১
আবার ফেরাও সহজ শহরে
যেখানে দশটা-পাঁচটার পর
ক্লান্ত লোকেরা অন্তত নিঃশঙ্ক বাড়ি ফেরে;
সূর্যাস্তের সিঁদুর পশ্চিমে,
ঘরে ঘরে গৃহিণীরা গা ধোয়,
আর গাঢাকা অন্ধকারে ঘরছাড়া বাবুরা
চকিতে বেপাড়ায় ঢোকে।
...
পুরোনো দিন ফেরে না কোনোদিন।
আকাশের দিকে তাকাই,
আগুনের গোলা যেখানে
আপনমনে জ্বলে;
ধুলো ওড়ে, নেড়া বট মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
গতপত্র ক্লান্ত ভঙ্গীতে।
গাছের যৌবন তবু প্রতি বছর ফেরে
আমরা ক্রমশ ডুবি স্বখাত সলিলে।
সহজ জীবনের পর মৃত্যু -
সে তো বটের উপরে চাঁদের আলো,
কিম্বা শূন্য পাহাড়ে কুয়াশা।
ও ধ্রুপদী শান্তি আমাদের নয়;
অনিদ্রা থেকে দুঃস্বপ্নে আমাদের যাত্রায়
কাক ডাকে,
রোদেপোড়া উদ্বিগ্ন মুখের কালো শব্দ।
বাঙলায় বিহারে গড়মুক্তেশ্বরে
বিকলাঙ্গ লাস কাঁধে
লোক চলে গোরস্থানে
কিম্বা পোড়াবার ঘাটে।
মৃত্যু হয়তো মিতালি আনে;
ভবলীলা সাঙ্গ হলে সবাই সমান -
বিহারের হিন্দু আর নোয়াখালির মুসলমান
নোয়াখালির হিন্দু আর বিহারের মুসলমান
২
শুনি না আর সমুদ্রের গান
থেমেছে রক্তে ট্রামবাসের বেতাল স্পন্দন।
ভুলে গেছি সাঁওতাল পরগনার লাল মাটি
একদা দিগন্তে উদ্যত পাহাড়,
বাইজীর আসরে শোনা বসন্তবাহার।
ভুলে গেছি বাগবাজারী রকে আড্ডার মৌতাত,
বালিগঞ্জের লপেটা চাল,
আর ডালহাউসীর আর ক্লাইভ স্ট্রীটের হীরক প্রলাপ,
ডকে জাহাজের বিদেশী ডাক।
রোম্যান্টিক ব্যাধি আর রূপান্তরিত হয় না কবিতায়।
যৌবনের প্রেম শেষ প্রবীণের কামে।
বছর দশেক পরে যাব কাশীধামে।।
'জন্মদিনে', সমর সেন