হারানো-প্রাপ্তি // মৌসুমী ঘোষ দাস
গায়ের রঙ শ্যামলা, পরনে একটা রংচটা কুর্তি আর সালোয়ার। কুর্তির বুকের কাছে চুমকি জরির মত কাজ। কুর্তির পেছনের দুটো বোতাম খোলা, বোধহয় বোতাম ছিঁড়ে গেছে। মাথার চুল উস্কোখুস্কো। বোঝা যাচ্ছে তেল-জল পড়েনি অনেকদিন। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ, তাতে একটা অপরিষ্কার সোয়েটার। উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। বয়স পনেরো/ষোলো মত হবে, সঙ্গে কেউ নেই। খুব সম্ভবত ভবঘুরে অথবা পাগলী। -মেয়েটাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না অনন্যা।
মামাতো দিদি গোপাকে নিয়ে গিয়েছিল নার্সিং হোমে। জাতীয় সড়কের দুই ধারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোম, যেগুলো বেশিরভাগই কিছুদিন আগে পর্যন্ত হোটেল ছিল, তারই একটাতে ভর্তি রয়েছে মামাতো দিদির জা। তাকে দেখতে গিয়েছিল দিদি গোপার সঙ্গে অনন্যাও।
তখন সকাল সাড়ে দশটা হবে। নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে লাগোয়া মিষ্টির দোকানটার কাছে দাঁড়িয়েছিল ওরা। তখনই ওই মেয়েটিকে দেখতে পায়। দোকানে বেশ ভিড় ছিল। দোকানী এবং তাঁর স্ত্রী দ্রুত হাতে গরম গরম পরোটা ভেজে পরিবেশন করছিল খদ্দেরদের। মেয়েটি একমনে সেই পরোটা ভাজা দেখছিল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। অনন্যা জিজ্ঞেস করেছিল, “খিদে পেয়েছে? খাবে পরোটা?” মেয়েটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিল। দোকানীকে বলে মেয়েটিকে এক জায়গায় বসিয়ে পরোটা তরকারি আর মিষ্টি দিতে বলেছিল অনন্যা। মেয়েটির খাবারের দাম মিটিয়ে দিদিকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল বাড়ির পথে। কিন্তু তখন থেকেই মনটা খচখচ করেই যাচ্ছে ওই মেয়েটির জন্য।
অনন্যার পরিচয়টা একটু সেরে নিই। অনন্যা একজন সাধারন স্বাস্থ্য কর্মী। এছাড়া সরাসরি যুক্ত না হলেও, কিছু NGO কর্মীর সাথে ভালো যোগাযোগ আছে। স্বামী, শাশুড়ি, একমাত্র কন্যা –এই নিয়ে ছোটো সংসার হেসেখেলে চলে যায়।
রথতলা মোড়ে দিদিকে স্কুটি থেকে নামিয়েই উত্তেজিত হয়ে ফোন করল বন্ধু আশুতোষকে যে এক সরকারি হোমের সঙ্গে যুক্ত।
-“তোরা কি কাজ করিস রে? সরকারি হোমে কাজ করিস, অথচ এভাবে রাস্তাঘাটে ভবঘুরে যুবতী মেয়েগুলো ঘুরে বেড়ায়, ওদের ধরে ধরে হোমে ভরে রাখতে পারিস না? আজ এখনই একটা মেয়েকে দেখলাম জানিস, মেয়েটা খুব বিপদের মধ্যে আছে। কিছু একটা ব্যবস্থা করা যায় না”?
আশুতোষ বলল, -“আমাদের হাত–পা বাঁধা রে। যতক্ষণ পুলিশ ধরে এনে হোমে না দেবে, ততক্ষণ আমাদের কিছু করার নেই। এমন কত মেয়ে পথেঘাটে পড়ে থাকে, পুলিশ জানে, দেখেও, কিছু করে না। তুই আর একা অত ভেবে কি করবি? ক'জনকেই বা উদ্ধার করবি"।
গজগজ করতে করতে ফোনটা রাখে অনন্যা। কিন্তু মন পরে থাকে ওই মেয়েটার দিকে। কি ভয়ংকর বিপদ মেয়েটার! কার মেয়ে কে জানে? ও কোথায় ঘুমায় রাতে? কি হয় ওর সাথে? কোথা থেকেই বা এসেছে? ওর মা-বাবা কেমন আছেন মেয়েকে হারিয়ে? এসব ভাবতে ভাবতে অনন্যা হেলমেট পরে স্কুটিতে স্টার্ট দিল। আবার চলে এলো তিন কিলোমিটার দূরে সেই মিষ্টির দোকানের সামনে। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল মেয়েটি নেই। দোকানীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল মেয়েটি খেয়েদেয়ে চলে গেছে।
-“কোনদিকে গেছে বলতে পারেন?”
-“ওই দিকে” বলে ইশারায় দেখালো দোকানী।
অনন্যা ধীরেধীরে স্কুটি নিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে সেইদিকে এগোতে লাগলো। বেশ কিছুদুর গিয়ে দেখল রাস্তার ধারে একটা বড় গাছের নিচে মেয়েটি পা ছড়িয়ে বসে আছে চুপ করে। পাশে প্লাস্টিকের প্যাকেটটা। চারপাশে লোকালয় নেই, বেশ ফাঁকাফাঁকা। দূরে কয়েকটা দোকান। দুই একটা গাড়ি সারানোর গ্যারেজ। তার পাশে একটা ধরম কাটা যেখানে বেশ কিছু লরি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা সামনে এসে স্কুটি থেকে নামল।
মেয়েটিকে খুব নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো, “তোমার বাড়ি কোথায়?”
-“পার্বতীপুর” ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে মেয়েটি স্পষ্ট স্বরে জবাব দিল।
“তুমি কার সাথে এসেছো? তোমার সঙ্গে আর কেউ নেই?”
-“না। আমি একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গেছি।” মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিল।
-"তোমার নাম? বাবার নাম? পাড়ার নাম? কিছু মনে আছে?"
-“হ্যাঁ”।
মেয়েটি একে একে নিজের নাম, বাবার নাম, মার নাম, পাড়ার নাম সব বলল গড়গড় করে।
অনন্যা দেখল মেয়েটির স্মৃতি ঠিক আছে। কথাবার্তাও ঠিকঠাক বলছে। শুধু মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাচ্ছে। দেরি না করে তাড়াতাড়ি ফোন করল পার্বতীপুরের এক NGO বন্ধু শম্পাকে। মেয়েটার নাম, বাবার নাম, পাড়ার নাম ডিটেলস জানিয়ে দিয়ে খোঁজ নিতে বলল। শম্পা একটু সময় চেয়ে নিল অনন্যার কাছে।
অনন্যা মেয়েটির সাথে কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করল মেয়েটি কাঁদছে বাড়ির কথা, মা-বাবার কথা বলতে বলতে। মেয়েটি আরও বলল, ওর নাকি তল পেটে আর কোমরে অসহ্য ব্যাথা করে। অনন্যার বুক ফেটে যাচ্ছিল। মেয়েটার সঙ্গে সাংঘাতিক কিছু ঘটা মোটেই অস্বাভাবিক নয় !!
অনন্যা ভাবে, "এমন স্পষ্ট করে মেয়েটা সব কথা বলছে, তাহলে মেয়েটাকে আজ পর্যন্ত কেউ নামধাম জিজ্ঞেস করার কথা প্রয়োজন মনে করেনি? এইভাবে একা একা পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা পনের/ষোল বছরের মেয়ে। অথচ কারোও মনে কোনো প্রশ্ন এলো না? মনে হল না একবার জিজ্ঞাসাবাদ করে যথাযথ একটা কিছু ব্যবস্থা করা যায়?"
এসব ভাবতে ভাবতেই শম্পার ফোন এল।
-“হ্যাঁ, খোঁজ পাওয়া গেছে দিদি। আমি এখন পার্বতীপুর থানা থেকেই বলছি। আজ থেকে দুই মাস আগে মেয়েটির পরিবার থানায় একটা মিসিং ডায়রি করেছিল। তারপর আর কোনো খোঁজ পায় নি”।
শম্পা পার্বতীপুর থানায় নিজের পরিচয় দিয়ে একটু সহযোগিতার অনুরোধ করে। থানা সেই ডায়রির কপি এবং পরিবারের দেওয়া মেয়েটির যে ছবি জমা ছিল, তার ফটো কপি তুলে দেয় শম্পাকে। সঙ্গে সঙ্গে অনন্যার হোয়াটসঅ্যাপে চলে আসে সেগুলো। অনন্যাও সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির একটা ছবি তুলে পাঠায় শম্পাকে। দুটো ছবি মিলে গেল। মেয়েটির বাড়ির ফোন নম্বর পাওয়া গেল ডায়রির কপি থেকে। সেই নম্বরে অনন্যা ফোন করল মেয়েটির বাড়িতে। ফোনের ওপারে মেয়েটির মা তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। জানালেন, “মেয়েটির মাথায় সামান্য সমস্যা ছিল, পাড়ার দোকানে কিছু কিনতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি সে। অনেক খুঁজেছেন কিন্তু পাননি মেয়েকে"।
মেয়েটির সাথে মায়ের কথা বলিয়ে দিল অনন্যা। মাও কাঁদছেন –মেয়েও কাঁদছে। অনন্যার চোখ ভিজে যাচ্ছে। মেয়েটির মাকে তাড়াতাড়ি মহাদেবপুর থানায় চলে আসতে বলল। পার্বতীপুর থেকে মহাদেবপুর পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরে। শম্পা মহাদেবপুরের আর এক NGO বন্ধু ইকবালকে ফোন করে দ্রুত অনন্যাকে সাহায্য করার কথা বলল। ইকবালকে অনন্যার ফোন নাম দিল।
এদিকে মেয়েটির সংগে কথা বলতে বলতে অনন্যা খেয়ালই করেনি যে ওদের ঘিরে ধরেছে কয়েকজন। ওদের দেখে মনে হল, একটু দূরে যে লরিগুলো দাঁড়িয়ে আছে, এরা সবাই সেই লরিগুলোর খালাসি ও ড্রাইভার, অথবা গ্যারেজের কর্মচারী। ওদের মধ্যে একজন একটু বয়স্ক আর বাকিদের বয়স কুড়ি/বাইশের মধ্যে হবে।
বয়স্ক ব্যক্তিটি সামনে এগিয়ে এসে অনন্যাকে ধমকের সুরে বলল, -“কি ব্যাপার ! সেই তখন থেকে দেখছি আপনি এই মেয়েটার সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছেন, ফোন করছেন, আবার মেয়েটার ছবি তুললেন, ফোনে কথা বলালেন- মতলবটা কি আপনার?”
একে তো গ্রীষ্মের খাঁখাঁ দুপুর। রাস্তাঘাটে লোকজন কম। দূরের দোকানগুলোও হাল্কা হয়ে গেছে। হাইওয়ে দিয়ে গাড়িগুলো দ্রুত বেগে ছুটে চলেছে। গ্যারেজের দুই একটা কর্মচারী কাজ ফেলে এদিকে তাকিয়ে আছে। চিৎকার করলে কাউকে কি পাশে পাওয়া যাবে? বুঝতে পারছে না অনন্যা। একসঙ্গে এতগুলো লোককে দেখে অনন্যা একটু ভয় পেয়ে গেল! কিন্তু মুখে প্রকাশ করল না। লোকটা আবার গরম গলায় বলল, “দেখি আপনার মাস্ক আর হেলমেটটা খোলেন তো, দেখব আপনি কে”?
অন্যন্যা ভয় গিলে যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় বলল, “কেন বলুন তো? আমাকে দেখে কি ছেলে মনে হচ্ছে? না মেয়ে? যে আপনাদের এত ভাবনা হচ্ছে। বলুন আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে?”
-“মেয়েই মনে হচ্ছে। কিন্তু তবুও আপনাকে হেলমেট খুলতে হবে। আমরা দেখবো, খুলুন”।
অনন্যা খুব ভয় পেয়ে গেল। তবুও জোর করে বলল,
-“না আমি আপনাদের কথায় হেলমেট খুলবো না। আপনারা কে যে আপনাদের কথায় আমাকে হেলমেট খুলতে হবে?”
দলের অল্পবয়সী ছেলেগুলো এবার রেরে করে এগিয়ে এলো অনন্যার দিকে। হেলমেট খুলতেই হবে। পারলে ওরাই যেন টেনে খুলে দেয়। বেশ কথা কাটাকাটি চলতে লাগলো। অনন্যা অবাক হয়ে দেখলো কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। বেশ কিছু বাইক আরোহী ওদের বচসা দেখতে দেখতে দ্রুত গতিতে চলে গেল পাস কাটিয়ে। যাত্রী বোঝাই বাস বেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
ছেলেগুলো বলল, “আপনার এতো দরদ কেন এই মেয়েটার জন্য? ও তো এখানেই থাকে। কই, কোনোদিন কেউ তো ওকে এতো প্রশ্ন করে না? আপনি কেন এতক্ষণ থেকে ওর সাথে কথা বলেই যাচ্ছেন?”
এবারে অনন্যার কি হল কে জানে, দুম করে বলে ফেলল, “রাতে তো ওকে আপনারাই দেখেশুনে রাখেন- তাই না? দিনটাতে না হয় আজ আমিই একটু দেখেশুনে রাখি? তাতে তো আপনাদের আপত্তি করার কিছু নেই।”
কি হল কে জানে! ওরা থেমে গেল। আর কিছু না বলে দলটা ওখান থেকে আসতে আসতে চলে গেল। ইতিমধ্যে মহাদেবপুরের সেই NGO কর্মী ইকবাল এসে হাজির হল।
-"একটু দেরি হয়ে গেল দিদি। আমাকে শম্পা যখন ফোন করেছে, আমি তখন বাজারে ছিলাম... তারপর.. "।
-" আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে, ঠিক আছে। আগে একটা রিকশা বা টোটো ডাকো দেখি ভাই। আমাদের থানায় যেতে হবে।"
মহাদেবপুর থানায় এসে আবার আর এক সমস্যা! কিছুতেই মেয়েটিকে জমা রাখবে না।
-“এ পার্বতীপুরের কেস। ওখানে গিয়ে জয়া করুন। এখানে হবে না"।
এ তো মহা বিপদ! দুই মাস আগে যখন মেয়েটির পরিবার থানায় ডায়েরি করেছিল, তারপর থেকে সেখানকার থানা কি গালে হাত দিয়ে বসে ছিল? তারা মেয়েটির ছবি কেন পাঠায়নি আসেপাশের থানায়? ইনফর্ম কেন করেনি? পার্বতীপুর আর মহাদেবপুর মাত্র পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার। একই জেলায় অবস্থিত। কেন ছবি দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেনি এতদিন? কিন্তু এসব প্রশ্ন নিজের মনেই চেপে রাখে অনন্যা। সাধারণ এক মহিলাকে পাত্তাই দেবে না থানা - একথা সে বোঝে। তাই কাকুতি মিনতি করে বলল,
“দেখুন মেয়েটির মা বাসে চেপে রওনা দিয়েছেন। এখানেই আসবেন তিনি। আপনারা ততক্ষণ প্লিজ রাখুন মেয়েটিকে। প্লিজ! মনে করুন তো আপনাদের বাড়ির মেয়ে যদি এভাবে হারিয়ে যেত তাহলে কি করতেন? এই একি কথা বলতেন তখন?”
“উনি যে মেয়েটির মা- তার প্রমান কি? আমরা প্রমান ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবো না ম্যাডাম। তাহলে আমরাই ফেসে যাবো”।
কিছুতেই মেয়েটিকে রাখতে রাজি নয় মহাদেবপুর থানা। ওনারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অনন্যা কি করবে বুঝতে পারছে না। তখন দেবদূতের মতো একজন পুলিশ কর্তা এগিয়ে এলেন। নরম হয়ে বললেন, “ঠিক আছে ,মেয়েটি এখানেই বসুক, যতক্ষণ না ওর মা আসছেন।”
সময় পার হয়ে যায়। বারবার বাড়ি থেকে ফোন আসছে অনন্যার কাছে। এতসব ঘটে চলেছে বাড়িতে জানায়নি এখনো। জানলে হয়তো চিন্তা করবে। আসলেই তো পুলিশকেস টেস থেকে শত হাত দূরে থাকাই শ্রেয়। বুদ্ধিমান মানুষ সেটাই করে। কিন্তু অনন্যা কি করবে? মেয়েটিকে দেখার পর থেকে খুব কষ্ট হচ্ছিল ভেতর ভেতর। ভেবেছিল, "দেখিনা একটু চেষ্টা করে, যদি কিছু করা যায়" সেই সামান্য চেষ্টা করতেই তো মেয়েটির সন্ধান পাওয়া গেল! নইলে তো এভাবেই চলতো হয়তো মেয়েটার জীবন, তারপর একদিন হয়তো গাছতলায় মরে পড়ে থাকতো। বা আরও ভয়াবহ কিছু....।
অবশেষে একসময় মেয়েটির মা এলো। মেয়েটিকে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল। এতদিন যে মেয়েটি পথেপথে ঘুরে বেড়ালো, পথেঘাটে গাছতলায় রাত কাটালো- তার কোনো মেডিক্যাল চেক আপের ব্যাবস্থা পর্যন্ত হল না থানার পক্ষ থেকে? অনন্যা আর এ ব্যাপারে পুলিশ কর্তাদের কিছু বলল না। বলে যে কিছু হবে না, তাতো বোঝাই যাচ্ছে। মেয়েটির মা অনন্যার হাত ধরে কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। অনন্যা সান্তনা দিয়ে বলল,
-"দেখুন মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন। এবারে বাড়ি নিয়ে গিয়ে যত তারাতারি পারেন ডাক্তার দেখান, খুব জরুরী। মেডিক্যাল চেক আপ করান, খুব বাড়াবাড়ি কিছু না ঘটার আগেই যথাযথ ব্যবস্থা নিন। আপনার মেয়ের শরীর কিন্তু ভালো নেই।”
ধীরেধীরে মেয়ের হাত ধরে মা চলে গেলেন বাস স্ট্যান্ডের দিকে। অনন্যা সেদিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়েকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে আজ। এমন কত মেয়েই তো পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক। ফুটপাথে গাছতলায় রাত কাটায়। মধ্য রাতে নর-পিশাচদের অত্যাচারের শিকার হয়। অথচ পথচলতি মানুষ যদি কেউ এভাবে অনন্যার মতো একটু এগিয়ে এসে খোঁজখবর নেয়, তাহলে তারা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। অথবা, মাথার ওপর একটা ছাদ পেতে পারে। অনন্যা তোমাকে স্যালুট। তুমি, শম্পা, ইকবাল - এই তোমাদের জন্যই পৃথিবীটা আজও এতো সুন্দর!!
(সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
------------------------
সেল্যুট অনন্যা। এইসব জীবনের গল্প গুরুচণ্ডালীর অমূল্য সম্পদ।
আরও লিখুন