এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এভাবেও ভাল থাকা যায়!

    ARIJIT MUKHOPADHYAY লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৫ | ৮৩ বার পঠিত
  •  
     
     
     
     
     
     
     
     
    "আচ্ছা রীতিকা....তুমি কোনোদিন ফ্লাইটে ট্রাভেল করেছ?", অফিস থেকে ফিরেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে জুতোটা খুলে ঘেমো জামার হাতাটা গোটাতে গোটাতে সৌমেন জিজ্ঞেস করল।

    "না...হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করছ যে?", রান্নাঘর থেকে সরবত করতে করতে রীতিকা উত্তর দিল।

    বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ধুয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে সৌমেন বলল,"কাল প্রিয়াংশু আর ওর মিসেস সিমলা মানালি ঘুরতে যাচ্ছে.......দিল্লী অবধি ডাইরেক্ট ফ্লাইট..... তারপর ওখান থেকে বাই কার মানালি। সিমলাটা মানালি কমপ্লিট করে তারপর যাবে বলল। সাতদিনের ট্যুর!"

    "ধরো।", বলে সরবতের গ্লাসটা সৌমেনের হাতে দিয়ে ওর পাশে সোফায় বসল রীতিকা।

    এক চুমুকে পুরো গ্লাসটা নিঃশেষ করে হাঁফাতে হাঁফাতে সৌমেন বলল,"আমরা কতদিন কোথাও ঘুরতে যাইনি বল?"

    "হ্যাঁ, অনেকদিন......বিয়ের পর সেই একবারই গিয়েছিলাম.... তাও দীঘা! ওই প্রথম আর ওই শেষ!"

    সৌমেন আর রীতিকা সেই কলেজ লাইফের বন্ধু, সেখান থেকে প্রেম ও তারপর পরিণয়। সৌমেন অনেক কষ্টে সামান্য এক কেরানীর চাকরি জুটিয়েছিল। বাড়ির অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। রীতিকার বাড়ির অবস্থা তুলনামূলক অনেক ভাল। বাবার ব্যবসা, মায়ের চাকরি, রীতিকাও কলেজ শেষ করে পকেট মানির জন্য টিউশন করত। অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রথম দিকটায় ওদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেও পরে রীতিকার একগুঁয়েমি আর সৌমেনের ধৈর্য্য ওদের শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে দেয়। 

    সৌমেনের আপাতত দুজনের সংসার। বাবা মা দুজনেই গত হয়েছেন বছর দুয়েক হল। ফ্যামিলি প্ল্যানিং সবে শুরু করেছে ওরা। কম বেতনে যতটা সম্ভব সঞ্চয় করে বাকিটুকু দিয়েই সংসার চালাতে হয় ওদের। রীতিকা অবশ্য এই অসুবিধার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। সৌমেনের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটাই চেষ্টা করে ও। রীতিকার সব আবদার সময়মত না হলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠিক পূরণ করে সৌমেন। আর এখানেই ওদের ভালোবাসার সার্থকতা।

    ছোট থেকেই সাদামাটা ছেলে সৌমেন। ছাত্রজীবন হোক বা কর্মজীবন, কাওকে ঠকিয়ে ওপরে ওঠার ছেলে সে নয়। আর এই সততার কারণেই সে জীবনে অনেককিছু হারিয়েছে। হারিয়েছে সম্পত্তি, হারিয়েছে অর্থ, হারিয়েছে প্রমোশন ও! 

    সেবার সৌমেনের তৈরি করা রিপোর্ট চুরি করে অ্যাওয়ার্ড পেল প্রিয়াংশু। জেলা থেকে পুরস্কৃত হওয়ার পরেই প্রমোশনটা সৌমেনের পরিবর্তে পেয়ে গেল প্রিয়াংশু আর সৌমেন রয়ে গেল নিজের জায়গাতেই!

    ডিনার সেরে বিছানায় এসে রবীন্দ্রনাথের 'ছেলেবেলা' পড়ছিল সৌমেন। রীতিকা রান্নাঘর গুছিয়ে শোবার ঘরে এল। আজ একটা পাতলা ফিনফিনে, লাল, মিড লেন্থের নাইট ড্রেস পরেছে ও। ঘরে ঢুকতেই সৌমেনের চোখ চলে গেল রীতিকার অর্ধ উন্মোচিত, গৌরবর্ণ, নরম তুলতুলে শরীরের দিকে! বই বন্ধ করে মাথার পাশে রাখল। অন্তর্বাস হীন, মায়াবী, কামাতুর, নিটোল, অর্ধনগ্ন, নারীসুলভ বক্রতা সমৃদ্ধ রীতিকা রাতপরীর মত বিছানার দিকে এগিয়ে এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল সৌমেনের বুকে!

    "নতুন একটা ফ্ল্যাট নেওয়া যায়না, সৌমেন?", সৌমেনের বুকে হাত বোলাতে লাগল রীতিকা।

    "তুমি আমার থেকেও ভাল ছেলে পেতে রীতিকা!"

    "পেতাম হয়ত......কিন্তু তোমায় তো পেতাম না!'

    "আমি তোমাকে কীই বা দিতে পেরেছি বল?"

    "এই যে.....তোমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তের ঘুম? তোমার গায়ের গন্ধ মিশে থাকা একটা ছোট্ট পৃথিবী? তোমার চুমু?"

    "জীবনে এটাই কী সব?"

    "আমার কাছে এগুলোই সব, এই অভ্যেসগুলোই আমার পাওয়া!"

    "দার্জিলিং যাবে?"

    "সত্যি?", সৌমেনের দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল রীতিকা।

    "হুম.....কতদিন বেরোনো হয়নি!"

    "কিন্তু এত খরচ! কীভাবে সব ম্যানেজ হবে?"

    "পরের মাসে না হয় মাছ খাব না, হেঁটে অফিসে যাব, বাইরে টিফিন করব না, সিগারেটের খরচ কমিয়ে দেব। পরের মাসে বই কিনব না। একটা মাস না হয় আমাদের দুজনের জন্য তোলা থাক?"

    রীতিকা কিছু না বলে সৌমেনের বুকে ঘুমিয়ে পড়ল। সৌমেন সারারাত রীতিকার কপালে হাত বোলাতে লাগল।

    পরের দিন সন্ধ্যেতে খুব বৃষ্টি পড়ছে! অফিস থেকে ফিরে সৌমেন এসে নক করল দরজায়। রীতিকা দরজা খুলে দিল। ভিজে চুবুরী ভেজা হয়ে গেছে সে! মেঘও ডাকছে খুব! কাঁধ থেকে ব্যাগ টা নামিয়ে রোজকার মত জুতো খুলে ভিজে জামার হাতাটা গোটাতে গোটাতে আসতেই রীতিকা কে দেখে থেমে গেল সৌমেন!

    "এ কি! তোমার গলার হারটা কই? হারালে নাকি কোথাও?", সৌমেন এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে জিজ্ঞেস করল।

    "সারপ্রাইজ!", বলে রীতিকা দুটো প্লেনের টিকিট বের করে নাড়তে থাকল সৌমেনের সামনে!

    "কী? এগুলো?", বলে সৌমেন টিকিট দুটো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখল - কলকাতা টু বাগডোগরা, সামনের মাসের দু তারিখ!

    "রীতিকা, এত টাকা তুমি কো....... দাঁড়াও দাঁড়াও! মানে তুমি হারটা বিক্রি করে.......! না না না রীতিকা! এটা তুমি একদম ঠিক করনি! তোমার মা তোমাকে বিয়েতে এটা দিয়েছিলেন রীতিকা!"

    "পরে ঠিক একটা গড়িয়ে নেব। কিন্তু আমার এই সময়টাও দরকার ছিল, তোমার সাথে পাহাড়ে একান্তে কটাদিন আমার প্রয়োজন ছিল, তোমার আমার একসাথে প্রথম ফ্লাইটে চড়া আমাদের দরকার ছিল সৌমেন!", বলে সৌমেনের ভিজে যাওয়া শরীরটা জাপটে ধরল রীতিকা!

    সৌমেনও জড়িয়ে ধরল রীতিকাকে! হঠাৎ একটা বিরাট গর্জন করে মেঘ ডেকে উঠল! রীতিকা ভয় পেয়ে আরও শক্ত করে ধরল সৌমেন কে! বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে বাইরে! হঠাৎ যেন লোডশেডিং হল? অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক! মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর চকিত আলোর ছটা আসছে ব্যালকনির দিক থেকে! সেই আলোয় যেন দুজনের ভালোবাসা আরও পরিণত হচ্ছে! পরিণত হচ্ছে ওদের অনুভব! ওদের অনুরাগ! ওদের কান্না! ওদের চুম্বন, কাম, যৌবন!

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ২২ মে ২০২৫ ১৮:৫৮731564
  • চমৎকার লাগল। লেখার ফর্ম , কন্টেন্ট সব দিক থেকেই এটার ধারেপাশে কোন রোমান্টিক গল্প পড়িনি,বাংলায় সম্ভবত লেখাও হয়নি
  • ARIJIT MUKHOPADHYAY | ২২ মে ২০২৫ ১৯:১০731565
  • আপনাদের মত পাঠক বা পাঠিকা আছেন বলেই হয়ত লেখা বেরোয়! অনেক ধন্যবাদ সময় বের করে গল্পটা পড়ার জন্য। ভাল থাকবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন