এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • বই: পাতালপুরাণ

    Dibyendu Singharoy লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ২১ মার্চ ২০২২ | ৯১৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গত কয়েক বছরে ক্রাইম নিয়ে যে ননফিকসন বাংলা বই পাঠক মহলে সবথেকে বেশি আলোড়ন ফেলেছে সে বই নিঃসন্দেহে গোয়েন্দাপিঠ লালবাজার। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে অচিরেই বইটির পরবর্তী খন্ড প্রকাশিত হয়। সে বই পড়ার সুযোগ এখনো হয়নি। তবু আন্দাজ করাযায় অপরাধ নিয়ে একজন পুলিশের ও একজন সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কিছু তফাৎ নিশ্চয়ই আছে। 
    পুলিশ লেখক হয়েও পেশাগত কারণে অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারেন না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কুখ্যাত পুলিশ অফিসার রুনু গুহ নিয়োগী তাঁর সাদা আমি কালো আমি বইতেও কখনোই সরাসরি থার্ড ডিগ্রির উল্লেখ করেননি। নকাশলদের তিনি স্রেফ গুন্ডা বদমাশ হিসাবেই দেখেছেন।
    একজন সাধারণ নাগরিক লেখক হলে তার সেসব বাঁধা, বাধ্যবাধকতা থাকে না।  যদিও দুজনের ক্ষেত্রেই কিছু নাম চেপে যেতে হয়। মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে কিছু কিছু সত্য গোপন করতে হয় নিরাপত্তা ও চাকরির কারণে। 
    এই তুলনা টানার প্রয়োজন অনুভব করলাম কারণ এবছর বইমেলায় অপরাধ জগৎ নিয়ে প্রকাশিত হওয়া একটি বই সদ্য পড়া শেষ করেছি। লেখক পুলিশ নন একজন আম নাগরিক।
    দ্য কাফে টেবল থেকে প্রকাশিত সুপ্রিয় চৌধুরীর লেখা বইটার নাম পাতালপুরাণ।
    অর্গানাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেট নিয়ে এটাই আমার পড়া প্রথম বই। ইতালির দুষ্কৃতীদের গ্যাং, মাফিয়া শব্দের উৎপত্তি নিয়ে মনোগ্রাহী আলচনা করে লেখক চলে গিয়েছেন কলকাতা।
    ১৯৪৬ সালের গ্রেট কলকাতা কিলিং। গোপাল পাঁঠা, ভানু বোস, রাম চ্যাটার্জী দিয়ে বাংলার মাফিয়া সাম্রাজ্যের শুরুর দিকের কাহিনীর পর এসেছে নকশাল আমল। আদর্শবাদী, বেপরোয়া কিছু ছেলের সাথে লড়াইয়ে কলকাতার মস্তানরাজের পিছু হটা তারপর দ্বিগুন শক্তি নিয়ে ফিরে আসা। মাফিয়াদের অস্ত্রের বিবর্তন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, শাসকের মদতপুষ্ট গুন্ডা, গ্যাং ওয়ার, ইনফর্মারদের আড়াল করতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, সময় ও পরিস্থিতির দাবীতে অপরাধ মানচিত্র থেকে একজনের চলে যাওয়া ও আরেকজনের উঠে আসার নানা বিচিত্র কাহিনী ধরা রয়েছে দুই মলাটে। সময়কাল ১৯৪৬ থেকে ২০২০।
    এ জাতীয় বইগুলি একটি সুবিধা প্রথম থেকেই পায়। অন্ধকার জগতের নিষিদ্ধ হাতছানি পাঠককে প্রবল আকর্ষণ করে। এক্ষত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।  প্রচ্ছদটিও বিষয়ের সাথে সাযুজ্য রেখে চিত্তাকর্ষক। আধুনিক নির্মেদ, পক্ষপাতহীন ঝরঝরে গদ্য। সব মিলিয়ে বইটি যাকে বলে "কমপ্লিট প্যাকেজ"।

    তবে কিছু ক্ষেত্রে সালের উল্লেখে কিছু ভুল আছে মনে হয়েছে। একেক সময় গল্প বলার ধরণ একঘেয়ে লেগেছে।
    শেষের অভিযোগের উদাহরণ দি। স্ট্রাকচার মোটামুটি এরকম। 
     • প্রথমে একটি রোমহর্ষক অপরাধের বর্ণনা
     • তারপর তার সূত্র ধরতে পিছিয়ে যাওয়া বেশ কিছু বছর এবং এই পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একই রকম বাক্যের ব্যবহার।
     • শেষে সেই অপরাধীর অপরাধ সাম্রাজ্যে প্রথম ধাক্কা ও হয় তার মৃত্যু, হাজতবাস অথবা বহাল তবিয়তে এখনো অপরাধ চালিয়ে যাওয়া। 
     • এই একই স্ট্রাকচারের সাথে যুক্ত হয়েছে একই রকম বিশেষণ যেমন "শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়া" বা
    "রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাওয়া"।
    তবুও এইটুকু সীমাবদ্ধতা বইয়ের গতিকে শ্লথ করে না। নানা আনকোরা শব্দের ব্যবহার (রকের আড্ডার শব্দ, অপরাধ জগতের কোড ল্যাংগুয়েজ যা এ ধরনের বর্ণনায় প্রয়োজনীয়ও বটে) বেশ অন্যরকম লাগে।
    বাংলার  সংগঠিত অপরাধ জগৎ, যার কিছু ঘটনার কথা আমরা মাঝে মাঝে খবরের কাগজে পড়ি, টিভিতে দেখি ও ভুলে যাই তার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয় পাঠক মনে। 

    এক সময় তথ্যকেন্দ্র পত্রিকায় কলকাতার মস্তানরাজ নামে এই লেখাগুলো ধারাবাহিক প্রকাশিত হতো। কোভিড ও লোকডাউনের দৌলতে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর প্রকাশিত পর্বগুলোর সঙ্গে আরও কিছু পর্বের সংযোজন করে  ২০২২ বইমেলায় দ্য কাফে টেবল থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই বইটি।

    বই: পাতালপুরাণ
    লেখক: সুপ্রিয় চৌধুরী
    প্রকাশক: দ্য কাফে টেবল
    মুদ্রিত মূল্য: ৩২৫/- ₹



     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২১ মার্চ ২০২২ ০৯:৩৯736046
  • আচ্ছা।  ইন্টারেস্টিং।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন