" আমার ভাষা আমার অধিকার, বলে যাব, লড়ে যাব"...এটি এপারে চলতি শাহবাগ বিক্ষোভের একটি জ্বলন্ত শ্লোগান।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুরে কারা হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শাহবাগ।
২
খবরে প্রকাশ, ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গত বছর বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন মুশতাক। এরপর ছয় দফায় তার জামিন আবেদন নাকচ করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি কিছুটা অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও মুশতাক হত্যার বিচারের দাবিতে গত দুদিন ধরে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো লাগাতার বিক্ষোভ সমাবেশের মুখে শুক্রবার মুখ খুলেছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, লেখক মুশতাকের মৃত্যুর জন্য কারা কর্তৃপক্ষ দায়ী কি না, প্রয়োজনে তা তদন্ত করা হবে। আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে একথা বলা যাবে না। তবে আইনটি পর্যালোচনা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
বলাভাল, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৈরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এরই মধ্যে এই আইনে সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার, এক্টিভিস্ট ও কার্টুনিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকাংশের বিরুদ্ধে সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী অনলাইন কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে।
৩
চলতি আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনো তেমন ভাবে যোগ না দিলেও গণসংহতি আন্দোলন নামে নতুন ধারার বাম দল সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রদের মশাল মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ বুদ্ধিজীবী-লেখকরা এখনো নিশ্চুপ। তবে আশা করা যায় সরকারি কলমচি বুদ্ধিজীবীরা শিগগিরই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সুশাসনের দিক তুলে ধরে টিভি চ্যানেলের বিস্তর টিআরপি বাড়াবেন। অবশ্য মলম মালিশের তরিকায় তারাও চাইবেন লেখক মুশতাক মৃত্যুর সুবিচার!!
তবে, বাংলাদেশের অন্যতম বাম বুদ্ধিজীবী আনু মুহাম্মদ খুব সাহসিকতার সাথেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন :
"সরকার- আদালত- আইন- জুলুম সব এখন একাকার। খুনি আর লুটেরাদের রক্ষা যার কাজ, তার কাছে লেখা- কার্টুন-মত ভীতিকর। তাই খুনের আসামী শুধু জামিন নয় মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়ায় আর লেখা বা মত প্রকাশের ‘মহা অপরাধে’ জামিন হয় না বারবার। ছয়বার জামিন অস্বীকৃত হযেছে মুশতাকের, তারপর হেফাজতে মৃত্যু। এটা খুন, এই খুনের পুরো দায় সরকারের।"
৪
সবশেষ, শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ডিজিটাল জগতে বাংলাদেশে সবাইকে সুরক্ষিত রাখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তাই বলে এ নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়।
এদিকে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসনও পৃথক তদন্ত কমিটি করেছে।
অন্যদিকে, আটক সাত শিক্ষার্থীকে হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার তাদের আদালতে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের জেল গেটে একদিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। লেখক মুশতাক মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল বের করলে একদফা লাঠিপেটার পর ওই সাত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। একই হত্যা চেষ্টা মামলায় পুলিশ এই সাতজন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা দেড়শজনকে আসামি করেছে।
৫
উপসহারের বদলে,
"ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!
যার পিছনে জানটা দিলাম যার পিছনে রক্ত
সেই রক্তের বদল দেখো বাঁচাই কেমন শক্ত,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার মরার স্বাধীনতা!
বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি বুলেট শুধু খেলাম
উঠতে এবং বসতে ঠুঁকি দাদার পায়ে সেলাম,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!"
-- আবু সালেহ, ১৯৭৩-৭৪।
সংযুক্ত :
এই মৃত্যু মিছিল কি থামার নয় ?
ভয়াবহ আইন। ব্লগার দের খুনীদের ধরা যায় না, কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় কার্টুন শেয়ার করলে ১৪ বছর জেল। ছ বার জামিন অস্বীকার করা হয় :-(
ভারত -ও পিছিয়ে নেই
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম শহীদ লেখক মুশতাক! এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ!