এবারে তো অন্যরকম সুর লাগছে।গীতা কি জিনিষ লোকজনের জানা ছিলো।অর্থাৎ গীতার ভাষ্য কি সেটা বহুকাল ধরে জানা ছিলো।কারণ আপনি ই বলছেন নানা সময়ে নানা ভাষ্য রচনা হয়েছে।
অন্যদিকে পণ্ডিতরা ভাষ্যগুলি জানলে ও চর্চা করে থাকলে,কথকতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও অবগত ছিলো ধরে নেওয়া যায়।
প্রশ্ন আসে মুদ্রণ নিয়ে। তো,মুদ্রণ যন্ত্র না থাকলে কিভাবে মুদ্রিত ভার্শন বেরোবে? যা থাকবে, তা হলো,কিছু পুঁথি।প্রাইভেট কালেকশনে থাকবে।সেটাই স্বাভাবিক।
গীতা নামকরন ও উইলকীনস সাহেব করেন নি।উনি কিছু গীতার মুদ্রিত কপি বার করেছিলেন,বিভিন্ন ভাষায়। বাংলা তার একটি।
প্রসঙ্গত সবচে প্রাচীন এভেইলেবল গীতার সংস্কৃত ম্যানুস্কৃপ্ট (আনুমানিক ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ) রক্ষিত আছে অক্সফোর্ড লাইব্রেরী তে।
বি, আচাভুয়া শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন হুতোম। অরুণ নাগ তার টীকায় অর্থ দিয়েছেন 'অসম্ভব'। সঙ্গে আছে 'বোম্বাচাক'-ও। গোটা বিষয়টির অর্থ 'অসম্ভব বিষয়ের দুর্বোধ্য রূপ, কিম্ভূতকিমাকার'।
নেট বিষয়ে 'ড্ডনং' বলে বই খুলেই বললাম আর কি!
"এলেবেলেবাউ বোধহয় প্রিন্টেড গীতার কথা বলছেন। তো, ছাপা মেশিন তো অনেক পরে এসেছে আমাদের এই বঙ্গদেশে, তাই উনার ছাপা বইএর সালটাল মিলিয়ে ..."
এটা ঠিক। তবে, ওই তো ভরতের বারো বছরের জন্মদিনে কী দেব ভাবতে ভাবতে ভাবলাম ছোকরাকে একটু জ্ঞানগম্যির বই দিই। দশ বছরে পাণিনি শেষ করে ফেলেছে বটে, কিন্তু পড়াশুনোয় মনে নেয়। খালি যুদ্ধু-যুদ্ধু খ্যালা। বাপের জিন পেয়েছিল। তার ভাবলাম যুদ্ধের জ্ঞানই দিই। বিশ্বামিত্রর আশ্রম থেকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বেরিয়েই ঘাটের দিকে যেতে বাঁহাতে একটা অশ্বত্থ গাছের নীচে বিশ্বামিত্ররই এক এক্স-ছাত্র একটা পুঁথির দোকান দিয়েছিল। আসলে বিশ্বামিত্ররই দোকান। আশ্রমবালকদের হাতের লেখার ক্লাসে পুঁথির নকল প্র্যাক্টিস করাত, তারপর সেই পাতা কাষ্ঠখন্ডে বেঁধে সম্পূর্ণ পুঁথি বলে বেচত। একেক পাতায় একেক রকম হাতের লেখা। বারোশ' খন্ডে সম্পূর্ণ মহাভারত, আটশো খন্ডে সম্পূর্ণ রামায়ণ (সটীক) - এইসব। তার সঙ্গে অবশ্য পাণীনির ব্যকরণ, তার সমাধান - এও রাখত। গরগরে জিনিসও রাখত - রঘুবংশম, মেঘদূতম। তাকে বললুম, "বাবা দুন্দুভি, মহাভারতের যে অংশে কেষ্টদা অজ্জুনবাবুকে যুদ্ধ করা নিয়ে ফান্ডা দিচ্ছিল, সে অংশটার পাতাগুলো পুঁথি করে দাও না হে। তো সেই একটা করে দিয়েছিল। সেইটাইয় আশীর্বচন লিখে ("রাজরাজেশ্বর হও") ভরতকে দিলাম। সে ব্যাটা খুব খুশি। সেই বই দেখে আশ্রম-আশ্রমের বাইরে সবাই চাইতে লাগল। হটকেকের মত বিক্কিরি। কেউ আর সম্পূর্ণ মহাভারত কেনে না। বিশ্বামিত্রর আয় কমে গেল। দুন্দুভিকে বলে সে পুঁথির বিক্কিরি বন্ধ করে দিল।
গীতা আলাদা গ্রন্থ ছিল না চার্লস উইলকিন্সের আগে। তার ভাষ্য-টীকা প্রচুর লেখা হয়েছে, কিন্তু আলাদা গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এসবই হেস্টিংস-কর্নওয়ালিস-ওয়েলেসলির জ্ঞান লুঠের অন্যতম অংশ। আর জোন্স-কোলব্রুক-উইলকিন্স কত সমোস্কিতো জানতেন তারও ইতিহাস আছে। লম্বা ইতিহাস। সেগুলো না জেনে পঞ্চানন কর্মকারকে টানা কেন? জোন্স শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ্যবাদের হোতা। তাঁকে অকারণে গ্লোরিফাই করে লাভ নেই।
ব্রতীন্দা, ইজরায়েল ভারতের সঙ্গে যা বাণিজ্য করে, তার পাঁচগুণ বেশি চলে চীনের সঙ্গে। তবে চীন-ইরান ডিল আর ভারত মার্কিনী প্রভাবে আসায় ইজরায়েল সম্ভবত আমাদের অস্ত্র বিক্রি করবে।
রাশিয়ার ব্যাপারটা ভালো। কদিন আগে খুব লাফালাফি হচ্ছিল মনে আছে, যে ভারত জি৭ ফোরামে ঢুকবে, সুপার পাওয়ার হয়ে চীনকে কলা দেখাবে ইত্যাদি? তো সেই জি-সাতে আসার প্রস্তাব ভারত এবং রাশিয়াকে দেওয়া হয়েছিল চীনকে একঘরে করার জন্য। পুতিন স্রেফ নাকচ করে দেন। আলাদাভাবে ভারতের বন্ধু হওয়ার কোনো গল্প নেই। তবে রাশিয়া দু পক্ষকেই অস্ত্র বেচতে পারে। চীনের টাকা বেশি, চীন প্রায়োরিটি পাবে।
লোকজন বলছেন এই শতক এশিয়ার হবে এবং ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এদিকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া - সবার মাঝখানে অসাধারণ ভালো স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন নিয়ে আমরা ভেবে যাব রামচন্দ্র কোন স্থানে জন্মেছিলেন!
#বিদ্যাসাগর
এলেবেলে কি বলতে চাইছেন বুঝছি না।রাম মোহন এর আগে লোকে গীতা বলে কিছু জান তো না? নাকি গীতা বলে কোন গ্রন্থ ছিলো না?
গীতা তো মহাভারতের অংশ।আই মিন যুদ্ধ পর্বে উল্লিখিত হয়েছে।মত ৭০০ টি শ্লোক।মতান্তরে ৭৪৫। অনেকের মতে পরবর্তী কলে মহাভারতের অংশ হিসাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
যাই হোক,যা কিছু হয়েছে,খ্রীষ্ট পূর্ব দ্বিতীয় শতকে বা কিছু সময় আগে পরে। শঙ্করাচার্য শ্লোক গুলি একত্রিত করেন।
গীতার শ্লোকের উল্লেখ অশ্ব ঘোষের রচনায় পাওয়া যায়।সুতরাং গীতার কথা বহু পূর্ব থেকেই পণ্ডিত গণ জানতেন। এমন নয়,রামমোহনের আগে কেউ জানতো না।
বাংলায় মহাভারত রচনার কাজ সম্পন্ন করেন কবিন্দ্র পরমেশ্বর।পঞ্চদশ শতাব্দী তে।অর্থাৎ সেই সময় থেকে মহাভারতের অংশ হিসাবে গীতার সঙ্গে বঙ্গ ভূমির বাসিন্দা দের পরিচিতি।
উইলকিনস এর একটি প্রেস ছিল হুগলী তে। তিনি ১৭৮৫ সালে বেঙ্গলি ফন্টে গীতা ছা পান।এই কাজে সহায়তা করে পঞ্চানন কর্মকার।
এখানে দুটি জিনিষ লক্ষ্যনীয়। পঞ্চানন কর্মকার,প্রথম বাংলা অক্ষর চালু করেন।পরবর্তী কালে,বিদ্যার ওই অক্ষর অনুসরণ করে আদর্শ বাংলা লিপি চালু করেন।
দুই, পঞ্চানন কর্মকার এর মতো বিরাট পণ্ডিত ব্যক্তির টাইটেল টি লক্ষ্যনীয়। উনি যদি ব্রাহ্মণ না হন।তাহলে বলতে হয়,সংস্কৃত শিক্ষার জন্য জাত পাত বিশেষ দরকারী জিনিষ ছিলো না।
ওফ, গীতা বলে আলাদা আচাভুয়া কোনও গ্রন্থ ছিল না কস্মিনকালেও। মহাভারতের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিনই ছিল। মানে শঙ্করাচর্যেরও আগে। এই গীতাকে মাহাত্ম্য দান করে সায়েব চার্লস উইলকিন্স।
বিলিতি ঘোড়াটি চলে গেছে, রেখে গেছে অসংখ্য ঘোড়সওয়ার। তাই এত এত নীপা, উঁহুর হাহুতাশ!!