এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বৌষষ্ঠীর ফুল

    কৌশিক ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ নভেম্বর ২০২১ | ১৪১৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৪ জন)
  • ভূতচতুর্দশীর সন্ধ্যায় সুধী চক্রবর্তীর বাড়ির উঠোনে স্কুটার রেখে উঠোনের বেলগাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরাতে ধরাতে ভজন ধর খেয়াল করলেন অন‍্যদিনের চেয়ে মাথার উপরে গাছটার ডালগুলো যেন একটু বেশিই নড়ছে। গাছ তো আর হেঁটে চলে বেড়ায় না, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নড়ে। মানে ডাল নড়ে, পাতা নড়ে। একটু জোরে বাতাস বইলেই নড়ে।

    এ গাছ কিন্তু এমন জায়গায় যে এর চারদিকেই বাড়ি। দোতলা, তিনতলা। নেহাৎ ঝোড়ো বাতাস না বইলে এর নড়ার কোনো কথাই নাই। অথচ এর ডালগুলো দুলছে। হাওয়া নাই, বাতাস নাই, বেশ জোরে জোরে দুলছে। দুলেই চলেছে।

    তা এসব লক্ষণ ভজনের চেনা। এদ্দিন ধরে এমন কতো গাছের নড়াচড়া দেখলেন। সেই কলেজবেলা থেকে বিশুকাকার সাথে রাতের বেলায় ঘুরঘুট্টি অন্ধকার শ্মশানে গেছেন, সে কি দু’ চারবার ?

    লোকে এইরকম অকারণে গাছ টাছ নড়তে দেখলে ভয় পায় বটে, কিন্তু না দেখা পর্যন্ত ভজনের সাথে তর্ক করতে ছাড়ে না। ভূত নাকি নাই, প্রেতাত্মা নাকি আষাঢ়ে গল্প। বোঝো। দুইএর সাথে দুই যোগ করলে চার হয়। দিনের বেলায় গাছ সালোকসংশ্লেষ করে। প‍্যারাসিটামল খেলে ব‍্যাথা সারে। এগুলো যদি আপত্তির না হয়, ভুল না হয়, তাহলে মানুষ মরে গেলে ভূত হয়, এটাতে ভুল কোথায় আর লোকের আপত্তি বা কেন, বোঝা কঠিন।

    বিশুকাকা অবশ‍্য বলে গেছেন ভজনকে, “লোকে না মানুক, তুই মানলিই তো হলো।”

    না মেনে ভজনের উপায় নাই, কারণ বিশুকাকার কল‍্যাণে তিনি দেখেছেন অনেক কিছু, সাধারণ বুদ্ধিতে যার ব‍্যাখ‍্যা হয় না। এ্তো দেখে দেখে ভজনের ভয় ডর চলে গেছে। অন‍্য কেউ হলে লোম টোম খাড়া হয়ে একেবারে লোমহর্ষক কান্ড হয়ে যেতো। কিন্তু বিশুকাকার সঙ্গগুণে ভজনের পাশ দিয়ে সশরীরী কেউ গেলে যা হয়, অশরীরী গেলেও তাই।

    বিশুকাকা ভজনের আপন কাকা নন, পাড়াতুতো সম্পর্কে কাকা বলে ডাকতেন। লোকে বলতো বিশু ওঝা, কিন্তু ভজন জানতেন ভেতরের কথা। আসলে বিশুকাকা ছিলেন তান্ত্রিক। বেস্পতিবারে অমাবস্যা পড়লে শ্মশানের চিতার শিয়রে, মানে উত্তর দিকে, গজিয়ে ওঠা শ্বেতকরবীর গাছ থেকে ফুল তুলে এনে সেই ফুল দিয়ে বৌষষ্ঠীর পুজোয় বসতেন।

    বৌষষ্ঠীর পুজো থেকে শুরু করে সোমবারে কৃষ্ঞা অষ্টমী হলে মহানন্দ ভৈরব, মহানন্দ ভৈরব থেকে শনিবারে শুক্লা দ্বিতীয়া পড়লে হলে দারুমোহিনীর পুজো, দারুমোহিনী থেকে… পুজো কি আর একটা ? যদি সে আবার তান্ত্রিক মতে হয়, তবে তো কথাই নেই। কতো শত ঘোর অন্ধকার রাতে এরকম সব পুজোর সাক্ষী থেকেছেন ভজন, তার লিস্টি বানাতে গেলে এই মুহূর্তে ঐ যে নাম না জানা চিজটি, বা চিজবৃন্দ, বেলগাছের ডগায় বসে এখন ভর সন্ধ‍্যাবেলায় গাছটাকে দোলাচ্ছেন, তিনি বা তাঁরাও মূর্চ্ছা যেতেন।

    তবে মূর্চ্ছা যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়, বিশুকাকা শিখিয়েছিলেন ভজনকে।

    “মুচ্ছো গেলি পরে তুই জানবি কি করি যে যাকে দেকে ভয় পেলি, সে ক‍্যামোনপারা, সে কোন দিক থিকি এলো, কোন গাচে তার বাস ?”

    ভজন তখন মোটে উনিশ বছরের ছেলে, কলেজ না থাকলেই সেঁধোবার আস্তানা বিশুকাকার আখড়া। আখড়া বলতে তেমন বড়ো বাড়িটাড়ি না। মুখোমুখি দুখানা ঘর, মাঝখানে উঠোন। একখানা ঘরের দেওয়াল ইঁটের, আরেকখানার তখনো পর্যন্ত মাটির। দুটোরই ছাদে খোলা বসানো। পাকা দেওয়ালের ঘরটাকে বিশুকাকা বলতেন সাধনগৃহ। মানে ঐ বৌষষ্ঠী কিম্বা মহানন্দ ভৈরবের পুজোয় বসতেন ঐ ঘরে।

    আর যতো রাজ‍্যের গাছের বাসিন্দাদের গাছ থেকে ডেকে আনা বা অনাহুত গাছবাসীদের আবার গাছেই ফেরত পাঠানো, এসব বিশুকাকা করতেন তাঁর উঠোনে বসে।

    “ওঁয়ারা গাচে গাচেই থাকেন কিনা, শরীল নাই তো, চার দেওয়ালের মদ্দিখানে ডেকি ওঁয়াদের কষ্ট দিতি নাই,” বিশুকাকার স্পষ্ট কথা।

    গাছের বাসিন্দাদের শরীর থাকে না। মানুষ মরে গেলে আর শরীর থাকবে বা কি করে ?

    “ওঁয়াদের শরীল নাই, বুজলি ভজন,” বলেছিলেন বিশুকাকা, “কিন্তুক ওঁয়ারা সব কত্তি পারেন, য‍্যামোনটি পাত্তেন শরীল নিয়ি বেঁইচি থাকার সুমায়।”

    শরীর নাই কিন্তু সব করতে পারেন। ভজনের মনের ধাঁধা বুঝে ফেলেই যেন বিশুকাকা ব‍্যাখ‍্যা করে বুঝিয়েছিলেন। শরীর থাকলে সুবিধা আছে অনেক, কিন্তু অসুবিধাও আছে। যেমন ধরো বন্ধ ঘরে তুমি ঢুকতে পারবে না। কোনো গাছে উঠলে তুমি সরু ডালে বসতে পারবে না।

    “কিন্তু ঐ যে ওঁয়ারা গাচে থাকেন, শরীল নাই,” বিশুকাকার কথাগুলো এখনো মনে আছে ভজনের, “ওঁয়ারা বন্দ ঘরেও ঢুকতি পারেন, আবার গাচের মগডালেও গিয়ি বসতি পারেন।”

    একালে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় পাশ করার জন্য যে ছাত্রবন্ধু নামের বই পড়ে, অশরীরীবিদ‍্যায় ভজনের সেই ছাত্রবন্ধু ছিলেন বিশুকাকা। সুধী চক্রবর্তীর বাড়ির উঠোনে বেলগাছটার নীচে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরাতে ধরাতে গাছটার দুলে ওঠা দেখে তাই ঘাবড়ালেন না ভজন ধর। বৌষষ্ঠীর পুজোয় বিশুকাকার নিবেদন করা একখানা শ্বেতকরবীর শুকিয়ে যাওয়া ফুল ওঁর শার্টের বুকপকেটে আছে। সূর্যাস্তের পরে বেরোতে হলে ঐ ফুলটা সঙ্গে না নিয়ে ভজন বেরোন না। গাছে যাঁরা থাকেন, শরীর ছাড়াই থাকেন, বৌষষ্ঠীর ফুল সঙ্গে থাকা অবস্থায় ভজনকে স্পর্শ করার সাধ‍্য তাঁদের নেই।

