এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাম ফিনিক্স নাকি ফিনিশ

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১৯৩ বার পঠিত
  • উইকিপিডিয়া বলছে, বামপন্থী রাজনীতি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মকাণ্ড যা সামাজিক অসাম্য ও সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্যকে গ্রহণ বা সমর্থন করে। এই রাজনীতি বিশেষভাবে সমাজে যারা অন্যের তুলনায় কম পায় বা সুযোগহীন থাকে তাদের ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে থাকে অনেক অনেক বছর ধরে। বামপন্থার ব্যাপ্তি শুধু একটি অঞ্চল বা দেশ বিশেষে হলে কিংবা বামপন্থা শুধুমাত্র কোন থিয়োরি হলে এর সম্পর্কে বা এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করা যেত। বামপন্থা একটি মনন ও যাপন। তাই নিরলস ও নিরবচ্ছিন্ন যাপনচিত্র ও মনন শৈলী এর ভবিষ্যত ঠিক করে। তাও বিতর্কের খাতিরে যদি এ বঙ্গের বাম ভবিষ্যত নিয়ে কিছু বলতেই হয় তাহলে আগে এর অতীত, তারপর বর্তমান জানা খুব প্রয়োজন।তবেই ভবিষ্যতের ওপর আলোকপাত করা যাবে।

    বাম রাজনীতির অতীত আর ঐতিহ্য বিভ্রান্তিকর। কারন দু তিন রকম কথাবার্তায় আমরা খুব বিশ্বাস করি। যেমন ধরুন যারা প্রত্যহ বাম নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেচ্ছা করেন তারাই আবার ভালো মাত্রার বাম মানসিকতার বা উন্নততর বামফ্রন্টের ঘোরতর বিরোধী। মানে ওনারা ঠিক কোন পক্ষ তা বোঝা খুুুব কঠিিন। আসলে মূল জায়গাটি হল পরিষেবা, এটা বোঝা দরকার। স্বাধীনোত্তর যুগে কংগ্রেসের জমি বন্টন নীতিগত ভাবে সুপার ফ্লপ ছিল বলেই হয়ত একশ্রেণীর হাতে কাস্তে হাতুড়ি ধরিয়ে জমি যে শুধু তাদেরই ..এই অধিকারবোধের চেতনায় সিপিএম দীর্ঘদিন রাজত্বের স্বাদ নিয়েছে। স্বার্থ ছিল। রাজনৈতিক স্থায়িত্বের স্বার্থ। তাই হয়ত ঝড়ের আগে সরকার আসে না বলে নেতার নাম বলতে হত বাম আমলেও, কারন ঐ স্থায়িত্ব। এই অ সময়ে বুদ্ধবাবু এলেন। ভবিষ্যৎ দ্রস্টা মানুষ । ওনার নজরে পশ্চিমবঙ্গে একটা নন communist গ্লোবালাইজশন এর স্বপ্ন অঙ্কুরিত হওয়া শুরু হয়েছিল কমিউনিস্ট পরিবেশে।

    যা বাস্তবায়িত হওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব। যে রাজ্যের বেশিরভাগ কমিউনিস্ট বিধায়কগন চে গয়েভরার নাম ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারতেন না আর কমিউনিজম মানে গরু খাওয়া বুঝতেন, তারা কাস্তে হাতুড়ির বদলে কলকারখানার চিমনীকে ভোট দেবেন না এই সত্য টা বুদ্ধবাবু দেরিতে বুঝলেন। যখন বুঝলেন তখন মোল্লারা মন্ত্রী, লেলিনের ফ্ল্যাট আইকন, আর সাধারণ নেতারা প্রাইমারী নিয়োগের টাকায় apollo তে পেডিকিউর করাচ্চেন।

    তাহলে কি বাম কিছুই করেনি। করেছে, কি করেছে সেটা জানার জন্য বর্তমানে আসুন।

    বর্তমানে

    চা এর দোকানে কাঁচের কাপ কিংবা ভাঁড় ভর্তি চা আর সাথে উইলস ফিল্টারের ধোঁয়ায় মগজ ঢাকা সান্ধ্য কালীন আড্ডায় মগ্ন অতিশিক্ষিত যুবসমাজ বর্তমান রাজ নেতাদের দুর্বৃত্ত হবার সমস্ত সূত্রপ্রমান ক্যালকুলাসের সূত্রে প্রমান করে সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন হলেও নিজেদের ওই জায়গায় যাবার কথা উঠলেই 'বার খেয়ে ক্ষুদিরাম' নামক অব্যয় ব্যবহার করে কখন যে কেমিস্ট্রির 'ভ্যানিশিং ইন্ক' হয়ে যান তা বোঝাই যায় না। পাড়ার সর্বজ্ঞানী কাকু কিংবা অভিজ্ঞ জেঠুৱা এ আমলে মিউনিপ্যালিটি আর পঞ্চায়েতের কোথায় কোথায় চুরি হয় বা কোন পার্টিকর্মীর কত সম্পত্তি তার সব হিসেব রেখে 'দেশটা শেষ হয়ে গেল' মার্কা মতবাদ দিলেও নিজের বাড়িতে কিন্তু উনি খুব কড়াভাবে পইপই করে নিজের ছেলেমেয়েদের বলে দেন যাতে তারা ভুলেও রাজনীতির কাদায় না ফাঁসে।

    'আমাদের আমলে বাপু এরম ছিল না' বলা কাকিমা জেঠিমারা দুয়ারে চিল চিৎকার জুড়লেও দুয়ারের সরকারের ভিড় সামলাতে বেচারা সিভিকদের গলদঘর্ম অবস্থা বোঝায় 'সামথিং ইস হাইলি সাসপিসিয়াস'।

    তা মশাই, আপনি পাঞ্জাবের মন্ত্রী, আমেদাবাদের পুলিশ, কেরালার হাতি, উত্তরপ্রদেশের পরিষেবা, গোয়ার আবহাওয়া গুয়েভারা এর বামপন্থা, লেলিনের ফ্ল্যাট আর দিল্লির শিক্ষা চাইবেন কিন্তু এই বাংলার উন্নতির বা অবনতির দায় নিতে বললে ‘আমি দাদা রাজনীতি বুঝি না‘ মার্কা বাণী শোনাবেন এটা ঠিক না।

    আপনার অংকে আশি পাওয়া সোনার টুকরো ছেলে মেয়ে বাম দলের ঝান্ডা বাঁধলে আপনার পেস্টিজে লাগে, আপনার ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়া সোনামনি ইনকিলাব স্লোগান দিলে আপনার চুল না থাকা মাথা হেঁট হয়ে যায়, আপনার সুশিক্ষিত বেকার ছেলেকে পরিযায়ী করে ব্যাঙ্গালোরে পোস্টিং করিয়ে পাড়ায় আপনার মান বাঁচিয়ে বৌদিকে রত্নগর্ভা প্রমান করে দার্জিলিং এর চা খাবেন আর দোষ দেবেন ঝান্ডা বাঁধা কিংবা স্লোগান দেওয়া নেতা যদু, মধু আর হোসেন দের, এটা অন্যায়। আপনি ব্যালট বক্সে পুতিনের মত ইন্টারন্যাশনাল আর পাড়ায় আপনি প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাস এই দৈত্ত্ব চরিত্রর জন্যই আজ বাংলার বাম রাজনীতির এই অবস্থা। দায়ী নেতারা নয়। দায়ী দুর্বৃত্তরা ও নয়। দায়ী বাম আমলও নয়। দায়ী আমার আপনার মত গা বাঁচিয়ে সারা জীবন ‘সেফ সাইড গেম‘ খেলা এই সু সচেতন নাগরিক সমাজ। আর এই অতিচালক, এলিটিও, ধান্দাবাজ সু নাগরিক তৈরির দায় কমরেডদের নিতেই হবে।

    এবার আসুন উপসংহারে, তাহলে বাম কি ফিনিশ নাকি ফিনিক্স ? জঙ্গলমহলের শুভ খামরুয়ের নাম শুনেছেন? কিংবা নারান সিংহ? জঙ্গলমহলের এক মন্ত্রীর নাম মুখে আনলাম না। ওনার নাম নিশ্চয় শুনবেন। যেটা শুনেন নি তা হল সরকার পরিবর্তন হলে মন্ত্রীরা অফার পান, পাচ্ছেনও। চলেও যাচ্ছেন অনেকে উন্নয়নে শরিক হতে। কারন, মন্ত্রিত্ব ওনাদের কাছে একটি পদ মাত্র,আর খামরুই বা সিংহ রা শাসানি খেলেও ওদের কাছে ইজ্জতের নাম হল পার্টি। কারন খামরই আর সিংহ বাবু রা ভোটার তৈরি করেন আর বড় বড় নামধারী নেতারা শুধু পদ। তাই ভবিষ্যতে বাম যদি ভোটার তৈরি তে মন না দিয়ে পদ তৈরিতে মন দেন, তাহলে ভবিষ্যত কি আপনি জানেন,কারন, আপনি বাম আমলের বুদ্ধিজীবী। আপনার ছেলে ক্ষুদিরাম না। আপনার মেয়ের ব্যাঙ্গালোরের নার্সিং কমপ্লিট। আপনার জামাই মাল্টিন্যাশনালে চেন্নাই এ। মনে রাখবেন এই বাংলা আমার আপনার সব্বার। এর ভালো মন্দর সব দায় থেকে আপনি গা বাঁচিয়ে পালাতে পারেন না । কারন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে, আপনার দ্বারাই সবাই নির্বাচিত। ততদিন অপেক্ষা সময়ের ইতিহাসের বা ইতিহাসের সময়ের।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৮ জুলাই ২০২৫ ০১:৫৮732781
  • সব মিলে হল Ta কী?
     
    কী করতে হবে?
  • uttara | 2405:8100:8000:5ca1::1a8:***:*** | ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৮:২৮732791
  • নোভোট্টু স্লোগান তুলে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে।
  • Ranjan Roy | ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৯:৫৫732792
  • ভুল!
    নো ভোট টু--স্লোগান মানে যাকে ইচ্ছা দিন, বা নোটাকে দিন।
    কিন্তু  অমুক দলকে দেবেন না।  ওরা যেন কোন ভোট না পায়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন