অ্যান্ডর,
তোমার প্রশ্নটা সত্যি জটিল। মানুষে মানুষে সম্পর্ক জিনিষটা এমনিতেই জটিল ব্যাপার। তার ওপরে আরো গন্ডগোল ঘটে তার কারণ হলো প্রত্যেকটি মানুষের মানসিক গঠনই আলাদা। তাই একই জিনিষ আলাদা আলাদা লোক আলাদা ভাবে প্রসেস করেন। এই ধরণের সমস্যায় ওয়ান সাইজ ফিটস অল সমাধান হয় বলে তো মনে না। তবে আমি আমার কী মনে হয় সেটা বলতে পারি। এবার ক এর মানসিক গঠনে সেটা ফিট করতেও পারে, নাও পারে।
এক কালে যার সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলো তার প্রতিই একদম অন্যরকম মনে হচ্ছে এটা খুব আনকমন ঘটনা নয়। মানুষ বয়সের সাথে বদলায়, কেউ কাউকে আউটগ্রো করে যায়, কারুর জীবনের অন্য কোনো জায়গার ফ্রাস্ট্রেশন থেকে আচরণ বদলে যায়, এমনি অনেক কারণই থাকে। তো এখানে লেখার সুবিধার জন্য মনে করে নিচ্ছি আমিই ঐ ক ব্যক্তিটি। এবার আমি হলে প্রথমেই যেটা নিজেকে জিজ্ঞেস করবো তা হলো আমি ঠিক কী চাই? এখানে কয়েকটা সম্ভাবনা আছে --১) আমি চাই খ এর প্রতি আমার এই খারাপ লাগা কেটে যাক আর আগের বন্ধুত্ব ফিরে আসুক। ২) খ এর সাথে আমার আর সম্পর্ক রাখার দরকার নেই কিন্তু এই রাগ বিরক্তিও আমি বর্জন করতে চাই। ৩) খ আমার বন্ধু থাকে থাক, না থাকে না থাক, সে যা খুশি করুক, আমি মোটকথা এইরকম খিচমিচ নিয়ে থাকতে চাইনা।
এবার আমার নিজের মানসিক গঠন অনুযায়ী, আমি তৃতীয় অপশনটা নেবো কারণ আমি প্রতিটি লোককে তার মত হতে দেওয়ায় বিশ্বাসী। তো, চট করে এটা মনে হতে পারে যে ধ্যান করলে মন শান্ত হবে, রাগ কমবে, বিরক্তি উধাও হবে। কারুর কারুর ক্ষেত্রে তা হয়ও হয়তো। কিন্তু আমার ১১ বছরের ধ্যানের অভিজ্ঞতায় মনে হয় সেটা অমন সিম্পল নয়। মানে আমার ক্ষেত্রে অমন হয়নি। ধ্যান করলে কাজ হবে ঠিকই। কিন্তু যেকোনো ধ্যানেই হবে বলে আমার মনে হয়না।
এবার একটু বিশদে বলি যে কী ধরণের ধ্যানের কথা বলছি। রাগ, বিরক্তি, তিক্ততা এগুলোও খুব ন্যাচারাল হিউম্যান ইমোশন। এগুলোরও কাজ আছে। আমি যেটুকু বুঝেছি, এই ইমোশনগুলোকে চাপা দিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছনো যাবেনা। ইমোশনগুলো থেকে বেরোনোর একমাত্র উপায় হলো এগুলোকে রিলিজ করা। তার মানে কী? তার মানে হলো ইমোশনগুলোকে ফীল করা, তাদের তাড়ানোর বদলে তাদের অবজার্ভ করা। এটা খুব আনকম্ফর্টেবল একটা ব্যাপার। কিন্তু ইমোশন, সে রাগ হোক বা বিরক্তি, ক্ষোভ, এদের প্রসেস করার এটাই বেস্ট উপায়।
বেশ, তাহলে এখানে আমি কী করবো? আমার খ এর ওপর খুব রাগ হচ্ছে, তার ওপরে খারাপ লাগায় মন ভরে যাচ্ছে। আমি নিজেকে বলবো "এখন আমার রাগ এসেছে। কিন্তু এই রাগ এর ওপরে কোনো অ্যাক্শন নেবার দরকার নেই। দেখি রাগ কতক্ষণ থাকে। বা এটা আমাকে কী কী বলে। রাগ হচ্ছে মানেই আমি খারাপ লোক নই। এটা শুধু একটা হিউম্যান ইমোশন।" যেমন তুমি মেডিটেশনের কথা বলেছো, এইভাবে নিজেকে বলাটাও একটা মেডিটেশনের অংশ। এই সময়ে যেটা সবচেয়ে জরুরী, তা হলো আমার রাগ বা ক্ষোভের প্রকাশ যেন সেই ব্যক্তিটির ওপরে না দেখাই। তাতে কোনো সমস্যার কোনো সমাধান হয়না।
এবার 'আমি' ছেড়ে ক এর নাম নিয়ে বলি . যখন ক যেকোনো ইমোশনকে এভাবে অ্যালাউ করবেন, দেখবেন খানিক পরে তার ইন্টেন্সিটিটা কমে আসবে। অবশ্য বলে রাখি, এটা একটা প্র্যাক্টিসের ব্যাপার। যেকোনো ধ্যানই অবশ্য তাই। এবার যত প্র্যাক্টিস বাড়বে তখন ক দেখতে পাবেন তাঁর নিজের মনের ভেতরে স্পষ্ট হবে যে ঐ রাগ বা ক্ষোভ এগুলোর সত্যতা কতটা, এগুলোর গুরুত্ব কতটা। তখন খ এর দিকটাও তাঁর কাছে দেখা দেবে, সে কেন এই রকম করছে। আস্তে আস্তে ঐ তীক্ষ্ণ অনুভূতিগুলোর ধার কমে আসবে। ক অনেক নিউট্রাল ফীল করবেন। তাঁর রাগ হবেনা তা কিন্তু নয়, ট্রিগার এলেই রাগ হবে। কিন্তু সেটা তখন তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা। তিনি জানবেন "ও আচ্ছা, রাগ এসে গেছে, কিন্তু একটু পরে চলেও যাবে।" খুব বেশি স্ট্রং রাগ বা হতাশা এলে অন্যভাবে তাকে এক্সপ্রেস করাও দরকারী। একটা কাগজে খ এর নাম বারবার লিখে তারপর কাগজটা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলা একটা ভালো উপায়। কিম্বা একটা বালিশে বারবার ঘুষি মারা। হনহন করে খানিকটা হাঁটলেও ভালো কাজ হয়। এগুলো শর্ট টার্ম প্রসেস। লং টার্মের জন্য ওই আগে যেটা বললাম তা প্র্যাক্টিস করে যাওয়া।
আমি অনেক বেশি কথা লিখে দিলাম। কিন্তু এটা আমি সব সময়েই মনে করি যে কারুর ওপর রাগ, বিরক্তি, ক্ষোভ এগুলো নিয়ে দিনের পর দিন চলা খুবই ক্ষতিকর ও নিষ্ফল একটা প্রসেস। এর থেকে বেরোনো অবশ্যই দরকার। আর আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এটাই বেস্ট উপায়। তবে আবারও বলি, এটা একটা সময় সাপেক্ষ রাস্তা । আর একটু মনোযোগ ও এফোর্ট দুইই লাগে। কিন্তু তাতে কী আছে? একটু ভালো ফীল করার জন্য তো অমরা কত কিছুই করি। এখানে ফলটা ওয়ার্থ দ্য টাইম অ্যান্ড এফোর্ট ।