এঃ মাইরি খ, আমি মোটেই 'রিজনেবলি ভালো তার্কিক' নই। ইন ফ্যাক্ট তক্কো নয়, আমি পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করতে ওস্তাদ!
হ্যাঁ, ইউরোপে থার্টিস-ফর্টিস-ফিফটিস ধরে-টরে একটা সাহিত্য সমালোচনার ধারা শুরু হয় ঠিকই। আমরাও ওভাবেই ডিলান টমাস, জন অসবোর্ন কিংবা টেড হিউজকে পড়তে শিখেছিলাম। কিন্তু ইউরোপে চালু হলেই সেটা সর্বজনমান্য হয় না, তার আখাম্বা নকলনবিশিও করা জায়েজ নয়। এমনকি নকলটাও যে আমরা পুরোদস্তুর করে উঠতে পারিনি, সেটা আপনার শিরোনামের 'নব্বই দশকীয়' শব্দবন্ধে জ্বলজ্বল করছে।
এখন আমি যদি জীবনানন্দকে তিরিশের কবি বলি কিংবা শঙ্খ ঘোষকে পঞ্চাশের, তার মানেটা ঠিক কী দাঁড়ায়? তাঁরা ওই সময়ে শুরু করেন বলে তাঁদের ওভাবে চিহ্নিত করতে হবে? কেন? তাঁরা পরবর্তীকালে কবিতা লেখা থামিয়ে দিয়েছিলেন? ৪৬-৪৭ কোন সময়ের কবিতা? তাহলে এই পাইকিরি হারে ছাপ্পা মারার প্রবণতা কেন? এই করে বাংলা সাহিত্যে আমরা ইউরোপের নকলে যুগ বিভাজন শুরু করি। সেখানে আদিযুগের এক ও একমাত্র ধারক ও বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে চর্যাপদ। যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে! নাহলে যে মধ্যযুগটা আরম্ভ করা যায় না! তো কোন হিসেবে রামপ্রসাদ মধ্যযুগের কবি আর ঈশ্বর গুপ্ত আধুনিক যুগের? আপনি এই কৃত্রিমতাকে, এই চাপিয়ে দেওয়াকে এন্ডোর্স করছেন মাত্র।
অনূদিত হতে চাইলেই হওয়া যায় বুঝি? বইয়ের বাজার বলে একটা বস্তু নেই? সেখানে যেটা চলবে সেটা চম্পাকলি, যেটা চলবে না সেটা পেঁয়াজকলি। প্লেন অ্যান্ড সিম্পুল। তাই যদি সত্যি হত, তাহলে 'সাহিত্যপ্রেমী' বাঙালি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচিত হত। আপনার অভিজ্ঞতা তার পক্ষে কিছু ঠোস সবুত হাজির করতে পারবে কি?
আন্তর্জাতিক পরিচিতি? ভারতীয় সাহিত্যিক হিসেবে সতীনাথ বা জগদীশ গুপ্তের হয়নি। মুলক রাজ আনন্দ কিংবা অমিতাভ ঘোষের হয়েছে। কেন হয়েছে সেটা আপনি আমার থেকে ঢের ভালো জানেন।
প্রোজেক্টটাকে ব্যর্থতম বলেছি এই কারণে যে ২০২২ সালে বসে আপনি ২৫ বছর আগে প্রকাশিত একটি গ্রন্থ বা পুস্তিকা নিয়ে আলোচনা করছেন। পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের কতগুলো সংস্করণ হয়েছে? আজ অবধি তার কতগুলো খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে?
কলকাতায় বাংলা বইয়ের বাজার মানে হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল ও অন্যান্য দাদা, ভূত, থ্রিলার আর পানু। সেখানে অনুবাদ খুব একটা চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে কাজটা সিরিয়াসলি হয়, বিশেষত প্রবন্ধ গ্রন্থের অনুবাদ। কলকাতায় সেটা করলেও পাঠক পাওয়া যাবে না। কারণ কলকাতার প্রকাশকরা মাছের আড়তদারদের থেকেও ঘাঘু মাল। তাপসের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে জেনেছি, সন্দীপন একদা আক্ষেপ করে বলেছিলেন লেটার প্রেসের জমানায় তিনি তবু রয়্যালটি-টয়ালটি বাবদ কিছু পেতেন। কিন্তু অফসেট জমানায় সেসব চিরতরে অফ হয়ে গেছে। সন্দীপনের যদি এই হাল হয়, সেখানে কে হায় হৃদয় খুঁড়ে...।