এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আজ বিষুব দিবস 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ মার্চ ২০২৪ | ৫১৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে …….
     
     
    আজ কত তারিখ বলুন তো ? ঠিক বলেছেন। আজ ২১ মার্চ ,আজ বসন্ত বিষুব দিবস। আজ থেকেই পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের মানুষেরা বসন্ত কালকে আহ্বান জানায়। শীতের দীর্ঘ শীতল অনুভূতি দূরে সরিয়ে একটু উষ্ণতার জন্য আকুল হৃদয়ে দিনটিকে স্মরণ করার চেষ্টা।
     
    আর একটু খোলাসা করেই না হয় তাহলে বলি। সবসময় কি আর হেঁয়ালি ভালো লাগে? এ কথাতো সকলেরই জানা আছে যে আমাদের পৃথিবী সৌর পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পারিবারিক অনুশাসন মেনে নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট উপবৃত্তীয় চলনপথে তাঁদের নিরন্তর সূর্য প্রদক্ষিণ করে চলা। 
    এই যে চলন তার আবার দুটি ছন্দ - এক) নিজের অক্ষ বা মেরুদণ্ডের ওপর শরীরী ভারটাকে সঁপে দিয়ে ক্রমাগত পশ্চিম থেকে পুবে বনবনিয়ে ঘুরে চলা । এভাবে ঘোরার ফলেই প্রায় গোলীয় পৃথিবীর এক অংশ একবার করে সূর্যদেবের সামনে আসে , হয় দিন। আর আলোকিত অংশের বিপরীতে হয় রাত। পৃথিবীর এই লাট্টুর মতো ঘুরে চলাকে বলে আহ্নিক বা দৈনিক গতি। এই প্রদক্ষিণ কালের সময়সীমা ২৪ ঘন্টা।
    অন্য দিকে , ২) নিজের মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে কক্ষতলের সঙ্গে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলানো অবস্থায় নিরন্তর চলতে চলতে প্রায় ৩৬৫ দিনে একবার কক্ষপথটি পাড়ি দিয়ে আসে পৃথিবী। তাঁর এই বিশেষ চলন ভঙ্গিটি পরিচিত পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি হিসেবে। এই পরিক্রমণ গতির ফলেই পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে নানান ঋতুর দেখা মেলে। একটানা এক‌ই রকম তাপীয় আবহে আমাদের কখনোই কাটাতে হয়না ‌। কখনো ঠাণ্ডা, কখনো প্রখর উষ্ণতার পরশে পরাণ যায় জ্বলিয়া তো ,কখনো বসন্ত বা শরতের মৃদু উপভোগ্য তাপীয় আবহে দিন কাটে আমাদের।
    পৃথিবীর অক্ষটি এমন ঘূর্ণায়মান তির্যক অবস্থানে আছে বলেই পৃথিবীর এক একটি গোলার্ধ সূর্যের দিকে ক্রমান্বয়ে হেলে থাকে। সূর্যের আপতন কোণের লম্বত্ব ও তির্যকতার ওপর নির্ভর করে দিনমানের দৈর্ঘ্য, তাপীয় ফলের পরিমাণ।গরম বা শীতের প্রাখর্য। পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যদেবের চলন নির্দিষ্ট পথেই সীমায়িত পরিভাষায় যাকে বলে রবিমার্গ বা রবিচলন পথ। এই পথের উত্তর ও দক্ষিণ সীমায় রয়েছে দুটি চেকপোস্ট রেখা – উত্তরের কর্কটক্রান্তি ও দক্ষিণের মকরক্রান্তি। এই দুই রেখার প্রান্তিক অবস্থানকে এড়িয়ে সূর্যদেব কখনোই আরও উত্তর বা দক্ষিণে উঁকি দিয়ে দেখতে পারেন না। পৃথিবীর মাঝখানে রয়েছে বিষুব রেখা। এই মধ্যরেখা থেকে সুর্যিমামা একবার উত্তরদিকে সরে যান , ফলে উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে একটু একটু করে। শীতের জড়তাকে দূরে সরিয়ে উষ্ণতার ছোঁয়ায় চনমনে হয়ে ওঠে উত্তরের সমগ্র প্রাণীকুল। এক‌ই অনুভূতি হয় দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষজনের, বিষুব রেখায় ক্ষণিকের বিরতি নিয়ে সূর্যদেব দক্ষিণে তাদের দিকে সরে গেলে। বছরের মাত্র দুটি দিন সূর্যদেব বিষুব রেখার ওপর অবস্থান করেন। এই দুটো দিন পৃথিবীর সর্বত্র রাত ও দিনের দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই দিনগুলোতে আসলে সূর্যদেব ব্যাটন বদলে একবার উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে তুলে দেন। ২১ মার্চ ও ২২ সেপ্টেম্বর হলো এমন দুটি বিষুব দিন। বসন্ত বিষুব এবং শারদ বিষুব।
