আহাদ ভাই আমাদের বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন, নেতা ও ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। ১৯৯০ এর উত্তাল দিনগুলোতে তার নেতৃত্বে আমরা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তখন আমরা ছিলাম সকাল ৮-৯টার সূর্য, একেকজন যেন আর্জেস গ্রেনেড! এরশাদ পতনের পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ফেডারেশন আহাদ-জিলানী পরিষদে প্যানেল দিয়েছিল। "আহাদ-জিলানী পরিষদ, আন্দোলনের ভবিষ্যৎ/ লং লিভ রেভ্যুলেশন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন" শ্লোগানে গলা তুলেছিলাম সোৎসাহে।
১৯৯২ সালে আহাদ ভাই, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন প্রমুখসহ খাগড়াছড়ি ভ্রমণে গিয়ে আমরা ভয়াবহ লোগাং গণহত্যার মুখে পড়েছিলাম। পরে এই নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন ও ব্লগ নোট লিখেছি। আমার বই "পাহাড়ে বিপন্ন জনপদ" এ সে ঘটনার কথা বিস্তারিত বলা আছে।
ছাত্র জীবন শেষ হলেও তার সাথে আমার বরাবরই যোগাযোগ ছিল। তিনি ছিলেন আমার বন্ধু, ভাই, কখনো পরামর্শক। বরাবরই তিনি ছিলেন আমার সমস্ত লেখার একনিষ্ঠ পাঠক। তথ্য সাংবাদিকতার জীবনে তিনি ছিলেন বরাবরই উৎসাহদাতা। তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।
স্বীকার করি, বছর দশেক আগে তার উগ্র দক্ষিণপন্থী দল বিএনপিতে যোগদান ও সবশেষ বিএনপির টিকিটে নির্বাচনের আদর্শিক বিচ্যুতি আমি মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। তবু কিছুটা দূরত্ব রেখেই, তার সাথে একটি অনিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলাম।
গতমাসেই তার ধানমন্ডির বাসায় বন্ধু আন্তনী রেমাসহ গিয়ে আলাপ জমিয়েছিলাম, একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলাম। এ মাসেই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করার কথা ছিল! আমাদের পরিকল্পনা ছিল, তার স্ত্রী শিলা আপাসহ পাহাড়ে ভ্রমণ, মধুপুর চুনিয়া ঘুরে দেখা।
আহা! কত কী যে একসাথে করা হলো না! আহাদ ভাইকে কতো কথা বলা হলো না! করোনার ছোবলে গতরাতে চলে গেলেন তিনি।
ব্যক্তিগতভাবে বাবা ও ভাই হারানোর পর আহাদ ভাইয়ের প্রয়ানে আরেক স্বজন হারানোর মতো তীব্র যাতনা অনুভব করছি। মনে পড়ছে, তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই সন্তান অর্ক-অর্নবের মায়াবী মুখ।
আহাদ ভাইয়ের প্রস্থান মানে আমাদের, সম সাময়িক রাজনৈতিক-সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে একটি অধ্যায়ের অবসান। যেখানেই যান, ভাল থাকুন ভাই। আমি তোমাকে আজীবন মনে রাখবো, কমরেড!
শোকসন্তপ্ত। সান্ত্বনা জানাই।
পাঠের জন্য অনেক ধন্যবাদ দিদি।