হারারি সায়েবও ওনার দু'নম্বর না তিন নম্বর বইতে বিপাসনা নিয়ে সাত কাহন লিখেছেন। প্রথম বই থেকে হারারি সায়েব বোধহয় পয়সা করেছেন।
লোক ঠকায় তাই। অন্য ধর্মগুলোতে যা যা আছে, বৌদ্ধ ধর্মেও তাই আছে। বাণী আছে, ধর্মগ্রন্থ আছে, রিচুয়াল আছে। লামারা মোটেই শান্তিপ্রিয় নয়। রীতিমত বিদ্বেষপূর্ণ। পয়সাকড়ির ব্যাপারে দিব্যি টনটনে জ্ঞান। এরা বলে মহাভারতে ইন্টারনেট আর ওরা মাইন্ড অ্যান্ড কনশাসনেস নিয়ে হিজিবিজি বকে। একেবারে একই বৃন্তে একগুচ্ছ ধুতরো ফল।
"কিন্তু আমার বক্তব্য ছিল এটুকু , বৌদ্ধ ধর্ম যেমন আরেকটি ভন্ডামির গল্প, বুদ্ধও তেমনি আরেকটি ভন্ড।"
বৌদ্ধধর্ম কিভাবে ভণ্ডামির গল্প?
KK একেবারে স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন করেছেন। হতে পারে ধর্মগুরুরা ভন্ড, কিন্তু সে তো পৃথিবীর কত লোকই ভন্ড। কিন্তু আমার বক্তব্য ছিল এটুকু , বৌদ্ধ ধর্ম যেমন আরেকটি ভন্ডামির গল্প, বুদ্ধও তেমনি আরেকটি ভন্ড। এর বেশি কিছু না। তবে দেখুন, বুদ্ধ গেলে রাজারা বাগান ফাগান বানিয়ে দিত। বুদ্ধর অবশ্য ওসবে কিছু এসে যেতনা। উনি তো বোধিলাভ করে গেছেন। গল্পটা চেনা চেনা লাগছে না? হাম তো ফকির আদমির আদি ভার্সন। ভন্ড কি আর সাধে!
"অনুকুল ঠাকুরের ভক্ত" , দেখুন পকেটে পয়সা আছে, মন খারাপ। বিপাসনা ফিপাসনা করুন, লাভ হবে। পকেটে পয়সা নেই, মন খারাপ। বিপাসনা তখন একটি ভন্ডামি মাত্র। আর বিপাসনা করতে পয়সা লাগবে কেন? ও তো ডোনেশন। প্রণামী বাস্কো।
"সবচেয়ে বড় কথা, বুদ্ধ বারংবার বলেছেন - এসব কোনকিছুই শেষ কথা নয়। মারা যাবার আগেও বলে গেছেন টেষ্ট করে যখনি মনে হবে আপডেটের দরকার তখনি প্যাচ আপডেট ইস্যু করতে হবে!"
প্যাচ আপডেট কি মশাই, ভারসান চেঞ্জ বলুন।
"কারণ বুদ্ধর লাইন হচ্ছে দুনিয়া চুলোয় গেলেও তুমি একা কি করে ভালো থাকবে। এখন হাতে পয়সাকড়ি থাকলে তবে বুদ্ধ এফেক্টিভ।"
ইয়ে, আপনি Hedonism এর সঙ্গে বৌদ্ধধর্ম আর বুদ্ধের "লাইন" বোধহয় গুলিয়ে ফেলেছেন।
"অনুকুল ঠাকুরের ভক্ত": "তো, সেই একই কথা বলতে হবে - যখন বড় বড় ব্যক্তিগত মানসিক সমস্যা অনেক দিন ধরে আসবে, মনে হবে নিজে সামলাতে পারছেন না - তখন একটা বিপাসনা কোর্স করে আসবেন। এস এন গোয়েন্কার কোর্স তো ফ্রি, পয়্সাও লাগবে না! দ্শ দিন ফোন, কম্পু, বই পত্তোর - সব ছেড়ে দিনে দ্শ বারো ঘন্টা করে শুধু বসে থাক্তে হবে - কোনো কাজ নেই। কন্ডিসান হল - কারো সাথে কোনো কথা বলা যাবে না। বাড়িতেই করা যায়, কেবল খাবার দাবার যোগাড় করে রাখতে হবে। আর হ্যাঁ, কোনো কথা বলা যাবে না, কিছু পাঠ করা যাবে না - দ্শ দিন। অন য়্যাভারেজ টোটাল ১২০ ঘন্টা।
তারপর দেখুন কি হয়।"
মানসিক সমস্যা থাকলে বিপস্যনা কোর্স না করতে যাওয়াই মনে হয় ভাল। তার থেকে জন কাবাৎ জিন প্রণীত MBSR (Mindfulness Based Stress Reduction) এর আট সপ্তাহের কোর্স বরং করা যেতে পারে, "কোর টেকনিক" যদি বলেন, ওইটেকে বলতে পারেন। অষ্টাঙ্গমার্গের সম্মা সতী আর সম্মা সমাধি পাঞ্চ করে আশির দশকে কাবাত-জিন আমেরিকার বস্টনের হাসপাতালে এই ধরণের কোর্স শুরু করেন, বিশেষ করে যাঁদের ধরুণ Anxiety বা Depression এর সমস্যা, তাঁদের ক্ষেত্রে ভাল কাজে দেয়। আজকাল প্রায় সব দেশেই MBSR কনস্যালটান্ট দের দেখতে পাবেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে করতে পারেন। অবশ্য ঠিকই বলেছেন, বিপস্যনা নিজের বাড়িতে করেও দেখতে পারেন, বিপস্যনা সেন্টারে যাবার দরকার পড়ে না, তবে করলে এমন একটা জায়গায় করবেন যেখানে চারপাশে যেন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে একটু হাঁটতেও পারেন, কারণ এই ধরণের ধ্যান কিন্তু "শুধু বসে" করে না - বসে, শুয়ে, হেঁটে, দাঁড়িয়ে - চার রকমভাবে করার কথা।
এটা তো অবশ্যই সত্যি যে সুত্রগুলো যে সব বুদ্ধদেবের "নিজের" কথা তা নয়, নানান রকমের পাঠ, ভাষ্য, বিভিন্ন সময়ে, এসে মিশে থাকতে পারে |
কান্নাকাটি একই, প্যাকেজিংটা আলাদা। কমার্শিয়াল সিনিমায় ভেউ ভেউ করে কাঁদে। ওদিকে আর্ট সিনিমায় স্টাইল মেরে কাঁদে। দুটো আলাদা অডিয়েন্স গ্রুপকে কেটার করে। ধর্মগুলোও তাই। সুনীল গঙ্গো লিখেছিলেন সাদারা হিন্দুধর্মে বেশি ঝোঁকে কারণ আমোদগেঁড়ে রিচুয়ালস আর জাতপাত ব্যাপারটা ওদের বেশ মনোমত হয়। অন্যদিকে কালোরা বেশিরভাগ ইসলাম ধর্ম নেয়। কারণ কমিউনিটি, ভ্রাতৃত্ববোধ এসব আছে। বৌদ্ধধর্ম খায় মালকড়িওলা সফিস্টিকেটেড লোকজন। কারণ বুদ্ধর লাইন হচ্ছে দুনিয়া চুলোয় গেলেও তুমি একা কি করে ভালো থাকবে। এখন হাতে পয়সাকড়ি থাকলে তবে বুদ্ধ এফেক্টিভ। গরীবগুর্বো লোকে জানে ধ্যান করলে পেটে টান পড়বে। ফলে পাড়ার শনিমন্দির বেটার চয়েস। তাতে করে বুদ্ধ কিছু মহানতর হয়ে যায়না। বৌদ্ধ ধর্ম যেমন আরেকটি ভন্ডামির গল্প, বুদ্ধও তেমনি আরেকটি ভন্ড।
সব ধরণের কান্নাকাটি এক নয় মনে হয়।
বিশেষ করে ঠাকুরদেবতার ভক্তদের কান্নাকাটি আর বিপাসনা ধ্যান করতে গিয়ে কান্নাকাটি দুটো দুরকম ব্যাপার, এ নিয়ে আমার সন্দেহ নেই ।
সে তো হতেই পারে। অনুকূল ঠাকুরের ভক্তরাও ওরকম কান্নাকাটি করে।
রঞ্জনবাবু ভারি সুন্দর করে লিখেছেন | কলম সুত্রে (Kalama Sutta) আছে:
"একবার বুদ্ধদেব সশিষ্য কোশলদেশে ভ্রমণকালে কলম নামে মানুষদের শহর, কেশপুত্ত নগরে উপস্থিত হলেন। তাঁরা বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা করতে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, দেখুন একদল সাধু আর ব্রাহ্মণ কেশপুত্ত নগরে আসেন, তাঁরা নিজেদের ধর্মমত, মতামত নিয়ে বড়াই করেন, অন্যের ধর্মমত কে তু্চ্ছতাচ্ছিল্য করেন | আবার আরেক দল সাধু-ব্রাহ্মণ এসে সেই এক কাজ করেন। এতে করে আমরা ধন্দে পড়ে যাই, কারা ঠিক বলছেন, কারা ভুল বলছেন বুঝতে পারি না, তা আপনি কি বলেন?"
তখন বুদ্ধদেব তাঁদের লোভ, ঘৃণা, ভুল বোঝা নিয়ে আলাপ আলোচনার করার পর বলেছিলেন, "অন্যের কথা শুনবেন না, এদিক ওদিক খবর নিয়ে ভাববেন না, গল্পগাছা, প্রচলিত ধ্যানধারণার বশবর্তী হবেন না, বরং নিজে মনোনিবেশ করে প্রত্যক্ষভাবে বিচার করে স্থির করুন যে কোনটা অকুশল, কোনটাকে গ্রহণ করবেন কোনটাকে গ্রহণ করবেন না |" এরকম করে অনেকবার অনেকভাবে বুদ্ধদেব কলম সুত্রে এই কথাটা বলেছিলেন। (পড়ে দেখুন,
http://buddhasutra.com/files/kalama_sutta.htm)
তা এখানে বুদ্ধদেব কি বলতে চাইছেন? কাউকে বিশ্বাস না করতে? শুধু নিজে নিজে যা বুঝবেন সেইটুকুই? তাহলে সে তো রাজ্যের ধর্মকথার পরিপন্থী, গুরুবাদের সরাসরি বিরুদ্ধে ! শুধু তাই নয়, তা হলে তো স্বয়ং বুদ্ধদেব যা বলছেন তার প্রতিও বিশ্বাস রাখার প্রয়োজন নেই যতক্ষণ কেউ নিজে না উপলব্ধি করবেন। এবং সেইটাই সার কথা। এখানে আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, কলম-রা কিন্তু বুদ্ধদেবের শিষ্য ছিলেন না , তাঁরা বুদ্ধদেবের কাছে শুধু পরামর্শ চাইতে এসেছিলেন। এঁরা কিন্তু "তথাগত বুদ্ধের কাছে ভক্ত" হয়ে আসেন নি।
বৌদ্ধধর্মের বক্তব্য লোভ, ঘৃণা, ভুল বোঝা/ভ্রান্তদর্শণ/Delusion মুক্ত জীবন কাটানো, এতে করে কোন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ঠিক কি বললেন, মায় খোদ বুদ্ধদেব কি বললেন তাকে বিন্দুমাত্র "বিশ্বাস" করার দরকার নেই, গুরু বাদ , গুরুঠাকুর গিরি দূরস্থান!
@মোহমুদ্গর: "বুদ্ধ নিয়ে উলুত্পুলুত হবার কিছু নেই"
বুদ্ধ কেন, কাউকে নিয়েই উলুতপুলুত হবার কিছু নেই।
আরেকটা কথা। বিপাসনা, আমি যতটুকু নিজে উপলব্ধি করেছি , কখনই "মন শান্ত করার টেকনিক" টাইপের কিছু নয়। বরং উল্টোটা হবার সমূহ সম্ভাবনা। আপনি যে কোন ধ্যান রিট্রিটে যদি যান দেখবেন প্রথম দু তিন দিনে ভিড় ফাঁকা হয়ে যায়, বহু লোক প্রথম রাতে হৈ হৈ করে যান, তারপর এক রাতের পর অনেকে কান্নাকাটি করতে থাকেন, পুরনো আহত মানসিক বেদনা জেগে ওঠে, সে যা তা অবস্থা হয়। কাজেই খুব আপনি যেটা ভাবছেন মোহমুদ্গর বাবু (অন্তত আমি যা মনে করছি আপনি যা ভাবছেন), ব্যাপারটা সেরকম নয়।
বুদ্ধ কি প্রচলিত অর্থে গুরুঠাকুর হতে চেয়েছিলেন?
সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে একটি বই থাকে যা সমালোচনার উর্দ্ধে। সমস্ত ধর্ম দাবি করে যে শেষ কথা বলার অধিকার তারই। সমস্ত ধর্মমতে একজন মহাগুরু থাকেন যিনি সমালোচনার উর্দ্ধে। সমস্ত ধর্মমতে যারা অদীক্ষিত তারা হয় তুচ্ছ বা করুণার পাত্র।
এই চারটে প্যারামিটারে দেখলে মার্ক্সবাদ বোধয় বৌদ্ধমতের থেকে ধর্মের বেশি কাছাকাছি।
বুদ্ধ এক ঐতিহাসিক ব্যক্তি -- অবশ্যই যীশু ও মহম্মদের মত। এক ঐতিহাসিক কালখণ্ডে উনি দাঁড়িয়েছিলেন হিংসা, জাতিভেদ, যাগযজ্ঞ, এবং কৃচ্ছসাধনের বিরুদ্ধে সামাজিক সমতা ও মধ্যপন্থার পক্ষে। ঈশ্বর আছেন কি নেই এসব কচকচি উনি নিরর্থক মনে করতেন, বিরক্ত হতেন। ওনার লক্ষ্য ছিল সর্বব্যাপী দুঃখের কারণ ও সমাপন খুঁজে বের করা।
আচার্য ধর্মকীর্তির এই শ্লোকটি দেখুনঃ
" বেদপ্রামাণ্যং কদাচিৎ কর্তৃবাদঃ
স্নানে ধর্মেচ্ছা জাতিবাদ্যাবল্পেঃ
সন্তাপাবম্ভঃ পাপহানায়
চেতি ধ্বস্তপ্রজ্ঞানাং পঞ্চলিঙ্গানি জাড্যে "।।
বেদকে অকাট্যপ্রমাণ মানা, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরে বিশ্বাস, বিশেষ স্নানে পূণ্য, জাতিভেদের অহংকার এবং শরীরকে কষ্ট দিয়ে পাপনাশ হয় এমন বিশ্বাস--- এসব মূর্খের পঞ্চলক্ষণ।
মোহমুদগর সম্পর্কে ডিটেইলস:
'মোহমুদগর' মানে কী? মায়াবী গদাটাইপের কিছু ?