এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আর জি করের অধরা বিচার 

    কালের নৌকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ আগস্ট ২০২৫ | ১৩৬ বার পঠিত
  • আর জি কর কাণ্ডে ন্যায় বিচার এখনো অধরা। ঘটনার পর বছর ঘুরে গেলেও। কেন্দ্র রাজ্য সমন্বয়ের একটা ছবি আবছাই হোক আর সুস্পষ্ট হোক, ধরা পড়ছে অনেকেরই কাছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতেই কাঁদুক আর রাজপথ কাঁপিয়েই কাঁদুক। কাঁদতে তো হচ্ছেই। কারণ আসল খুনিরা আজও অধরা। তারা দিব্যি গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরকারি হাসপাতালের করিডোর থেকে বুথে বুথে ভোটার লাইনের নাগরিক পরিসরে। যাঁদের কথা ছিল যথাযোগ্য শাস্তির পরিসরে দিন কাটানোর। সেটি হয়নি। হওয়ার কথাও ছিল না। কারণ একটাই। গণতন্ত্রে গণের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি আসলেই সোনার পাথরবাটিতে কাঁঠালের আমসত্ত্ব খাওয়ার মতো বিষয় একটি। গণ এখানে ভোটার মাত্র। তার বেশি কিছু নয়। আর যদি তারপরেও গণের কোন ভুমিকা থাকে। তবে সেই ভুমিকার একটাই মাত্র পরিসর। শ্রমের উৎপাদনের ক্ষেত্রটুকু। ঐটুকুই সীমানা গণের। সেই সীমাটুকু নির্ধারণের যে তন্ত্র। তারই গালভরা নাম গণতন্ত্র!

    যে তন্ত্রের চালিকাশক্তি পুঁজি। সেই পুঁজিই ঠিক করে দেবে গণতন্ত্র কোথায় কখন কোন ছদ্মবেশে আত্মপ্রকাশ করবে। আমাদের দেশে গণতন্ত্র যে ছদ্মবেশটি ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করেছে। সেটি হলো সংসদীয় আইন ব্যবস্থা। বা আরও একটু স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, সংসদীয় রাজনৈতিক পরিসর। সেই পরিসরের যাঁরা মুখ্য কুশীলব। রাজনৈতিক নেতা থেকে নেত্রী। তাঁদের একটিই ভুমিকা। পুঁজির উন্নয়ন। পুঁজির বিকাশ। পুঁজির একনাকয়কতন্ত্রকে আরও বেশি শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্যগুলির অভিমুখে কাজ করে যাওয়া, নিরন্তর। সে কাজে যে নেতা যে নেত্রী যত সফল হবেন। তিনিই তত বেশি করে পুঁজিপতি ধনকুবেরদের আশীর্বাদ ধন্য হবেন। রাজনীতির সেটাই অন্তিম সার্টিফিকেট। প্রত্যেক রাজনীতিবিদের জীবনের ধ্যান জ্ঞান সাধনা, কেবলমাত্র সেই অভিমুখে ব্যস্ত। বারো মাস চব্বিশ ঘন্টা। বাকি সবকিছু, জনদরদী হাসিই হোক আর প্রতিশ্রুতির ঝুলি দেখিয়ে বরাভয়ের বাঁ হাত নাড়তে থাকা। সব কিছুই আসলে ছেলে ভুলানো ছড়া।

    এখন কথা হলো। কথা হচ্ছিল আর জি কর কাণ্ডের অধরা বিচার নিয়ে। তার ভিতরে হঠাৎ করে এই ধান ভানতে শিবের গীত কেন? কারণ সেই পুঁজি। যার স্বার্থে এবং যার নিয়ন্ত্রণে বাকি সব কিছু। সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রই হোক আর বেসরকারি স্বাস্থক্ষেত্র। পুঁজির নিয়ন্ত্রণের ভিতরেই সব কিছু আবর্তিত। যদি মনে করা হয়, সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র পুঁজির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাহলে কিন্তু মস্ত বড়ো ভুল হয়ে যাবে। কারণটা আগেই দেখানো হয়ছে। পুঁজি রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের মাধ্যমে সংসদীয় পরিসরের ভিতর দিয়েই তার সমস্ত রকমের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা পাকা করে বসে রয়েছে। সেখানে কোন রকম ‘বেহুলার বাসরঘরের ছিদ্র’-এর প্রভিশনও রাখা হয়নি। ফলে সরকারি স্বাস্থক্ষেত্রগুলি ঠিক কিভাবে চলতে থাকবে। সেই দিকনির্দেশও পুঁজিরই নিয়ন্ত্রণে। আর জি করও সেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। আর জি কর কাণ্ডকে এই প্রেক্ষাপটে রেখে না দেখলে, আমাদের দেখাটাই বিপন্ন হয়ে দাঁড়াবে ক্রমশ। জাল ওষুধের চক্রই হোক আর ভুয়ো চিকিৎসক তৈরীর প্রজেক্ট হোক। পিছনে সেই এক এবং অদ্বিতীয়ম পুঁজিরই স্বার্থরক্ষার বন্দোবস্ত। সরকারি স্বাস্থক্ষেত্রকে যত বেশি করে পঙ্গু এবং অক্ষম করে দেওয়া সম্ভব হবে। তত বেশি করে মুনাফা উপচিয়ে উঠতে থাকবে বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের মালিকদের হাতে। সাধারণ মানুষ বাধ্য হবে বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের হাড়িকাঠে মাথা গলাতে। অনেকটা সেই বিএসএনএলের সিম বদলিয়ে ফেলার মতো! ফলত এটা কিন্তু পরিস্কার। পুঁজি তার নিজের স্বার্থেই চাইবে না, বিচারের নামে এই সমগ্র বিষয়গুলি জনসমক্ষে একেবারে বেআব্রু হয়ে পড়ুক। আর জি করের সেই জুনিয়র চিকিৎসকটি যেমন ভাবেই হোক এই সমগ্র ব্যবস্থাটির চোখে একটা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তার মানে এও নয় যে, তিনি সমগ্র ব্যবস্থাটির নাড়ীনক্ষত্র সম্যক জেনে ফেলেছিলেন। অন্তত তাঁর বয়স এবং দায়িত্বের সীমায় সবটুকু জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তিনি যে সমস্ত অনিয়মগুলি মেনে নিতে পারছিলেন না। চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যে সকল দুর্নীতিগুলির পক্ষে কর্তৃপক্ষকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখছিলেন। সেইটুকুই তাঁকে এমন ভাবেই বিচলিত করে ফেলেছিল যে, তিনি কর্তৃপক্ষের চোখে টার্মিনেবল হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি নিজেরই অজান্তে নিজের ডেথ ওয়ারেন্টে সিগনেচার করে দিয়েছিলেন। জানতেও পারেননি।

    এখানে শাসকদলের দুর্নীতির প্রসঙ্গই হোক। আর পুলিশ প্রশাসনের একটি অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়ই হোক। সবকিছুর সুতো বাঁধা সেই পুঁজিবাদী শক্তির হাতেই। যে পুঁজিবাদী শক্তি কেন্দ্রে এবং রাজ্যে সমানভাবেই ক্ষমতার মসনদের পিছনে দাঁড়িয়ে। ফলে কেন্দ্রের সিবিআই আর রাজ্যের পুলিশের তদন্তের ভাষা ও ফলাফল যে একই হবে। এ আর অস্বাভাবিক কি? বরং ভিন্ন হলেই অবাক হতে হতো। আবার একথাও মনে করার কোন উপায় নেই, রাজনীতির পাশা উল্টালেই বুঝি আর জি করের অপরাধীরা ধরা পড়ে যাবে। নেপথ্যের সব গোপন চক্রের উচ্ছেদ সম্ভব হবে। কিছুই হবে না। যতক্ষণ তথাকথিত গণতন্ত্র পুঁজির হেপাজতে পণবন্দি হয়ে আটকিয়ে থাকবে।

    ©কালেরনৌকা (১২-আগস্ট-২০২৫)
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:71fd:61c6:8489:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৫ ২২:০৯733281
  • ' কিন্তু তিনি যে সমস্ত অনিয়মগুলি মেনে নিতে পারছিলেন না। চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যে সকল দুর্নীতিগুলির পক্ষে কর্তৃপক্ষকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখছিলেন। সেইটুকুই তাঁকে এমন ভাবেই বিচলিত করে ফেলেছিল যে, তিনি কর্তৃপক্ষের চোখে টার্মিনেবল হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি নিজেরই অজান্তে নিজের ডেথ ওয়ারেন্টে সিগনেচার করে দিয়েছিলেন। জানতেও পারেননি।'
    - এমনটা হয়ে থাকতে পারে, খুবই সম্ভব 
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২৫ ০২:১১733291
  • তথ্যসূত্র? যদিও মোটামুটি সুপার এর দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলেই জানি - কিন্তু আজ অব্দি কোন চার্জশিটে এরকম কিছু বেরিয়েছে বলে দেখিনি । কবির কল্পনা সত‍্য রামায়ণে বটেক, কিন্তু কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া এই সব অবান্তর বক্তব্যের মানে কি ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন এর ক্ষেত্রে?
  • Ranjan Roy | ১৪ আগস্ট ২০২৫ ০০:৫২733301
  • এই দুর্নীতিগুলো নিয়ে উপরোক্ত ঘটনার চার বছর আগেই একজন স্টাফ থানায় কমপ্লেন এবং আদালতে কেস পর্যন্ত করেছিলেন। সেই কেস ঢিমেতেতালায় চলছিল।
     কিন্তু তিলোত্তমা কোন গুঢ় ব্যাপার জেনে ফেলেছিলেন --এই কথার ভিত্তি কী? কাকে বলেছিলেন? সোশ্যাল মিডিয়ার ক্যাম্পেন ছাড়া কোন তথ্য ত দেখা যাচ্ছে না।
     নিজের কোন বন্ধুকে, সহকর্মীকে বলেছিলেন? 
    এমন কোন তথ্য আছে?
     
    নইলে লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ? 
     
    পুঁজির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কিছু কথা আউড়ে গেলেই হোল?
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন