আমি উত্তমকুমারকে দেখিনি। সত্যজিৎ রায়কেও দেখিনি। একজন আমার জন্মের অনেক আগে, আরেকজন কয়েক বছর পরে প্রয়াত হন। আমার ছোটবেলার খুব উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ছিল সত্যজিতের প্রয়াণ, রাজীব গান্ধীর হত্যা এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা। প্রথম দুটি ঘটনার সময় আমার এক নিকটাত্মীয় প্রয়াত হন, তখন আমি নিতান্তই ছেলেমানুষ। বিশেষ করে রাজীব গান্ধীর ঘটনাটি মনে আছে। তখন সাদাকালো টিভির দৃশ্য মনে বরাবরের মত দাগ কেটে গেছে।
সত্যজিতের ছবির সঙ্গে পরিচয় আমার ছোটবেলাতেই ঘটেছিল। কিন্তু তাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি নিশ্চিতভাবেই, অনেক পরে। টিভি বস্তুটি যেহেতু আজন্মই দেখার সুযোগ হয়েছে, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিচিত ফিল্ম বোঝা না বোঝার বহু আগে থেকেই আমার বহুবার দেখা হয়ে গিয়েছিল। অবশ্যই পুরনো ক্লাসিক ছবি। কারণ বাড়িতে সেগুলোই দেখার চল ছিল। এই পর্বেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আমার চেনা। তখন সপ্তাহে কেবল রবিবার ছবি দেখানো হত। আর ছুটিছুটি তে কিছু ছবির দেখা মিলত। সৌমিত্রকে প্রথম পর্বে চিনেছি মূলতঃ সত্যজিতের হাত ধরেই। আলাদাভাবে অপু হিসাবে। সব চরিত্রই কম বেশি ভাল লেগেছে। অন্য পরিচালকদের বহু সিনেমাতে তাঁর অভিনয় দেখেছি। মনে দাগ কেটেছে প্রায় সবগুলোই। তবে অগ্রদানী, একটি জীবন, উত্তরণ, আতঙ্ক, নিশিযাপন আমার বিশেষ প্রিয়। শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, কন্টেন্ট, সামগ্রিকতা ও সাহিত্যধর্মী সিনেম্যাটিক প্রয়োগ এই ছবিগুলিতে কাজ করেছে। আলাদা করে ভাল লাগে গণশত্রু এবং অবশ্যই ফেলুদা।
ফেলুদা, কোনও নির্দিষ্ট সিনেমা নয়, আমি দেখতে পাই একটা চরিত্র হয়ে ওঠাকে। যে চরিত্র একটা কাল্ট, একটা নির্দিষ্ট যুগের বাঙালির মেধা ও মননের বাহক, যে অভিনেতা তাঁর সমস্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে, সামগ্রিকতায়, বৈচিত্র্যে, মননশীল অভিনয় ও পরিমিতিবোধে ছাড়িয়ে যান একে একে নিজেকে, চরিত্রকে, সময়কেও। তাই সৌমিত্র আমার কাছে স্টার অথচ স্টার নন, ছায়ার জগতে থেকেও তিনি ছায়াতরু, তিনি একটি যুগ, অধ্যায়, মননশীল বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত, আমার বেড়ে ওঠার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত পরিমণ্ডলের এক উজ্জ্বল, হয়ত বা অন্তিম প্রতিনিধি। তিনি এমন এক সত্তাকে বহন করেন, চলচ্চিত্রে ও নাটকে উপস্থাপন করেন তা অত্যন্ত স্বকীয়, সংবেদনশীল, সম্পূর্ণ এবং প্রাণের দীপ্তিতে উজ্জ্বল। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে যে সাংস্কৃতিক উত্তরাধুনিকতার সূচনা ঘটেছে সেই ক্রান্তিকালে পূর্বধারার শেষ সক্রিয় প্রতিনিধি ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অবশ্যই বাংলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। তাই তাঁর প্রয়াণ নিছকই কোন বাঁধাধরা যুগাবসান, অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়। তার থেকেও বড় কোনও ইতিহাসের সমাপ্তি বা সূচনাকাল। কারণ শুধু ব্যক্তির মৃত্যু নয়, আমরা পৌঁছে গেছি একটা সীমান্তে, পিছনে ফেলে এলাম যা কিছু সীমান্ত পার হলে তার সঙ্গে আত্মিকতার একটা পাকাপাকি অবসান ঘটে যাবে।
সৌমিত্রবাবুকে আজ থেকে প্রায় বছর কুড়ি আগে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে দেখেছি। শ্রুতিনাটক। সেই স্মৃতি আজও অমলিন। তাঁর কোনও নাটক আমি সরাসরি দেখিনি। যা কিছু দেখা তা খুবই সীমায়িত পরিসরে টিভি, সিনেমাহল, ফিল্মরিভিউ, সাক্ষাৎকার, বিজ্ঞাপন, প্রদর্শনী ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে। আমি বেশ মনে করতে পারি আমার পাড়ায় একটি অনুষ্ঠানে তাঁর পারফরম্যান্স। মূলতঃ ছিল কবিতাপাঠ। কিন্তু তিনি সেদিন রবীন্দ্রনাথের একটি বড়গল্প পাঠ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। আবৃত্তির শ্রোতার ভিড় পাতলা হতে হতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকল। রাত হয়েছে অনেক। দর্শকাসন প্রায় শূন্য। আমি ছিলাম। সহৃদয় শ্রোতা বলে নয়, হয়ত পাড়ায় থাকি বলেই। সঙ্গে আর দুই কি তিনজন। উনি নিশ্চলভাবে পুরো পাঠ সমাপ্ত করলেন। গল্প শোনার দর্শক কম, যে সব গল্প আবার পাঠ্যপুস্তকে পড়তে হয় সে সব শোনার আগ্রহ সচরাচর mass এর থাকে না। এটা বাস্তব। তবে এটা একটা খণ্ড চিত্র। কারণ আমি জানি সহৃদয় শ্রোতা বা দর্শকের অভাব নেই। তবে একটা ক্লাসের বোধ সেদিন আমার জেগেছিল। এই দিনটার কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে কারণ বাড়ি পৌঁছে একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমাদের এক আজন্ম পরিচিত প্রতিবেশী সেদিন প্রয়াত হয়েছিলেন। যাওয়ার সময় তাড়া ও অন্যমনস্কতার জন্য জানতে পারিনি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। তাহলে হয়ত যাওয়া হত না।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ক্লাস এবং মাস উভয়ের ই প্রতিনিধিত্ব করেছেন সফলভাবে। আমরা কিংবদন্তি বা প্রবাদপ্রতিম বলতে যা বুঝি জীবদ্দশাতেই তিনি তা খানিক অ্যাচিভ করেছেন। এখন বাকিটা সময়ের হাতে। নিছক সিনেমার হিরো নন - অভিনেতা, নিছক ফিল্মস্টার নন - সংস্কৃতিকর্মী তথা বিশেষ সাংস্কৃতিক ধারার বাহক, যুগচেতনার ধারক তথা সমাজবিবেক হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে তাঁর সম্পূর্ণতা ও মহীরূহ হয়ে ওঠা। তিনি যে যুগের প্রতিনিধিত্ব করেন সে যুগ এখন ক্রান্তিকালে। রবীন্দ্রবোধ ও চেতনার যে প্রতিচ্ছবি তাঁর শিল্পের কাঠামোয় ধরা পড়ত তাও একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করল।
ফেলুদার যে অন্তর্ধান ঘটতে পারে সেটা আমার বোধের অতীত। আমাদের শৈশব, কৈশোর থেকে যাঁরা প্রবলভাবে 'ছিলেন', যাঁরা ইতিহাসনির্মাতা ও প্রবলভাবে বর্তমান, তাঁরাই যখন ইতিহাস হয়ে যান, কোথাও একটা ছেদ পড়ে। ফুটবোর্ডের আলোগুলো একে একে নিভে যাচ্ছে। মঞ্চ প্রায়ান্ধকার। নাটক সমাপ্ত হয়েও মনে একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে যাচ্ছে। একটা অনুরণন উঠছে। পর্দা নেমে গেল। এই মঞ্চেই অন্য নাটক মঞ্চায়িত হবে আবার।
আমার কানে কটি বাক্য ঘুরে ফিরে আসছে বারবার...
"আজকে দাদা যাবার আগে
বল্ব যা মোর চিত্তে লাগে
নাই-বা তাহার অর্থ হোক্
নাই-বা বুঝুক বেবাক্ লোক।"
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভাষ্যপাঠ করছেন সুকুমার রায়ের জীবননির্ভর তথ্যচিত্রের একদম শেষে। ছবি বদলে যাচ্ছে বারবার.... বলছেন-
"ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর।"
যে পথ দিয়ে তিনি চলে যাচ্ছেন, সেটি বুঝি অপুর জীবনপথ। পথের দেবতা হেসে যেখানে বলেন পথ তো আমার শেষ হয় না...
" তোমাদের সোনাডাঙা মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতী পার হয়ে, পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ কাটিয়ে, বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে, পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে| দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্য্যোদয় ছেড়ে সূর্য্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডী এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশ্যে। দিন রাত্রি পার হয়ে, জন্ম-মরণ পার হয়ে, মাস বর্ষ মন্বন্তর, মহাযুগ পার হয়ে চ’লে যায়, তোমাদের মর্ম্মর জীবন-স্বপ্ন শেওলা ছাতার দলে ভরে আসে, পথ আমার তখনো ফুরোয় না| চলে, চলে, এগিয়েই চলে….অনির্বাণ তার বীণা শোনে শুধু অনন্ত কাল আর অনন্ত আকাশ... ”
শিবস্তে সন্তু পন্থানঃ।
অভিষেক ঘোষ
অধ্যাপক, বাগনান কলেজ
আপনার তালিকার সঙ্গে, অনুরোধ করব, অজয় কর পরিচালিত বর্ণালি যোগ করতে। ইউটিউবে পাবেন। সংসারসীমান্ত, তরুণ মজুমদারের, --এই ছবির প্রিন্ট নেই, স্বয়ং পরিচালকই বলেছেন । সেটা বোধহয় আর দেখা যাবেনা। আমি খুুঁজে পাইনি, ইউটিউবে।
"তোমার হাওয়ায় হাওয়ায়"
সুবর্ণলতা জীবনে বেশী কিছু চায়নি। একটা বারান্দা, দখিন খোলা বারান্দায় খানিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহমান জীবনকে চেয়ে চেয়ে দেখবে। কিছু চাওয়া থাকে, ভাত-কাপড়ের প্রয়োজনের বাইরে সেগুলো। মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে যাদের চাওয়ার কিছু থাকে না, বাধ্যতঃ যারা জীবনের দাবির বাইরে আর কিছু চাইতে পারে না বা জানে না, সুবর্ণলতার চাওয়া-না চাওয়া তাদের কাছে খানিক বেশী বেশী মনে হয়। তাকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হয় না, তার লড়াই নিজের সঙ্গে, পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে। খাঁচার পাখি আর বনের পাখির মনোজগতের যা ফারাক, অচলায়তনের সুভদ্র আর পঞ্চকের যে মানসিক কাঠামো, সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে সুবর্ণলতার দক্ষিণের বারান্দার সুপ্ত বাসনা। এই একটা জায়গাতেই সুবর্ণলতার মনোজগত্ খাঁচার পাখির থেকে পৃথক্। খাঁচার দরজা খুলে দিলেও খাঁচার পাখি উড়তে পারে না। সুবর্ণলতা আমরণ সোনার পিঞ্জরে থেকেও মনে মনে সে বনের পাখি। খাঁচার পাখি দুঃস্বপ্নেও কোনও অ্যাডভেঞ্চারের আশা রাখে না, কিন্তু সুবর্ণলতা একটা উন্মুক্ত দখিনের বারান্দা চায়। লালন যাকে বলেন, হাওয়াঘর, সপ্ততালা ভেদ করে যেখানে অপ্রাপ্তির অবসান ঘটে। "অধর মানুষের" সন্ধান মেলে। সুবর্ণলতার জীবনে মুক্ত বাতাসের ব্যঞ্জনা খুবই প্রবল। হঠাত্ করেই মনে করিয়ে দেবে কিছু পঙক্তি.. "হাওয়াতে হাওয়া মিশায়ে/ যাও রে মন উজান বেয়ে"..... এই জায়গাতেই কোথাও যেন সুবর্ণলতায় লালনকে খুঁজে পাই, যে সযত্নে লালন করে চলে কিছু অচিনপুর আর আরশিনগরের স্বপ্ন।
"গুরুপদে যার মন ডুবেছে রে/ সেকি ঘরে রইতে পারে
রত্ন থাকে যত্নের ঘরে/ কোন সন্ধানে ধরবি তাই।।
মৃণালের পর আছে স্থিতি/ রূপের ছটা ধরবি যদি
লালন কয় তার গতাগতি/ সেইখানেতে চাঁদ উদয় হয়।"
তখন সত্যবতী-সুবর্ণলতা-বকুল ট্রিলজির আধারে একটি প্রবন্ধ লিখছিলাম। যা লিখছি বাদ দিয়ে দিচ্ছি পরেরদিনই। মূলসত্যে যেন কিছুতেই পৌঁছে দিতে পারছি না লেখাটাকে। অগত্যা কিছু একটা দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যে। বেশ কিছু হেঁটে বাসস্ট্যান্ড। গ্রীষ্মের দুপুর। একটু ছায়া খুঁজে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমাটা খুলতেই বাড়িটা চোখে পড়ল। আশাপূর্ণা সাহিত্য ভবন। দোতলার বারান্দা। উপচে পড়া কোনও এক লতাগাছের বাঁধনে কিছুটা আবডালে সেদিন বারান্দাটা ভাল করে দেখলাম। এখানেই বসে হয়ত... হয়ত না, এখানে বসেই লিখে গেছেন পর পর। আমার আজন্ম দেখে আসা বাড়িটাকে সেদিন মনে হল হাওয়াঘর। দুখান চাকার উপর তিনমহলা বাড়ি। মানবশরীর, মানবজমিন। সেখানেই অচিন পাখির আনাগোনা। বাড়ির মধ্যিখানে সেই হাওয়াঘর, হৃদয়, দখিনের বারান্দা। বুকে সঞ্চিত থাকে রত্নরাজি, বুক হাতড়ে হাতড়ে সাগরমন্থন করে সন্ধান মেলে মানুষরতনের।
অটোয় বসে ভাবছিলাম। কখন যে থেমে গেছে গাড়িটা খেয়াল নেই। ডান-দিক থেকে গরম হাওয়া মুখে আছড়ে পড়ল। বললাম - -" যাবে না? নেমে যাব? " অটোর চালক বললেন - - - "দাদা, একটু দাঁড়িয়ে যাই এই হাওয়াগলিতে। যদি একটা প্যাসেঞ্জার পাই।"
"হাওয়াগলি কীরকম?"
"এই তো, দেখছেন না, বাঁদিকে তাকান।"
একটা সোজা লম্বা রাস্তা। একদিকে কিছু ছোটছোট বাড়ি। আর একদিকে হাইরাইজ। বিজ্ঞানের নিয়মে অপরিসর জায়গায় হাইরাইজে বাধা পেয়ে হাওয়া সেখানে তীব্রগতিতে ছুটে চলেছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের নানারঙের পতাকা পতপত করে উড়ছে। পাগল হাওয়া যেন উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে কোন দিকশূন্যপুরে। বেশ তো ব্যাপারটা। আগে কখনও খেয়াল করিনি। অটোচালকের কথাগুলো শুনতে পেলাম - -" এখানে এলে দাদা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে যাই। শরীর মন সব জুড়িয়ে যায়।"
আমার চোখে তখন একটা আস্ত দক্ষিণের বারান্দা যেন রাজকাহিনীর বই-এর পাতা থেকে উঠে এসে ভেসে বেড়াচ্ছে... হাওয়ায় হাওয়ায় যেন বলে যাচ্ছে কেউ..
"ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে!!!"
©️অভিষেক ঘোষ
সহকারী অধ্যাপক
বাগনান কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ভালো হয়ে গেল মনটা