আজিজুল হক, শৈবাল মিত্র, নির্মল ব্রহ্মচারী এঁরা ষাটের দশকে সিপিএমের ছাত্রফ্রণ্টএর সাংগঠনিক ও তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন। তখনও এস এফ আই নামকরণ হয়নি। এঁদের দক্ষিণ কলকাতায় প্রতিনিধিরা ছিলেন বীরেশ গুহ, দিলীপ পাইন ও প্রলয়েশ মিশ্র।
ছাত্রফৌজ নামে পত্রিকাটি এঁদের সম্পাদনায় চলত।
এঁরা ছিলেন বিদ্রোহী গ্রুপ। তখন 'অফিসিয়াল লাইন' কথাটি খুব চালু ছিল।
সিপিএমের ছাত্রফ্রণ্টের অফিশিয়াল লাইনের সর্বমান্য নেতা ছিলেন বরানগরের দীনেশ মজুমদার। তারপরেই সুভাষ চক্রবর্তী, বিমান বসু ও শ্যামল চক্রবর্তী।
প্রথম গ্রুপটিকে সন ৬৬-৬৭ নাগাদ সিপিএম ব্যান করে দেয় এবং ছাত্রফৌজ পত্রিকার সংগে সাধারণ সদস্যদের সম্পর্ক না রাখতে বলা হয়।
ওদিকে দেশহিতৈষী পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী তে রেবেল গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ। যেমন সুশীতল রায়চৌধুরী, সরোজ দত্ত, প্রবীর বসু প্রমুখ।
তারপর একদিন নাকতলার ভোলা বসুর নেতৃত্বে সিপিএম ক্যাডারদের এক বাহিনী এসে দেশহিতৈষী অফিস দখল করে সুশীতল, সরোজ , অর্থাৎ পুরো রেবেল গ্রুপকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে বের করে দেয়।
ওঁরা তখন দেশব্রতী নামে আলাদা কাগজ বের করেন। এবং খোলাখুলি নকশালবাড়িকে সমর্থন করেন।
শৈবাল সম্ভবতঃ ওই অফিস থেকে গ্রেফতার হন।
এদিকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব উঠে আসছে। এঁদের সঙ্গে ইউনিভার্সিটির পিজি ইউনিট মিলে তৈরি হল পিজিএসএফ কনসোলিডেশন।
তখন অসী ম চট্টো(কাকা) , দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী, অমল সান্যাল, রণবীর সমাদ্দার, সন্তোষ রাণা,অচিন্ত্য গুপ্ত এঁরা নেতৃত্বে ছিলেন।
১৯৬৭ সালের সম্ভবতঃ নভেম্বরে ঢাকুরিয়ার রামচন্দ্র হাই স্কুলে সারাদিনের সম্মেলন হয়।
সেইখানে স্পষ্ট হয় দুটো গ্রুপের দ্বন্দ্ব।
দ্বন্দ্বের আপাত কারণ দুই লাইনের বিতর্ক। সেটা কী? ভারত রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র কী -- নয়া উপনিবেশবাদী নাকি আধা উপনিবেশবাদৈল
একদিকে প্রেসিডেন্সি গ্রুপের কাকা ও দীপাঞ্জনের নেতৃত্বে একের পর এক বক্তা এসে নানান যুক্তি তর্ক ও ডেটা দিয়ে বলে যাচ্ছে-- সেমি কলোনিয়ালিস্ট! আধা উপনিবেশবাদী!
অন্যদিকে আজিজুল হক, দিলীপ পাইন, বীরেশ , প্রলয়েশরা বলছেন --কোনমতেই না। নিও কলোনিয়ালিস্ট, নয়া উপনিবেশবাদী।
কোন ফয়সালা হয় নি। সবাই আলাদা লাইনে ও সংগঠনে কাজ করতে থাকেন।
শেষে.১৯৬৯ সালের ২২ শে এপ্রিল তারিখে সিপি আই (এম এল ) দল ঘোষণা হলে সবাই তাতে যোগ দেন।
আজকে মনে হয় ওই বিতর্কটি পাত্রাধার কি তৈল, নাকি তৈলাধার কি পাত্র গোছের ছিল। সারবস্তু কম, নেতৃত্বের লড়াই বেশি।
* এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক ইপিডব্লু এবং সোশ্যাল সায়ন্টিস্টে হয়েছিল।
যেমনঃ
১ ভারতের কৃষি ব্যবস্থার চরিত্র কী? ক্যাপিটলিস্ট নাকি সেমি ফিউডাল?
এতে বাঘা বাঘা বুদ্ধিজীবী ও স্কলার দিনের পর দিন লড়েছিলেন।
যেমন ড্যানিএল ও অ্যালিস থর্নার, প্রভাত ও উৎসা পট্টনায়েক, পরেশ চট্টোপাধ্যায়, বানাজী এবং আরও অনেকে।
২ ভারতীয় সমাজে ক্লাস না কাস্ট (শ্রেণী না জাতি) কোনটা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সাংস্কৃতিক ইউনিট?
এতে সিপিএমের রণদিভে, অজিত রায়; প্রাক্তন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি পি সি জোশী, মহারাষ্ট্র থেকে সত্যশোধক কমিউনিস্ট পার্টির শরদ পাতিল, দক্ষিণের ক,জন জাতপাত নিয়ে কাজ করা স্কলার, ওম গেইল্ভেট এঁরা আসর জমিয়েছিলেন।
আমার ভাল লেগেছিল পুরণচাঁদ জোশীর লেখা। পুরনো চাল সত্যিই ভাতে বাড়ে।
তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল।
অসীম ও সন্তোষ রাণা নির্বাচনে দাঁড়ালেন। জেল থেকে বেরিয়ে আজিজুল সিপিএম এর পক্ষে কথা বলতে লাগলেন। সন্তোষ রাণা মেদিনীপুরের ডেবরা গোপীবল্লভ পুর এলাকার গ্রাম সমাজের বিশ্লেষণ করে চমৎকার দুটো বই লিখলেন। আজ উনি প্রয়াত।
অসীম একসময় হান্টারের অ্যানালস অফ দ্য রুরাল বেঙ্গল বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।
টিভিতে নিয়মিত হাজিরা দিতেন।
ইদানীং দেশে ধারাবাহিক নকশালনামা লিখে পুরষ্কার পেয়েছেন।
রণবীর সমাদ্দার বেসিক্যালি বড় স্কলার।
কোলকাতায় ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ নামে সংস্থা গড়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক ইস্যুতে রিসার্চের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সারা ভারতের লিবারেল চিন্তার সাংবাদিক ও অধ্যাপকের সঙ্গে যুক্ত। মাঝে মধ্যে ইউরোপে বিভিন্ন ইউনিতে ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন।