এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সমোস্কিতি

  • AI generated রচনা

    অ-কলকাত্তাইয়া
    সমোস্কিতি | ২৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত
  • বাংলা ভাষা কেবল কলকাতা বা প্রমিত বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় নদী, যার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রমিত বাংলাকেই একমাত্র "শুদ্ধ" বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এক চাপিয়ে দেওয়া ধারণা বাংলার অন্যান্য উপভাষার মানুষের জন্য এক গভীর সংকটের সৃষ্টি করেছে। এই একাধিপত্যই অনেক ক্ষেত্রে তাদের হিন্দি বা ইংরেজি মাধ্যম বেছে নিতে বাধ্য করছে।

    প্রমিত বাংলা, যা প্রধানত নদিয়া জেলার উপভাষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, মূলত সাহিত্যিক এবং শিক্ষিত সমাজের ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে এবং পরে কলকাতার সাংস্কৃতিক আধিপত্যের কারণে এটি সরকারি, শিক্ষা ও গণমাধ্যমের প্রধান ভাষা হয়ে ওঠে। এর ফলস্বরূপ, এই ভাষাকেই "শুদ্ধ" বা "মানসম্মত" হিসেবে গণ্য করা হয় এবং অন্যান্য আঞ্চলিক উপভাষাগুলিকে "অশুদ্ধ" বা "গ্রাম্য" বলে উপেক্ষা করা হয়।

    মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, আলিপুরদুয়ার, বা দিনাজপুর—এই অঞ্চলগুলির নিজস্ব উপভাষা রয়েছে, যা তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। উদাহরণস্বরূপ, "মারব নাকে করে" বা "ফাঁক পানে একটু ঘুরে আসি" মতো অভিব্যক্তিগুলি স্থানীয় ভাষার অনন্য বৈশিষ্ট্য বহন করে। কিন্তু যখন এই উপভাষার শিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়, তখন তাদের নিজেদের বলা ভাষাকে "ভুল" বলে শেখানো হয়। প্রমিত বাংলা তাদের কাছে একটি নতুন ভাষা শেখার মতোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, অনেকটা ইংরেজি বা হিন্দি শেখার মতো। এই শিক্ষাগত চাপ এবং নিজেদের ভাষার প্রতি হীনমন্যতাবোধ তাদের মনে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে। যখন তাদের বলা হয়, "তোমার ভাষা অশুদ্ধ," তখন তারা কেবল তাদের ভাষাকেই নয়, তাদের সংস্কৃতিকেও অস্বীকার করতে শেখে।

    এই শিক্ষাগত এবং সামাজিক চাপের ফলস্বরূপ, অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের এমন একটি মাধ্যমে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় যেখানে প্রমিত বাংলার আধিপত্য নেই। তারা মনে করে, যেহেতু তাদের নিজেদের ভাষাকে এমনিতেই "অশুদ্ধ" বলা হচ্ছে, তাহলে বরং ইংরেজি বা হিন্দি মাধ্যমেই পড়া ভালো। এতে অন্তত একটি আন্তর্জাতিক বা সর্বভারতীয় ভাষার ওপর দক্ষতা তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে তাদের কর্মজীবনে সহায়তা করবে। এই মনোভাব বাংলার আঞ্চলিক উপভাষাগুলির আরও দুর্বল হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল পাঠ্যক্রমে প্রমিত বাংলার একচ্ছত্র আধিপত্য এবং স্থানীয় উপভাষার অনুপস্থিতি এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
     
    এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাকে একটি বহুভাষিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, যেখানে প্রতিটি উপভাষার নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থানীয় উপভাষার প্রতি সম্মান দেখানো এবং প্রয়োজনে সেগুলিকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। গণমাধ্যম এবং সাহিত্যে বিভিন্ন উপভাষার ব্যবহারকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন, বিভিন্ন অঞ্চলের নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যকর্মকে স্থানীয় উপভাষায় পরিবেশন করা যেতে পারে। 
     
    প্রকৃতপক্ষে, বাংলার শক্তি তার বৈচিত্র্যের মধ্যে নিহিত। যখন আমরা শুধুমাত্র একটি উপভাষাকে শুদ্ধ হিসেবে চাপিয়ে দিই, তখন আমরা ভাষার মূল প্রাণশক্তিকেই নষ্ট করি। এর পরিবর্তে, যদি আমরা সকল উপভাষাকে সম্মান করি, তাহলে আমরা কেবল বাংলা ভাষাকেই সমৃদ্ধ করব না, বরং সেই সব মানুষের আত্মপরিচয়কেও সুরক্ষিত করব, যাদের ভাষা কেবল তাদের মুখের কথা নয়, তাদের সংস্কৃতিরও প্রতিচ্ছবি।

     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | 49.206.***.*** | ২৫ আগস্ট ২০২৫ ২০:০৮745689
  • শুধু কৃবু জেনারেটেড বললে কিসুই দাঁড়ায় না। কোন মডেল , কত ভার্শন , কি প্রম্প্ট এরকম অল্প কিছু সহায়ক তথ্য দিলে ভালো হয়।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন