এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রিচার্ড  ইটনের প্রাসঙ্গিকতা

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মে ২০২৩ | ৫১৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কল্পনা করুন এক গবেষকের কথা যিনি একটা ম্যাপ নিয়ে বসে আছেন। দেখছেন দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যার বিন্যাসের প্যাটার্ন। তাঁর তথ্যভিত্তি হল ১৮৮১ সালের বৃটিশ ভারতের সেন্সাস। এই সেন্সাসটাকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করেন ইতিহাসকাররা। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যাচ্ছে ইসলামের কেন্দ্র আরব বিশ্ব থেকে বহু দূরে এমনকি দিল্লীকেন্দ্রিক ইন্দোমুসলিম শাসকদের সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত পূর্বসীমায় ইসলামধর্মীয় মানুষের বিরাট সংখ্যাধিক্য রয়েছে। কেন এটা হয়?  কী ভাবে সম্ভবপর ? দিল্লী সাম্রাজ্যের উত্তর, উত্তরপশ্চিম সীমান্তে না হয় মধ্য এশিয়া থেকে আসা বাণিজ্যপথ ধরে কখনও বাণিজ্য উদ্দেশ্যে কখনো যুদ্ধবাজ আক্রমণকারী-ভাগ্যান্বেষী গোষ্ঠীর কার্যকলাপে বিরাট মাইগ্রেসন হচ্ছে ইসলামধর্মীয় মানুষের। ইন্দোমুসলিম শাসনকেন্দ্রের নৈকট্য আর সুফি প্রভাবে জনগোষ্ঠীর ইসলামে ধর্মান্তরীকরণ সম্ভব হচ্ছে সেখানে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে না হয় নৌবাণিজ্যের হাত ধরে লেনদেনের সম্পর্কে ইসলামের উপস্থিতি জাস্টিফাই করা যাচ্ছে। কিন্তু পূর্বসীমান্তে এরকম কোন নিরন্তর যোগাযোগ বাস্তবতা মধ্যযুগে তো সম্ভব ছিল না যে বড় আকারে মাইগ্রেসন সম্ভব। কে না জানে ১২০৪ সালে ঘোরি সেপাইসালার বখতিয়ার খলজি এসেছিলেন গুটিকয় ঘোড়সওয়ার নিয়ে। প্রতিষ্ঠা করেন বাংলার সুলতানশাহীর। শাসক হয়েও বাংলার নানা সুলতানশাহী কখনই সংখ্যাধিক্য পায় নি।

    সুলতানরা দূর্গভিত্তিক কার্যকলাপে সন্তুষ্ট ছিলেন। অনেকটা কলোনিয়াল ব্রিটিশ মডেলে গ্যারিসন স্টেটের মতো। সেনা ছাউনিকে ধরে শাসন শোষণের কাঠামো নির্মাণ। তবে চার-পাঁচশো বছরের মধ্যে এই বিপুল ইসলামী জনসংখ্যাধিক্যের ব্যাখ্যা কি? তলোয়ারের জোরে বেশিরভাগ মানুষ ইসলামে ধর্মান্তরীকরণ হয়ে গেলে তো সেটা আরো বেশি হতে পারত উত্তর, উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে? কই  সেখানে তো মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেখাচ্ছে না ১৮৮১সালের সেন্সাস?

    ম্যাপটা দেখছিলেন আর কেউ নয় পৃথিবীর মধ্যযুগের ইতিহাসের অন্যতম স্তম্ভ মার্কিন গবেষক রিচার্ড  ইটন। উনিশ শো তিরানব্বইতে আমরা পেলাম যুগান্তকারী গবেষণামূলক বই দ্য রাইস অফ ইসলাম এ্যান্ড দ্য বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার ১২০৪-১৭৬০।যে বই বাংলার মাটিতে গড়া, জঙ্গল হাসিল করে চাষবাসের প্রসারের আর হস্তশিল্পভিত্তিক অর্থনীতির উপযোগী আঁতাতকামী রাজনৈতিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্ভর, ভক্তিমার্গী সমন্বয়পূর্ণ সুফি প্রভাবিত এক ইসলামের পরিচিতি ঘটায়। আরবি-ফার্সি দ্বারা  ক্ষীণ প্রভাবান্বিত এই অন্য ইসলামের অনুসন্ধান প্রথাগত ইসলামের ভ্রামমানতা রহিত এক কৃষক সত্ত্বা নির্মাণের প্রকল্পও বটে। হিস্টিরিয়োগ্রাফিতে ইটন সাহেবের এই কাজ এক অন্য জানলা খুলে দিল। বিবর্তনধর্মী ধর্মান্তরীকরণের এই প্রকল্প সন্ধান উন্মোচিত করল চিন্তার নানা দিগন্ত। দুঃখের বিষয়, যাঁদের জন্য কাজ করলেন সেই বঙ্গজন কজনই বা পরিচিত ইটন সাহেব সম্পর্কে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Indra Mukherjee | ১৮ মে ২০২৩ ১১:৫৬519870
  • বিবর্তনধর্মী conversion ? Force নয় , moral suasion নয় , দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ও সামাজিক সুবিধা অসুবিধা ও নয় তাহলে কি ? লেখা উৎসুক করে দিল 
     
  • Upal Mukhopadhyay | 116.193.***.*** | ১৮ মে ২০২৩ ১৫:২৫519875
  • বাংলার ইসলামের ব্যাপক প্রসার হয়েছিল জাঁকালো সুফি দরগার গমক ঝমক দেখিয়ে বা শাসনের জবরদস্তিকে ধরে নয়। এখানের দরগার কাঠামো আটপৌরে দোচালা মন্দিরের ধাঁচে। কোন কোন ক্ষেত্রে খড়ের চালা। যেমনটা শীতলা শনির আটপৌরে থানগুলো। দুটোই পাশাপাশি সহাবস্থান করত। পুরোটাই জঙ্গল হাসিল করে চাষের জমির প্রসারের কৃষক প্রকল্প। প্রথাগত ইসলামের ভ্রাম্যমানতা ব্যতিরেকে স্থানু কৃষক জীবনের উপগাথা। ওই মসজিদ বা দরগাগুলো কৃষি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ বহুবিধ ভূমিকা পালন করত। যেমন ঋণদান নেটওয়ার্ক তৈরি করা। 
     
  • Upal Mukhopadhyay | 116.193.***.*** | ১৮ মে ২০২৩ ২০:৩৬519879
  • "Eaton examines two zones with respect to Indo-Islamic interactions and conversion practices. In the western Punjab and eastern Bengal, we find radically different sets of conditions for conversion patterns. Eaton uses his familiarity with Bengali to describe how the emergence of a landed peasantry and the growth of agriculture led natives to convert. In particular, as deforestation accelerated and farming systems changed, the number of peasants with Muslim names increased."
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন