অর্জুন, আপনার মন্তব্যে উচ্চবাচ্য করিনি মানে কিন্তু এই নয় যে, সেই বক্তব্য আমার পছন্দ হয়নি। আসলে এসেম কতগুলো ইসকনের লিঙ্ক চিপকিয়ে 'কেমন দিলুম' টাইপের হাবভাব করছিলেন বলে, সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে আপনি যে বইটির কথা বলেছেন গীতা প্রেস নিয়ে, সেটা আমি পড়িনি। ফলে নীরবতার ওটাও একটা কারণ বটে।
অরিন, অনেকদিন পরে আপনাকে ভাটে দেখলাম। মাঝেমধ্যে আসবেন। আগে গুরুতে কল্লোলবাবু-রঞ্জনবাবু-শিবাংশুবাবু-রাজনীতির কচকচি ছাড়া পিটি-বড় বি-ঈশানের লেখা পড়তাম চুপচাপ। মাঝে মাঝে মুখ খুলতাম। তখন অবশ্য খ-কে চিনতাম না। পরে অমিয়ভূষণের একটা টইতে ওঁর মন্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হই। এখন এঁরা হয় আসেন না, আসলেও খুবই অনিয়মিত। ফলে আমাদের মতো কিছু অপোগণ্ডের বাচালতা বেড়েছে। সেটা কমানোর জন্যই আপনাদের দরকার।
আপনি খ্রিস্টিয় যে অ্যাঙ্গেলটার জন্য গীতা অনুবাদের কথা বলেছেন, কতকটা সেরকমই লিখেছিলাম ১৫ জুলাই ০০.১৫তে --- তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের আগ্রহে তিনি সংস্কৃত পুঁথি ঘেঁটে মহাভারতের আংশিক অনুবাদ করেন ইংরেজি ভাষায়। সেই আংশিক ইংরেজি পাণ্ডুলিপি ওয়ারেন হেস্টিংসের হাতে এলে তিনি কৃষ্ণার্জুনের কথোপকথনটুকু আলাদা করে একটা বইয়ের পরিকল্পনা করেন। এই বক্তব্যের সঙ্গে খ্রিস্টিয় ধর্মবিশ্বাসের নাকি খুব মিল ছিল। এই ভাবেই হেস্টিংস-উইলকিন্স যুগলবন্দিতে জন্ম হয় ‘ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী’ ‘শ্রীমদভগবদ্গীতা’র।
এই ব্যাপারটা একদমই কাকতালীয় নয়। পরেও এই ঘটনা ঘটেছে। তার রেফারেন্সও আমার কাছে মজুত আছে। আমাদের অর্থাৎ ভারতবর্ষের 'হিন্দু'দের প্রাচীন বা বৈদিক যুগের পুনরুত্থান প্রকল্প ব্রিটিশদের একটি অন্যতম ঘৃণিত চাল। সেটা জেনে বা জেনে আমরা অনেকেই উদ্বাহু নেত্য করে থাকি।
অভিজিৎবাবুদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রদেয় করোনা নিয়ন্ত্রণের জ্ঞান সমূহ নিয়ে কয়েকটি কথা:
" করোনা এখনও ছড়াচ্ছে। লকডাউনের পর সংক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছে। এ কথা মাথায় রেখেই এখন সাধারণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা যেমন মাস্ক পরা, শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বদ্ধ জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলার মতো বিষয়গুলিকে চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। "
- সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথাটা এঁরা উল্লেখ করলেন না । অথচ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দিনে বারংবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার একটি গুরুত্ব আছে, মাস্ক পড়া বা দূরত্ব বজায় রাখার তুলনায় কিছু কম নয়, এতে করে অন্য আরো অনেক সংক্রমণ রাখা যায়।
"যাতে সাধারণ মানুষ বেশি করে মাস্ক পরেন সে জন্য উচ্চ মানের মাস্ক কিনে যতটা সম্ভব বিলি করার মতো সরকারি উদ্যোগও এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ মানের মাস্ক পরলে কী বিপুল সুবিধা হবে তা বোঝানোর জন্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার অভিযানও চালাতে পারে সরকার।"
- উচ্চ মানের বনাম নিম্ন মানের মাস্ক আর তাদের সংক্রমণ ক্ষমতা আটকানো নিয়ে আমরা কি কি জানি? বিপুল সুবিধা কি শুধু উচ্চ মানের মাস্ক পরলেই হবে? অপেক্ষাকৃত কম মানের মাসকে হবে না? মাস্ক শুধু বিলি করলেই কি যথেষ্ট হবে? মাস্ক কিভাবে পরতে হয়, কিভাবে পাল্টাতে হয়, দিনে কতবার পাল্টাতে হয়, কোথায় মাস্ক পরে থাকা দরকার, কোথায় নয়, এই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর না দিলে কিন্তু মাস্কের কার্যকারিতা বোঝা যাবে না। হিতে বিপরীত ও হতে পারে।
"করোনা নিয়ন্ত্রণে উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ক্লাস্টারগুলিকে চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকাগুলিকে কন্টেনমেন্ট জোন করা উচিত। যদি সম্ভব হয় তা হলে পরীক্ষা আরও বাড়ানো উচিত, সমস্ত পদ্ধতিও ব্যবহার করা প্রয়োজন।"
- পরীক্ষা বাড়ানো কিন্তু "যদি সম্ভব হয়" এর ব্যাপার নয়, ঐটেই আসল , এবং শুধু পরীক্ষা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, যদি না তার সঙ্গে কন্টাক্ট ট্রেসিং ও অনেকটাই বাড়ানো না হয়। পরীক্ষা ও কন্টাক্ট ট্রেসিং সমবেত ভাবে প্রতিষেধক (vaccine) এর কাজ করে।
- তাছাড়া ক্লাস্টার চিহ্নিত করণের ক্ষেত্রে শুধু "উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটতে পারে" এই ক্লাস্টারগুলোকে চিহ্নিত করাই যথেষ্ট নয়, ক্লাস্টার সমূহের বিশ্লেষণ ও বিশেষ করে এক ক্লাস্টার থেকে আরেকটি ক্লাস্টার এর অসুখ ছড়ানোর যেগুলো "weak link" বিশেষ করে সেইগুলোর দিকে নজর দিতে হয়, না হলে সংক্রমণ কিন্তু বেড়েই চলবে,আটকাতে পারবেন না (যেটা পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে) ।
" সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, করোনাকে ঘিরে একটি বিরাট আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যে সব পরিবারে সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাঁদের এক ঘরে করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার যে ঐতিহ্য নিয়ে আমরা গর্ব করি এতে তা খাটো হচ্ছে। এমন হলে মানুষকে সংক্রমণ লুকিয়ে রাখতে উৎসাহ দেওয়া হবে। এই ধরনের আতঙ্ক অন্যায্য। "
- কিন্তু কেন আতঙ্ক তৈরী হয়েছে জানবেন না? না জানলে সামলাবেন কি করে? "অন্যায্য" কথাটার মধ্যে এক ধরণের value judgment, আমার ধারণা কে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে, আতঙ্ক তৈরী হবার বিষয়টি কি ন্যায্য অন্যায্য ধরে নিয়ে বিচার করা যায়? যত এই ধরণের মানসিকতা কে প্রশ্রয় দেবেন তত সমস্যা বাড়তেই থাকবে।
"আমরা এই রোগকে জয় করব কিন্তু আমাদের সামাজিক বুনোটটা যেন অক্ষত থাকে। যাঁরা করোনা আক্রান্তদের উপর এমন অত্যাচার চালাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। এই সব দ্বন্দ্ব মেটাতে কোভিড উইনার্সের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করছে। কিন্তু গোষ্ঠীর সাহায্য ছাড়া এই কাজ প্রায় অসম্ভব। বাংলার যুব সমাজকে আমাদের নেতৃত্বে প্রয়োজন যাঁদের কাছে এই রোগটি কম ঝুঁকিপূর্ণ।"
- জনস্বাস্থ্য কি যুদ্ধ যে জয় করবেন? রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বড়োজোর।
- কি করে জানা গেলো যে যুব সমাজের কাছে রোগটি কম ঝুঁকিপূর্ণ? যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে করণে আক্রান্ত হলে বৃদ্ধ/বৃদ্ধদের তুলনায় বা অন্যান্য অসুখএ যাঁরা ভোগেন তাঁদের তুলনায় এঁদের মধ্যে মৃত্যুহার হয়তো কম, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ফল সম্বন্ধে কিছু ই প্রায় জানা নেই।
জনমাধ্যমে যাঁরা পরামর্শ দেন, সরকার যাঁদের ওপর নির্ভর করেন,তাঁরা এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হলে সাধারণ মানুষের উপকার হয়, রোগ নিয়ন্ত্রণ দ্রুত হতে পারে।
""দেশে বিদেশে" তেও আছে ওরকম বিশালত্বের আভাস। নানা মানুষের মুখে মুখে বলা কাহিনি, গান, উৎসব, আড্ডা, মজলিশ, সব কিছু নিয়ে একটা বিশালতা।"
সেটা অবশ্য আলী সাহেবের নিজের ভাষ্যে। এর ওপর ধরুন অন্যেরা লিখতে শুরু করল, ক্রমশ কালক্রমে মহীরুহ প্রাপ্তি হলো সে লেখার। তাহলে কেমন হবে?
"কিন্তু মূল তর্ক সপ্তম সর্গ নিয়ে, ওটা উঁচুদরের লেখা, তাই কালিদাস নিজেই লিখে গেছেন বলে দাবী করা যায়।"
এই যে মূল লেখা, মূলানুগ লেখা, প্যাসটিচ, intertextuality, বা জাপানী হোনকাদোরি ("Tale of genji" ধরুন), বা ঝুয়াং ঝ্যাং এর "Journey to the West" এতে করে একটা আশ্চর্য বিশালত্ব তৈরী হয়। সমস্ত কিছু একাকার হয়ে একটা আশ্চর্য সৃষ্টি!
"এদিক ওদিক থেকে লোকে নিজেদের লেখা বড় বড় কাজের মধ্যে (ব্যাস বাল্মিকীর মহাসমুদ্রে) গুঁজে দিত"
খুব ভাল!
"হয় ছাপো নয় মর" নামের কুসংস্কৃতি ছিল না তো সে আমলে। টেনিওর এর ঝামেলা নেই। দিব্যি লেখালেখি বড় জায়গায় চালিয়ে দেওয়া যেত। এতে করে মহাসমুদ্রে কত নদী এসে মেশে। তবেই না মহাভারত । পশ্চিম যদি মডেলটা বুঝত তো কাজের কাজ হত।
যাকগে !
"এদিকে আবার এক জায়্গায় শুনলাম কারা নাকি এমনও দাবী করেছেন যে শংকরাচার্য্যই নাকি গীতা রচনা করে মহাভারতে ঢুকিয়ে দ্যান। ঃ-)"
সেটা যদি হয়ে থাকে তো plagiarism এর ডিগবাজি! ভেবে দেখুন একবার!
atoz:"গীতাই যদি না থাকে, গীতাভাষ্য কীসের? "
আসলে মহাভারতে এত বিষয় বিভিন্ন সময় এসে মিশেছে বলেই না মহাভারত অপার! এখন শ্রীমদভাগবৎ গীতার আলাদা করে গ্রন্থ হিসেবে অস্তিত্ব ছিল কি না, বা উইলকিনস কে মদভাগবদ্গীতার ভগীরথ বলা যাবে কি না, সেই প্রশ্নটি আমার মতে আপনাদের বিভিন্ন গুণীজনের নানাবিধ জ্ঞানগর্ভ পোস্ট পড়ার পর মনে হয় pedantic । তবে আমি নেহাৎই মূ্র্খ ও অর্বাচীন, অপরাধ নেবেন না।
উইলকিনস যে শ্রীমদভাগবৎ গীতা কে মহাভারতের অংশ থেকে অনুবাদ করেছিলেন, তার নিশ্চয়ই একটা প্রেক্ষিত ছিল। আমি অন্যত্র পড়েছি যে উইলকিনস Gospel of St John (4th Gospel) আর ভগবদগীতার মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটি বিশ্বাসযোগ্য কারণ Gospel of St John এবং গীতাকে পাশাপাশি রেখে পড়লে যীশু ও শ্রীকৃষ্ঞের মধ্যে সাযুজ্য পাওয়া যায়। যে ব্যাপারটি আমি জানি না কিন্তু আপনাদের মধ্যে কেউ যদি আলোকপাত করতে পারেন, উইলকিনসের অনুবাদ আর সমকালীন Transcendentalism এই দুইয়ের মধ্যে কোন পারস্পরিক যোগসূত্র ছিল কি না? @এলেবেলে এ প্রসঙ্গে রামমোহন রায়ের উল্লেখ করেছেন । বেদ গীতা, এবং unitarianism ভাবধারার পারস্পরিক কি ধরণের সম্পর্ক ছিল?
@রঞ্জন-দা
দামোদর কোসাম্বীর গীতা সম্পর্কিত লেখাটার কথা আমি এখানে আগে উল্লেখ করেছি । বুক রিভিউ গুলো আমি অনেক সময়ে 'দ্য বুক রিভিউ' জার্নাল থেকে পড়ি । কোসাম্বী সম্পর্কে আমার অবসেশন আছে । ওঁর প্রায় লেখা আমার খুব প্রিয়। যদিও উনি খুব দুরুহ ।
@এলেবেলে দেখলাম আমার মন্তব্যটি সম্বন্ধে উচ্চ বাচ্চ করলেন না ! বোধহয় পছন্দ হয়নি।
গীতা মুখার্জি সম্পর্কে আমি বিশদে খুব একটা জানিনা । শুধু মনে আছে রাজীব গান্ধী মারা যাওয়ার পরে কলকাতা দূরদর্শনে বর্ষীয়ান কিছু রাজনীতিবিদ যেমন সিদ্ধার্থশংকর রায়, হীরেন মুখার্জি, ইত্যাদিদের সঙ্গে গীতা মুখার্জিকেও দেখানো হয়েছিল। উনি অঝোরে কাঁদছিলেন । আমি অবশ্য তখন খুব ছোট ।
'সিম্পিল লিভিং, হাই থিংকিং' ব্যাপারটা খুব ভেগ একটা কনসেপ্ট । বস্তাপচা ।