এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হোটেল ম্যানেজার - ১৮

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০৭৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •   ( শেষ পর্ব )

    নিখিল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। বিধ্বস্ত, বিভ্রান্ত, দিশাহারা। নিশ্চিতভাবে জেনে নিয়েই দিন্দা উকিল খবরটা দিয়েছে। একদম সরকারি খবর। প্রথম খবর , অনিন্দিতার স্বামী হাজতের মধ্যেই ব্লেড দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যা করেছে প্রাইমা ফেসি এভিডেন্স অনুযায়ী। তদন্তের এখনও আদেশনামা  আসেনি। আর, দ্বিতীয় দুর্ঘটনা হল ট্রেনের চাকার তলায় অনিন্দিতার শরীর সমর্পণ করা ।বডি পোস্ট মর্টেমে গেছে ।
    কেই বা অনিন্দিতার স্বামীকে ব্লেড সরবরাহ করল আর কেনই বা করল সবই তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার।
    ঘন ধূসর অবসন্নতার গভীরে ডুবে রইল নিখিল। অকারণেই অপরাধবোধের ভাবনা চেপে ধরল তার মস্তিষ্ক। সন্তাপের স্রোত ছোট ছোট ঢেউ তুলতে লাগল মনের মধ্যে। নিখিল ভাবল, সে ছুটে চলে যায় শান্তিনিকেতনের আটঘরা গ্রামের কোলে— মানব হেমব্রমের জঙ্গুলে বাড়ির আশ্রয়ে। খোয়াইয়ের সেই স্নিগ্ধ বাতাবরণ মনে পড়ে গেল। নিখিলের আবার একবার ওই নিরালা নির্জন  কোপাইয়ের ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হল। প্রবল শ্রান্তিতে চোখ বুজে আসতে লাগল নিখিলের। ঘনিয়ে আসছে ঘুমের ঘোর। ঘরের বাইরে ঘোলাটে আকাশ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। স্বপ্নের মতো দুলছে তিলোত্তমা আর তার লোকজন।দুলাল,ননী, বাপি, মদন বেরা...... সবাই। কে একজন এসে তার হাতে গুঁজে দিয়ে গেল একখানা কাগজ। নিখিল কাগজটা মেলে ধরল চোখের সামনে। শিউড়ি যাবার জন্য চিঠি এসেছে ...... সরকারি চিঠি। কাছেই বোলপুর ..... আটঘরা গ্রাম.... মানব হেমব্রম। প্রায়ই যাবে সে বোলপুর, আটঘরা, কোপাই। কাঁথি, তিলোত্তমা, দুলাল সরকার, অনিন্দিতা সব মুছে যাবে তার জীবন থেকে।  সে বারাসাতেও আর কোনদিন যাবে না। ওখানকার পরিবেশ তার একদম ভাল লাগে না ......
    বন্ধ দরজায় কে ঠকঠকাতে লাগল। ছুটে গেল নিখিলের আধো ঘুম আধো জাগরণের আবেশ। দেহ মনের ভার কাটিয়ে খাট থেকে শরীর নামাতে সময় লাগছে নিখিলের। তাই দরজায় আবার ঠকঠক। তার সঙ্গে গলার আওয়াজ শোনা গেল — ‘নিখিল ....  অ্যাই নিখিল .... দরজা খোল .... কি করছিস কি ?’
    দুলাল সরকারের গলা।
    নিখিল কোনরকমে উঠে দরজা খুলল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রবল জ্বরে জরজর শরীর। চোখ ছলছল ঘুমের ভার মাখা। কিছুক্ষণ ঘোর লাগা চোখে নির্নিমেষে চেয়ে রইল দুলালের দিকে। তারপর বুড়ো গাছের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল দুলালের বুকের ওপর। দুলাল কোনরকমে নিখিলের অবশ জরাক্রান্ত শরীরটা সামলে ধরে রেখে হাঁক পাড়ল — ননী..... বাপি ... অ্যাই বাপি ..... তাড়াতাড়ি আয় .... তাড়াতাড়ি .... তাড়াতাড়ি....’ ।
    বাপি, ননী , সুরেশ পড়ি মরি করে ছুটে এল তিনতলায়। প্যারামেডিক্যাল চিকিৎসক আশিস সামন্ত এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ ব্যবসায়ী সুভাষবাবু  এই সময়ে লজেই ছিল। দুলালের গলা ফাটানো চিৎকার শুনে তারাও তড়িঘড়ি এসে হাজির হল। সকলে ধরাধরি করে নিখিলকে বিছানায় শুইয়ে দিল।

       শুভঙ্কর পাল বাড়ি ফিরে এল প্রায় পনের দিন পরে। মনীষা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে সুন্দরবন থেকে কি করে নিরাপদে বেরিয়ে এল পুলিশের পাতা জাল কেটে সেটা এখন রহস্য। জাল ঠিক শুভঙ্কর কাটেনি। জাল কাটাই ছিল। শুভঙ্কর শুধু ফাঁকটায়  শরীর গলিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ভালই জানে, কেউ একটা লগা মেরেছে। নইলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। এতক্ষণ তার পুলিশ কাস্টডিতে থাকার কথা। সে যাই হোক, বাড়ি ফিরে বৌকে বলল , ‘ রিমোট জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে মোবাইল কানেকশান পাওয়া যায়না। নতুন ইলেকট্রিফিকেশানের কাজ চলছে। আসল কথা হল, কন্ট্র্যাক্টটা মিস করতে চাইনি।’
    মনীষা অবশ্য এত কৈফিয়ত চায় না। সে নানা দুশ্চিন্তায় ঝাঁঝরা হচ্ছিল। এখন শুভঙ্করকে আস্ত শরীরে ফেরত পেয়ে সব ভুলে 
    গেল । বাপির সেই কথাটা এই মুহুর্তে মনে পড়ল না — ‘ আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দেব না।’
        মনীষা ভীষণ উৎসাহে অমিতাভদের চাকরির ব্যাপারে চন্ডীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তৎপর হল।

       সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধে সাতটার সময় বাইরের ঘরে বসেছিলেন। বসিরহাট থেকে দুজন অধ্যাপক এসেছিলেন।বিস্কুটে কামড় দিয়ে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিলেন। কাপ প্লেট নামিয়ে রাখলেন ছোট টেবিলটার ওপর। তারপর বললেন, ‘ হ্যাঁ যেটা বলছিলাম। এটা তো সবাই জানে, এ পৃথিবীর  প্রত্যেকটা এলিমেন্টের অ্যাটমিক নাম্বার নির্দিষ্ট। এই অ্যাটমিক নাম্বারের ওপরই নির্ভর করে ওই এলিমেন্টের ধর্ম ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। হাইড্রোজেনের 
    অ্যাটমিক নাম্বার ওয়ান বলেই সে হাইড্রোজেন, ইউরেনিয়ামের নাম্বার নাইনটি টু বলেই ওটা ইউরেনিয়াম। এই অ্যাটমিক নাম্বারের বাইরে যাবার কোন ক্ষমতা কোন এলিমেন্টের নেই। ক্ষমতা নেই এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাইরে যাবারও । এখন ব্যাপার হল, মানুষের শরীর হল পরমাণুরই সমষ্টি। আর কিছু নয়। সুতরাং ইট ইজ কোয়াইট লাইকলি অ্যান্ড পার্টিনেন্ট যে প্রতিটি মানুষও একটা নির্দিষ্ট পারমাণবিক সংখ্যার বৃত্তে আবদ্ধ। এই   কনফিগারেশন অ্যারেঞ্জমেন্ট বদলে দেবার ক্ষমতা কারও নেই। একেই বলে ডেসটিনি। এটা অমোঘ এবং অপরিবর্তনীয়। মানুষের স্বভাবের ওপর নির্ভর করে তার জীবনের গতি প্রকৃতি এবং স্বভাব নির্ভর করে এই পারমাণবিক বিন্যাসের ওপর। স্বভাব থেকেই সৃষ্ট হয় কর্ম এবং কর্ম উৎপাদন করে ফল, মানে সাফল্য বা ব্যর্থতা। ঠি ক  বিজ্ঞাণের কজ অ্যান্ড এফেক্ট রিলেশানশিপের মতো।’
      এই ভর সন্ধেবেলায় অধ্যাপক দুজন বসে বসে হাই তুলতে লাগল।

       দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বরের উনত্রিশ তারিখ এসে গেল। অমিতাভরা কাল কাঁথি  ছেড়ে চলে যাবে। শেষ হল তিলোত্তমা বাসের কাল। এর মধ্যে ওরা দুজনেই একদিন হলদিয়ায় গিয়েছিল চন্ডীবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। যতদিন না অন্য চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে এই কাজটা করা ছাড়া উপায় নেই। কাজটা অবশ্য করতে হবে কলকাতায় বসে। কলকাতায় পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রীটের কাছে ঘিঞ্জি গলিতে হাজারো কিসিমের বানিজ্যিক দোকানপত্তরের ফাঁকে চন্ডীবাবুর একটা রেজিস্টার্ড অফিসঘর আছে।সেখান থেকেই কাজ চালাতে হবে। রিকুইজিশান অনুযায়ী মাল কিনে, ইনভয়েস, চালান এবং অন্যান্য কাগজপত্র সমেত মালবাহী কোন ছোট বা বড়  গাড়ি বুক করে মালপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হলদিয়ার প্রোজেক্ট সাইটে।
    —- ‘ ব্যাপারটা যেরকম গোলমেলে মনে হচ্ছে তেমন মোটেই নয়। দুদিনেই প্র্যাকটিস হয়ে যাবে। শুধু ইনভয়েসটা একটু সাবধানে চেক করে নিতে হবে।কারণ নানারকম ট্যাক্সের ব্যাপার আছে। চেক করে নিতে হবে ভালভাবে। ওসব হয়ে যাবে। কাজ তো লোকে কাজে ঢোকার পরেই শেখে। আগে তো আর শিখে আসে না । তাছাড়া দুজন এক সঙ্গে আছেন। অসুবিধে কিছু হবে না। মনীষা আমার বোনের মতো।ওর কথাতেই আমি রাজি হয়েছি।সাধারণত:  এক্সপিরিয়েন্সড লোক রিক্রুট করি আমরা।’ চন্ডীবাবু একটানা বললেন। অমিতাভ বুঝতে পারল মনীষা নামক রোমান্টিসিজম এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। জীবনের আসল ঝঞ্ঝাট এখন থেকেই শুরু হল।অলোক অবশ্য চাকরি যাবার সঙ্গে সঙ্গে নতুন চাকরি পাবার সম্ভাবনায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতে লাগল। বেশ উৎসাহিত লাগছিল তাকে। সে বলল, ‘ আমরা ঠি ক অ্যাডজাস্ট করে নেব.... দুজনে আছি..... অসুবিধে হবে না..... অনেক উপকার করলেন স্যার....’
    — ‘ না না আমাকে স্যার ট্যার বলতে হবে না .... এই করে খাই আর কি .... ঝামেলা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। কতদিন চালাতে পারব জানি না। চারদিকে শুধু টাকা খাওয়ানোর খেলা.... চালানো মুশ্কিল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পেমেন্টের সমস্যা তো আছেই। প্রায় দেড় কোটি টাকা ডিউ। অামরা তো একটা বড় কন্ট্র্যাক্টারের আন্ডারে ছোট একটা সাব কন্ট্র্যাক্টার। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় .... বুঝতেই পারছেন.... ‘
    চন্ডীবাবু প্রথম পরিচয়েই অকপটে অনেক কথা বলতে লাগলেন। ব্যবসায়ী মাত্রেই ঘোড়েল লোক, অমিতাভর মন থেকে এ ধারণাটা মুছে গেল। অলোক চন্ডীবাবুর কথাগুলো কিছুটা বুঝে কিছুটা না বুঝে বলল, ‘ না ... কোন চিন্তা করবেন না.... আমাদের দিক থেকে সিনসিয়ারিটির কোন অভাব হবে না। ‘
    চন্ডীবাবু বললেন, ‘ হুমম্ .... অল দা বেস্ট। তালে সামনের সোমবার থেকে স্টার্ট করুন। এই নিন ঘরের চাবি । জয়েন করার পর আমাকে একটা ফোন করবেন। পেমেন্ট... মানে, রেমুনারেশান নিয়ে চিন্তা করবেন না। ওটা আমার ওপর ছেড়ে দিন। পুষিয়ে যাবে .....’
    অমিতাভ হাত বাড়িয়ে চাবিটা নিল। কঠিন নীরস লোহার একজোড়া চাবি , একটা চকচকে  স্টীলের রিং-এ আটকানো।

      তিরিশে সেপ্টেম্বর । বিকেল পাঁচটা। নিখিল দাস একটা সুটকেস আর একটা কিটস ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এল। এ দুটোর মধ্যেই তার সবকিছু। ও দুটো কাউন্টারের সামনে নামিয়ে রেখে দুলাল সরকারকে বুকে জড়িয়ে ধরল গভীর আবেগে। ঘুষখোর, দুশ্চরিত্র নিখিল অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। 
    দুলাল মমতায় দ্রবীভূত হয়ে গেল — ‘ অ্যাই .... অ্যাই নিখিল .... কি করছিস.... আর কি দেখা হবে না নাকি আমাদের ! আমি শান্তিনিকেতনে যাব।ওখানে আমাদের দেখা হবে । তুইও মাঝে মাঝে আসবি .... তোকে কি আমরা ভুলে যাব নাকি..... এতদিন একসঙ্গে ছিলাম।তুই আমার দু:সময়ে কত উপকার করেছিস..... ভুলে যাব ! ‘
    ততক্ষণে নিখিলের এত বছরের ঘটনাবহুল রোমাঞ্চকর জীবনযাত্রার সাক্ষী ও সঙ্গী তিলোত্তমা লজের কুশী লবরা অনেকে জড়ো হয়েছে নিখিলকে ঘিরে। বেশ আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হল।
    বাপি নিখিলের হাতটা ধরে বলল, ‘ নিখিলদা , তুমি আমাকে ভুলে যাবে নাতো ? ‘
    এই কথা শুনে নিখিলের আবেগের হৃদয়পাত্র আবার উথলে উঠল। সে বাপিকেও প্রবল আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরল। বলতে লাগল —- ‘ নারে বাপি না .... কক্ষনো না..... কোনদিনও না.... কোনদিনও ভুলব না।’
    এত বিশাল আবেগ সমুদ্র চাপা ছিল নিখিল দাশের বুকের তলায় তা কে জানত ! 
    অমিতাভ আর অলোক জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সেখানে এসে দাঁড়াল। অমিতাভ বলল, ‘ আপনি শুধু একা নন নিখিলবাবু। আমরাও চলে যাচ্ছি তিলোত্তমা ছেড়ে । আর কখনও এখানে আসা হবে কিনা জানিনা। চলুন একসঙ্গে বেরোই।
    ঠিক এই সময়ে দুলাল সরকারের মোবাইলে কাঁপন উঠল। দুলাল ফোন ধরে বলল, ‘ হ্যাঁ স্যার.... বলুন স্যার ....’
    ওদিক থেকে সূর্যকান্ত স্যার কি বললেন শোনা গেল না ।
    উত্তরে দুলাল কুন্ঠায়, লজ্জায়, সংকোচে মাটিতে মিশে গিয়ে বলল, ‘ স্যার যদি অপরাধ না নেন..... আমি আপনার পায়ের ধুলোর যোগ্যও নই ..... যদি পারেন এই অধমকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি .... এই তিলোত্তমা লজ ছেড়ে কোথাও গিয়ে শান্তি পাব না স্যার ....’
    — ‘ আ:হা .... এই কথাটা বলতে এত সংকোচ বোধ করছ কেন। পরমাণুর অ্যাটমিক নাম্বারের মতো প্রতিটি প্রাণী তার নিজস্ব পরমাণু বিন্যাসের অনুসারি। এই কনফিগারেশানের বাইরে যাবার ক্ষমতাই নেই কারও। তুমি ওখানে শান্তিতে স্বস্তিতে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন কর। আমার শুভ কামনা রইল।’
    শুধু শুভকামনার ব্যাপারটা দুলালের বোধগম্য হল। বাকি কথাগুলো তার মাথার অনেক ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল।সে, কি বলা উচিৎ ভেবে না পেয়ে শুধু বলল, ‘ হ্যাঁ স্যার.... ‘ ।

      আরও প্রায় আধঘন্টা বাদে নিখিল, অমিতাভ আর অলোক দুটো রিক্শায় উঠে বসল বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবে বলে। তিলোত্তমার গেটে দাঁড়িয়ে রইল জনা দশেক মানুষ চলন্ত রিক্শার দিকে তাকিয়ে। রাস্তার ধারে দেকানপাটে জ্বলে উঠেছে আলো। দুলাল ভেতরে চলে গেল। খাবার হোটেলে মিলের খদ্দের আসতে শুরু করেছে। ননীগোপালের ভাই শরৎ রোল কাউন্টারে ওভেন চালু করল। 
    বাপি কিচেনের পেছন দিকে গিয়ে মনীষাকে একটা ফোন করল — ‘এবার থেকে দাদাকে আর একা ছাড়বেন না। আপনি সঙ্গে যাবেন।’
     আজ ভোরবেলায় শঙ্করীবাবা এসে হাজির হয়েছেন। তিনি খুব পরিশ্রান্ত। সেই দুপুর থেকে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন নিখিলের বাঁধা ঘর কুড়ি নম্বরে শুয়ে। হেমন্তের মৃদু হিমেল সাঁঝবেলা ঘনিয়ে এল। তিলোত্তমার ছাতে ছায়া দুলছে ছাত লাগোয়া একটা দীঘল গাছের। বইছে ঝুরু ঝুরু উত্তুরে হাওয়া। শঙ্করীবাবার ঘুম ভাঙেনি এখনও ভাল করে।
    ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে।
      ( সমাপ্ত )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ফরিদা | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:৫১504052
  • বাহ। ঝকঝকে টানটান গল্প। ওয়েব সিরিজের মতো। 
  • Anjan Banerjee | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:৫৭504070
  • ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন