মেন্টাল টর্চারের কোনও প্রমাণ থাকে না। এখন ডাক্তারেরা বলতেই পারেন, যে গবেষকটি স্ট্রেস নিতে পারে নি, সবার স্ট্রেস নেবার ক্ষমতা সমান নয়। হয়ত সেই গাইড বলে দেবেন, যে গবেষকটির কাজের মান ভাল ছিল না, ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাত থাকবেই। জিনিসটা আদালতে প্রমাণ করা খুব শক্ত। হয়ত বলে দেবে যে, এনার আন্ডারে আর যারা কাজ করেছে তারা তো কই আত্মহত্যা করে নি!
কারোকে সরাসরি খুন করে ফেললে তা তদন্ত করে বের করা যায়। মার্ডার ওয়েপেন পাওয়া যায়, বিষ খাওয়ালে সেটাও ফরেনসিকে ধরা পড়ে। কিন্তু তিলে তিলে মানসিক অত্যাচার করে একজনকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, যখন তার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে এবং সে চুড়ান্ত অবসাদে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে, এগুলো আদালতে প্রমাণ করা খুব শক্ত। আত্মহত্যার প্ররোচনার কেসও এই ধরণের হয়। আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যাওয়া যায়।
মোমবাতি মিছিল কতদিন চালানো যাবে? সত্যিই কি আদালতের রায় গাইডের বিপক্ষে যাবে? গাইডের চাকরিটি থাকবে না খোয়া যাবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন আলোচনা পড়বার পর যা বুঝছি, পাজি গাইডরা গবেষকদের চাপে রেখে নানানরকমের মানসিক অত্যাচার করে এক ধরনের আনন্দ পায়, করাপ্টেড গাইডও থাকে।
কবছর আগে সম্ভবত অ্যামেরিকায় একজন ভারতীয় গবেষক আত্মহত্যা করেন। সঠিক তারিখ বা জায়গাটার নাম মনে নেই। সেখানেও তার গবেষণার কাজ কেউ চুরি করেছে এরকম অভিযোগ তিনি করেছিলেন।
যাইহোক, অসাধূ/পাজি গাইডের ওপর নজরদারি করবার মতো সেরকম কোনও ব্যবস্থা বোধহয় কোনও দেশেই নেই। গবেষকদের নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা, উপহার নেওয়া বা উপহার দিতে বাধ্য করা, এগুলোর ওপরেও নজরদারির ব্যবস্থা থাকা দরকার। এ জিনিস দীর্ঘকাল ধরেই চলছে, অন্তত পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনাও জানি। গাইডকে খুশি করে রাখাটা অনেকটা গুরুগৃহে গুরুর সেবা লেভেলের সঙ্গে তুলনীয়।
শুধু গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ আত্মহত্যা করে (ভারতের খবর জানি না)। যারা আত্মহত্যা করে না, তাদের মধ্যেও একাংশ প্রবল স্নায়ুর চাপে ভোগে কিছু কিছু বিষয়ের শিক্ষকদের দুর্ব্যবহারের জন্য। এগুলো কিন্তু খবর হয়ে রটে যায়, তবে ঐ শিক্ষকের ব্যাপারে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ বা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে সে সিনিয়র, তার লবির জোর আছে, ফলে তার সহযিক্ষকরাও সব জেনে চুপ থাকে।
এগুলো খুব কাছ থেকে দেখা। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার সাহস/ক্ষমতার জোর ছাত্রদের তো নেই ই, সহশিক্ষকদেরও কিছু এসে যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিও সবসময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকে, টাকা পয়সা ফান্ড এইসব নিয়ে, তাদের কানে কেউ এসব খবর তুললেই বা কী, না তুললেই বা কী!
তবে মাঝেমধ্যে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর আত্মহত্যার হার এত। ব্যস। কোথাও কোথাও কাউন্সেলিং সার্ভিস ও আছে। কিন্তু যেসব অধ্যাপকদের জন্য এই সমস্যা, তাদের টিকিটিও কেও ছুঁতে পারে না।