কালকের খুলে রাখা পাতা আর আজকের নতুন খোলা পাতায় ন্ডা গুলো ণ্ডা তে পালটে যাওয়াতেই মনে হয়েছিল, সাইট মেন্টেনেন্সের দায়িত্বে থাকা জনতা কাকের কান নিয়ে যাওয়ার গুজব শুনলেই কাকের পিছনে ছোটেন। অন্তত এলেবেলের মুখনিঃসৃত বাণীকে অমোঘ ভেবে নেওয়া বা গুরুর অন্তর্নিহিত রাজনীতিগুলোর সাথে সম্যক পরিচিত না থাকার ফল ও খানিক।
পাই বলতে চেয়েছিলেন : ন্ডা ব্যপারটা কোয়ালিটি আইসক্রিমের অন্যরকম বানানের মত ব্যপার বলে সৈকতের মত। তাতে এলেবেলের যুক্তি : অন্যরকম বানান ব্যপারটা ৯ এর ব্যবহারেই 'যথেষ্ট' হয়েছে আবার ন্ডা দিয়েও সেটা করতে হবে কেন? অর্থাৎ এলেবেলের মতে একটা শুধু ৯ ব্যবহার করেই 'যথেষ্ট' অন্যরকম বানান গুরু লিখেছে। আবার ন্ডা টা অদরকারি। কিন্তু সৈকত হয়তো ন্ডা আর ৯ দুটোই ব্যবহার করতে চেয়েছেন। এবার কতটা অন্যরকম বানান লিখলে 'যথেষ্ট' অন্যরকম হওয়া হবে সেটা তো ব্যক্তিমানুষের পারসেপশন বেসড। এই যেমন আগে বই পত্রিকাতে পাল্টা / উল্টো পাল্টা প্রতিষ্ঠান ব্যপারটা যেভাবে লেখা হত এখন হয় না। এলেবেলের বক্তব্য গুরুর অন্যরকম বানানের মূল USP ৯ যেকারণে সুমেরু সেটা ব্যবহার করতে চান। নিশ্চয়ই ৯ ব্যবহার একটা যুগান্তকারী ব্যাপার যা অন্য অনেকেই আত্মস্যাৎ করতে চাইবেন কিন্তু সেটাকেই একমাত্র ভেবে নেওয়াটা আবার ওই ব্যক্তিমানুষের ইন্টারপ্রিটেশন আর কি।
এখানে একটি সাবভার্সান ঢুকে আছে,সেটা বলা যাক। তৎসম ও চলিত শব্দের মিশ্র ব্যবহারকে বলে গুরুচণ্ডালী। যেমন বারিধিতে ডুব। এটা গুরুর একধরণের অ্যাজেন্ডা। অর্থাৎ লেখার সময় কোনো পূর্বনির্দিষ্ট নিয়মনিধি, লেখার প্রকরণ মেনে চলা হবে না। আবার সবসময় যে এই দ্রোহটা থাকবে তাও নয়। কিছু গুরু ও থাকবে, অর্থাৎ ক্লাসিক বা ট্রাডিশনাল লেখা আর কিছু দ্রোহ ও। (এখানে আবার বলা ভালো, এই নিয়ম ভাঙার দর্শন মূলত লিখন পদ্ধতির। ঘোষিতভাবে অন্তত বানানবিধির নয়)। এবার যে শব্দটা দিয়ে এই দর্শন এই পাল্টা বা উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া সেই গুরুচণ্ডালী শব্দটা নিজেই তৎসম। লী কে ৯ দিয়ে লেখার মধ্যে যে মজা ও অ্যাজেন্ডা আছে সেটা সৈকত লিখিত রূপেই লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু এই বানান লেখার সময় ব্যাকরণের নির্দিষ্ট নীতিটি, অর্থাৎ তৎসমশব্দ হওয়ার কারণে ণ ও দীর্ঘ-ঈ এর ব্যবহার - এটাকে কোনোভাবে কমব্যাট করতে হয়। ণ রাখলে আপনি খানিক ব্যাকরণ মানার পথে হাঁটলেন, ন করলে খানিক না মানার পথে। এই শব্দে বানানবিধির ক্ষেত্রে যতখানি বিদ্রোহ করা গেল, লেখালেখিতে সামগ্রিকভাবে প্রচলিত লেখালেখির দর্শনের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে - এটা সেই রাজনীতি বা সাবভার্সান। খুব চট করে বোঝার নয়। গুরু যতটা ক্লাসিক ততোটাই অফবিট, চণ্ডালী র জায়গায় চন্ডা৯ র ন্ডা থেকে সেই ডিপার্চারের শুরু, যা লী বা লি কাটিয়ে একেবারে ৯ অবধি পৌঁছে যেতে চায়।
চট করে যেটা বোঝার, ক্যাচি জিনিসটি, তা ওই ৯। গুরুচন্ডা৯ বা গুরুচণ্ডা৯ র ক্ষেত্রে বা চন্ডালি লেখা ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীর ওই রাজনীতিটুকু এমবেডেড। যখনই ৯ লেখা হচ্ছে, তখনই ন্ডা বা ণ্ডা-র কোনো একটি লেখার দায় থেকে আপনি মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। যেটা খুশি লিখতে পারেন। সেই স্বাধীনতা আপনাকে ৯ টি দিচ্ছে, কারণ ৯ ব্যবহার করলেই আপনি বানানবিধির আর্গল থেকে বেরিয়ে আসছেন। ন্ডা লিখে সেই স্বাধীনতাটুকু আত্মস্থ করার পক্ষেই আমি, অন্তত।
লিরিক্যাল এ এরকম কোনো রাজনীতি নেই, ৯ দিয়ে Ly লেখার মধ্যে, গুরুর যেখানে শেষ সেখান থেকে ওদের শুরু এরকম একটা কমপিটিশন ছাড়া। ঋ দিয়ে ri লেখার মধ্যে অপ্রচলিতভাবে ঋ টেনে আনাতেও আরেকটা কমপিটিশন, গুরু একবার এটা করেছে, শুধু ৯ দিয়ে, লিরিকাল দুবার এটা করল ৯ আর ঋ ব্যবহার করে। এটুকুই। একটা আপাদমস্তক নন ফিকশন পাবলিকেশনের নাম কেন লিরিকাল হবে, তারও কোনো রাজনীতি নেই এই কম্পিটিশনটুকু ছাড়া। একটা ইংরিজি শব্দ বাংলায় কীভাবে লেখা হবে তারও কোনো নির্ধারিত বিধি না থাকায় বানান ব্যবহারে যথেচ্ছচারী হয়ে ক্যাচিনেসটুকুর বাইরে এখানে রাজনীতিটুকুও ধরা গেল না।
এবার গুরু যেটা সাইটে করেছিল, চন্ডালি, চন্ডালী, চন্ডা৯, চণ্ডালি, চণ্ডালী, চণ্ডা৯ -এই ছটা কম্বিনেশনের মধ্যে বেছে নেওয়া যেখান থেকে কেউ বলতে পারবে না, বাপু, বানানের ক্ষেত্রে তো ণত্ববিধি ব্যাকরণবিধি বেশ মানছ, এদিকে লেখার প্রকরনের সময় মুখে বিপ্লবের বুলি! কিন্তু বই হওয়াতে কিছু স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন করতেই হয়। সম্পাদক আছেন, প্রতিষ্ঠিত লেখকের প্রেফারেন্স আছে, বড় হাউজে রিভিউ-র মন্তব্যের ভার আছে, প্রুফ রিডারও এমনকি বর্তমানে আবার প্রফেশনাল। সুতরাং তাদের সেট করা স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সাইটের রাজনীতির/দর্শনের কম্প্রোমাইজও থাকবে। সেগুলো কালে কালে সাইটেও ইমপ্লিমেন্ট হবে, আশ্চর্যের কিছুই নেই। সমস্যার হল এই স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের সাথে সাথে সাবভার্সিভ রাজনীতিটুকুও ক্রমশ মুছে যাওয়ায়।