উলোটপূরাণ মৌসুমী ঘোষ দাস ডাইনিংএ পা রেখেই নাকটা কুঁচকে গেল কাকলির! আজও কিছু পুড়ছে রান্নাঘরে! ছুটে গিয়ে গ্যাসটা অফ করে। ততক্ষণে বাটির সব জল শুকিয়ে ডিমদুটোর তলা ধরে গেছে। বহুবার অনন্যাকে বলেছে, ‘আমাকে বলো, আমি না হয় কিছু রেঁধে দেবো’। ওর তর সয় না! নাকি অবজ্ঞা করে- বোঝে না কাকলি। তা নিজেই যখন করবে, তো সেই সময়টুকু নাহয় রান্নাঘরেই থাকো। খাবার গ্যাসে বসিয়ে দোতলায় নিজের ঘরে গিয়ে বসে থাকা- এ আবার কি স্বভাব? খাবার এবং গ্যাস- দুটোই তো নষ্ট হয়! গায়ে লাগেনা? সিঁড়ি ভেঙ্গে গেল অনন্যার ঘরে। মগ্ন হয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। ফোনে এত আস্তে কথা বলে, যে পাশে ... ...
বিলুপ্তির পথে মাতৃভাষা মৌসুমী ঘোষ দাস কলকাতা থেকে ফিরছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে, সেই ট্রেনে আমার এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা। আমার মুখোমুখি আসনে তারাও সপরিবারে সেই ট্রেনেই ফিরছে। কথায় কথায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে প্রসঙ্গ ওঠে। তাতে বেশ গর্বের সাথে সেই পরিচিতা জানালো, “তার সন্তানেরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। সেখানে সব বিষয়ের সাথেই হিন্দি দ্বিতীয় আর বাংলা তৃতীয় ভাষা হিসেবে পড়ানো হয়। কিন্তু তাজ্জব ... ...
আজব লোক মৌসুমী ঘোষ দাস “দেকেন দাদা, আমাকে আরও ছয় বাড়ি যেতি হবে, অত হিসাব করি জল মেপি আপনের কতা মতো লিটিরপিটির করি কাজ করলি তো চলবে নি! পচন্দ না হলি নোক দেকে নেবেন!”- মালা ঝমঝমিয়ে উঠল। না, হরিবাবু তেমন ভারি কথা কিছুই বলেন নি মালাকে। শুধু বলেছিলেন, “কলটা কয়েক প্যাঁচ কম খুললেও তো জল পাওয়া যায়, তাহলে জল এত নষ্ট হয় না, বা একটা গামলায় মগ দিয়ে জল নিয়েও তো ধুতে পারো”। আসলে মালা রান্নাঘরের বেসিনের খোলা কলের নিচে একটা করে মাছের পিস নিয়ে নিয়ে ধুচ্ছিল। বাড়ির কর্তা হরিবাবু রান্নাঘরের সামনে অস্থির পায়ে পায়চারি করছিলেন আর নিজের মনেই বিড়বিড় করছিলেন। কিন্তু সশব্দে ... ...
সেকেন্ড বার্থমৌসুমী ঘোষ দাস (ছোটো গল্প) অন্ধকার ব্যালকনি থেকেই যূথিকা বুঝতে পারলেন অনির্বাণ আর রিয়া ফিরেছে অফিস থেকে। সারাদিনে এইসময়টাতেই যেন প্রাণ ফিরে আসে বাড়িটায়। যূথিকাও একটু শ্বাস নিয়ে বাঁচেন। তোড়া অবশ্য বিকেলেই ফেরে স্কুল থেকে। খুব শান্ত, কম কথা বলে। চেঞ্জ করে খাবার খেয়ে একটু ল্যাপটপ নাড়াচাড়া করেই স্টাডি রুমে ঢুকে যায় ... ...
ঘরের ছেলেমৌসুমী ঘোষ দাসকাজের মেয়ে মালতী আজ না বলে কয়ে ডুব মেরেছে, তাই রুনার আজ সকাল থেকেই মাথা গরম। রাজ্যের কাজ এখন ওকে একা হাতেই সামলাতে হচ্ছে। রুনার মুখের হাসি উধাও, বিরক্তিতে ভ্রু দুটো কুঁচকে আছে।এরই মধ্যে আবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। দিনুবাবু মানে রুনার শ্বশুর মশায় আজ সকালে হাওয়াই চপ্পল পরে বাথরুমে গিয়ে স্লিপ করে পরে গেছেন। সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড! ঈশ্বরের কৃপায় তেমন সাংঘাতিক কোন চোট না লাগলেও পা টা ফুলে আছে। ... ...
হাগিস মৌসুমী ঘোষ দাস বাথরুমের দরজা খুলে ঢুকতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো সিদ্ধেশ্বরীর। যত রাতেই শোন না কেন, বেশ কয়েকবার বাথরুমে যেতেই হয় তাঁকে। দরজার পাশে হাগিসটা পড়ে আছে এখনো। কাল ওনাকে নিয়ে যাবার আগে লুঙ্গি পালটে সেই যে হাগিসটা খুলে রাখা হয়েছে আর ফেলা হয়ে ওঠেনি। কাল ঘর ভর্তি লোকের মধ্যে কারোই খেয়াল ছিল না হাগিসটা ফেলার কথা। দাহকার্য সেরে ওদের ফিরতে ফিরতে সেই রাত সাড়ে বারোটা। তারপর এটা ওটা সেরে শুতে শুতে রাত দেড়টা। সারাদিনের শ্রান্ত শরীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল। বাথরুমে ঢুকে হাগিসটা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। শেষের দিকে বিছানাতেই সব সারতেন বলে হাগিস পরিয়ে রাখা হত। ... ...
সারপ্রাইজ মৌসুমী ঘোষ দাস তাতুনকে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে ভ্যানে তুলে দিল কুহেলী। তাতুন গিয়ে নিজের সিটে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। তবে এখন আর আগের মতো কান্নাকাটি করে না এই যা শান্তি। ভেতরে তখন আট-নয়-দশ বয়সীদের কলকাকলি। ভ্যানের দরজা বন্ধ করে ভ্যান রওনা দিতেই তাতুন হাত তুলল, কুহেলীও হাত নেড়ে বাই জানালো। ... ...
বিছানায় এসে শুয়েছি তা প্রায় ঘণ্টাখানেক হল। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বাইরে নিস্তব্ধ নিঝুম শীতের রাত। ঘরের নাইট ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিয়েছি ইচ্ছে করেই। একটুও আলো সহ্য হচ্ছে না আর। যদিও এই মুহূর্তে কেবলি মনে হচ্ছে কেউ যেন একটা কালো রঙ ধেবড়ে দিয়েছে আমার শরীর জুড়ে। আমি কিছুতেই তা ঘষে মুছে তুলে ফেলতে পারছি না। মনের যে গোপন কুঠুরির মুখ সযত্নে এতদিন বন্ধ করে রেখেছিলাম। আজ সেই বন্ধ মুখের ঢাকনাটা সরে গিয়ে কত স্মৃতি গলগল করে বেরিয়ে আসছে। ... ...
হটীমৌসুমী ঘোষ দাস ১৭৭৪ সালের এক সকাল। স্থান কাশীধাম, দুর্গামন্ডপের অনতিদূরে ‘কুরুক্ষেত্র তালাও’। দূরদূরান্তের মানুষ এসে ভিড় জমাতে শুরু করলো সেখানে। ওরা খবর পেয়েছে আজ একটা মস্ত বড় তামাশার আয়োজন হয়েছে। তামাশাটা হল বিশুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় তর্কযুদ্ধ। যদিও ওই অং বং চং ভাষা জনসাধারনে বোঝে না, বোঝার আগ্রহও নেই। তবুও তারা উৎসাহিত এই তর্কযুদ্ধ দেখতে। কারণটা হল, পুরুষের বেশে একজন স্ত্রীলোক আজ অংশগ্রহণ করছেন। যিনি পুরুষের মতো কাছা দিয়ে ধুতি পরেন, উর্ধাঙ্গে পিরান( ঢিলেঢালা জামা) এবং নামাবলি, মুন্ডিত মস্তক, দীর্ঘ টিকি, হাতে কানে গলায় কোন অলঙ্কার নেই, কেবলমাত্র একটি রুদ্রাক্ষের মালা, কোন অবগন্ঠন বা পর্দার বালাই নেই – সর্বসমক্ষে পুরুষের সঙ্গে ... ...
যে মানুষ সারাজীবন নিজের কাজ নিজে করে গেছেন, হাট-বাজার করা, নালা,নর্দমা, বাথরুম পরিস্কার থেকে নিজের জামাকাপড় নিজে কেচে ইস্ত্রি করা ... ...