(এটা সিপিএম এর প্রোপাগান্ডা, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার প্রসঙ্গে তৃণমূলের অবস্থান কি? )
*কিছু মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন রওশন মন্ডল। পর্দার পিছনের কথা। কারা সব ঢেকে ফেলতে চাইছে?*
|| নীরবতা কেন ??? ||
রওশন মন্ডল
অনেকের মনে গভীর প্রশ্ন "বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস তথা মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন? " স্বঘোযিত হিন্দুরক্ষক বিজেপির নীরবতার কারণ কিছুটা হলেও তৃণমূল প্রাক্তনী ও বর্তমান বিজেপি নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা পরিস্কার করে দিয়েছেন। সামনে ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচনও আছে ফলে ত্রিপুরা লাগোয়া বাংলাদেশের কুমিল্লায় হিংসার ঘটনার বিজেপির উদ্বেগের থেকে রাজনৈতিক লাভের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী, তাই তারা যারপরনাই খুশী। তাই উস্কানিমূলক প্রচার চলছে জোরকদমে।
কিন্তু এপার বাংলার শাসকের নীরবতা কেন? প্রতিবেশী দেশে এই অস্থিরতা তাদের কি নাড়া দেয় না?? নিশ্চয়ই দেয়!! বিশ্বাসও করি দেয়! তবে এই অদ্ভুত নীরবতার কারণ কি?? প্রশ্নটা আমার মনেও ঘুরছিল। শুধুই কি মুসলিম ভোট। এদেশের মুসলিম জন অংশও তো এই ঘটনার প্রতিবাদ করছে সোচ্চারে, ওপার বাংলায় যেমন হচ্ছে।। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে এপার বাংলায় যেমন মসজিদ ও সংখ্যালঘু মুসলিম এলাকাগুলোকে আগলে রেখেছিল সংখ্যাগুরু হিন্দুরা ওদেশেও তো দুর্গামন্ডপ সহ মন্দির ও সংখ্যালঘু হিন্দু এলাকাগুলি আগলে রেখেছে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা। দুদেশেই এরা বেশীরভাগই প্রগতিশীল, বামমনস্ক, বামপন্থী। দুদেশেই এদের আপসহীন লড়াই মৌলবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন নীরব মমতা??
ভাবতে ভাবতে আমি একটু অতীতে ফিরে যাচ্ছি। ইতিহাসের পড়ে ফেলা পাতাগুলো আবার পেছনের দিকে উল্টাতে গিয়ে থামলাম আজ থেকে সাত বছর আগে সেপ্টেম্বর মাসে। সাল ২০১৪। আর ২০২১ সালে এই নীরবতার যোগসুত্র খুৃঁজে পাওয়ার চেস্টা করলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পঞ্চাশতম বর্ষপুর্তির প্রাক্কালে এই সাম্প্রদায়িক হিংসার পিছনে অন্যান্য সাংগঠনের পাশাপাশি সরাসরি যুক্ত জামায়েত ইসলাম ও হেফাজতে ইসলাম য নামে মৌলবেদী সংগঠন যুক্ত বলে অভিযোগ। এই জামাতের মধ্যে নীরবতার কারণ লুকিয়ে নেই তো? ২০১৪ সালে ১২ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা "প্রথম আলো " প্রকাশিত খবরে লেখা হল ভয়ংকর এক তথ্য - "বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে ভারতের সারদা গ্রুপ জামায়াতে ইসলামীকে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে—এমনটাই দাবি করা হয়েছে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার-এ। আজ শুক্রবার পত্রিকাটিতে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এর সঙ্গে পশ্চিম বাংলার তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান জড়িত।" ওই একই তারিখে "সমকাল " পত্রিকা জানিয়েছে "আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদনও এই বক্তব্যকে অনেকটাই সমর্থন করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অবশ্য এই দাবিও করা হয়েছে যে, ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে পৌঁছে গিয়েছিল জামায়াতের হাতে।"
এতক্ষণে নিশ্চয়ই এ ঘটনা প্রত্যেকের স্মৃতিতে উদ্ভাসিত হয়েছে। সারদার লুঠ হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমান টাকা বাংলাদেশে জামাতের হাতে পৌঁছে যেত। জামাত বাংলাদেশে শান্তির পরিপন্থী, জামাত বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি যেমন এদেশের আর এস এস, বজরঙ দল। কেন জামাতের ভারতীয় এজেন্টকে তৃণমূল তাদের দলের সাংসদ করেছিল? সারদা সংস্থার টাকা কারা লুঠ করেছিল তা সবার জানা! কেন সেই টাকার অংশ বাংলা দেশে?? প্রশ্ন এখানেই!!! আজকের নীরবতার উত্তরও এখানেই প্রোথিত আছে।
বাংলাদেশের আর এক পত্রিকা "দৈনিক ইতেফাক " ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত খবরে জানায় "গতকাল শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়, ২০১২-২০১৩ সালে সংসদ সদস্য ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে কয়েক দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পরে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল জামায়াত। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে আরো একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। যার একটা বড় অংশ অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার।" নীরবতার কারণ আর বুঝতে কারোরই বাকি থাকার কথা নয়।
২৫শে পেপ্টেম্বর ২০১৪ আনন্দবাজার পত্রিকা লিখল ' তৃণমূল এবং জামাতে ইসলামির যোগাযোগ নিয়ে জল ক্রমশই ঘোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলির পর এ বার নয়াদিল্লি সফরে এসে এই ঘটনার নিন্দা করলেন সে দেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। আজ তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েরই স্বার্থের বিরোধী।”
বাংলাদেশের আর এক পত্রিকা " উত্তর বাংলা" ১৮ই অক্টোবর ২০১৪ বিস্তারিত জানায় - "ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। তার পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামাতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও ইডি-কে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া, হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গিয়েছে সারদার টাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামাত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগ্নিও করেছে সারদা। সেই অর্থও কার্যত জামাতের ‘জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন’-এই খরচ হয়েছে। " এখানে উঠে এল কুনাল ঘোষের নাম!! আজ যিনি তৃণমূলের মূল মুখপত্র। বুঝতে বাকি থাকে না কেন এই অসম্ভব নীরবতা!!
এদেশের পাশাপাশি সেদিনও প্রতিবাদে সামিল ছিল সেদেশের বামপন্থী কমিউনিস্টরা!! আজও প্রতিবাদে পথে সে দেশের বামপন্থী - কমিউনিস্টরা।
অনেকেই ভাবতে পারেন বাংলাদেশের পত্রিকা এদেশকে দোষারোপ করবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে উপরোক্ত সব খবরের মূল উৎস এবাংলার সর্বাধিক প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকা।
নীরবতার কারণ না হয় বোঝা গেল। কিন্তু উদ্দেশ্য কি?? কেউ যদি ভেবে থাকেন এটি মমতার মুসলিম প্রীতি তাহলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ঘটনাকে লঘু করে দেওয়া হবে। ত্রিপুরার নির্বাচন যেমন বিজেপির কাছে পাখীর চোখ, তেমনই তৃণমূল কংগ্রেস সংগঠন না থাকলেও ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। বিজেপি জুজু, এন আর সি, ইত্যাদিকে সামনে এনে বাংলায় জয়ী হওয়া তৃণমূলের কাছে ত্রিপুরাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাকে উদাহরণ হিসাবে দাঁড় করাতে হলে ধর্মীয় ইস্যুতে বিজেপির দাপাদাপি তৃণমূলের কাছেও জরুরী, যেমন সাম্প্রদায়িক হিংসা জিইয়ে রাখা জরুরী বিজেপির কাছে।
ফলে দিদি মোদী উভয়ই চুপ। নীরব, অসম্ভব নীরব।
সুত্রঃ
© #রওশন_মন্ডল
১৮/১০/২০২১