যে কথাটা সেদিন তালে গোলে বলা হল না, বিপ্লব কে , সেটা মূলতঃ এরকম।
আমি এর আগে যা বলেছি, সেটার অনেকটাই আরুজ আলি মাতুব্বার এর স্টাইল কে অনুসরণ করে। কিন্তু মূল কেস টা হল, ভারত আর বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা কোনদিন ই খুব মৌলিক ভাবে একরকম হওয়া মুশকিল, যদি না, মালটিকালচারাল ওয়েলফেয়ার স্টেটের ওয়ার্কিং মডেল কেই গ্রহণ করা হয় আবার অন্যদিকে সেই মডেলের মূল সমস্যা হল, কমুনিটি লিডারশিপ গুলোতে কনজারভেটিভ নেতৃবর্গ থাকবেই।
এবার তাইলে দুইটা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা আলাদা ধরণের হইলে ক্ষতি কি, ক্ষতি নাই, সেটাই স্বাভাবিক , উত্তেজনার বশে সেটা সব সময়ে সকলের মনে থাকে না সরকার গুলার ও না।
মেন বিষয় টা হল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে এত রক্তের মূল্যে এসেছে, তার লড়াই টা ভাষার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই, এবং এটা আধুনিক জাতি ও রাষ্ট্র ফর্মেশনের লড়াই। এবার ই লড়াই য়ে দীর্ঘ সিভিল ওয়ার , সিভিল ওয়ার বাংআদেশে মাঝে মাঝে মনে হয় কখনো থামে নি। চলছে তো চলছেই। এবং এটা বাংলাদেশের শুধু না, সিভিল ওয়ার লম্বাই হয়, লেবানন, স্পেন, লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে , এক বালকান ওয়ার কসোভো ফর্মেশন এর পরে কিছুটা থেমেছে বলা যায়। এবার এটা বাংলাদেশে সেকুলার এস্টাবলিশমেন্ট এর পক্ষে কড়া হাতে দেখা ছাড়া রাস্তা সম্ভবত রাস্তা নাই । প্রকৃত অর্থে ইনক্লুসিভ ডেমোক্রাসি বাংলাদেশের মডার্ন স্টেট ফর্মেশন এর পথ প্রশস্ত করবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। এর মধ্যে দুইটা পার্ট আমি আপনাদের দেশের ইতিহাস বুঝি না বলে জানি না সে কথায় আসছি। শুধু এটুকু বলে নেই , আপনাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াই মূলতঃ আধুনিক সিভিল ওয়ার রেটোরিকের যে আইডিওলোজিকাল স্পেস তার মধ্যে ডিফাইন্ড, যারা ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী, তাদের গল্প ও তাই, এবং এটাকে আমি আধুনিক স্টেট ফর্মেশন এর সমস্যাই বলব।
আমাদের ক্ষেত্রে, ভারতে পার্টিশন ই স্টেট ফর্মেশন এর ভিত্তি হলেও, ধর্ম ও রাজনীতি সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত্তি শুধুই আধুনিক স্টেট ফর্মেশনের ঘটনাটির মধ্যে সীমিত না, তার আগে পরে সামাজিক ইতিহাসের দীর্ঘ গল্প আছে। আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই শুধু ভায়োলেন্ট হলে চলবে না, এটাই সর্বধর্মসমন্বয়্যের গান্ধিয়ান এবং তাঁর ই নিয়ে আসা ভক্তি আন্দোলনের রেফারেন্স। সেই কারণেই পোস্ট সোভিয়েত মালটিকালচারাল সেকুলার স্টেটের মডেল পশ্চিমে যে রকম সোভিয়েত পতন ও ইমিগ্রেশন এর ফলে তৈরী হয়েছে, আমাদের সে গল্প নাই, আমাদের দেশেই এই মডেল জন্ম নিয়েছে।
ভারতের রাজনীতিতে, দক্ষিন পন্থী হিন্দুত্ত্ববাদীদের রেটোরিক er তিনটে হিস্টোরিকাল রেফারেন্স ।
ক - প্রথম টা হল, ভারতের আদি গ্লোরি, সেটা একেবারে আদি থেকে মৌর্য্য , গুপ্ত ইত্যাদি থেকে প্রায় একাদশ শতক অব্দি বিস্তৃত। এর মাঝে সাউথ ইন্ডিয়া , ইস্ট ইন্ডিয়া এক একটা আলাদা ক্যাটিগোরি। কিন্তু এই আর্যাবর্তের গল্প ক্যানোনাইজ্ড হয়ে আমাদের ন্যাশনালিস্ট ট্র্যাডিশনে এমনকি সেকুলার ট্র্যাডিশনে ইনক্লুডেড। এটাতে শুধু তিনটি চারটি ফোসকা, একটা হল আদি তে নানা সময়ে ক্লাস ফর্মেশনের থিয়োরী , দর্শন চর্চায় মেটেরিয়ালিজম, প্যান্থিয়োন চর্চায় লোকায়ত দর্শন, ক্ষুধা ও ভায়োলেন্স এর ইতিহাস (সুকুমারী ভট্টাচার্য্য ও উপিন্দার সিং), এছাড়া সেকুলার টেক্স্ট হিসেবে কামসূত্র এবং অর্থশাস্ত্র র নতুন রিডিং (দাউদ আলি) আর আদি কোর্টকালচার হর্টিকালচার ইত্যাদির মধ্যেকার আধুনিক অর্থে সেকুলার গভরনেন্স এর আইডিয়া, স্ক্রিপচার এর পতন ও উত্থান এর রেফারেন্সে।
খ - এর পরে কলোনিয়াল হিস্টোরিওগ্রাফি, মূলতঃ ব্রিটিশ রাজকে কে ডিফেন্ড করার জন্য বিতর্ক টা কে তথাকথিত অন্ধকার মধ্যযুগে আনছে। এটার কম্ব্যাট ভারতের একটু অন্যরকম হিস্টোরিয়ান রা করার আগে বা শুরুর পরে পরেই, গান্ধী করছেন, মধ্যযুগ টাকে মূলত ভক্তি আন্দোলনের যুগ হিসেবে তুলে ধরছেন, সে কারণে কন্টেস্ট টা ভৌগোলিক স্পেস এর থেকে স্পিরিচুয়াল স্পেসে খানিটা সরে আসচে, এবং এই ভাবেই উনি হিস্টোরিকাল কনটেস্টেশন টা ম্যানেজ দিচ্ছেন, ভক্তি আন্দোলনের মূল কথা, যে কোনো ডিসপেন্সেশনেই, ঈশ্বর এর সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তি ভক্তের যোগাযোগ, এটাকেই উনি কলোনীর আনা মডার্নিস্ট স্টেট এর যে এক্স্প্যানসনিস্ট অ্যাগ্রেসন এবং ক্যাপিটালিস্ট প্রোডাকশনের মডেল, তার বিরুদ্ধের ভারতীয় কমিউনিটি লাইফ এর মডেল হিসেবে আনছেন। এইটেই ওনাকে সাধারণ মানুষের কাছে ঋষি করে তুলছে, বিশেষ করে ছোটো শহরে। বোলপুরে গান্ধী একাধিক বার এসেছেন, সব সময়ে শান্তিনিকেতনেই আসেন নি, এবং সেটা বিহার বাংলার প্র্যাকটিকালি রেল লাইন ধরে গান্ধীর জনপ্রিয়তার জোয়ার। এবার এটা আধুনিক স্টেট ফর্মেশন er পক্ষে যতরকম অ্যাসপিরেশনাল মডেল কংগ্রেস এর মধ্যেই ছিল, প্রত্যেকটার সঙ্গে একেক সময়ে ক্ল্যাশ করেছে, উনি নিজে চরম মূল্য দিয়ে কম্প্রোমাইজ করেছেন, কখনো নিজের চরম মূল্য, কখনো দেশের মানুষের জন্য। ইত্যাদি।
গ - এর পরে রাইট উইং রেটোরিকাল রেফারেন্স স্বাভাবিক ভাবেই, পোস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভারত। তার সঙ্গে কনটেস্টে যা যা এসেছে, সেগুলি এরকম ঃ এবার এটা পোলিটিকাল স্পেস হলেও স্টেট ফরমেশনের পরে, ভূমি পুত্র মুভমেন্ট হয়ে, অথবা সাম্প্রদায়িকতা থেকে সরে এসে ভাষা ভিত্তিক মুভমেন্ট গুলো যে স্টেট ফর্মেশন করছে, তাতে মুসলমানের কোন যায়গা নেই। অর্থাৎ এই সরে আসা টা ধর্মনিরপেক্ষ হয়েছে ঠিক ই, প্রোগ্রেসিভ ও হয়েছে, এবং বর্ণমাদ কে ম্যানেজ দেবার জন্য যে পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন এর যে স্টেট স্ট্রাকচার তৈরী হয়েছে, তাতে মুসলমানের , গরীব বড় লোক নিরপেক্ষে বিশেষ পোলিটিকাল স্পেস নাই, সেই জন্য তাদের পোলিটিকাল বার্গেন আঞ্চলিক শক্তি গুলোর রেফারেন্সে আগু পিছু করে রয়েছে। এটার আবার একটা ভালো দিক এর উত্তর দক্ষিন নাই, এটি ই সর্বত্র। সুতরাং মুসলমানের পক্ষে আমাদের দেশে , গান্ধীর ভক্তিবাদী কমিউনিটি মডেলেই সময়ের অনুপাতে বিষয়ট পুরোনো হলেও তাতে খানিকটা থাকা ছাড়া গতি নাই। সেইটেই আমাদের শোলের একে হাঙ্গল er মত কমিউনিটি মডেল, মাঝে মাঝে শুধু ইতনা সান্নাটা কিউ ইত্যাদি।
এই দুই ও তিন নং টির সঙ্গে আপনাদের দেশের কোন মিল নাই, কারণ আডিয়োলূজিকাল স্পেস টা সময়টা আলাদা। তাই এবার আপনাদের দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতার দুটো জিনিস আমাদের দেশের সেকুলার রা চট করে বুঝবে না, আপনারাও আমাদের দুই ও তিন নং তেমন বুঝবেন না, সেটা যথাক্রমে এই ঃ
- অপুলার স্পেসে সেকুলার হিস্টরি এবং সোশাল থিয়োরী রাইটিং এ আপনাদের দেশে এমনকি একেবারে তরুন দের ও যে স্টাইল, সেটা ফ্র্যাংকলি , ১৯৬৮ পূর্ববর্তী বামপন্থী থিয়োরেটিকাল রাইটিং এর ঐতিহ্য বহন করে। এটা অন্য মুসলিম মেজরিটি দেশেও এমনকি বাম পন্থীদের মধ্যেও এখন আর করে না। আরুজ আলি মাতুববর এবং আধুনিক কমেন্টেটর দের পড়েই বলছি। আমি জানি না আকাদেমিক হিস্টরি রাইটিং এর চেহারা টা কেমন , তবে আকাদেমিক হিস্টরিয়ান দের থেকে ডিরেক্ট এঙ্গেজমেন্ট ই লোকে বেশি পড়বে। এই কথাটা আমি শাহবাগ আন্দোলনের সময়েও বলেছিলাম।
এবার তাইলে দুইটা দেশের ধর্মনিরপেক্ষরা কি করে কোলাবরেট করবে, তার তাত্ত্বিক প্রিমাইস টা কি হবে। এটার একটা উত্তর আমাদের দেশের ভাষা ন্যাশনালিস্ট রা দেন, কিন্তু সেটায় সারা দেশের ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু দের উপকার নাই, উল্টে অপবাদের সমস্যা, যদিও আবেগ টি শ্রদ্ধা করার মত এবং শুধু তাই না, নিপীড়নের উত্তর অনেক সময়েই এইটেই। কিন্তু তবু এটা যদি সব রকমের সংখ্হ্যালঘুর সর্বত্র অংশীদারিত্ত্বের বিষয় থাকে, সেটাকে এটা অ্যাদ্রেস করতে পারবে না।
আরেকটা পন্থা হল, সোভিয়েট স্টাইলে সেই ১৯৬৮ র পূর্ববর্তী , ধর্মের নিকুচি করেছে তে ফিরে যাওয়া, সেই নিয়েই লেখালিখি করা, যেটা খুব সহজেই মেজরেটারিয়ান চেহারাও নিতে পারে, বা স্টেট রিপ্রেসন এর চেহারা নিতে পারে, তার কোন মাত্রার কোন উদার পার্থক্য নাই।
আরেকটা পন্থা হল, সোশাল হিস্টরি রাইটিং e বর্ডার জিনিসটা কে জাস্ট তুলে দেওয়া। (যেমন ধরুন একটা উদা আমি প্রায় ই দেই। ভাসানি পস্চিম পাকিস্তানে যে কৃষক সম্মেলনে বক্তৃতা করতে গেছিলেন, এটা আমি পাকিস্তানের বামপন্থী ঐতিহাসিক দের লেখা থেকেই জেনেছি। )
মানবতাবাদী , মাইগ্রেশন এর টার্ম্স এই ইতিহাস লেখা , এবং প্রতিরোধের ইতিহাসে তিনটে দেশেই সমসাময়িকতার উপরে জোর দেওয়া। ইত্যাদি। এটা আমার মনে হয়, আসাম, ত্রিপুরা, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সেকুলারিস্ট দের কোলাবরেশন এর তাত্ত্বিক ভিত্তি হতে পারে, যেটা শুধুই স্মৃতিকথা দিয়ে ম্যানেজড হবার না, শুধুই সিভিল ওয়ারের বিশুদ্ধতায় ফিরে যাওয়ার বিষয় না, এবং সবচেয়ে বড়কথা , এই আসাম মডেলের জঘন্য প্যারোকিয়ালিজম এবং অমলেন্দু বাবু যেটা কে বলছেন, রিজিওনাল শভিনিজম কে খানিকটা প্রতিরোধ করার একটা সুদূর প্রসারী উপায়।
আর তৃতীয়টির সাফল্যের শর্ত হল, অর্থনৈতিক একস্প্লয়েটেশন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন, ইত্যাদি।
এই সব বলবো বলে শুরু করে সেদিন সময় ও হল না, নানা পাড়ার নানা নেড়ি এসে চেচিয়েও গেল। ইত্যাদি।