@এলেবেলে
'আমার পূর্বপুরুষ' বলিনি । 'আমাদের' বলিনি। বাক্য বিকৃত করবেন না নিজের ঝোল আরেকজনকে গেলাতে । 'আমার পূর্বপুরুষ' 'স্টুপিড' নাকি 'ইন্টেলেকচ্যুয়াল সেটা আমিই বিচার করে নেব । তারা সেভাবে কেউ পাব্লিক ফিগার নন । তাই তাঁরা জনচর্চার দাবী রাখেন না। তারা যেটা করেছেন তাদের মত করে ইণ্ডিপেডেন্টলি করেছেন ।
গীতার সঙ্গে মহাভারত কথা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । আপনার মতে আমি যে কটা প্রতিষ্ঠান ও তাদের পিয়ার রিভিউড জার্নালের 'নেমড্রপ' করলাম সেসব জায়গায় মহাভারত নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা ও অজস্র লেখালেখি হয়েছে ।
গতকালই লিখেছিলেন
'নতুন কিছু পেলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না।' (@এলেবেলে ১৬ জুলাই ২০২০ ১৯:৩০)
সেই জন্যেই জানানো । গবেষণা আপনার । আপনাকেই সন্ধান করতে হবে ।
@lcm: "এরকম নামের কি একটা রেস্তোঁরাতে বাঁশপোড়া মাংস পাওয়া যায় যা নাকি খেতে ওরকম - কেউ একজন কয়েছিল"
হাঙি স্টীমড , রোস্ট বা স্মোকড নয় কিন্তু।
*ভলতেয়ার
অরিন আপনি যে লশকরের উল্লেখ করেছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ। প্রসঙ্গত ভাস্কো-দা-গামাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন একজন মুসলমান লশকর এবং তিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন, যদিও তাঁর নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
ভাল বই বেরিয়েছে। ডালরিম্পিলের 'আ্যনার্কি'। পড়ছি, কিন্তু সময়াভাবে অতি ধীরে। ব্যবসার শুরুতে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে বলে বলে গোল খেত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া। ইনভেস্টমেন্টও ডাচদের তুলনায় ফুদ্রু। পড়ুন। খেটে লেখা কাজ। তবে সবই 'পরিকল্পনামাফিক গ্র্যান্ড স্কিম' শুনলে দু ভলুম মেটিরিয়া মেডিকা নিয়ে তাড়া করতে ইচ্ছে করে। এ হল 'সবই ব্যাদে আছে'-র এম্বিয়ে ভার্সান।
অর্জুন গীতা নিয়ে কোথায় কোথায় রিসার্চ করতে হবে তার এক বিশাল তালিকা দিয়েছেন, কিন্তু বিশল্যকরণীর সন্ধান দেন্নিকো। আগে খোলসা করে বলুন দিকি সে বিষয়ে কী কী বই ও জার্নাল পড়িতে হইবে? নইলে হাওয়ায় তরোয়াল ঘুরিয়ে লাভ নেইকো। বেকার নেমড্রপিং ছাড়া ওর কানাকড়ি দাম নেই।
আপনি এলিয়ট নিয়ে আগ্রহী নন ভালো কথা। আপনার পূর্বপুরুষরা যাঁরা গীতা পড়ে মোহিত হয়েছিলেন, তাঁরা স্টুপিড ছিলেন কি না প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এলিয়টের কথাটা এসেছিল। এলিয়ট বলেছিলেন --- The Bhagavad-Gita is the second greatest philosophical poem in my experience. এখন আপনার পূর্বপুরুষগণ সেই অভিজ্ঞতাই লাভ করেছিলেন কি না, তা আমার জানার কথা নয়। আপনি জানলেও জানতে পারেন।
প্রায় তিনদিন ধরে এই নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর চলছেই। তো আমি বুদ্ধদেব বসু-র একটা লম্বা উদ্ধৃতি এখানে চিপকে দিলাম। এটা কালিদাসের মেঘদূত-এর ভূমিকায় লেখা। তিনি সম্ভবত এখানকার আলোচকদের থেকে বেশি জ্ঞানী ছিলেন। তিনি লিখেছেন -
একদিন জগতের হাটে পৌঁছলো আমাদের ‘পঞ্চতন্ত্র’ — স্কুল থেকে আমাদের পরিচিত সেই করটক ও দমনক নামক শৃগালদ্বয় — আর বুদ্ধজীবনী, বৌদ্ধ কাহিনী, ‘কথাসরিৎসাগরে’র অনেকগুলো ছেঁড়া পাতা — পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ য়োরোপের প্রতিটি ভাষায় অনূদিত, অনুলিখিত, ও সম্প্রচারিত হ’লো সেই সম্ভার : সংস্কৃত থেকে ফার্শি, ফার্শি থেকে আরবি, আরবি থেকে তুর্কি, সিরীয়, গ্রীক, লাতিন, ইত্যাদি — এমনি ঘুরে-ঘুরে য়োরোপের সাহিত্যে নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিলো। কিন্তু বোকাচ্চো বা চসার জানতেন না তাঁদের অনেক গল্পের আদি উৎস ভারতবর্ষ ও সংস্কৃত ভাষা; আর শেক্সপিয়ার অবশ্য স্বপ্নেও ভাবেননি যে তার ‘দি টেমিং অব দি শ্রু' নাটকের মুখবন্ধটি একটি প্রাচীন ভারতীয় কথিকার সাত-হাত-ফেরতা ভিন্ন প্রকরণ। য়োরোপের ‘আলোকপ্রাপ্তি’র যুগে ফ্রান্সে ও ইংলণ্ডে যে-‘প্রাচ্য’ কাহিনীরচনার ধুম প’ড়ে যায় — যাতে নেতৃত্ব করেন তলতেয়ার, মঁতেস্কিউ ও স্যামুয়েল জন্সন — তাও ছিলো স্বল্প জ্ঞান ও স্বচ্ছন্দ কপোলকল্পনায় আশ্রিত। ঘোষিতভাবে সংস্কৃত পুঁথি ও ভারতীয় চিন্তা পশ্চিম দেশে বিকীর্ণ হ'লো এই সেদিন মাত্র, যখন, ভারতে ইংরেজ প্রভুত্বের প্রতিষ্ঠার পর, উইলিয়ম জোন্স ‘শকুন্তলা’ ও ‘মনুসংহিতা'র এবং চার্লস উইলকিন্স 'ভগবদগীতা' ও ‘হিতোপদেশে’র প্রথম ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করলেন। একই সময়ে বের্নিয়ে নামে একটি ফরাশি, ভাগ্যশিকারে ভারতে এসে, য়োরোপে নিয়ে গেলেন একগুচ্ছ উপনিষদের ফার্শি অনুবাদ, যার সম্পাদনা করেছিলেন শাজাহান-পুত্র দারা শুকো। সেই ফার্শি থেকে, লাতিন, গ্রীক ও ফরাশি মেশানো এক অদ্ভুত ভাষায়, ১৮০১ সালে দ্যুপেরঁ যে-অনুবাদ প্রকাশ করেন, সেটি প’ড়েই শোপেনহাওয়ার বলেছিলেন যে ‘উপানিখাৎ' তাঁর ‘জীবনব্যাপী সান্ত্বনা ও মৃত্যুকালীন শান্তি'। কিন্তু তৎকালীন পাশ্চাত্য সমাজে সংশয় জেগেছিলো সংস্কৃত নামে কোনো ভাষা সত্যি আছে কিনা; কোনো-কোনো সাম্রাজ্যদাম্ভিক মহোদয় ধরে নিয়েছিলেন সেটা ব্রাহ্মণদের জালিয়াতি। অনতিপরেই যখন প্রমাণ হ’লো যে সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব আছে, এবং তাতে বিরাট একটি সাহিত্যও বিদ্যমান, আর প্রাচীন পারসিক, গ্রীক ও লাতিনের তা আত্মীয়, তখন সারা য়োরোপে — জর্মানি, ফ্রান্স, ইংলণ্ড, হল্যাণ্ড, ইতালিতে — দেখা দিতে লাগলেন সংস্কৃতজ্ঞ ভারতবিদ্বানের দল, বহু সংস্কৃত পুঁথি অনূদিত ও মুদ্রিত হলো, এবং আমরা, য়োরোপের হাত থেকে, আমাদেরই সংস্কৃত বিদ্যা ফিরে পেলাম।
এবারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপনাদের ওপরে। গীতা সাহেবদের হাতফেরতা চোঁয়ানি নয় কি না।