সেকি, &/ , সৃষ্টিছাড়া, যোষিতা, পলিটিশিয়ান, আর কাদের জানি এই রায় নিয়ে এত যে উল্লাস হচ্ছিল, গেল কই?
এটা পড়ে হচ্ছেনা?
SLST, 2016
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো…
ডিসেম্বর, ২০১৮।
জুলিয়েন ডে স্কুল, কল্যাণীর তিনতলার একটি খোলামেলা ক্লাসঘর। শীতের সকালে গাঢ় চকোলেট বাদামি রঙের ব্লেজারে সেজে চুপচাপ সামনে বসে রয়েছে সারি সারি বিষণ্ণ কিশোর মুখেরা। মাথা নীচু, চোখে জল। সামনে অপরাধী মুখে দাঁড়িয়ে শিক্ষিকা।
"তোরা এভাবে কাঁদলে কী করে হবে?"
উত্তর নেই। জলে ভরা চোখেরা মুঠি শক্ত করছে।
"শীতের ছুটি পড়ছে, আনন্দ করবি। কাঁদছিস কেন, কী মুশকিল!"
"স্কুল খুলে তোমায় দেখতে পাব না আর? তুমি ক্লাসটিচার থাকবে না? কে পড়াবে আমাদের?"
শিক্ষিকা মাথা চুলকে বলছেন, "কে জানে, পেতেও পারিস। জয়েনিংটা দিক। আর আমার ফোন নম্বর তো রইল। কিছু অসুবিধা হলে ফোন করবি।"
"ড্যাফোডিলস কে পড়াবে? ওটা বাকি আছে।"
"তোদের এত বড় স্কুলে টিচারের অভাব?"
"তুমি শুনেছ, টিচাররা এইভাবে বছরের মাঝখানে ক্লাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে? আমরা তোমার কাছেই পড়ব। তুমি যাবে না।"
জানুয়ারি, ২০১৯।
ছুটির পর স্কুল খুলেছে। শিক্ষিকার জয়েনিং এসে যাচ্ছে শিগগিরই। এসএলএসটি পিজির পোস্টিং এসেছে আগেই। বাবা অসুস্থ, যা বোঝা যাচ্ছে, টার্মিনালি অসুস্থ, বাড়ির কাছে থাকাই সুবিধা। পরিবারের মানুষকে দেখার অন্য মানুষ নেই। ফলে, পিজি ছেড়ে একটু কম স্যালারিতে ইউজি লেভেলের চাকরি বেছে নিয়েছেন তিনি। তারই জয়েনিং সামনে। আবেগ বুকে রেখে তিনি খালি করছেন ভরা কাবার্ড, খাতা, বইপত্র। সারেন্ডার করছেন আই কার্ড। জমা দিচ্ছেন রেজিগনেশন। যাঁদের তিনি পড়িয়েছেন এতদিন, তাঁরা কেউ কাঁদছে, কেউ অভিমান করছে, কেউ গলা জড়িয়ে ধরছে পিছন থেকে, কেউ কেউ তৈরি করছে ফেয়ারওয়েল কেক আর কার্ড। আবার কেউ কেউ সেদিন স্কুলেই অনুপস্থিত। হোয়াটসঅ্যাপে এসে গেছে সেই দামালদের বড্ড চুপচাপ বার্তা, "যেদিন স্কুলে তোমার শেষ দিন, সেদিন আমি আর স্কুল আসতে পারলাম না, মিস। বাড়িতে গিয়ে দেখা করে আসব।"
আর, কাজের ফাঁকে, সিঁড়ির ধারে, স্টাফরুমের বাইরে -
"চলে যাচ্ছ?"
"চলেই গেলে শেষ অবধি?"
প্রিন্সিপালের অফিসে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের চিঠি জমা দেওয়ার মুহূর্ত। প্রিন্সিপাল হাত বাড়িয়ে চিঠি নিচ্ছেন, শিক্ষিকার দিকে স্থির তাকিয়ে বলছেন,
"উইথ অল মাই হার্ট, সহেলী, লেট মি টেল ইউ দিস, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু অ্যাকসেপ্ট দিস। বাট আই কান্ট। আই হ্যাভ টু লেট ইউ গো। ইটস দ্য কোয়েশ্চেন অফ ইওর ফিউচার। দিস জব কান্ট অফার হোয়াট আ গভর্নমেন্ট জব ক্যান। বাট, ইয়েস, ইফ ইউ এভার উইশ টু কাম ব্যাক, দ্য ডোর অফ জুলিয়েন ডে স্কুল উইল বী ওপেন ফর ইউ, অ্যাট লিস্ট, টিল আয়াম হিয়ার অ্যাজ দ্য প্রিন্সিপাল। উইশ ইউ গুড লাক।"
সেদিন জানতাম, যোগ্যতায় চাকরি করতে যাচ্ছি। আজ মনে হয়, ভাগ্যটাই হয়তো সব। ভাগ্য, বা দুর্ভাগ্য, যাই বলি। জীবনে যতবার ছাত্রছাত্রীরা পা ছুঁতে এসেছে, দু'হাত দিয়ে বুকে টেনে ধরেছি। আজও, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎ করে "মিইইইইস", বা "ম্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাম" বলে কেউ কেউ ছুটে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে গত পরশু অবধি উত্তর চব্বিশ পরগনার যে মফঃস্বলটি আমার কর্মক্ষেত্র ছিল, সেখানে স্কুল থেকে স্টেশন অবধি ফেরার যে হাঁটার পথটুকু, তাতেও, মাঝে মাঝেই সামনে "ম্যাডাআআআআম" ঘ্যাঁচ করে ব্রেক চেপে দাঁড়িয়ে পড়ত ব্যস্ত সাইকেলরা। তার আরোহীদের মুখে নতুন ওঠা দাড়ি বেশ ভরাট। ভরা বৃষ্টিতেও তারা কাদা লাগা বর্ষার জুতো নীচু হয়ে টুক করে ছুঁয়ে ফেলত বাধা দেবার আগেই।
"আঃ, কী করছিস কী, ওতে ধুলো-কাদা!"
"ধুলোটাই খুঁজছি ম্যাডাম!"
খবরে যখনই দেখি, ছাত্র-শিক্ষক সংঘর্ষ, আমার আটপৌরে শিক্ষকমন ত্রস্ত হয়, ব্যথিত হয়। সারা জীবন হয়ে এসেছে। আমি এত ঢালাও ভালোবাসা পেয়েছি; আর এমন আটপৌরেভাবেই ক্লাস নিয়ে এসেছি বরাবর, আমি অন্তরেই জেনে এসেছি, আমি সন্তানস্নেহে ছাত্রছাত্রীদের পড়াই। বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে আলগা হয়ে আসা খোঁপার কাঁটা ঠিক করে নিই, ইচ্ছে হলে সারা ঘর ঘুরে পড়াই, ইচ্ছে হলে একটু বসি, ইচ্ছে হলে পড়ানোর পরে পাঁচ মিনিট গল্প করি। পড়ানোর আনন্দে পড়িয়েছি, আর শাসনও যা করেছি, ঐ, যতটুকু নিতান্ত প্রয়োজন মনে হয়েছে। ওদের বেশি বকে ফেলে নিজেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি, আর মনে মনে হেসে ফেলেছি, যে আমার আর কড়া দিদিমণি হওয়া হয়ে উঠল না।
আজ জানছি, আমার তো দিদিমণিই হয়ে ওঠা হয়নি। আমার এ কর্মক্ষেত্রে সেই যখন জয়েন করি পাঁচ বছর আগে, সেখানে দীর্ঘ প্রায় ছ'বছর ইংরেজির কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। ক্লাসঘরে ঢুকে পড়াতে গিয়ে দেখতে পেলাম, মুখে ইংরাজি নিয়ে কেবল ভয়ের ছাপ। কিছু জিজ্ঞেস করলেও সংকোচে কেউ উত্তর দিতে চাইছে না। মাসখানেকের মধ্যে সমীকরণ পাল্টে গেল। ক্লাসে যেতে পাঁচ মিনিট লেট হলে, কচিকাঁচা মুখেরা উঁকি দিত স্টাফরুমে,
"ম্যাডাম? আসবেন তো?"
এই যে আসবেন তো ম্যাডাম? বা, আজ একটা গল্প শোনাবে? আজকে একটা ফ্রি পিরিয়ড প্লিজ…. এসব দাবির অমোঘ আবদার কোনোদিন ঠেকাতে পারিনি। প্রথম সারির ইংরাজি মাধ্যম আইসিএসই স্কুল থেকে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরাজি (সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) শিক্ষিকা হয়ে যোগ দেবার পরে গল্পচ্ছলে পড়িয়ে পড়িয়ে কেবল তাদের ইংরেজির ভয় কাটাবার চেষ্টা করে গেছি। একটু যদি পাশের হার বাড়ে, একটু যদি লিখে আসে কম্পোজিশন, একটু যদি ড্রপ আউট কম করে! স্কুলের দায়িত্ব, মাধ্যমিকের দায়দায়িত্ব, যা যা যখন এসেছে, আনন্দের সাথে, অক্লান্তভাবে করে যেতে চেষ্টা করেছি, যাতে ধুঁকতে থাকা শিক্ষাব্যবস্থা একটু হলেও উঠে দাঁড়াতে পারে, যাতে একটু হলেও যুদ্ধ করে নেওয়া যায় "সরকারি স্কুলে তো পড়াশোনা হয় না" - এ গর্জনের বিরুদ্ধে।
আর ইতিমধ্যে আমার ফোন, আমার ইনবক্স, আমার ঘর ভরে যেতে থেকেছে। নিজের ছাত্রাবস্থায়ও যাদের পড়িয়েছি, তাদেরও কিন্তু মেসেজ আসে আজও,
"আজ বাড়ি আছো? আসব?"
"নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে, মিস। এই যে ছবি। আমরা কত ঘুরলাম ভ্যালেন্টাইনস ডে'তে!"
"তোমার লেখা ভীষণ ইন্সপায়ার করে, অন্য ভাবে ভাবি লেখাগুলো পড়তে পড়তে, মিস!"
"একটা সমস্যায় পড়েছি, একটু সল্যুশন চাই, কবে সময় দিতে পারবে?"
আমার পুরনো ছাত্রী অদিতি বলত, দিদি, মাধ্যমিকের আগে সব্বাই যখন ভীষণ ভয় দেখাচ্ছে, সব টিচার বলছেন দিনরাত এক করে পড়ে যাও, তুমি বলেছিলে, পড়বি তো বটেই, কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষায় বসবি। তাতে যেমন হওয়ার হবে। এমনিও খুব বেশি কিছু এতে আসে যায় না। আর মনে রাখিস, জীবনের সব চাইতে বড় পরীক্ষাগুলো খাতায় কলমে হয় না। এ কথাটা আমি সারা জীবন মনে রাখব।
ঠিকই। এ কথা কেবল অদিতিকে কেন, আমি আমার সব ছাত্রছাত্রীদের সারাটা জীবন বলে এসেছি। এ কথা বলতে বলতেই ২০১৬ সালের পুজোর পরে সারাটা দিন জুলিয়েন ডে স্কুলে পড়িয়ে এসে, সন্ধেয় ব্যাগ ভরে নিয়ে আসা ওদের পেন্ডিং খাতাগুলো দেখে, আমি গভীর রাতে বসতাম পড়াশুনো নিয়ে। এসএলএসটি ২০১৬। জীবনের সব পরীক্ষা সত্যিই খাতায় কলমে হয় না। যাদের জন্যে আমি আজ শিক্ষক, যাদের ভালোবাসা আমায় ভরিয়ে তুলেছে এই এতগুলো বছর, যাদের ভ্যালিডেশন আমার সব চাইতে বড় পুরস্কার, তাদের সবাইকে বলতে চাই - মহামান্য আদালত তোমাদের মিস/ম্যাম/ম্যাডামকে যোগ্য বলে মনে করেননি। ২০১৬ এসএলএসটি দুর্নীতি মামলায় ৫৫০০ জনের বেশি কিছু অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট গত পরশু সর্বমোট ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মহামান্য আদালত, পরীক্ষা দিয়ে, ইন্টারভিউ দিয়ে, পাওয়া যে চাকরি, তার শুরুতেই ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন হয়েছিল। আমি, এবং আমার মত আরও ১৯০০০ শিক্ষক এই দুর্নীতি মামলা শুরু হওয়ার পর প্রথম ধাক্কা খান এ জেনে যে তাঁদের র্যাংক শুরু থেকেই পিছিয়ে গেছে, পোস্টিং দূরে হয়েছে, কারণ প্যানেলে অনেক অযোগ্য প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। অনেকে ওয়েটলিস্টেড রয়ে গেছেন যোগ্য হয়েও, চাকরি পাননি। তাঁরা আজও বেকার। আর এরপর শুরু হয় পরীক্ষা। ভেরিফায়েড ডকুমেন্টসও আমাদের বারংবার ভেরিফিকেশনে দিতে হয়েছে। আমাদের কনফার্মেশন প্রক্রিয়া হোল্ড করা হয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্তে বারংবার জমা দিয়ে আসা ডকুমেন্টস আবারও জমা দিয়ে এসেছি। বাড়ি ফিরে, অপমানে অভুক্ত থেকেছি। যাঁরা দুর্নীতি কী হয়েছে, কতটা হয়েছে না জেনে, দিনরাত এক করে পড়াশোনা করে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে সে পরীক্ষায় পাশ করেছেন, তাঁরা যে সত্যিই জাল নন, যোগ্য প্রার্থী, পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের পরেও তাঁদের সে প্রমাণ বারংবার দিতে হয়েছে। ২০১৬ মানেই দুর্নীতি। ২০১৬ মানেই টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া। মহামান্য আদালত, আমার মতো এমন ১৯০০০ শিক্ষক, এই কদর্য দুর্নীতির কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি গায়ে মেখেও প্রতিটি দিন ক্লাসরুমে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, পড়িয়েছেন, সিলেবাস শেষ করেছেন, হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার যে সহকর্মী সহযোদ্ধা আজ এই মুহূর্তে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি কিছুদিন আগে অবধিও রোজা করতে করতে, একটি ফোঁটা জল মুখে না দিয়ে, চূড়ান্ত সিনসিয়ারিটি নিয়ে নাগাড়ে ফিজিক্স এবং অঙ্ক ক্লাস নিয়ে গেছেন। বারংবার প্রমাণ দিয়েও, এবং আমাদের বিরুদ্ধে কোনো রকমের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আজ ইন্ডিয়ান পেনাল কোড দেশে আইনের রুলবুক হওয়া সত্ত্বেও আমার মত ১৯০০০ নিরপরাধ শিক্ষককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা যোগ্য নই। আমাদের শিক্ষকতার যোগ্যতা নেই।
আমার, আমাদের, যে ছাত্রছাত্রীরা গরমের ছুটির পর স্কুল খুললে নিষ্পাপ মুখে এসে আমাদের সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করে যাবে কেন ওদের স্যার বা ম্যাডাম আসছেন না, কেন ইংরেজি ক্লাস হয় না, কেন ফিজিক্স ক্লাস হয় না, কেন অঙ্ক ক্লাস হয় না, তারা কোনোদিন আমাদের অযোগ্য মনে করেছে কিনা, একবার খতিয়ে দেখবেন, মহামান্য আদালত? আমার মা নামী গৃহশিক্ষিকা। আমার বাবা একজন সরকারি অফিসার ছিলেন। আমার দাদু ঠাম্মা ছিলেন এগ্রিকালচারে। এ জীবনে আজ অবধি আমি কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিইনি। কোনো প্রয়োজনও পড়েনি। পিএসসির কনফার্মড চাকরি আমি এই চাকরিতে জয়েন করার পর নিইনি, পিএসসিতে ফার্স্ট হয়েও নয়, কারণ, সে পোস্টিং ভীষণ দূরে ছিল। পরিবারের প্রয়োজনকে আগে রেখে এ চাকরিটিই নিয়েছিলাম। আমার মতন আরও এমন হাজার হাজার শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের যোগ্যতার প্রমাণ তাঁদের কাজ, তাঁদের দেখা খাতা, তাঁদের ক্লাস লেকচার, তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আজ এক কথায় সাড়ে পাঁচ হাজার জনের দুর্নীতির দায় বাকি ১৯০০০ এর উপর ঠেলে দেওয়া হল। জানিয়ে দেওয়া হল, সব নিয়োগ অবৈধ। অথচ, সবকটিই যে অবৈধ নয়, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠই বৈধ, তা আদালতের রায়ের কপিতে স্পষ্ট। আর যা অবৈধ, সেই অবৈধতা যারা করল, সেই দুর্নীতিতে যারা যুক্ত, তারা তো এখনও মাথা উঁচু করেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তাতে কী? মহামান্য আদালত, তাতে আপনার কী? সৎ শিক্ষক, সৎ নাগরিক আমরা; তাদের গায়ে আপনারা ছুঁড়ে দিলেন দুর্নীতিবাজদের জড়ো করা সবটুকু কাদা। আমার শিক্ষকতা আমাকে যে প্রবল সম্মান দিয়েছে, তা ধুলোয় মিশিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়। আমার জীবন, জীবিকা, রুজিরুটি, ভালোলাগা, আমার মতন এমন হাজার হাজার শিক্ষকের রুজিরুটি কেড়ে নিয়ে সেই আপামর ফুঁসতে থাকা জনগণের সামনে আমাদের নগ্ন করে ছেড়ে দিলেন, যাঁরা আজও মনে করেন বিচার মানে জাস্টিস। বিচার মানে ন্যায়।
আমার আজ মনে পড়ছে শুধু একটিই কথা, বহুদিন আগে পড়েছিলাম। কমলাকান্তের দপ্তরের লাইন, বঙ্কিমের লেখা।
"আইন! সে তো"....
আর মনে পড়ছে একটি বহুবার শেয়ারিত কোটেশন, যাতে আমার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা আমায় বহু, বহুবার ট্যাগ করেছে,
"ট্যাগ দি ইংলিশ টিচার হু চেঞ্জড ইয়োর লাইফ"....
লিখেছে, Saheli Sengupta, আমার দিদি। আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা, অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইস্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি অসাধারণ উজ্জ্বল যার পরীক্ষার মানপত্র। বিগত ছয় বছর মফ:স্বলের বাংলা মাধ্যম স্কুলে, অসংখ্য প্রথম প্রজন্মের দরিদ্র শিক্ষার্থীকে সন্তানস্নেহে আগলে রেখেছে যে। শুধু ভাষা-সাহিত্য শেখায়নি, শিখিয়েছে মানবতার পাঠ, গড়েছে নাগরিক রোজ। আজ রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে হওয়া এই ভয়াবহ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম বলি সে৷