    ভজন এখন ঢুকতে যাচ্ছেন সুধীর বাড়িতে, যেমন রোজই ঢোকেন সন্ধ্যায় সাতটা নাগাদ। সুধী আর সুধীর বৌ এমা অপেক্ষা করে থাকে তাঁর জন‍্য। সুধীর ছেলে আমেরিকায়, ডাক্তার মেয়ের পোস্টিং পুরুলিয়ার ওদিকে এক হাসপাতালে। ভজন এলে সুধী আর এমার সন্ধ‍্যাগুলো গল্পে গল্পে কাটে ভালো। সুধী বয়সে প্রায় পনেরো বছরের ছোটো। সরল মানুষ, কলেজের পড়া শেষ করে বাবার আপিসে ঢুকেছিলো, এখন প্রমোশন টোমোশন পেয়ে অনেক ওপরে চলে গেছে।

    কিন্তু এই মুহূর্তে একটু দোটানায় পড়েছেন ভজন। এই যে বেলগাছটার ডালগুলো দুলছে, আপাত কোনো কারণ ছাড়াই দুলছে, বিশুকাকার শিষ‍্য হয়ে এর একটা সমাধান না করে তিনি বাড়ির ভেতরে যেতে পারেন না। কারণ তাঁর কাছে বৌষষ্ঠীর ফুল আছে, সুধী আর এমার কাছে নাই। ওরা এরকম ভরসন্ধ‍্যায় হাওয়া বাতাস ছাড়া বেলগাছের ডাল দুলতে দেখলে ভয় পাবে। বিশেষ করে এমাকে নিয়ে তাঁর চিন্তা বেশি।

    এমা নরম মনের মেয়ে, খুব হাসিখুশি, ভজনকে শ্রদ্ধা করে নিজের দাদার মতো। এমার বাবার এক জেঠা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম‍্যাজিস্ট্রেট, তিনিই ভাইপোর মেয়ের নাম রেখেছিলেন এমারেল্ড। অতো বড়ো নাম ধরে তো আর ডাকা যায় না, তাই সবাই ডাকে এমা বলে। এমার হাতের চা না পেলে ভজনের সন্ধ‍্যাটা মাটি হয়ে যায়।

    উপায় তাহলে খুঁজে দেখতে হয়। আর উপায় তেমন কঠিনও কিছু না। লাগবে শুধু একটা পুরনো ঝাঁটার কাঠি। বৌষষ্ঠীর আবাহন মন্ত্র পড়তে পড়তে কাঠিটা দিয়ে বেলগাছের গোড়ার চারদিক ঘিরে একটা গন্ডী কেটে দিলেই কাছ শেষ। আজ ভূতচতুর্দশী, মানে কৃষ্ঞাচতুর্দশী। অশরীরীরা এমনিতেই ঝাঁটার কাঠি পছন্দ করে না, কৃষ্ঞাচতুর্দশীর সন্ধ্যায় বৌষষ্ঠীর মন্ত্র পড়া ঝাঁটার কাঠির গন্ডী তারা পেরোতে চাইবে না। গাছের ডাল গন্ডীর বাইরে যতোদূরেই ছড়িয়ে থাক, গাছের উপরে বসে থাকা সব অশরীরীকেই এসে জড়ো হতে হবে ঠিক ঐ গন্ডীর ভেতরে গাছের যতোটুকু অংশ, ততোটুকুর মধ্যে। সূর্যোদয় হবার এক ঘন্টা আগে পর্যন্ত তারা বন্দীই থাকবে।

    গাছটাকে আগাপাশতলা একবার খুব করে দেখে নিয়ে চোখ নামিয়ে ভজন নজর দিলেন উঠোনে। উঠোনের এক পাশে সুধীর মূল বাড়িতে ঢোকার কাঠের দরজার ওপরে একটা জোরালো এলইডি জ্বলছে। উঠোনের সবটা ভজনের চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে আছে সে আলোয়। দাঁড় করিয়ে রাখা স্কুটারের থেকে খানিক দূরে, মোটামুটিভাবে কাঠের দরজাটার হাত পাঁচেক আগে একটা ঝাঁটার কাঠির লম্বা টুকরো দেখা যাচ্ছে। ভজন এগোলেন কাঠিটা কুড়িয়ে নেবেন বলে।

    কাছে গিয়ে উপুড় হয়ে ঝুঁকে কাঠিটা কুড়িয়ে নিতে নিতে ভজন থেমে গেলেন। মাথার ওপরে বেলগাছের ডালের দোল খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কাঠি ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ভজন। তার পরে একটু জোর গলায় বললেন, “চিনতে পেরেছো আমাকে তাহলে, কি বলো ?”

    বিশুকাকা বলে গেছিলেন যে অশরীরীরা নাকি অনেক কিছু করতে পারে। বন্ধ জানালা দরজা তাদের কাছে কোনো বাধাই না, সেসব তারা খুলতে পারে দরকার মতো, খোলা থাকলে বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকি তারা মনের ভেতরে ঢুকে জীবিতদের কাজকর্ম, পরিচয়, চিন্তা, সব ধরতে পারে। এখানেও দ‍্যাখা যাচ্ছে সেরকম হলো। যে বা যারা ভজনকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করছিলো, তারা ভজনের ক্ষমতা বুঝে ফেলে রণে ভঙ্গ দিয়েছে। রণে ভঙ্গ না দিলে সেই কাল ভোর পর্যন্ত আটকে থাকতে হবে তিন ফুট জায়গার মধ্যে।
    জোরালো একটা আঁশটে গন্ধের সাথে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মুখ ঘোরালেন ভজন। বিস্ময়মাখা হাসি নিয়ে দরজা খুলেছে এমা, পেছনে সুধী দাঁড়িয়ে।

    “ভজনদা, কখন এসেছেন ? আপনার স্কুটারের শব্দ পেলাম না তো !”
    বেলগাছের বিষয়টা এদের বলা যাবে না কোনোমতেই। আঁশটে গন্ধ যথেষ্ট প্রবল, সুধী আর এমা গন্ধটা পাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। গন্ধটা তাঁর পরিচিত, সাধারণ লোকে না বুঝলেও বিশুকাকার সাহচর্যের ফলে এই গন্ধে তিনি অশরীরীর উপস্থিতি টের পান। এ ব‍্যাপারে সুধী আর এমাকে কিছু না বলাই ভালো। সব মিলিয়ে এমার প্রশ্নের উত্তরে কি বলা যায় ভেবে পাচ্ছেন না ভজন।

    তাঁর মুখ খোলার আগেই এমার পেছন থেকে সুধী বলে উঠলো, “টিভি চলছিলো, তাই মনে হয় আপনার স্কুটারের শব্দ শুনতে পাইনি।”
    হতে পারে, অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু এখনই বা ওরা দরজাটা খুললো কেন ? ভজন তো বেলও বাজান নি।
    এমা বোধহয় বুঝতে পেরেছে ভজন কি ভাবছেন। তাই সে বললো, “ঐ যে চিৎকার করে কাকে যেন চিনতে পারার কথা বলছিলেন শুনতে পেলাম,” ভজন স্থির দৃষ্টিতে এমাকে মেপে নিলেন তার কথা শুনতে শুনতে, “তখন বুঝে গেলাম আপনি এসেছেন, তাই তো তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে এলাম।”
    ভজন বেলগাছনিবাসীদের উদ্দেশে যে কথাগুলো বলছিলেন, সে তাহলে এদেরও কানে গেছে। তবু ভালো যে এরা কথাটা ঠিক ঠিক শুনতে পায়নি।
    “আরে, আপনি ঢুকতে দেরি করছেন কেন, ভজনদা ? আপনি যেন কেমন একটু অন‍্যমনস্ক আজকে,” সুধীর উদার আমন্ত্রণের সাথে একটু সন্দেহও মিশে গেল বোধহয়।
    “আসুন, ঢুকুন,” দরজা ছেড়ে পিছিয়ে গেলো এমা, তারপরে সুধীর দিকে তাকিয়ে বললো, “এ্যাই, তুমি আমার সাথে দোতলায় চলো, নতুন কেনা বইগুলো নামিয়ে আনি। ভজনদাকে দেখাবো।”

    ভজন দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে থেমে গেলেন, বিড়ি আর দেশলাইয়ের বাক্স রয়ে গেছে স্কুটারের সিটের ওপরে। তখন বিড়ি ধরানোর পরে বেলগাছের নড়াচড়া দেখতে গিয়ে স্কুটারের সিটের ওপরে নামিয়ে রেখেছিলেন ও দুটো জিনিস।

    সিঁড়ি বরাবর দোতলার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলেন তিনি। সিঁড়ির মতোই দোতলাতেও আলো জ্বলছে, এখান থেকেই বুঝতে পারছেন ভজন। সুধী আর এমাকে দেখা যাচ্ছে না, নিশ্চয়ই ওরা এতোক্ষণে দোতলায় পৌঁছে বই টই নামানোর ব‍্যবস্থা করছে।

    ভজন আবার দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন স্কুটারের কাছে। স্কুটারের সিটের ওপর থেকে বিড়ির প‍্যাকেট আর দেশলাইয়ের বাক্স তুলতে তুলতে উঠোনের ওপাশে রাস্তার দিকে লোহার গেট খোলার শব্দ পাওয়া গেলো।

    মুখ তুলে যা দেখলেন, কি করবেন ভেবে পেলেন না। গেট খুলে ঢুকছে সুধী আর এমা।

    তাঁকে দেখে এমা কলকলিয়ে উঠলো, “আরে, ভজনদা ! কতোক্ষণ এসেছেন ?”

    “আমরা জাস্ট এই মোড়ে রাজুর দোকানে গেছিলাম ক’টা জিনিস আনতে,” গেট বন্ধ করতে করতে সুধীও যোগ দিলো এমার সাথে।

    তারপর ঘুরে ভজনের মুখের দিকে তাকিয়ে সুধী বলে উঠলো, “কি হলো, ভজনদা ? শরীর টরীর খারাপ লাগছে নাকি ?”

    ভজন কথা বলতে পারছেন না, স্থির দৃষ্টিতে দুজনকে দেখেই যাচ্ছেন।

    “অনেকগুলো বই কিনেছি দাদা,” ভজনের অস্বস্তি খেয়াল খেয়াল করলো না এমা, “আপনাকে না দেখালে শান্তি পাবো না।”

    ওরা দুজনেই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে, খানিক আগের সেই আঁশটে গন্ধটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় উল্টোদিকে ঘুরে সুধীর বাড়ির ভেতরে ঢোকার কাঠের দ‍রজাটার দিকে ভজন তাকালেন, একটু আগেই যে দ‍রজা দিয়ে বেরিয়ে তিনি বিড়ি আর দেশলাই নিতে এসেছেন। আজ সুধীর বাড়ির উঠোনে এসে স্কুটার রাখবার পরে বেলগাছের দোল খাওয়া আর ঝাঁটার কাঠি খোঁজার কাজে এতো ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে দরজাটা আদৌ খোলা ছিলো, নাকি বন্ধ, তখন তা খেয়াল করেননি ভজন, অন্তত এই মুহূর্তে দরজার কথা তেমন কিছু মনে পড়ছে না।

    আপাতত দেখা যাচ্ছে দরজাটা বন্ধ, একেবারে তালাবন্ধ, সুধী আর এমা বেরিয়ে গেলে যেমন থাকার কথা। একবার দোতলার দিকে তাকালেন, দোতলা পুরো অন্ধকার, কোত্থাও আলো জ্বলছে না।

    চোখ নামিয়ে ভজন দেখলেন দরজার সামনে, দরজা থেকে পাঁচ হাত দূরে, যেখানে ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে নেবার জন‍্য তিনি উপুড় হয়ে ঝুঁকে পড়েছিলেন, সেখানে তেমনভাবেই পড়ে আছে লম্বা ঝাঁটার কাঠিটা।

    আর ঠিক তার পাশে পড়ে আছে একটা ছোট্ট কাগজের পুরিয়া। উপুড় হবার সময় পকেট থেকে পড়ে গিয়ে থাকবে।

    ভজন জানেন যে খেয়াল করলে দেখা যাবে পুরিয়ার গায়ে কাগজের ওপরে দুর্বোধ্য অক্ষরে আঁকিবুকি কাটা, যেগুলো পড়তে পারতেন কেবল বিশুকাকা, আর পুরিয়াটা খুললেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে একটা শুকিয়ে যাওয়া শ্বেতকরবীর ফুল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sara Man | ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:০০502249
  • বাঃ গল্পটা দারুণ লাগলো। 
  • সেমিমা হাকিম | 2405:201:8010:e9e7:498e:791a:7086:***:*** | ২২ মার্চ ২০২২ ১৩:৩০505175
  • দারুণ গল্প। ক্লাস।
     
  • Soma Banerjee | 103.154.***.*** | ২১ মে ২০২২ ১৪:৫২507921
  • আরে এ তো দারুণ লেখা! আরো কয়েকটা পড়তেই হবে
  • মালিনী মাইতি | 2405:201:9004:6177:64df:5f76:46e9:***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৪৭513110
  • এখানেই শেষ না আরো আছে? শেষ হলে মনে হচ্ছে ,শেষ হয়ে হইলোনা শেষ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন