৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজার যুদ্ধ যখন বাড়ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ক্রমবর্ধমান বিভাজনের মুখোমুখি হচ্ছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একপক্ষ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করছে, অন্যপক্ষ করছে গণহত্যার অভিযোগ। এই লেখায় এই বিভাজনগুলি অনুসন্ধান করা হবে, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে ইসরায়েলপন্থী এবং ফিলিস্তিনপন্থী দেশগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। তবে তার আগে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে, আলোচনায় প্রতিটি ইউরোপীয় দেশের পরিবর্তে ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনের প্রতি স্পষ্ট অবস্থানের দেশগুলির দিকে মনোনিবেশ করা হবে। দ্বিতীয়ত, আগে থেকে বলে নেয়া হচ্ছে যে, দেশগুলিকে ইসরায়েলপন্থী বা বিরোধী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করাটা আসলে একটি জটিল বিষয়কে সরলীকরণ করাই, যেখানে ইসরায়েলর প্রতি সমর্থনের বিষয়টি দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন তাদের জাতি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে।
ইউরোপে, ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনের প্রতি অবস্থান প্রায়শই ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ডানপন্থী দলগুলি ইসরায়েলপন্থী, অন্যদিকে বামপন্থী দলগুলি সাধারণত ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে। উদাহরণস্বরূপ, স্পেন ফিলিস্তিনের একটি শক্তিশালী সমর্থক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তার সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তবুও, স্পেনের সাম্প্রতিক নির্বাচন যদি ডানপন্থী পিপলস পার্টির পক্ষে থাকত, তবে ইসরায়েলের প্রতি দেশটির অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হত। পিপলস পার্টি এবং তার সম্ভাব্য জোট অংশীদার ভোক্স অনেক বেশি ইসরায়েলপন্থী মনোভাব দেখিয়েছে।
২০০৯ সালে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ইউরোপীয় ডানপন্থীদের ইসরায়েলপন্থী এবং বামপন্থীদের ফিলিস্তিনপন্থী হওয়ার বিস্তৃত প্রবণতা ইসরায়েলের রাজনৈতিক গতিপথের সাথে যুক্ত। ঐতিহাসিকভাবে, ইসরায়েলি রাজনীতি মূলত বামপন্থী ছিল, তবে ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধের পরে ডানদিকে স্থানান্তর শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলের এই রাজনৈতিক বিবর্তন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রতি ইউরোপীয় রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইসরায়েলি রাজনীতি উভয়ের মধ্যে গভীর এবং বিবর্তিত গতিশীলতাকেই প্রতিফলিত করে। গাজা সংঘাতের বিষয়ে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতির জটিলতা এবং বৈদেশিক নীতির অবস্থানগুলিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাবকে তুলে ধরে।
ইজরায়েলপন্থী দেশসমূহজার্মানি : জার্মানি ইউরোপে ইসরায়েলের অন্যতম অবিচল সমর্থক। চ্যান্সেলর ওলাফ শুল্টজ সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে নিশ্চিত করেছেন এবং সমালোচনাকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মান কর্তৃপক্ষ মূলত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। দেশটি ইসরায়েলে ৩০৩ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি মূল্যের প্রতিরক্ষা রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। উপরন্তু, জার্মানির সর্বশেষ পুনঃসশস্ত্র মতবাদ বা রিআর্মামেন্ট ডকট্রিন ইসরায়েলের গুরুত্বকে তুলে ধরে, ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে তারা জার্মান জাতীয় স্বার্থ হিসাবে ঘোষণা করছে। জার্মান রাজনীতির অনন্য দিক হল ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের দ্বিপক্ষীয় প্রকৃতি। অন্যান্য দেশের বিপরীতে যেখানে রাজনৈতিক বামপন্থীরা ফিলিস্তিনপন্থী, জার্মানিতে বাম এবং ডানপন্থী উভয় দলই ইসরায়েলের প্রতি সমান সমর্থন প্রদর্শন করে। এই ঘটনাটি জার্মানির ঐতিহাসিক চেতনা, বিশেষত হলোকাস্টের সাথে গভীরভাবে জড়িত, যা ইসরায়েলি রাষ্ট্রকে সমর্থন করার জন্য একটি অনুভূত জাতীয় বাধ্যবাধকতা বা পারসিভড ন্যাশনাল অব্লিগেশনের দিকে পরিচালিত করে।
অস্ট্রিয়া : অস্ট্রিয়া তার জটিল হলোকাস্ট ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েই ইসরায়েলের সাথে উল্লেখযোগ্য সংহতি দেখিয়েছে। এটি স্পষ্ট হয়েছিল যখন অস্ট্রিয়া ইসরায়েলের পক্ষে ইউএন এর সাধারণ পরিষদে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। অস্ট্রিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক ২০১০ এর দশকের শেষের দিকে গতি লাভ করে, বিশেষত পিপলস পার্টির নেতা সেবাস্তিয়ান কুর্টজের অধীনে। নব্য-নাৎসি উত্স এবং এন্টি-সেমেটিক ইতিহাসের জন্য পরিচিত ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টির সাথে জোট গঠনের তার সিদ্ধান্তটি কৌশলগত ছিল। ইসরায়েলের সাথে জোটবদ্ধ হওয়া কুর্টজকে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ প্রতিহত করতে এবং ২০০০ এর দশকে ফ্রিডম পার্টির সরকারের সাথে অস্ট্রিয়ার কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এড়াতে সহায়তা করেছিল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ফ্রিডম পার্টির মন্ত্রীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও অস্ট্রিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কুর্টজকে ইসরায়েল ও ইহুদি জনগণের সত্যিকারের বন্ধু বলে প্রশংসা করেছেন।
এই ঘটনাগুলি উদাহরণ দেয় যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক কৌশলগুলি কীভাবে ইউরোপীয় দেশগুলিতে ইসরায়েলপন্থী মনোভাবকে আকৃতি দান করে। জার্মানি ও অস্ট্রিয়া তাদের হলোকাস্টের ইতিহাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন নীতি ও অবস্থান গ্রহণ করেছে যা ইসরায়েলের প্রতি অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে, সাধারণ বাম-ডান রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ঐতিহাসিক দায়িত্বগুলিকে সম্বোধন করে।
হাঙ্গেরি : অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী হাঙ্গেরি উল্লেখযোগ্যভাবে ইসরায়েলপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা ইউএন এর সাধারণ পরিষদে তার কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট, যেখানে এটি ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশ নিষিদ্ধকারী প্রথম দেশগুলির মধ্যে ছিল। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন হিসেবে হাঙ্গেরি একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, এবং ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানানো একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। মজার বিষয় হল, হাঙ্গেরি এই বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষে থাকা মাত্র সাতটি দেশের মধ্যে একটি ছিল। প্রথম নজরে, এই জোটটি পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে, কারণ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার মূলত জনহিতৈষী জর্জ সোরোসের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য ব্যবহার করার জন্য পশ্চিমা মিডিয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাঙ্গেরিয়ান-ইসরায়েলি সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে, আংশিকভাবে কারণ ইসরায়েলের ডানপন্থী এবং হাঙ্গেরি উভয়ই সোরোসকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখে।
২০১৯ সালে, হাঙ্গেরি জেরুজালেমে একটি বাণিজ্য অফিস খোলার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা এমন একটি পদক্ষেপ ছিল যা জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ হিসাবে স্বীকার করেছিল। এরপর ২০২১ সালে হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিতে বাধা দেয়। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইইউকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। হাঙ্গেরির ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের পেছনে যুক্তিটি ইসরায়েলের সাথে একটি অভিন্ন জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত বলে মনে হয়। ২০২০ সালে হাঙ্গেরি ও ইসরায়েল একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে অরবান ও নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে মিল তুলে ধরে। এই বিবৃতিতে দেশাত্মবোধক জাতীয় মূল্যবোধের প্রচার, জাতীয় পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় একটি সমন্বিত অবস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
চেকিয়া : ইসরায়েলপন্থী আরেক দেশ চেকিয়ার ব্যাপারে বলা যাক। দেশটি ইউএন এর সাধারণ পরিষদে মানবিক যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নেয় এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন কমানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি হাঙ্গেরির আহ্বানের প্রতিধ্বনি দেয়। চেক প্রজাতন্ত্র ইসরায়েলের সাথে মতাদর্শগত সম্পর্ক রাখে, কেবল একটি জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র হিসাবে নয়, একটি ছোট জাতি হিসাবেও যা ঐতিহাসিকভাবে বৃহত্তর প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখার এই সম-অভিজ্ঞতা চেকিয়া এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলেছে।
ফিলিস্তিনপন্থী দেশসমূহআয়ারল্যান্ড : এই আলোচনার দ্বিতীয় অংশে গিয়ে, আমরা আয়ারল্যান্ড থেকে শুরু করে ইউরোপের সবচেয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী দেশগুলির দিকে মনোনিবেশ করতে যাচ্ছি। আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ফিলিস্তিনের উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামের সাথে তার সংযুক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। দক্ষিণ লেবাননে ইউএন এর শান্তিরক্ষা মিশনে আইরিশ সৈন্যদের মৃত্যু এবং হামাসের এক কর্মকর্তাকে হত্যায় ইসরায়েলি এজেন্টদের দ্বারা আইরিশ পাসপোর্টের অপব্যবহার সহ বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণে ইসরায়েল ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
স্পেন : স্পেন আরেকটি ইউরোপীয় দেশ যা উল্লেখযোগ্যভাবে ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছে। দেশটি ফিলিস্তিনে ইইউ'র সহায়তা স্থগিতের বিরোধিতাকারী দেশগুলোর মধ্যে স্পেন অন্যতম। গাজায় ইসরায়েল গণহত্যার পরিকল্পনা করছে বলে স্পেনের এক মন্ত্রীর অভিযোগের পর হামাসের পক্ষে থাকার অভিযোগে ইসরায়েল স্পেনের সমালোচনা করে। এই অবস্থানটি মূলত এই সত্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে যে বর্তমানে ইসরায়েলপন্থী ডানপন্থীদের বিপরীতে ফিলিস্তিনপন্থী হিসাবে পরিচিত স্প্যানিশ বামপন্থীরা ক্ষমতায় রয়েছে।
লুক্সেমবার্গ : লুক্সেমবার্গও ফিলিস্তিনি সহায়তা স্থগিতের বিরোধিতা করেছিল এবং কিছু সময়ের জন্য ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ছিল। লুক্সেমবার্গ আব্রাহাম চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি ছিল। ২০১৫ সাল থেকে লুক্সেমবার্গ ইউএন এর সাধারণ পরিষদে ইসরায়েল সম্পর্কিত ১৩৮টি প্রস্তাবের কোনোটিতে ইসরায়েলের সঙ্গে জোট করেনি। লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৪ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দেননি। তিনি নেতানিয়াহুর বন্দোবস্ত কর্মসূচিরও সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকারক হিসাবে দেখেছেন।
এই দেশগুলির অবস্থানগুলি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রতি ইউরোপের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে চিত্রিত করে, এবং তাদের বৈদেশিক নীতির সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করে এমন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত কারণগুলির একটি জটিল পারস্পরিক ক্রিয়াকে প্রতিফলিত করে।
তথ্যসূত্র1 -
https://twitter.com/ragipsoylu/status/1724760830065942861?s=202 -
https://thediplomatinspain.com/en/2023/10/feijoo-accuses-the-government-of-making-a-fool-of-ourselves-with-its-positions-on-israel/3 -
https://www.tabletmag.com/sections/news/articles/spains-pro-israel-far-right-party4 -
https://www.dw.com/en/scholz-says-erdogan-accusing-israel-of-fascism-is-absurd/a-674007395 -
https://www.politico.eu/article/israel-hamas-war-germany-germany-berlin/6 -
https://www.bmvg.de/resource/blob/5701724/eacb54dfc428b6808c9088402de91836/broschuere-verteidigungspolitische-richtlinien-2023-data.pdf7 -
https://www.theguardian.com/commentisfree/2023/nov/04/germany-israel-hamas-war-peace8 -
https://www.politico.eu/article/israel-hamas-war-germany-germany-berlin/9 -
https://www.politico.eu/article/adolf-hitler-homeland-austria-became-israel-europe-bff-palestine-conflict/10 -
https://www.reuters.com/world/europe/hungary-ban-rallies-supporting-terrorist-organisations-pm-orban-2023-10-13/11 -
https://twitter.com/AlanRMacLeod/status/1723383366521688264?s=2012 -
https://balkaninsight.com/2023/11/14/the-roots-of-orbans-strong-bond-with-israel-and-its-pm/13 -
https://en.wikipedia.org/wiki/Hungary%E2%80%93Israel_relations14 -
https://www.maariv.co.il/news/politics/Article-76682915 -
http://www.conbiz.eu/information/articles/Czech-policy-towards-Israel16 -
https://www.theguardian.com/commentisfree/2023/nov/02/ireland-criticism-israel-eu-palestinian-rights17 -
https://www.aljazeera.com/news/2023/11/8/deafening-silence-spanish-minister-calls-on-europe-to-sanction-israel18 -
https://www.aljazeera.com/news/2023/11/8/deafening-silence-spanish-minister-calls-on-europe-to-sanction-israel19 -
https://www.aa.com.tr/en/europe/clear-that-gaza-cease-fire-must-be-reached-as-soon-as-possible-says-luxembourg-s-foreign-minister/305408820 -
https://unwatch.org/luxembourg-called-out-at-un-as-most-anti-israel-eu-member-state/