কেসি কে বলার ছিল এখানে প্রশ্নটা তিন বা ছয় ভার্সেস ১৭ বছরের কম্পিটিশন এর নয়। গুরুর পাতায় হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার এগেনস্ট এ রেটোরিক দেয়ার সময় ইসলামের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন আমার চোখে পড়ে। যেভাবে অনেকেই মোদী শাহের আন্টি ইসলাম ন্যারেটিভ নিয়ে যতটা সরব , বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও ইসলামের ইন্টলারেন্স বা বিপদ নিয়ে সেরকম সরব কিনা সেটা আমার চোখে পড়েনি। সেটার প্রেক্ষিতেই আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা র কথা বলা। অন্য কারোর অভিজ্ঞতা আলাদা হতেই পারে। আমার নিজেরই অনেক বন্ধু যারা সাথেই কাছ করতো , তারা অনেকেই রয়ে গেছে আজকে ১৩-১৪ বছর ধরে। বহু লোকের সাথে আলাপ & যোগাযোগ আছে যারা বিশ -২৫ বছর ধরে আছেন ওসব দেশে। যার যা পছন্দ এবং প্রায়োরিটি - এতে কোনোরকম জাজমেন্ট এর দরকারই নেই। যার যার জীবন যে যেমন ইচ্ছে করে কাটাবে। পিরিয়ড।
আমার কাতারের থাকার অভিজ্ঞতা তিন বছর। কুয়েতে এক বছর। মালয়েশিয়া & ব্রুনেই তে এক এক বছর। সৌদিতে ছমাস।
সবথেকে ভালো অভিজ্ঞতা মালয়েশিয়ায়। দেশটা ইসলামিক হয়েও অনেক টলারেন্ট বাকিদের তুলনায়। সবথেকে খারাপ সৌদি আর কুয়েত এ।
সেই জন্যেই যখন কেউ কেউ ইন্ডিয়াকে দুনিয়ার সবথেকে ইন্টলারেন্ট দেশ প্রুভ করতে লেগে পড়েন - ইভেন পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় ও ইন্ডিয়াকে পিছিয়ে রাখেন - তখন তেনাদেরকে বলি শুধু থিওরী না দিয়ে একটু প্রাকটিক্যাল এক্সপি ও করে নিতে বাকি জায়গাগুলোর। ইন্ডিয়া স্বর্গ কিছু নয় , কিন্তু একেবারে বটম অফ দা ব্যারেল ও নয়।
কেও প্রশ্ন তুলতেই পারেন ন্যাড়া হয়ে কেন এতবার বেলতলায় গেলাম যদি ইসলামিক দেশ পছন্দই না হয়। আমার কাছে উত্তর খুব সোজা। টাকার জন্যে। সেরকম দরকার পড়লে আবার যাবো পছন্দ হোক বা নাহোক কারণ আমার কাজের ফিল্ড টাই এমন এই দেশগুলোতে প্রজেক্ট বেশি। আর ধর্ম বা পছন্দ অপছন্দ মাড়িয়ে কি দানাপানি জুটবে ? আমার তো জোটে না।
কিন্তু ভাবলাম কটা পার্সনাল অভিজ্ঞতা শেয়ার করেই যাই। এমনিতেও আমার লজ্জা কিসের ? আমি গর্বিত হিন্দু এবং মোদী সমর্থক। তাই আন্টি মুসলিম হওয়া আমার রাইটস । গল্পগুলো বিশ্বাস করা না করা আপনাদের হাতে। আমার কিস্যু আসে যায়না।
আর কোনো দেশে থাকার অভিজ্ঞতা অনেকটা ডিপেন্ড করে কিরকম সার্কলে মেশা হচ্ছে। আমি মিডল ইস্টে হোক কি অস্ট্রেলিয়ায় হোক - এমন বাঙালি ও দেখেছি যারা বাঙালি সার্কলে ছাড়া মেশেন না। ১৫-২০ বছর কাটিয়েও তাদের ৯০-% সার্কল সেই কলকাতার বাঙালি রাই এবং উইকেন্ড এ চা বা মদের সাথে মমতা আর মোদী। আর কোনো দুনিয়ার বিষয় নেই।
আমাকে কাজের সূত্রে অনেক ন্যাশনালিটির সাথে মিশতে হয়েছে বাধ্য হয়ে আর এমনিতেও নানারকম লোকের সাথে মিশতে আমাদের ভালোই লাগে। সুতরাং অনেক রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে - অনেকটাই ভালো - কিছুটা খারাপও। সেসব নিয়ে কারোর সাথে কম্পিট করারও ইচ্ছা নাই। প্রচুর বন্ধু হয়েছে পাকিস্তান শ্রীলংকা ইজিপ্ট এর এবং এখনো তাদের সাথে যোগাযোগ থাকে গেছে।
সেদিন কেও একজন আমার পোস্টের উত্তর বলেছিলেন নুপুর শর্মা ওসব না বললে নাকি কিচ্ছু হতোনা। হতেও পারে হয়তো -কে জানে। আমার তো এটাও মনে হয় পুরো ভিডিওটা শেয়ার করা দরকার সবার বোঝার জন্যে যে নুপুর শর্মা সম্পূর্ণ নিজের থেকে , উল্টোদিকের বক্তাদের কোনোরকম প্রভোকেশন বা মন্তব্য ছাড়াই হটাৎ করে প্রফেট কে পেডোফাইল বলেছিলেন নাকি উল্টোদিক থেকেও কথার পিঠে কথা চড়তে চড়তে কোনো রকম প্রভোকেশন ছিল যার উত্তরে ওরকম হট হেডেড একটা স্টেটমেন্ট যার জন্যে এত্ত এত্ত দেশে ইসলাম ক্ষতরেমে হ্যায় রিঅ্যাকশন।
তবে আজকাল ইসলাম এর এতই সুক্ষ সব অনুভূতি যে কার কখন কিসে লেগে যায় বোঝা প্রফেট এরও অসাধ্য হতো হয়তো।
থাক কয়েকটা গল্প (বা গুল্প- মিথ্যে তো বলতেই পারি। আমি যুধিষ্টির আবার কবে কোথায় ক্লেম করলাম ?)
কাতারে থাকার সময় নন-মুসলিম দের মদ খাওয়ার লাইসেন্স নিতে হতো। একটাই সরকারি দোকান থেকে সেটা দেখিয়ে কোটা থেকে কেনা যেত। মুসলিম দের লাইসেন্স দিতো না। আমার প্রচুর পাকিস্তানী এজিপ্টিয়ান বন্ধু ছিল এবং আছে কাজের সূত্রে অমার বাড়িতে তারা বহুবার এসেছে ফ্যামিলি নিয়ে & ড্রিংক করেছে। ভালো সার্কল ছিলো।
এবার আমার ছোট মেয়ে যখন হবে , আমার স্ত্রী ইন্ডিয়ায় এসে ছিলেন কয়েক মাস ওনার বাবা মায়ের কাছে - একটু ভালো সাপোর্ট পাওয়া যাবে এই জন্যে। ওখানে একা ঠিক আমরা ভরসা পাচ্ছিলাম না। তারপর তখন প্লান্ট কমিশনিং চলছে - আমাকে লম্বা সময় থাকতে হয় অফিসে।
তখন উইকেন্ডে মাঝে সাঝে একটু ব্যাচেলর পার্টি হতো আর বলে গিয়ে একটূ বেশিই পান হয়ে যেত।
ত একদিন জুরাসিক পার্ক -২ন্ড পার্ট না ৩র্ড পার্ট ভুলে গেছি- সেই সিনেমাটা দেখছি সবাই ঘরে বসে আর মাল খাওয়া চলছে। তারপর সবাই মিলে আলোচনা করছি কিভাবে ডাইনোসর থেকে ম্যামালস রা এভল্ভ করলো - সাইন্স কি আশ্চর্য জিনিস। তো একজন এজিপ্টিয়ান কলিগ হটাৎ খচে গিয়ে বলে এগুলো সব ভাট। সব প্রাণীকে আল্লাহ বানিয়েছে- জেনেসিস এ সব আছে। এই নিয়ে তর্কাতর্কি হতে হতে সে আমাদের বলছে আমরা যেহেতু ননমুসলিম -এসব বোঝার বুদ্ধি আমাদের নেই - তাই ওসব সাইন্স নিয়ে ভাট মারি। তখন সবারই একটু চড়ে আছে। আমিও খচে গিয়ে বলেছি এতো ইসলামে ভক্তি থাকলে কেন মাল খাচ্ছে আমাদের সাথে বসে। সে মাল সোজা বেরিয়ে গিয়ে পরদিন অফিসে আমার নামে ব্ল্যাসফেমি চার্জ লাগিয়ে কমপ্লেন ঠুকে দিয়েছে। আমাকে রীতিমতো ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ। জাস্ট তখন কমিশনিং এর ক্রিটিকাল স্টেজ - তাই রিটেন আপলোজিতে ব্যাপারটা মিটে গেল। নাহলে জেল থেকে চাকরি নট -অনেক কিছুই হতে পারতো।
অলমোস্ট সেম জিনিস। নাইট শিফটে একটা কেনিয়ান অপারেটর কাজ ছেড়ে কন্ট্রোল রুমে বসে উত্তাল লেকচার দিচ্ছে যেহেতু আল্লাহ আদম এর পাঁজর থেকে ইভকে বানিয়েছেন - তাই মেয়ে রা কখনোই ছেলেদের একুয়াল নয়। পার্টস ক্যান্ট বি একুয়াল টু হোল থিং। দুর্দান্ত ম্যাথস-কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই লেকচারের ঠেলায় সে একটা ওয়াক্স ট্রেন স্টিম ফ্লাশিং করার ছিল সেটা ভুলে গেছে। পুরো ট্রেন ব্লকড। সেটা র জন্যে তিনদিন প্রোডাকশন লস। আমি ব্যাপারটা জেনে যেই মাল টাকে ঝেড়েছে সে যথারীতি আমার নামে গিয়ে সেম চার্জ লাগিযেছে। তবে এবার আমার লাকটা ভালো ছিল। প্রোডাকশন ম্যানেজার ছিল একটা ব্রিটিশ। সে পুরো জিনিসটা জেনে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো।
তখন ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে হলে কোম্পানি থেকে একটা এপ্রুভাল লেটার লাগতো (ইটা ২০০৫-০৭ এর টাইম এর কথা -এখন কি হয় জানিনা)। রামাদানের সময় একবার বাড়ি আসবো বলে সেই চিঠিটা আনতে সকালে অফিসে গেছি। এইচ আর এ বসে ছিল একটা কাতারি। সেদিন রাত্তিরে ফ্লাইট - তখন ও সে চিঠিটা রেডি করেনি। আমি তাড়া লাগাতে উল্টে আমাকেই তুমুল ঝেড়ে দিলো যে রামাদানের উপোসের সময় এসব ছোটোখাটো জিনিস নিয়ে আমরা ইন্ডিয়ান গুলো সারাক্ষন বিরক্ত করে মারি ওদের। যথারীতি তাঁকে হাতে পায়ে ধরে সামলে চিঠিটা আমাকে জোগাড় করতে হলো কারণ নাহলে ফ্লাইট টা আমার মিস হবে।
দোহাতে একটা বন্ধুর বাড়ি গেছি ফ্রাইডে তে দুপুরে। বড়ো এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। গাড়ি ঢুকতে গেলে সিকিউরিটি গেট খুলে দেয়। সেদিন সিকিউরিটি ছিল একটা পাকিস্তানের লোক। সে গেট লক করে নামাজ পড়তে চলে গেছে। এদিকে হটাৎ বন্ধুর বৌয়ের এপেন্ডিক্সের ব্যাথা উঠেছে। গাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে যেতে গিয়ে দেখি গেট লকড। সে ফিরলো প্রায় এক ঘন্টা পরে। ততক্ষন পুরো এপার্টমেন্ট এর কেও গাড়ি বের করতে পারছে না। ফেরার পরে তাকে খেপে গিয়ে আমরা বলেছি কেন এরকম গেট লক করে চলে গেছে - সে যেই দেখেছে অবস্থা বেগতিক - সঙ্গে সঙ্গে চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছে যে আমরা নন-মুসলিম। আমরা নামাজের ভ্যালু কি করে বুঝবো। ওর হৈচৈ শুনে রাস্তায় নামাজ ফেরতা লোক জড়ো হতে শুরু করেছে আর পুরো সিচুয়েশন চেঞ্জ হয়ে গেলো। আমরাই তখন গালাগাল খাচ্ছি। কোনোমতে হাতজোড় করে ওর বৌকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা একা থাকলে পিঠে দুঘা পড়া বা আরো কিছু হতেই পারতো।
আমার কলিগ এর স্ত্রীকে একটা আরব নেবার সেক্সউয়ালী হ্যারাস করেছিল যখন ছেলেটি কয়েকদিনের বিজনেস ট্রিপে ছিল। পুলিশ কেস হয়েছিল। জাস্ট দুমাসের মধ্যে ভদ্রলোক কে চাকরি ছাড়িয়ে ফ্যামিলি সমেত ইন্ডিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। সেই কেস কি হলো আল্লাই জানেন।
কালকে বড়ো স বলছিলেন রিচ দেশগুলোতে নাকি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কম। হবে হয়তো। আমাদের অভিজ্ঞতা আলাদা। আমাদের প্রতিবেশী ছিল প্যালেস্টিনিয়ান & ইজিপ্টিয়ান। আমার স্ত্রীর সাথে ওই মহিলাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেসলো। স্ত্রীর থেকেই অনেক কিছু শুনেছি ঠিক বলার মতো নয়। যখন ছমাস আমার স্ত্রী ইন্ডিয়ায় ছিলেন ছোট মেয়ের ডেলিভারির জন্যে , অনেকবার রাতে চিৎকার চেঁচামেচি ব্যা কান্নার আওয়াজ পেয়েছি। কিন্তু তদ্দিনে অফিস এর ঝামেলা গুলোর পরে আর থানা পুলিশ করার এপেটাইট আমার ছিলোনা।
নাইট শিফটে কাজ করার সময় আরব কলিগরা আমাদের বোঝাতো মেয়েদের কিভাবে জুতোর তলায় রাখা উচিত। নাহলে মাথায় চড়ে বসে। যদ্দুর মনে পড়ছে ৩০-৩২ জন আরব অপারেটর দের মধ্যে ১৪-১৫ জনের পলিগ্যামি ছিল। রীতিমতো অফিসে আলোচনা হতো কার কটা বিয়ে করার আর কটা বাচ্চার প্ল্যান। ব্যতিক্রম আছে নিশ্চয়। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার গ্রূপের মধ্যে তাদের দেখিনি।
কুয়েতে একদিন বিকেলে আমাদের এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে পার্কিং কয়েকটা আরব টিন এজার গাড়ি রেভ করছে। আমি তখন অফিসে - পরে বৌয়ের থেকে গল্প শুনেছি। প্রচন্ড আওয়াজ হওয়াতে বিল্ডিং ম্যানেজার - তিনি একজন কেরালাইট তাঁদেরকে গিয়ে বারণ করেছেন । তাপ্পর কি কথা কাটাকাটি হয়েছে জানিনা -বৌ তিনতলার জানলা দিয়ে দেখেছে দূর থেকে ওনাকে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছে। ভদ্রলোক সেদিন রাতে হসপিটালে মারা যান। রাতে পুলিশ আসে। পরে যদ্দুর শুনেছি কারোর কিচ্ছু হয়নি। ওটাকে ডেথ ডিউ টু হার্ট ফেলিওর বলে চালানো হয় আর বডি ইন্ডিয়ায় পাঠানো হয়। .
মিডিয়া ফ্রিডম বলে কিস্সু ছিল না তখন- এখনো নেই। সুতরাং এই যে ঘটনাগুলো সবগুলো আমার নিজের সাথে ঘটা বা দেখা। কানাঘুষোয় আরো অনেক কিছুই শোনা। ওখানে যেসব ইন্দোনেশিয়ান/ফিলিপিনো /ইন্ডিয়ান / নেপালি গরিব মেয়েরা হাউস মেড হয়ে কাজ করতে যায় তাদেরকে রীতিমতো টর্চার করা হয়। তাদেরকে কোনো রকম লিগ্যাল সাপোর্ট
দেয়না তাদের এম্বাসি গুলো। জাস্ট চেপে যাওয়া হয় নেহাত খুনোখুনি অবধি না গড়ালে। বেশ কিছু ঘটনা শোনা কানাঘুষোয়। কিন্তু কারোর কিছু করার নেই।
যাকগে -অনেক মহাভারত লিখে ফেললাম।