    আজ থেকে উত্তর গোলার্ধে শীতের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ও মৃদু ভাবাপন্ন বসন্তের আনুষ্ঠানিক আগমন ঘটে। এবার থেকে দিনের দৈর্ঘ্য আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে,কমবে রাতের মতস্থায়িত্ব। এক‌ই ভাবে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মের অবসানের পর মৃদু শরৎ ঋতুর সূচনা হয়। দক্ষিণী মানুষজন প্রত্যাসন্ন শীতের জন্য তৈয়ারী শুরু করে ধীরে ধীরে।
    এসব‌ই মহাজাগতিক ঘটনা যা আমাদের জীবনকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। পৃথিবীর মানুষ হিসেবে আমাদের জীবন যাপনের আনন্দময় অনুসরণ এই প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে। পৃথিবীর নানান দেশে সূর্য পরিক্রমণের এই বিশেষ দিনটিতে বিপুল উৎসাহে পালন করা হয়। যেহেতু মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলোতে দীর্ঘ শীতল ঋতুর দাপটে জীবন স্থবির হয়ে যায় সেহেতু ঐ অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষজন অধীর আগ্রহে বসন্তের প্রতীক্ষায় দিন কাটায়। বসন্ত বিষুব এই কারণেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার আহ্বান জানায় । চলে হৈচৈ, খাওয়াদাওয়া, চলে স্বজনবন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হ‌ওয়ার পালা।
    এই দিনেই পালন করা হয় পার্সি নববর্ষ ন‌ওরোজ। ইরান বা পারস্যের লোকজন তাঁদের নতুন বছরকে বরণ করে নেয় এই বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে। 
    জাপানের মানুষজন মেতে ওঠে
    শুনবুন নো হাই উৎসবের আনন্দে। উপমহাদেশের ভারত ও নেপালে চলে হোলি উৎসবের প্রস্তুতি , বুড়ির ঘরে আগুন দিয়ে বঙ্গদেশীয়রা মেতে দোল উৎসবের আনন্দে। থাইল্যান্ডের সোক্রান বিষুব দিবসের আনন্দময় উদযাপন। পিছিয়ে থাকেনা ইংল্যান্ড, মেক্সিকো , পোল্যান্ড কিংবা বুলগেরিয়ার মানুষেরা। শীতের সমস্ত জড়তা কাটিয়ে নব আনন্দে মেতে ওঠে আপামর জনসাধারণ।
    আমরাও স্বাগত জানাই সূর্য প্রদক্ষিণের এই মহাক্ষণটিকে।
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায় | 2405:201:8000:b1a1:20df:80d2:b5d6:***:*** | ২১ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫৩529617
  • বাহ্! সকাল হতে না হতেই দিনের বাণী হয়ে লেখা স্ক্রিনে হাজির !!! এমন ছোটখাটো অনেক কথা বিস্মরণ হয়ে গেছে। গুরুর সৌজন্যে তাদের সঙ্গে নতুন করে ভাব জমছে। জয় গুরু । 
  • Mahua | 2405:201:8000:b1a1:20df:80d2:b5d6:***:*** | ২১ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৬529620
  • Oh! Today is Vernal Equinox. This article reminds me of my bygone school days. Great feeling.
  • শ‍র্মিষ্ঠা লাহিড়ি | 2405:201:8016:d7:9098:c9e9:b4d2:***:*** | ২১ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৩529622
  • বিষুব-দিবসের এতো সুন্দর ব‍্যাখ‍্যা যে বিষয় টি মন ছুঁয়ে গেল।সব অনুধাবন করা সহজ হয়ে গেল।লেখক কে ধন‍্যবাদ।
     
     
     
     
     
     
     
     
  • Sara Man | ২২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪২529685
  • ইস্কুলের বইতে দিন দুটিকে মহাবিষুব আর জলবিষুব বলা হয়। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় "বাসন্তী ক্রান্তি" আর "শারদ ক্রান্তি" নামে ডাকলে বেশি সুন্দর লাগে। 
  • Somnath mukhopadhyay | ২২ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৯529688
  • মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ক্রান্তি কথার অন্য ব্যাখ্যা আছে। যেমন মকর সংক্রান্তি। বিষুব কথার অর্থ হলো সমান রাত ও দিন। ভেবে দেখুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন