জয়ন্ত কাজ করে বড়বাজারে সোনার দোকানে। কড়াকড়ি লকডাউনে বেশ কিছু দিন বাড়িতেই ছিল সে। কাজ নেই, তো বেতন নেই। বাধ্য হয়েই প্রায় ৩০ কিলোমিটার সাইকেল চড়ে কাজে যেতে হয় তাকে। ফিরে আসতে হয় সেই ৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ৬০ কিলোমিটার রাস্তায় প্যাডেলে পা ঘষে প্রতিদিন। পাতলা হয়ে গিয়েছে পায়ের তালু আর প্যাডেল। রাতে আড়াই খানা রুটি খেয়ে ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় শুধু লুটিয়ে দেয়। সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর ২৪ ক্যারেট ঘুম। এই একটাই তার আত্মতৃপ্তি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে আবার সেই ৬০ কিলোমিটার রাস্তার কথা ভাবলে বুকটা খাঁ খাঁ করে ওঠে। বাধ্য হয়েই কয়েকদিন স্পেশাল ট্রেনে কাজে যাচ্ছিল জয়ন্ত। ভেবেছিল চেকার ধরলে, তার নৈমিত্তিক জীবনের কথা শোনালেই ছেড়ে দেবে। এমনটা হয়নি। এক সপ্তাহে ১৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হয় তাকে। যা তার গোটা মাসের বেতনের অর্ধেকটা। বাধ্য হয়েই আবার সাইকেলের প্যাডেলে পা ঘষছে জয়ন্ত।
আমাদের পাড়ায় এমন অনেক জয়ন্ত রয়েছে, এই লকডাউনে কোনও না কোনও ভাবে স্পেশাল ট্রেনে চড়তে গিয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়েছে তাদের। তারপর ও পথে পা না মারিয়ে কেউ সাইকেলে কেউ বা হেঁটেই কাজে যাচ্ছে এখন। আর যাদের ট্রেন ছাড়া গতি নেই, তাদেরকে কার্যত চোরের মতো ট্রেনে উঠতে হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারে টিকিট চাইলে মেলে না। জরুরি পরিষেবায় কাজ না করলে টিকিট পাওয়া যাবে না। কিন্তু পেটের থেকে জরুরি পরিষেবা আর কী হতে পারে? এক প্রকার সে দিনের রোজটা জুয়ায় লাগিয়ে ট্রেনে উঠে পড়তে হয় তাদের। ধরলেই ৩০০ টাকা জরিমানা। আজ যদি না ধরে তাদের মনে হয় ৩০০টাকা যেন লাভ করল। আর জরিমানা হলেই সে দিনের হিসেব-নিকেশ মাইনাসের খাতায় চলে যায়। বৃহস্পতিবার পূর্ব রেল নাকি জানিয়েছে, লকডাউনে জরিমানা থেকে তাদের আয় হয়েছে এক কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। ওই জরিমানায় কত মানুষের জীবনের অঙ্কের হিসেব লুকিয়ে রয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।
খুবই মর্মস্পর্শী!