এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভাবতে শিখছি

    Shyamali Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩০৬ বার পঠিত
  • দেখেছি  সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড একই নিয়ম মেনে চলেছে। একই ভাবে প্রতিদিন সূর্য ওঠে পূবে আবার সারাদিন প্রাণের স্পন্দন  বাঁচিয়ে রেখে টুক করে ঢলে পড়ে পশ্চিমে। প্রতিদিন তার একই কাজ আর তার সাথে তাল মিলিয়ে চলে আমাদের জীবন। বনের প্রাণী   বা গাছের পাখি অথবা এই যে বিশ্বব্যাপী জীবনচক্র তার সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয় একটা বিশেষ ছন্দ অনুসরণ করে। কোথাও কোন ব্যতিক্রম নেই তার। প্রকৃতিও চলে সেই নিয়ম মেনেই। নির্দিষ্ট সময়ে তার পাতা ঝরে  নতুন পাতার  জন্ম হয় কুঁড়ি ধরে  পাতার ফাঁকে ফুল ফোটে আবার  ফুল শুকোয় ঝরে পড়ে আবার  আবার নতুন গাছ জন্মায়  নতুন পাতারা আসে।  মনুষ্য জীবনেরও তো  সেই একই ধারা । মূলত জন্মের পর থেকেই তো অপেক্ষা করি মৃত্যুর জন্য। মাঝে কিছুটা সময় থাকে নিজের জন্য পরের জন্য, কিছু কাজেরজন্য।

    এই যে বিশ্বব্রহ্মান্ড চলেছে একই নিয়মে এর মধ্যে একটা বিশেষ ছন্দ আছে  বলে মনে হয় ! অসংখ্য লক্ষ কোটি গ্রহতারা নিয়ে সৌর জগৎ তার কাজ করে চলেছে আপন মনে, সেই অভিঘাত এসে আমার প্রাণে লাগে। অনুসরণ করতে চাই সেই ছন্দ বুঝতে চাই সেই  ছন্দ লয়ের অন্তর্নিহিত প্রবাহ।

    একটু ভাবলেই অথবা মাটির বুকে কান পাতলেও  হয়তো  শুনতে পাব সেই মাটি থেকে নভোমন্ডল, বৃক্ষরাজি থেকে দিগন্ত ছুঁয়ে বেজে চলা এক অনবদ্য সুরের অশ্রুত ধ্বনি। অন্তর্নিহিত এই তাল লয় ছন্দ সবক্ষেত্রেই সমান প্রযোজ্য। সে নয় শুধু গান-বাজনা নয় নাচের তাল ছন্দ, সেএক মস্ত বড় পরিসরে  বিস্তৃত।

    নিজেকে প্রকাশ করি কত ভাবে, সাহিত্য  গান গল্প আড্ডা নাচ বাজনা সমাজসেবা। মানুষের জন্যই সব কাজ, আমার সুখ আমার অন্তরের ভাব  ইচ্ছে দুঃখ বোঝানোর জন্যই  কত চেষ্টা। কিন্তু যাকে বোঝাতে চাই তার সাথে চাই মনের মিল, যেটা একছন্দে বাঁধা থাকবে। 

    এখানেই একটি অন্তর্নিহিত সুরের কথা মনে আসে। যেসুরের সঙ্গে বাঁধা পড়বে মন। সেই তো সুরের বাঁধন, সে বাঁধনের জন্য চাই সাধনা। সেই সুর যা মিলে যাবে দিগন্ত ভেসে বেড়ানো সুরের সাথে, যে গানের সুরে হৃদয়  কেঁপে উঠবে। 

    এমনই এক অন্তর্নিহিত সুর ছন্দের মিলন ঘটে লেখার সাথে লেখকের, শিল্পীর সাথে শিল্পের। সাহিত্য কর্ম মিশে থাকে, বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা আবেগের সাথে। সাহিত্যিক অনুভব করেন তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মর্ম বেদনা। যখনই তা অনুভব করেন সৃষ্টি হয় কালজয়ী সাহিত্য। নিজের সৃষ্টির সাথে এই একাত্ম বোধ না আসা পর্যন্ত সফল সাহিত্য জন্ম নিতে পারে না। 
     আমরা সবসময়ই ট্রাজেডি ভালোবাসি। কারণ দুঃখের সাথে  আমরা ভীষণ ভাবে একাত্ম হতে পারি। নিজেকে সেই দুঃখী চরিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখি। সমানভূতি আসে যদি এমন দুঃখের সময় বা ঘটনা আমার সাথে ঘটে? অথচ আনন্দের ঘটনায় খুশি হই তবু তা নিজেকে নিয়ে তেমন ভাবায় না, এতো সত্যি। এই কারণে গ্রীক ট্র্যাজেডিগুলো আজোও আমাদের আকর্ষণ করে। অন্তর্নিহিত ছন্দের বন্ধন এখানেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বারবার। 

    বিষয়বস্তুর গভীরে সতত বহমান ছন্দ সুরের যে ঐকতান তা যদি শিল্পীর কর্ণগোচর না হয় তাহলে শিল্প সার্থক হয়ে ওঠা কঠিন। 

    যেকোন শিল্প মাধ্যম তা সাহিত্য কবিতা গান নৃত্য বা নাটক সবক্ষেত্রেই এই অন্তর্নিহিত সুর মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করা দরকার। 

    ব্যাকরণ নিখুঁত করে কঠিন ছন্দে কঠিন ভাষা ব্যবহার করে পদ্য আমি লিখতেই পারি কিন্তু আমার মনের তাৎক্ষণিক অনুভূতি তাতে প্রকাশ পায় না, প্রকাশ পায় শুধু আমার বৈদগ্ধ্য। হ্যাঁ বৈদগ্ধ্য প্রকাশের ও প্রয়োজন আছে। সেতো জ্ঞান লাভ এবং বিতরণের প্রয়োজনে। কিন্তু সেখান থেকে আহৃত  জ্ঞান আমাকে শেখাবে কীভাবে হৃদয় হতে উৎসারিত আলো অন্য সকলকে আলোকিত করতে পারে। সেই আলোতে ভালোবাসা থাকবে, থাকবে সমবেদনা তখনই তো বুঝে নেব কোন অন্তর্নিহিত সুরের যাদু সমস্ত শিল্পকে সার্থক করে তোলে। 
     আসল ব্যাপার হল যে আবেগ বা আমার মর্মানুভূতি আমি সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই তা আমাকেই আগে আত্মস্থ করতে হবে। নিজের ভেতর যে আমার আমি তাকে জেনে চিনে প্রকাশ করি তখন সেই 

    আবেগ ছুঁয়ে যাবে আরেকজনকে। শিল্পী এবং দর্শক শ্রোতার সাথে নিরন্তর এক সেতু   তৈরি  হবে  তখনই শিল্প সার্থক. হয়ে ওঠে। 

    অভিনয় গান নাচ সাহিত্য সবই এক একটি শিল্প।  এযেন "কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো" এই বিখ্যাত কবিতার মতই। মর্মে প্রবেশ করার জন্যই বোঝা প্রয়োজন কোন বিষয়ের 
    অন্তর্নিহিত সুর ছন্দ। দায় কিন্তু শুধু দর্শক শ্রোতা বা পাঠকের নয়। যিনি তুলে ধরবেন তার মরমের অনুভূতি দায় তারও অনেকখানি। বস্তুতঃ দায় তো তারই বেশি। তার অন্তরে বয়ে যাওয়া বেদনা বা আনন্দ কে সামনে বসে থাকা মানুষটিকেও  যখন আলোড়িত করবে তখন দুজনেই এই অদৃশ্য এক ছন্দে বাঁধা পড়েন। 

    চোখ কান আর মন এরাই অনুভব করে জগতের চলমান ছন্দ। রস উপভোগ করতে হলে এই ছন্দের তারে  ঝংকার তুলতে হবে যা ছড়িয়ে যাবে ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে মন থেকে মনে-হৃদয় থেকে হৃদয়ে, নির্মাণ হবে শিল্পের সেতু। তা নাহলে সেই যে রাধিকার গভীর ব্যথা  বিদ্যাপতির  ভাষায় রূপ পেল
         জনম অবধি হম রূপ নেহারলু
         নয়ন না তিরপিত ভেল
         লাখ লাখ যুগ হয়ে হিয় রাঁখলু
         তব হইয়া জুড়ন না গেল
         সোই মধুর বোল শ্রবণহি শুনলু—ইত্যাদি র মত অতৃপ্তিতে বারবার  ব্যর্থ হবে শিল্পের  রাজত্ব। যেসব শিল্প দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারে তা এই অন্তর্নিহিত সুরের সাথে তাদের ভিতরে বাইরে গভীর পরিচয় হয় বলে।  
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Jhanku Sengupta | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২২528910
  • বাহ্ !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন