আলি হোটেলের সামনে লম্বা দুটো লাইন, দুটো কাউন্টারে টাকা এক্সচেঞ্জ চলছে পাশাপাশি, ইসলামের কোনও এক অনুশাসন মেনে এরা কমিশন নেয় না, পাসপোর্ট টাসপোর্টও দেখতে চায় না, এমনকি খুচরো পয়সা অবধি গুণে গেঁথে দেয়।আমরা অনেকক্ষণ মোড়ের মাথায় বসে ছিলাম। খেয়েওছিলাম ওখানেই কোথাও যেন। সমুদ্র থেকে দূরে বলেই হয়তো এখানে মাছ নেই, শুধু মাংস।
জামা এল ফ্না তে গেলেই আমার মনে হতো এখানে আমি আগে এসেছি, মানে ঠিক ঐ জায়গাটায় হয়তো নয়, কিন্তু ঐরকম দেখতে বা ঐ যে মাটির রং, বা দেয়ালগুলো, কিংবা বাড়ি, হয়ত আকাশও কিছুটা কেমন যেন পূর্ব পরিচিত।
বিকেলেও গেছলাম ওখানে। তখনও গান বাজনা শুরু হয় নি। মোড়ের মাথায় মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকার যুবকেরা নানান জিনিস বেচছিল, কালো চশমা থেকে শুরু করে আফ্রিকার ম্যাপ আঁকা গেঞ্জি, কেউ বা মাটি দিয়ে বানানো নানানরকমের ছোটোছোটো পুতুল যার অধিকাংশই উট।
আজও যখন ফলের রসটস খেয়ে, ভেতরটায় ঘুরছি, পায়ে ব্যাথা করছিল হাঁটতে হাঁটতে, মেঝের ওপর বসে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ বসবার পরে দেখি একজন বারবেরিয়ান মানুষ পিঠি বোঝা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখছে। ঐ ওর দোকান পাতার নির্দিষ্ট জায়গা, আমি উঠে যাই। একপাশে অনেক বাহারি দামি দোতলা তিনতলা রেস্টুরেন্ট।
এদেশে হিন্দি সিনেমা খুব জনপ্রিয় এবং আমাদের দুজনকে দেখলেই লোকে চিনে ফ্যালে যে ভারতীয় চেহারা, একটু গান টান গেয়ে দেয়, আমরাও আপত্তি করি না।
ভারতীয় নেই একদম। তারই মধ্যে হঠাৎ শুনলাম তীব্র প্রতিবাদ দৃঢ় ইংরিজিতে জোরে — ডোন্ট ডিসটার্ব!
একেবারে ভারতীয় উচ্চারণ। পেছন ফিরে দেখি তাকে এবং তারপরেই আমাদের পাশ গিয়ে গটগটিয়ে হেঁটে যায় একজন নারী, পোশাক য়ুরোপীয় কিন্তু এই মেয়েকেতো আমি চিনি! সঙ্গে সুপুরুষ শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। দুজনেই দ্রুততার সঙ্গে ঢুকে পড়ে রেস্টুরেন্টে। এরা নিজেদের মধ্যে ইংরিজিতেই কথা বলছিল।
চেহারাতো চেনা, নাম মনে পড়ছে না, কিছুতেই না, সিনেমায় অ্যাকটিং করে, সিনেমাগুলোর নামও মনে পড়ছে না, উঃ কী জ্বালা, একটাতে টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে অভিনয় করেছিল, যেটায় টোটা পুলিশ থেকে পুতুল হয়ে গেল, মনে পড়েছে রাধিকা! রাধিকা আপ্টে!
অনেকটা হেঁটে ঐ চত্বরেই একটা বাড়ির রোয়ারের সিঁড়িতে বসলাম। পাশে সার দিয়ে মহিলারা বসে। একপাশে সিগারেটের দোকান দিয়েছে কেউ, কনসার্ট শুরু হয়ে গেছে, মেয়েদের মধ্যে কারো হাতে সদ্য লাগিয়ে আসা হেনা, তারা ধৈর্য ধরে হেনা শুকিয়ে নিচ্ছে। পৃথিবীর এই অঞ্চল একটু একটু করে ঠান্ডা হচ্ছে। আমি শুয়েই পড়লাম একপাশে। আকাশ পরিষ্কার, এখানে যতক্ষণ ইচ্ছে আমি শুয়ে থাকতে পারি, চাইও শুয়ে থাকতে।