এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হরখা বাইয়ের প্রতাপের সামনে গুটিয়ে গেল ইংরেজ

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ৫৮৯ বার পঠিত
  • শিশু ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে মোঘল বাদশাহী তাঁবুর পাল ষোলোশো আঠেরোর ডিসেম্বরে ফতেপুর সিক্রির কিনারে এসে ঘাঁটি গাড়ে, আগ্রা কুড়ি কিলোমিটার। সে জায়গাটা সবে তিন বছর বিউবনিক প্লেগের তাণ্ডব চলে ঠাণ্ডা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের মা জয়পুরের এগারো কিলোমিটার দূরে আমের বা অম্বরের কাছওয়া রাজকুমারী মারিয়াম উজ জামানি উরফে হরখা বাই নতুন ছেলের মুখ দেখতে এলেন, সঙ্গে হয়ত কলা বেচার কাজও ছিল অত্যন্ত ধনী এই স্বাধীন মহিলা উদ্যোগীর। তাঁর প্রতিপত্তির একটা নমুনা - অন্য অনেক কিছুর মতো জাহাঙ্গীরের সময়ে সবচেয়ে দামি প্রাকৃতিক রঙ নীলের একচেটিয়া ব্যাবসাটা ছিল ওনার হাতেই।

    জাহাঙ্গীরের আমলে পর্তুগিজরা মক্কার নৌবাণিজ্য পথ নিয়ন্ত্রণ করত। রীতিমত তোলাবাজি করত তারা। রাজমাতা হরখা বাইয়ের জাহাজ রহিমি তারা লুট করে নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তা ফিরিয়ে আনতে পারেননি জাহাঙ্গীর। তাই হয়তো তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দূত উইলিয়াম হকিন্সকে জায়গা দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ইংরেজদের দিয়ে পর্তুগিজদের জব্দ করা। পরে তা সফলও হয়। আর একটা কারণ হল হকিন্সের চোস্ত তুর্কিতে বাদশাহের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা। জাহাঙ্গীর হারেমের এক শ্বেতাঙ্গনা আর্মেনীয় মারিয়ামের সঙ্গে হকিন্সের বিয়ে দেন।

    যাই হোক,  রাজস্থানের বায়ানা থেকে নীল কিনতো হরখা বাইয়ের এজেন্টরা। সেখানে একটা বাগানও ছিল তাঁর।  জলাভাব দূর করতে কুড়ি হাজার টাকা ব্যয়ে একটা ধাপ কাটা ইঁদারা বানান তিনি। এলাকার সব নীল নিলামে তাঁর এজেন্টরা কিনে নিতো। সেসব মক্কার আন্তর্জাতিক বাজারে যেত আর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ত দুর্মূল্য নীল। বাদশাহের সঙ্গে  ঘনিষ্ঠতার সুযোগে হকিন্স হয়তো একটু বেড়ে খেলতে গিয়েছিলেন। তাঁর এজেন্ট ইউলিয়াম ফিঞ্চ বায়ানার নীলের নিলামে হরখা বাইয়ের এজেন্টের থেকে বেশি দাম হেঁকে সব মাল তুলে নিলো। আর যায় কোথায়! ক্ষিপ্ত রাজমাতার রাগ থামাতে হকিন্সকে সপরিবারে দূর করে দেওয়া হল, বলাই বাহুল্য ফিঞ্চকেও। ভগ্নোমনোরথ হকিন্স যাত্রাপথে মারা যান, ফিঞ্চও।

    বিধবা মারিয়াম হলেন মোঘল যুগের প্রথম মহিলা যিনি বিলেতে পা রেখেছিলেন। এমনই ছিল হরখা বাইয়ের প্রতাপ। কারণটা শুধুই মোঘল সালতানাতের তলোয়ারের দাপট নয় পৃথিবীর সেরা শিল্পোন্নত দেশ ছিল প্রাক আধুনিক মোঘল ভারত। প্রভাবশালী অভিজাতরা অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য করে স্বাধীন ভাবে ধনসম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন সমৃদ্ধ অর্থনীতির বুনিয়াদ। চমকে ওঠার মতো কথা হলো এই ধনীদের তালিকায় অর্ধেক ছিলেন মহিলা। তবে এসব ইতিহাসের সত্যিতে  উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। হরখা বাইকে কল্পকথার গল্পে  যোধা বাই সাজিয়ে সিনেমা বানাতে বা সেলিম উরফে জাহাঙ্গীর বাদশাহর সঙ্গে কল্পিত আনারকলির প্রেমগাঁথায় যেন উৎসাহ।

    ( আলমগীর উপন্যাসের অংশ - উপল মুখোপাধ্যায় )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৯519222
  • উপন্যাসটি টানছে।
  • সুকান্ত | 2409:4061:4e83:5d9:12e:3b1e:47eb:***:*** | ১১ মে ২০২৩ ০৯:১৫519653
  • ভালো লাগছে
  • চোস্ত তুর্কি | 117.194.***.*** | ১১ মে ২০২৩ ২২:০৫519690
  • "কারণ হল হকিন্সের চোস্ত তুর্কিতে বাদশাহের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা"
    মুঘল কোর্টের ভাষা ফারসী ছিলো না  ?
  • upal mukhopadhyay | ১৪ মে ২০২৩ ১০:৪৬519788
  • মোঘল কোর্টের ভাষা ফার্সি ছিল। মারাঠা কোর্টের উদ্দেশ্য ছিল এই ফার্সি প্রভাব থেকে বেরিয়ে  আসা। শিখ কোর্টের ভাষা ফার্সি ছিল। ফার্সির এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের জন্য রিচার্ড ইটন ১০০০-১৭৬৫ পারসিওনেট এজ বলেছেন আর ৪০০-১৪০০ সংস্কৃত এজ। অর্থাৎ চারশো বছর কোর্টের ভাষা ও সাংস্কৃতিক  ভাষা হিসেবে এ দুয়ের যৌথ আধিপত্য চলেছে। তারপরেও সংস্কৃত ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে মোঘল কোর্টের প্যাট্রনেজে। এ বিষয়ে এ্যান্ড্রে ট্রুস্কের কাজ গুরুত্বপূর্ণ ।  চাগতাই তুর্কি মোঘল রাজ পরিবারের ‘দেশের’ ভাষা ছিল। ওই ভাষার প্রতি তাঁদের সাংস্কৃতিক টান ছিল। সেই সুযোগটা উইলিয়ম কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীরের দোস্ত বনে যান। সেটা বাদশাহর দরাজ দিল আওয়ারা টাইপের জন্য সম্ভব হয়।  এটা শাহজাহান বা ঔরঙ্গজেব হলে সম্ভব হতো না। তাঁরা ঘেঁসতেই দিতেন না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন