাতার ঠোঙা চেটে পুটে খেতাম সেই স্বর্গীয় বস্তু।
  • achintyarup | 121.24.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১১ ০১:৩৮480886
  • মনখারাপ-করা টই। আমারও কত কিছু মনে পড়ছে, আবার ভুলে যাচ্ছি।
  • Manish | 59.9.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১১ ১৫:৩৬480887
  • Titir এর লেখাটিও তারিফ যোগ্য। সত্যি ছোটোবেলার কত কিছু মনে পড়িয়ে দিচ্ছে এই লেখাগুলি।

    আমাদের অঞ্চলে সন্ধের দিকে এক ফেরিওয়ালা গুরুগম্ভীর গলায় হাঁক পাড়তো 'ঠান্ডাই' বলে। আসলে কুলফী বেচতো। আমাদের খাওয়া বারন ছিলো কারন ওতে নাকি আফিম মেশানো থাকতো :-((
  • kiki | 59.93.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১১ ২০:৫৭480888
  • হ্যাঁ, তিতির ভারী মিঠি।

    কেকে যথারীতি দারুন।
  • Nina | 68.45.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১১ ২১:০৯480890
  • তিতির---আর একটু বেশি করে হোকনা---
  • Lama | 117.194.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১১ ০২:০৯480891
  • ছোটবেলায় মামাবাড়ির পাড়ায় একটা হাঁক শুনতাম "ট্যান্ডোপুলিইইইইইইইই'। আমরা আসামাত্র দাদু বলতেন "ট্যান্ডোপুলি আ গয়া' (ওই ফেরিওয়ালার ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে)।

    বড় হয়ে বুঝতে পারলাম ওটা আসলে "আইসক্রিম দুধমালাআআআআই'। কেন যে ট্যান্ডোপুলি ভাবতাম কে জানে। দাদুও তাই ভাবতেন।
  • Abhyu | 97.8.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১১ ০৩:২১480892
  • আমাদের ছোটোবেলায় "শিল কুটাও' "শিল কুটাও' বলে একজন লোক মাঝে মাঝে দুপুরের দিকে হাঁক পেড়ে চলে যেতেন। আমাদের বাড়িতে একবার তাঁকে ডেকে শিল কুটানো হয়েছিল। একটা বড় পেরেকের মতো জিনিস আর হাতুড়ি দিয়ে শিলটাকে একটু এবড়ো খেবড়ো করে দিয়েছিলেন। আট আনা নিয়ে খুশি হয়ে চলে যাবার পর আমি মনে মনে অনেকদিন ধরে ভাবতাম কিভাবে চলে এঁদের? সেই বৃদ্ধ মানুষটি আজ হয়তো আর নেই, পেশাটিও বিলুপ্ত হয়তো।

    গত ডিসেম্বরে বাড়ি গিয়ে দেখেলাম বছর ত্রিশ-চল্লিশ বছর বয়সী দু জন লোক সেই এক "শিল কুটোও' ডাক দিয়ে চলে যাচ্ছেন। একজন নন, দুজন লোক। বড় ভালো লাগল।
  • Nina | 68.45.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১১ ০৪:২৬480893
  • ইস! ছোটবেলাটা চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে ----তাই তো, 'শিল কুটাও, দুপুর বেলার ডাক ছিল।
    আর ছুরি ক্যাঁয়চি তেজ কারাইয়ে এ এ --কি এক অদ্ভুত সুরে টেনে বলত---আমার খুব ভাল লাগত যখন বেশ একটা সাইকেলের মতন যন্ত্রে বসে সামনের চামড়াতে --বঁঠি, ছুরি কাঁচি সব ঝকঝকে ধার করে দিত---
    আর সবচেয়ে ভাল লাগত
    'তুলো ধুনাই ' করত যারা--কে যানে তোমরা কখনও আদৌ শুনেছ কিনা। শীতকালে সকাল সকাল শুনতে পাওয়া যেত ---চেঁএইইই ঠনঢনঢনা'সেই সঙ্গে পিড়িং পিড়িং আওয়াজ, যেন সেতার বাজাচ্ছে ---ঐ ধোনবার যন্ত্রটার তার থেকে ---
    কি যে বলত কোনওদিন বুঝিনি---কিন্তু শীত এলেই অপেক্ষায় থাকতাম কবে আমাদের লেপগুলোর তুলো মা আবার কবে ধুনিয়ে নতুন করে দেবে।

    তুলো-ধুনাই ওয়ালারা, দুজন আসত, সামনের বারান্দায় কি ছাতে --বসত, পুরোনো লেপের তুলো বার করে আবার ওটাকে ঐ চরকা - কাম- সেতারে বেশ একটা অদ্ভুত ছন্দে বাজাত---ঝিঁকিঝিঁকি ঝ্যাঁগ ঝ্যাঁঙ্গ আর চারিদিকে তুলো উড়ত, লোকদুটোর মুখ, চুল সব কেমন সাদা হয়ে যেত----আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল ঐ তুলোধোনার কাছেপিঠে ঘুরঘুর করা---আমারও মাথায় জামায় বেশ মেঘের মতন তুলো এসে আটকে যেত----আর তৈরি হত নতুন তুলতুলে লেপ----চোখ বুজলে এখনও তার ওম ফিল করি----
    এগুলো কি তবে সব আগের জন্মের ঘটনা ?!
    এখানে কি আরাম সবাই বলে --ইলেকট্রিক ব্ল্যাঙ্কেটে ---আমি কিন্তু কিছুতেই সেই আরাম খুঁজে পাইনা----সেই রোদে ভাজাভাজা নরম গরম লেপ গায়ে দিয়ে ----সেই তুলো ধুনে দেয়া সেদিনকার ফ্রেশ লেপ!!!

  • Abhyu | 97.8.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১১ ০৬:২৩480894
  • ছুরি কাঁচি শান দেওয়ার সময় কেমন আগুনের ফুলকি বেরোতো...
  • bb | 117.195.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১১ ০৮:২৯480895
  • আমাদের ছোটোবেলায় আসতেন এক ফেরীওয়ালা, ডাক দিতেন 'লং ক্লথ বিউটিফুল' আর তার পর শোনাতেন তৎকালীন জনপ্রিয়তম গান হেঁড়েগলায়। পাড়ার বাচ্চার খুব ভালবাসত তাকে। কোনদিন কেউ কিছু কিনত না, কিন্তু কেন আসতেন জানিনা।
    শীতকালে আসতেন 'নিশার কাকু' কাশ্মীরী শালওয়ালা। নাম নিশার আহমেদ, প্রথমে বাবার সাথে তারপর নিজে একাই। রিপন স্ট্রিটের (এখন রফী আহমেদ খিদোয়াই ) ওখানে মেসে থাকতেন তিন- চারমাস শীতকালে।
    আমাদের জন্য আনতেন আপেল আর আখরোট। আস্তে আস্তে তার বিয়ে হল, কাকিমার ছবি দেখলাম, ছেলে হল তার ছবিও দেখেছিলাম, তারপর
    কখন যে কাশ্মীর অশান্ত হয় উঠল আর নিসার কাকু আসা বন্ধ করল, মনে নেই। জানি না আজ তার ব্যবসা কেমন চলে।
    এছাড়া আসত রামভাই উত্তরপ্রদেশের লোক কিস্তিতে শাড়ী বিক্রি করতে।
    "শিল কাটাউ", "হরেক মাল পাঁচসিকা","পুরানা কাপড়া দেকে বাসন","গরম চানাচুর", "আইসক্রীফ",ধুনুরী থেকে নিয়ে মাসে একদুই বার "ও দিদি কারুর হোল" ওয়ালারা।
  • Manish | 59.9.***.*** | ২২ আগস্ট ২০১১ ১২:০০480896
  • আমিও দুটো হাঁকের কথা লিখছি।

    এলটা হলো 'লে লে বাবু ছ অনা' হরেক রকম মাল ভ্যান রিকসা করে বিক্রি করতো।

    বায়স্কোপ। খোপ খোপ ওলা একটা টিনের বাস্ক। হাতল ঘুরিয়ে সিনেমা দেখানো হোতো। আসলে কিছু স্টিল ফটো দেখা যেতো।
  • Jhiki | 182.253.***.*** | ২২ আগস্ট ২০১১ ১২:০৬480897
  • ফেলবেন না....

    ফেলবেন না....

    আমাদের পাড়া দিয়ে হেঁটে যাওয়া কাবাড়িওয়ালার ডাক।

    তবে আমি পেটুক মানুষ, আমার প্রিয় ডাক ছিল জ-য়-ন-গ-রে-র মোয়া-আ আ আ
  • Somnath2 | 108.35.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০১১ ০৮:৪৩480898
  • Lama2:09 AM এর পোস্ট এ "ট্যান্ডোপুলিইইইইই" বস্তু টা বোধয় চন্দ্রপুলি। ওটা আমরা ও শুনেছি ছোটবেলায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন