ইউক্রেন, রাশিয়া ও ডায়াবলিক মনন
শাহআব আহমেদ লিখেছেন।
(রাশিয়ার প্রাক্তন, এখন আমেরিকাবাসী।)
রুশ ও ইউক্রেনিয়ান এই দুই জাতির মধ্যে বিভাজন ঘটানোর প্রয়োজন ছিলো আমেরিকার, যাতে রাশিয়া, ইউক্রেনও বেলারুশিয়া আর কখনও একজোটে আবদ্ধ হতে না পারে। তাই এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ ঠাণ্ডামাথার পুতিনের মাথাআউলিয়ে শুরু করিয়েছে পশ্চিম। যেহেতু সারা বিশ্বের মিডিয়া পশ্চিমের হাতে, তাই পুতিন আজ ভিলেন ( আমিতার সমর্থক নই), কিন্তু গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সে নয়, বরং আমেরিকা ও তার তাবৎ তাবেদার গোষ্ঠি। কিন্তুতাদের বিরুদ্ধে কে বলবে, বা বললেই কে শুনবে?
আজকের সাপ্তাহিক বাঙালীতে এ নিয়ে আমার একটি লেখা।
ইউক্রেন, রাশিয়া ও ডায়াবলিক মনন
শাহাব আহমেদ
রাশিয়া অন্যায়ভাবে ইউক্রেন ও ইউক্রেনের জনগণকে ধ্বংস করছে। অপরাধ- দেশটি ন্যাটোতে যোগ দিতেচেয়েছিল।
একটি দেশ কি তার নিজের পছন্দমত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে কার সাথে বন্ধুত্ব করবে, কার সাথে করবে না?
অবশ্যই পারে।
আমরা তো ইওটোপিয়ান সমাজে বাস করি, তাই না? যেখানে বিগত দশহাজার বা দশলক্ষ বছরেও মানুষ কোনোঅন্যায় করে নাই, বড়দেশ তার প্রতিবেশি ছোট দেশকে গ্রাস করে নাই, শোষক নাই, শোষিত নাই, চারিদিকে বিরাজকরেছে একচ্ছত্র ন্যায়, শান্তি, আর পছন্দের স্বাধীনতা। এখানে মন্দাকিনী নদী বয় কুলুকুলু, অপ্সরিরা নাচে, ঘনসবুজপ্রান্তরে কামধেনু ঘাস খায়, অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেবতাদের পাত্রে সযত্নে সোমরস ঢালে, আর গন্ধর্বরা ডানে বামেসঙ্গম করে, গান গায় আর মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে।
আমরা দেবতা নই, অন্তত গন্ধর্ব, তাই তো?
এবং ইউক্রেন রাশিয়া আমেরিকা ইংল্যান্ড জার্মানি ফ্রান্স চীন জাপান সবাই সেই মহান ইওটোপীয়ার সদস্য।
“প্রতিটি দেশের তার নিজের মত চলার অধিকার আছে” এটা এই দেশগুলোই বলে। বলে আমাকে, তোমাকে, তাকেএবং সর্বাপরি আমাকে ধাপ্পা দেবার জন্য। আমরা আসলে বাস্তব পৃথিবীতে বাস করি যেখানে এই বাক্যটি একটিসুবর্ণ মুখোশ, প্রয়োজনে তারা তা পরে, প্রয়োজনে নামিয়ে রাখে। তারা যখন চিলিতে গিয়ে আয়েন্দেকে হত্যা করে, বাবাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে, ইরাকে সাদ্দাম হোসেনকে, লিবিয়ায় মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে…… বা তারা যখন জাপানে এটমবোমা ফেলে, ভিয়েতনামে , আফগানিস্তানে বা সার্বিয়ায়….. মানুষ মারে, তখন কিন্তু এই কথা বলে না। এ কথাতাদের মনেও থাকে না। আমরা যারা বিবেকবান ও বিজ্ঞ, আমরা কিন্তু সবসময় বলি। কিন্তু সত্য হলো, একচ্ছত্রক্ষমতার পৃথিবীতে যদি ১৬০টি দেশের প্রতিটি মিডিয়ায় তারা দিন রাত, রাত দিন, সকাল সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা ওসকাল, একই সাথে, একই মিথ্যা পুনরাবৃত্তি করে, মিথ্যা ছবি বা ভিডিও দেখায়, তারা কি দানবকে দেবতা ওদেবতাকে দানব বানাতে সক্ষম নয়?
অবশ্যই।
তীক্ষ্ন মনন ও জ্ঞানের আধিক্য দিয়ে আমরা তর্ক দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু উত্তরটি তারপরেও অবশ্যই, হাজারবার এবং লক্ষবার অবশ্যই। দানব ও দেবতা সে-ই, যাকে পৃথিবীর মোড়লরা পছন্দমত চিহ্নায়িত করে।
ন্যাটো ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ারশ জোটের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এখন ন্যাটোর শত্রু কে?
রাশিয়া।
কিন্তু রাশিয়ার তো কোনো জোট নেই, তারা সমাজতন্ত্রিক ও নয়, পৃথিবীকে পুঁজিবাদমুক্ত করার শ্লোগানও তারা আরদেয় না। তারা অন্য সবার মতই লুটপাট করে, মিথ্যা বলে এবং জনসাধারণকে শোষণ করে ছোবড়া করে দেয়। তারাতো এখন সব ধার্মিকের মাসতুত ভাই! তবে চুক্তি ভেঙে ন্যাটো কেন সম্প্রসারিত করে চারিদিক দিয়ে রাশিয়াকে ঘিরেফেলতে চায়?
কেন তাদের ইউক্রেন দরকার?
প্রতিবার কি রাশিয়া পোল্যান্ড ও ইউক্রেন দিয়ে আক্রান্ত হয়নি? পৃথিবী স্বীকার করুক আর না করুক, ইউক্রেনেরন্যাটোতে যোগ দেয়া হলো রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য বিশাল হুমকি। ২০০৪ সালের দুর্বল রাশিয়া পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, লাতভিয়া ও এস্টোনিয়ার ন্যাটোতে যোগদান মেনে নিতে বাধ্য হলেও, ২০২২ সালের তুলনামূলকভাবেসবল রাশিয়া তা মেনে নেবে?
ইওটোপিয়ান বলবে- “হ্যাঁ, অবশ্যই, ন্যায় তো তাই।” কিন্তু বাস্তববাদীরা বলবে, “না, মেনে নেবে না।” এবং এ নিয়েবিস্মিত বা বোকার ভান করে কোনো লাভ নেই।
রাশিয়া ক্রিমিয়া কেড়ে নিয়েছে?
হ্যাঁ, ১৭৭৪ সালে। অটোমানদের কাছ থেকে, তীব্র যুদ্ধ কর, বহু জীবনের বিনিময়ে।
১৯৫৪ সালে ইউক্রেনের ক্রুশ্চেভ মদ্যপান করে, রাশিয়ার জনগণ বা কাউকে জিজ্ঞেস না করে, ইতিহাসের প্রতিবৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া উপহার দিয়েছিল।
কবি হাফিজ নাকি প্রেমিকার গালের তিলের জন্য তৈমুরের সমরখন্দ বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তৈমুর সৈন্য পাঠিয়েহাফিজকে বেঁধে এনে প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমার এতবড় সাহস, যে সাম্রাজ্য আমি এত রক্তের বিনিময়ে জয় করেছি, তুমি তা কোথাকার কোন্ মেয়ের গালের তিলের জন্য বিলিয়ে দিতে চাও!”
হাফিজ কুর্নিশ করে বলেছিলেন, “মহারাজ এই অর্বাচীনতার জন্যই তো আমার এই দীন দশা!”
ক্রুশ্চেভ তো কোনো মেয়ের জন্য দিওয়ানা হয়ে তা করেনি, মাতাল অবস্থায় করেছিল। তার ভাগ্য ভালো যে, সেইহিরকরাজার দেশে তাকে প্রশ্ন করার বা তার গর্দান কাটার কোনো তৈমুর ছিল না।
ক্রিমিয়া ছাড়া কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া কানা, তার নিজের দেশ রক্ষা করার ক্ষমতাও থাকে না। তারপরেও ১৯৯১ সালেসোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর তারা উচ্চবাচ্য করেনি। ইউক্রেন ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ, হাজার বছরের ভ্রাতৃত্ব, একইধর্ম, একই শ্লাভিয়ান শিকড়। তারা ইউক্রেনকে কোটি কোটি ডলার পে করে ক্রিমিয়া লিজ নিয়ে কাজ চালাবে।
কিন্তু না, হাজার বছরে প্রোথিত সেই শিকড় উৎপাটন করে, লাখো লাখো রাশিয়ান, ইহুদি, ইউক্রেনিয়ান হত্যাকারীনাৎসি কোলাবরেটর স্তেপান বান্দেরার সমর্থকদের কাঁধে ভর দিয়ে আসা নেতৃত্ব যখন সেই ক্রিমিয়ায় ন্যাটোকে ঘাঁটিবসাতে দিতে চায়, তখন রাশিয়ার সামনে পথ কী থাকে?
আমেরিকা কী করতো? ইংল্যান্ড? জার্মানি? ফ্রান্স? চীন? জাপান?
সবাই যা করতো, রাশিয়া তা-ই করেছে, তাহলে অন্যায়টা কোথায়? অন্যায়টা হল তাবৎ দুনিয়ার সাথে সাথেআমাদেরও চিন্তার ইওটোপিয়ানায়।
আমি এই যুদ্ধ সমর্থন করি? হলোই তা না, বা হলোই তা হ্যাঁ, কিন্ত তাতে কী আসে যায়? আমার ইচ্ছা অনিচ্ছায়সূর্য কি পশ্চিমদিক থেকে উঠবে?
কিন্তু আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব আগামিকাল যদি পুবকে পশ্চিম বলা শুরু করে তাদের সমস্ত মিডিয়ায়, স্কুলেকলেজে এবং ধর্মগ্রন্থে, তাহলে কিন্তু ঠিকই পশ্চিম দিকেই সূর্য উঠবে।
তাই, বুদ্ধিমানের বাপের, বা বাপের বাপের চেয়ে বুদ্ধিমান হলেও আমাদের মননের ক্ষমতা, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি, টনটনেন্যায়-অন্যায় বোধ, মানবিকতা, মানুষের দুঃখে কষ্টে কেঁদে ফেলার ক্ষমতা বা অক্ষমতা আসলে তারাই মোল্ড করে।তারাই অতি সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্মভাবে তাদের মত ভাবতে, বিচার করতে, বিশ্লেষণ করতে ও ব্যখ্যা করতে শেখায়। আমরাযখন ভাবি এটা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব ও মৌলিক মতামত, শয়তান হেসে লুটোপুটি খায়।
তাই পাকিস্থানীরা যখন বাংলাদেশে গণহত্যা চালায় তখন পৃথিবী একাট্টা হয়ে হিংস্র গর্জন তুলে বয়কট ঘোষণাকরে না, আমেরিকা যখন দেশে দেশে গিয়ে বোমা ফেলে ইওরোপের সব “সিউডো গণতন্ত্র” মুখে শুধু কুলুপই মেরেথাকে না, বরং আমেরিকার সাহায্যে এগিয়ে যায়। “সব শেয়ালের এক রা” এবং আমরা তো শেয়ালশা পীরেরইদরগার মুরিদ। কোনো না শেয়ালের প্রথম “রা” টি তো তুলতে হবে, অন্য সবার তাতে যোগ দেবার জন্য, যদি কেউকোনো “রা” না করে, তার মানে ঘটনা ঘটে নাই। যেমন ইউক্রেনে আমেরিকার ধ্বংসাত্বক “বায়োল্যাব” নিয়ে কেউকোনো “রা” করছে না,
তাই আমরাও চুপ করে আছি। অমন একটা ল্যাব পঞ্চাশটা ইওরোপকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে, কিন্তু ওটা যেআমেরিকার!
বেশি দিন হয়নি যখন আমেরিকা সার্বিয়ায় গণহত্যা চালিয়েছে। সেটাও তো ইউক্রেনের চেয়ে কম ইওরোপ নয় কিন্তুতখন সবকিছু চুপচাপ ছিল কেন? কারণ ওটা করেছে বিল ক্লিনটন। বৃটিশ, জার্মান, ফরাসি বা আমেরিকানরাঅন্যায় করে নাকি?
করেছে কখনও?
সিএনএন বাইবেল ছুঁয়ে বলবে, করে নাই, কোনো দিনও না। এবং আমরা বিশ্বাস করবো।
কিন্তু পুতিন সোনার দেশ ইউক্রেন ধ্বংস করে ফেলছে, তাই দেখে কত শোরগোল, মানুষ মরছে, হাসপাতালে, মাতৃসদনে বোমা পড়ছে, বিল্ডিংগুলো ধ্বংস হচ্ছে, আমরা বিচলিত, মর্মাহত এবং ইউক্রেনের জনগণের প্রতিসহানুভূতিশীল এবং পুতিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এটা আমাদের শেখানো মানবিকতাবোধ, আমরা নিজেদের যতটামানবিক মনে করি, তারচেয়ে অনেক বেশি অমানবিক আমরা, অনেক বেশি সুবিধাবাদী ও খল। আমরা একইভাবেসোচ্চার নই লেবানিজ, প্যালেস্টাইনিয়ান, ইয়েমেনি, আফগান বা সিরিয়ানদের কষ্টে। কারণ ওদের চামড়া শাদা নয়, চোখ ব্লু নয়, চুল ফর্সা নয়, ওদের অশ্রুগুলো কদর্য, রক্তও নীল নয়, বরং অসভ্য লাল, অবিকল রাশিয়ানদের রক্তও লাল পতাকার মত।
পুতিন বলে, সে ইউক্রেনকে “ডি নাজিফাই” করবে। এবং সিএনএন নিষ্পাপ প্রশ্ন করে, “জেলেনস্কি তো ইহুদি, সেনাৎসি হয় কী করে?”
নির্বোধের জন্য দারুন প্রশ্ন!
যেন ইহুদিরা নাৎসি হতে পারে না, যেন পৌনে এক শতক ধরে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্যালেস্টাইনীদের হত্যা করে চলছেনা অবিকল নাৎসি কায়দায়।
ইউক্রেনের জনগণের সিংহভাগই রাশিয়ানদের সাথে সন্মান ও সদ্ভাবের সম্পর্ক রক্ষা করে এসেছে চিরকাল। শুধুপশ্চিম ইউক্রেনের ল’ভিভ, ইভানা ফ্রান্কভস্কসহ কয়েকটি পোলিশ বর্ডার সংযুক্ত শহরের অধিবাসিরা ছাড়া। ওরাসব সময়ই ছিল কট্টর রুশবিরোধী। আমরা তা সোভিয়েত ইউনিয়নেও দেখেছি। ওরা বেশিরভাগ সময় ছিলরাশিয়ার বাইরে, পোলিশ, লিথুনিয়ান ও হাঙ্গেরির অধীনে। রুশদের সাথে ওদের কোনো বন্ডিং নেই। স্তেপানবান্দেরার জনপ্রিয়তা ও কর্মকাণ্ডের স্থান ছিল এখানেই। রুশবিরোধী কট্টর এই ফ্যাসিবাদি শক্তিগুলো শক্তি অর্জনকরতে থাকে ইউক্রেন স্বাধীন হবার পর পর, কিন্তু ওরা ক্ষমতায় আসে ইউশেন্কোকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে জিতিয়েআনার পর। তাই প্রেসিডেন্ট হয়ে ইউশেন্কো নাৎসী বান্দেরাকে মরনোত্তর “ইউক্রেনের বীর” উপাধি দেয় ২০১০সালে, পোস্টাল স্ট্যাম্প বের করে তার নামে। ইওরোপ আমেরিকার ক্ষমতাচক্র একজন নাৎসির এই পূনর্জন্মে চুপকরে থাকে। কিন্তু রাশিয়ানরা ২ কোটি মানুষ হারিয়েছে নাৎসিদের হাতে, সুতরাং তাদের জন্য নাৎসি যা আমেরিকাজার্মানি ইংল্যান্ডের জন্য তা নয়। তাদের কাছে মিত্র নাৎসি হলেও মিত্রই। যাদের এ নিয়ে সন্দেহ আছে, তারা গুগলে“স্তেপান বান্দেরা” সার্চ দিলেই বর্তমান ইউক্রেনের এই বীরকে খুঁজে পাবে এবং
“মাইদান পিকচার্স ২০১৪” বলে সার্চ দিলেই দেখতে পাবে এই “মহান ঘাতকের” পুষ্পমুখের ছবিসহ অসংখ্য পোস্টার, ফেস্টুন এবং বিশাল বিশাল “হরাইজন্টাল” ব্যানার। ওরা ক্ষমতায় বসে দিনরাত এন্টিরুশ প্রচার প্রপাগান্ডারমাধ্যমে রুশদের প্রতি জাতিগত ঘৃণার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশন, যাদের রুশদেরসাথে কমন কোনো ইতিহাস নেই। তারা রাশিয়ার সাথে সৌহার্দ বজায় রাখতে আর ইচ্ছুক নয়। ভবিষ্যতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশিয়া যাতে সম্মিলিতভাবে ইওরোপের শক্তিশালী জোট হয়ে দাঁড়াত না পারে, তার জন্য পশ্চিমমরিয়া হয়ে ইউক্রেনকে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে।
এবং অপশক্তিগুলোই ২০১৪ সালে নির্বাচত প্রেসিডেন্টকে ন্যাটোর অস্ত্রহাতে উৎখাত করে আইন করে রুশভাষাকেরাষ্ট্রভাষার থেকে খারিজ করে দেয়, রাশিয়ানদের এবং ৪০ জন রাশিয়ানকে ওডেসার বিল্ডিংএ বন্দি করে আগুনেপুড়িয়ে মারে। আমেরিকা তার নাগরিকদের এভাবে হত্যা করতে দিতো?
জার্মানি?
ইংল্যান্ড?
এরা নাৎসী নয়? তাহলে নাৎসিদের চেহারা কেমন? এদের কাঁধে ভর করা জেলেনস্কির কি এর চেয়ে বড় নাৎসি হবারপ্রয়োজন আছে? যাদের বান্দেরা বীর, তাদেরই তো বীর জেলেনস্কি। এবং তারাই বাধ্য করে পূর্ব ইউক্রেনেরাশিয়ানদের অস্ত্রহাতে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে এবং দানেৎস্ক এবং লুহান’স্কে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে। ইউক্রেনসেখানে যুদ্ধ ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। রাশিয়ানেররক্ততো ইউক্রেনিয়ানের রক্ত নয়।
ফিরে আসি প্রতিটি দেশের নিজস্ব পছন্দের প্রসঙ্গে। ধরা যাক, আগামিকাল বা পরশু বা তারপরের দিন বা পরেরবছর সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা এসে আমাদের দেশকে বলল, “তোমাদের সোনার পাথরবাটি দেব এবংউন্নতি ও সাফল্যের সাপের পাঁচ পা দেখাবো, যদি আমাকে ভারতের দোরগোড়ায়, তাদের দিকে তাক করে, দূর ওঅদূরপাল্লার কিছু মিসাইল বসাতে দাও।”
ধরে নিলাম আমাদের সেই সময়ের নেতারা ডারউইনের বংশধর বুদ্ধিমান প্রাইমেট এবং তারা লেজ নাচিয়ে লাফাতেলাফাতে মিছিল করে, মিটিং করে, মিডিয়ায় দ্রাম দ্রাম দ্রিম দ্রিম ট্রাম্পেট বাজিয়ে সমস্ত হেফাজতি, জামাতী, বিএনপি, যদু, মধু, আওয়ামী একচোখা এন্টি ইন্ডিয়ানদের সংহত করে বিশাল জনমত তৈরি করে ফেলল।
জনগণ চায় মিসাইল আসুক, প্রতিবেশি হারামজাদাদের স্কাই দেখিয়ে দেয়া হোক।
এটা তো ঠিকই আছে তাই না? জনগণের নিজস্ব পছন্দের গণতান্ত্রিক অধিকার, অসুবিধা কোথায়?
ভারত বললো, “আমাদের দোরগোড়ায় বিদেশি মিসাইল আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি, তোমরা এক পা ওআগাবে না।”
সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা বললো, “না না, আমরা তোমার জন্য মোটেও হুমকি নই, আমরা শুধুনিজেদের নিরাপদ করতে চাচ্ছি।”
ভারত বলে, “কার থেকে নিরাপদ? আমাদের থেকে? আমরা কি মিসাইল নিয়ে তোমাদের দরজায় গিয়েছি?
সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা আকর্ণ হাসি দিয়ে বলেন, “না মানে, হে হে, বাংলাদেশ তো আমাদের মিত্র, হোক ওরা ফ্যাসিবাদী, কিন্তু মিত্র বুঝলেন না? ”
ভারত দিনের পর দিন হুশিয়ারী দেয়া সত্ত্বেও আমাদের নেতারা লাফায়, আমাদের জনগণ কাছা খুলে পেশি দেখায়, “আমাদের দেশ, যাকে ইচ্ছা তাকে চাই, কারো কোনো নাক গলাবার অধিকার নাই।”
উপায়হীন ভারত তার ট্যাংক নিয়ে, এয়োরোপ্লেন নিয়ে, মিসাইল নিয়ে আমাদের দেশে এসে দেশটিকে ধূলিতেমিশিয়ে দেয়, শুধু তাই নয় আমাদের দেশের স্ট্র্যাটেজিক বহু জায়গা তাদের দেশের চিরন্তন অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণাকরে।
আগ্রাসী কে?
ভারত, তাই না?
ধ্বংস হল কে? আহা, সেই প্রশ্ন থাক!
শ্যাম চাচা বা চীন মামা? পেয়ারের মিত্র। তারা তো যুদ্ধ বাঁধায় নাই, যুদ্ধ বাঁধিয়েছে ভারত।”
সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামা সারা বিশ্বব্যাপী শোরগোল তুলে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিকস্যাংকশন দেয়।
অথচ সেটা আর আমাদের বিষয় নয়, ভারত ও সুবোধ শ্যাম চাচা বা দয়ালু চীন মামার ব্যাপার, তাদের কে মরে কেবাঁচে, কে হারে কে জিতে, তারাই বুঝবে। আমাদের “যা হইবার তা হইয়াই গেছে!”
আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে?
অবশ্যই আছে, অন্যের কথায় লম্ফ ঝম্প করে, ধ্বংস হয়ে যাবার অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করে কে?
ইউক্রেনের যেমন রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করার অধিকার আছে, রাশিয়ারও তেমনি তার নিরাপত্তানিশ্চিত করার অধিকার আছে। তার জন্য যদি প্রতিবেশিকে গ্রাস করতে হয়, করবে, ক্রাস করতে হয়, করবে, আমাদের কথা, আমাদের প্রতিবাদ এর এক বিন্দুও ব্যত্যয় ঘটাবে না।
অথচ রাশিয়ার দুয়ারে তুলনামূলকভাবে ছোট দেশটি ফিনল্যান্ড, সুইডেন ইত্যাদি দেশগুলোর মতই ন্যাটোর বাইরেথেকেই “ধনধান্যে পুষ্প ভরা” দেশ হতে পারতো।
রুশ প্রবাদ বলে, “শিষ্ট বাছুর দুই মায়ের ওলান চোষে।” শিষ্ট প্রতিবেশি হয়ে ইউক্রেন রাশিয়া
ও পশ্চিমের দুধ পান করে অপরিসীম লাভবান হতে পারতো। কিন্তু পশ্চিমের অন্ধত্ব ও ফ্যাসিবাদী শক্তির কাঁধে ভরকরা অর্বাচীন নেতৃত্ব এতসুন্দর একটি দেশ, সুন্দর জনগোষ্ঠি ও সংস্কৃতির মহান পাদপীঠকে কতদিনের
জন্য ধ্বংস করল তা শুধু সময়ই বলতে পারবে।
ইউক্রেনের জনগণের যদি কোনো মূল্য পশ্চিমাদের কাছে থাকতো তবে এভাবে উস্কানি দিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে হঠাৎকরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধূঁয়া তুলে সরে দাঁড়াতো না। কোনঠাসা ভাল্লুক আর উত্যক্ত পাগলা কুকুর কোনো আইনমেনে বা হ্যান্ডবুক পড়ে যুদ্ধ করে না। অস্তিত্বের যুদ্ধে তাদের কাছে অন্যায় কিছু নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয়তার নিজের অস্তিত্বের বিধ্বংসন, সুতরাং পুতিন ও তার নষ্টচক্র ওই দেশটিকে ধ্বংস না করে বা নিজেরা ধ্বংস না হয়েঘরে ফিরবে বলে মনে হয় না।
২০২০ সালে আমেরিকায় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসে সাপ্তাহিক বাঙালীতে প্রকাশিত “ভাল্লুক, হরিণ ও গাঁজারপল্লীতে নির্বাচনী হাওয়া” নামে একটি প্রবন্ধে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাইডেন ইউক্রেনে যুদ্ধবাঁধাবে। এক বছরের বেশি সময় সে নেয়নি যুদ্ধটি বাঁধাতে।
শয়তান কিন্তু যুবক নয়, শয়তান বৃদ্ধ ( তবে যুবাবয়সী হতেও তার কোনো বাধা নেই), কিন্তু চিরকালই সে নিষ্পাপশিশুর মত হেসে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এসেছে এবং সে তা করতেই থাকবে। ন্যায় অন্যায় পছন্দ অপছন্দেরস্বাধীনতার যুক্তিগুলো হলো “ডায়াবলিক” যুক্তি। পৃথিবীতে সবসময় বড় দেশগুলোই নির্ধারণ করে তার পাশেরদেশগুলোর জন্য ন্যায় কী, অন্যায় কী এবং তাই সূত্রবদ্ধ করে “মনরো ডকট্রিন” নামের অভ্রান্ত বাইবেলে।
We should consider any attempt on their part to extend their system to any portion of this hemisphere as dangerous to our peace and safety.
আমেরিকার জন্য যা সত্য, রাশিয়া বা চীন বা ইন্ডিয়ার জন্য তা সত্য হবে না, এ কথা বিশ্বাস করার দিন ছিলগতকাল, পৃথিবী খুব দ্রুতগতিতে আগামীকালের দিকে ছুটছে।
তবে তা রৌদ্রময় হবে, না মেঘাচ্ছন্ন হবে আমরা এই মুহূর্তে বলতে অক্ষম।