এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মানক কথা

    Chirasree Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ অক্টোবর ২০২০ | ১৩২৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মানক কথা

    দুই তিন দিবস আগে বাজার হইতে ফিরিতেছিলাম। আজকাল কমই যাওয়া হয়। পথপার্শ্বে বৃহৎ আকারের হরিৎ বর্ণ টগবগে মানকচু বিক্রি হইতেছিল। দেখিয়া উৎফুল্ল হইয়া ভাবিলাম কিনিয়া লই, মানকচুর শাক আমার কাছে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সুস্বাদু আহার্যের মধ্যে একটি। কিন্তু যেই ব্যাটারী চালিত শকটের মধ্যে আমি বসিয়াছিলাম উহার চালকের তীব্র মেজাজ আর বিরক্তিকর মুখমণ্ডল দেখিয়া আমি সেই ইচ্ছা বর্জন করিয়া দিলাম। তাহার পর বাড়ি সম্মুখে গমনরত একজন স্বব্জি বিক্রেতাকে কহিলাম আগামী কল্য কচু লইয়া আইসো।

    আহা!

    পরের দিন বেলা বারোটা বা তাহার অধিকে সে দুইখানা কচু লইয়া আগমন করিল। না করি কি করিয়া, রাখিয়া ভাবিলাম, আজই রাঁধিব।

    গৃহে এখন দস্তানার অভাব নাই। নিজের বুদ্ধিতে নিজেই চমৎকৃত হইয়া দস্তানা পরিয়া ঘচ ঘচ করিয়া ছাল ছাড়াইয়া কচু কাটিয়া কড়াই এর তপ্ত জলে সেই নরম কচুর শরীরের টুকরো টুকরো অংশ নিক্ষেপ করিলাম। কৌটা খুঁজিয়া ইষ্টকের টুকরো সদৃশ কঠিন ছোলাও পাইলাম। এবং চাপদানকারী যন্ত্রের আহ্লাদময় মধ্যাহ্নপ্লাবিত করা চিৎকারে চতুর্দিক ধ্বনিত করিয়া উহাদের সিদ্ধ করিলাম। কড়ায় সরিষার তৈল দিলাম, তপ্ত হইবার মাত্র শুষ্ক মরিচ, পাঁচফোড়নাদি, তেজপত্র, গোটা দুই কাঁচা মরিচ দিয়া, নাড়িয়া চারিয়া জল ঝরাইয়া রাখা কচু দিলাম। লবন, হলুদ, জিরা, আদা, ধনে সমস্ত দিয়া নাড়াইতে লাগিলাম। ভাজিয়া রাখা সিদ্ধ ছোলাও দিয়া দিলাম, আমার আবার সদাই তাড়াহুড়া। লঘু মিষ্টত্ব আনিবার জন্য একখানা স্যাকারিন ট্যাবলেট তন্মধ্যে প্রদান করিলাম।

    যাবতীয় জল শুকাইয়া শুষ্ক হইতে বহু সময় লাগিবে, এক্ষণে নাড়িতে হইবে, নাড়ানোই কচুর শাকের একমাত্র দাবি।

    কচুর শাক রাঁধিতে গেলেই আমার স্বপ্নময় চক্রবর্তীর একখানি উপন্যাসের কথা মনে পড়ে, নাম মনে নাই, একটি অংশ ছিল এইরূপ ...

    দেশভাগ হইয়াছে, কলকাতার রিফিউজিদের জন্য যে জমি সরকার দিয়াছিল সেখানে ঘর উঠাইয়াছেন এক উদ্বাস্তু পরিবার। সেই পরিবারের মা কচুর শাক রাঁধিতেছেন, তাহার পুত্র সদ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকুরি পাইয়াছে, অন্য কোথাও সে কর্মরত, আসিবে পড়শু দিন, অদ্য শাক রন্ধন হইতেছে, সেই শাক টানাইয়া পড়শু পর্যন্ত রাখিতে হইবে, তিনি শাক রাঁধিতে রাঁধিতে কত গল্পই করিতেছেন ছেলের উদ্দেশ্যে, এ তো শাক রান্না নয়, ঝাঁঝে ঘ্রাণে ছেলেকে চিঠি লিখিতেছেন, কচুর শাকের জল মরিয়া আসিতেছে, চিঠি তপ্ত মায়ায় কাঞ্চনবর্ণ ধারন করিতেছে।

    আমাদের প্রাণের ঠাকুর, রবিঠাকুর নাকি মানকচুর জিলাপি অতিশয় ভালোবাসিতেন, যাহা হউক আজি কচুর নিম্নাংশ আমার বিষয় নয়, উপরিভাগই আসল।

    আমি যখন পঞ্চমশ্রেণীতে পড়িতাম তখন প্রথম কলিকাতা গিয়াছিলাম। কলিকাতা হইতে আমার বাবু আমাকে আর মাকে লইয়া নবদ্বীপের কাছে বীরচন্দ্রপুর গ্রামে আমার বড়পিসীর বাড়িতে লইয়া যাইবেন, ট্রেনে উঠিয়াছি শিয়ালদহ হইতে। বীরচন্দ্রপুর স্টেশনে ট্রেন থামিল। তখন মোবাইল ফোনের চল নাই। এমন কি সাধারণ ফোনও সুদুর্লভ, পিসীর বাড়ি দূর গ্রামে, চিঠিপত্রে যোগাযোগ।

    তাই এই হঠাৎ আগমনের পূর্ব সংবাদ কাউকে পাঠানো হয় নাই। অতএব স্টেশনে কেহ আসে নাই। মধ্যাহ্নের গায়ে অপরাহ্ণের বিষাদ লাগিয়াছে। স্টেশনে ভ্যান গাড়ি ভাড়া হইলো। স্টেশন ছাড়িয়া গ্রামের পথ ধরিতেই আমি সুমিষ্ট তীব্র গন্ধ পাইলাম। তাহার পর এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। মাইলের পর মাইল রজনীগন্ধার ক্ষেত। আমি তখনো কোনদিন ফুলের ক্ষেত কল্পনাতেও আনিনি। সূর্যালোকের অস্মিত স্পর্দ্ধায় শ্বেত গন্ধের এইরূপ আকুল বিস্তৃতি দেখিয়া আমি মাকে আনন্দে জড়াইয়া ধরিলাম। পিসী বহু আগেই বিধবা। পুত্রদের নাম বলিতেই ভ্যানগাড়ি পিসীর বাড়ির নিকটে নিয়া আসিল। হইচই করিয়া পিসী ও তাহার পুুুুত্র, কন্যা বাহির হইয়া আসিলেন। আমরা বারান্দায় বসিলাম। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় কনিষ্ঠ ভ্রাতা, ভ্রাতৃবধূ আর আমাকে প্রথমবার দেখিয়া তিনি কাঁদিতে আরম্ভ করিলেন। পিসীর ছেলেরা গৃহস্থি করে। আর সেইদিন ছিল অন্নকূটের ব্রত।

    তিনি আমাদের বড় বড় পেতলের থালায় প্রসাদ বাড়িয়া দিলেন। আমি তখনো কোন প্রকার শাকসব্জি খাইতে চাহি না, দুধ ভাত, মাছ, ডিমই ছিল আমার খাদ্য। যাহা হউক প্রথমেই কচু শাক। মা পূর্ব হইতে বলিয়া দিয়াছেন, ওনারা যা খাইতে দেবে হাসিমুখে খাইবে। আমি হাসিমুখে নয়, চাটিয়া পুটিয়া সকল ভাত শুধু কচুর শাক দিয়াই খাইয়াছিলাম।

    সেইদিন হইতে আমি কচু প্রিয়। আর তাহা যদি বৈষ্ণব বাড়ির ভোগের জন্য প্রস্তুত হয়, তাহলে সে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।

    কাহিনি এখানেই শেষ নহে, রাত্রি সমাগত হইয়াছে। চতুর্দিকে ছোট ছোট ঘর, মাটির দাওয়া। হুক লাইন টানিয়া একটিমাত্র বাল্ব, এই বাড়িটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চার করিয়াছে। কিন্তু তাহা মনুষ্য ঘরের জন্য নহে। গোয়াল ঘর, যেখানে দুধেল গাই ও হালের বলদ রহিয়াছে, উহাদের জন্য। পাছে তাহারা চুরি যায়। তাই তিরিশ ওয়াটের একটি ঘোলাটে বাল্ব সমস্ত রাত্রি ধরিয়া তাহার ক্ষীণ আলোর দ্বারা চোরগণকে এক আশ্চর্য উপায়ে ঠেকাইয়া রাখে।
    একটি ডাক শুনিতেছিলাম, পিসী বলিলেন, ও কিছু না, তক্ষক। আমি জিজ্ঞাসু ভঙ্গীতে ব্যাখ্যা চাহিলাম, মা বলিলেন, নদীর গর্জন শুনিতেছো? কাছেই ছিল একটি নদী, অন্ধকারের নীরবতায় তাহার স্রোতের আওয়াজ শোনা যাইতেছে, সত্যিই তো এরূপ কখনো শুনি নি।
    পরের দিন পিসী আমাদের নবদ্বীপ বেড়াইতে লইয়া যাবেন। ভ্রাতৃবধূকে লইয়া একটু বেড়াইবার আয়োজন। যত না বলেন, কাঁদেন অধিক। তাই পরের দিন বাসে করিয়া আমরা নবদ্বীপ গেলাম। সেখানে শ্রী চৈতন্যদেবের মাসীর বাড়িতে পিসীর জানাশোনা। তিনিও বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিতা। বহু প্রাচীন মণ্ডপ ও মন্দির। দুইখানি শাখামৃগ বিস্তৃত তমালবৃক্ষের তলায় বসিয়া সুপক্ক কলা খাইতেছিল, আমি বালিকাসুলভ কৌতূহলে উৎসুক হইয়া তাহাদের নিকট যাইতে প্রবৃত্ত হইলাম, এক ক্ষীণকায়া, অল্পকেশ, শ্যামবর্ণা, তীক্ষ্ণচক্ষু লাবন্যহীন বালিকাকে দেখিয়া তাহারা নিরুৎসাহিত হইয়া বৃক্ষের মগডালে চড়িয়া বসিল।
    ভোগারতি শেষ। অন্নদান শুরু।
    আমরা মধ্যাহ্নভোজে বসিলাম। আবারো কচু শাক। কিন্তু অধিক যত্নে রান্না করা, ঘি বাদাম সিক্ত, অতিশয় সুমিষ্ট সেই শাক আমার ভালো লাগিল না, গতকল্যের স্বাদ জিহ্বায় তখনো লাগিয়া আছে।

    দ্বিপ্রহর মধ্যগগনে।

    আমার শাক প্রস্তুত হইয়াছে।

    করোনাসময়ে লকডাউনকালে, এই কচুর শাকই আমার দ্বারা প্রদত্ত একমাত্র খাদ্য দ্রব্যের ছবি। এখানে ছবিটি পোস্টাইতে পারিলাম না।

    বন্ধুরা, এই ধান ভানতে শিবের গীত মার্জনা করিবেন।

    @ চিরশ্রী দেবনাথ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • utsuk | 199.195.***.*** | ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৩98520
  • ছবি পোস্টাতে পারিলেননা কেন? অন্য সকলে তো  পোস্টায়। 

  • i | 203.219.***.*** | ১৭ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৪৪98558
  • চমৎকার লাগছে আপনার লেখা।
    কবিতাও ভালো লেগেছিল।

  • π | ১৭ অক্টোবর ২০২০ ০৯:৩৮98561
  • দিব্যি লাগলো এই লেখাটাও !


    লেখার বাক্সের উপর সারিতে সবার শেষে যে i লেখা,তাতে ক্লিক করলেই ছবি আপলোডানো যাবে। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন