বিশ্বের উন্নততম দেশে নির্বাচনের সার্কাস শুরু হয়ে গেল। আজ ছিল প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্ক। এক মঞ্চে ট্রাম্প-বাইডেন। নির্বাচনের বাজারে প্রথমবার।
কী হল? সংক্ষেপে, সে এক কান্ড বটে। উন্নততম দেশের সার্কাসও উন্নততম। খাজনার চেয়ে বাজনা সবসময়েই বেশি। হোয়াইট হাউস, আমেরিকা, সিএনএন, সব গামা-গামা ব্যাপার। তার উপর, টিভিতে প্রাইম-টাইমে দেখায় বিজ্ঞাপন-টন ছাড়া। আমরা হুজুগে পাবলিক, তাই দেখতেই হয়, নইলে সত্যি বলতে কি, এর জায়গায় হনুমান-চালিশা-পাঠের প্রতিযোগিতা করলেও খারাপ কিছু হতনা। ইসু-টিসু, প্রশ্নোত্তরের বালাই নেই, যা হল, তা পাতি ঝগড়া। তাও ভালো কিছু না। সোশাল মিডিয়ার ঝগড়া এর চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক। তৃতীয় বিশ্বের ট্রেনে 'তুই-আমার-পা-মাড়িয়ে-দিলি-কেন-রে-ট্রেন-কি-তোর-বাবার' চুলোচুলি অনেক বেশি কুশলী। পাড়ার মোড়ে কলের লাইনের ঝগড়া তো এর তুলনায় প্রায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত।
বলা বাহুল্য সার্কাসের নায়ক, চার বছরের মতোই শ্রীযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতেই স্বাস্থ্যব্যবস্থার তিনি এমন উপকার করবেন জানালেন, যেখানে জলের দামে ইনসুলিন পাওয়া যাবে। না 'জলের দর' টা বাংলা বাক্যবন্ধ নয়। ট্রাম্প সত্যি-সত্যিই জলের যা দাম তাতেই ইনসুলিনের সরবরাহ করবেন জানিয়েছেন। ওবামাকেয়ার তুলে দেন। এছাড়াও আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এনে দেবেন করোনার ভ্যাকসিন। তাঁর বিশেষজ্ঞরাই যে উল্টো কথা বলছেন? বলছেন ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দিতে-দিতে সামনের বছর গরমকাল হয়ে যাবে? ট্রাম্প যা বললেন, তার মানে মোটামুটি এই, যে "ও ব্যাটারা কিছু জানেনা"। এটা আসলে রাজনৈতিক ব্যাপার। মাক্কালীর দিব্যি, মা শেতলার দিব্যি, সত্যি বললেন, আমি ফার্মা কোম্পানিদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি, ব্যাপারটা পলিটিকাল।
এর পরের দান বাইডেনের। ঝপ করে ট্রাম্পকে ভরা মাঠে 'মিথ্যেবাদী' বলে ফেললেন। শুধু আমি নয়, দুনিয়ার সবাই জানে, ব্যাটা মিথ্যেবাদী, ওর কাছে আবার বুদ্ধিমানের মতো কাজ কে আশা করে, -- এরকম কিছু একটা কথা। ব্যস আর যায় কোথায়। 'স্মার্টনেস? তুমি আর স্মার্টনেস দেখিওনা বাইডেন। পড়েছ কোথাকার একটা কলেজে, রেজাল্টের কি ছিরি তাও জানা আছে' হুবহু নয়,জবাবে এই হল ট্রাম্পের চূড়ান্ত বুদ্ধিমানের মতো উত্তর।
এরপর একদম ফ্রি-স্টাইল। অর্থনীতি, কোভিড, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সব ছাপিয়ে স্রেফ চুলোচুলি। তার বিবরণ দেওয়া তো দূরস্থান, মনে রাখাও কোনো মরমানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মোটের উপর হাইলাইটস এই রকমঃ
সঞ্চালকঃ ট্রাম্পবাবু, আপনি কোভিডের মধ্যে গাদা লোক জড়ো করে মিটিং করেন কেন?
ট্রাম্পঃ কারণ আমার মিটিং এ লোক আসে। বাইডেনের মিটিং এ তো লোকই হয়না। একটা মিটিং এ নাকি তিনটে লোক হয়েছিল। (কোন প্রসঙ্গে? কে জানে)
বাইডেনঃ এই ক্লাউনটাকে আর কী বলব। শাট আপ।
ট্রাম্পঃ এই ব্যাটা তো লেফটের হাতের পুতুল। আইন-শৃঙ্খলা শব্দটা বলতেই ওর জিভে আটকে যায়। একবার বল তো দেখি আইন-শৃঙ্খলা ।
বাইডেনঃ এ ব্যাটা তো হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের সমর্থন করে। একবার নিন্দে কর তো দেখি।
ট্রাম্পঃ আমি যখন খুশি হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের নিন্দে করতেই পারি। কিন্তু সব গোলমাল তো লেফটরা পাকাচ্ছে, তুই একবার ওদের নিন্দে করে দেখা তো।
বাইডেনঃ তুমি তো সাড়ে সাতশো ডলার আয়কর দাও।
ট্রাম্পঃ সব গুল। আমি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয়কর দিই।
বাইডেনঃ মিথ্যে মিথ্যে।
ট্রাম্পঃ তোর আবার কথা। তোর ছেলে তো কোকেন নেয়। রাশিয়া থেকে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার নিয়েছে। মুখ দেখে দিয়েছে?
এইসব চলল ঘন্টা দেড়েক। তার মধ্যে সঞ্চালক সম্পূর্ণ ঢাল-তরোয়ালহীন। আগেকার ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে এইরকম বিমূঢ় রেফারিদের দেখা যেত। অনেকদিন বাদে সেই নস্টালজিক মুহূর্তের পুনর্দর্শন হল। তবে এসব একজন অর্ণব গোস্বামী থাকলেও জমে যেত। একাই বকে যেতেন, ট্রাম্প কথা বলার জন্য খাবি খেতেন, সেও এক দেখার জিনিস হত।
আর হ্যাঁ, শেষকালে ট্রাম্প জানিয়ে গেলেন, ভোটে জালিয়াতি হলে কিন্তু তিনি একদম মেনে নেবেননা। তার মানে কি কে জানে।
পুঃ বলাবাহুল্য কথোপকথনগুলো, যা লিখেছি, হুবহু নয়। কানে একবার শুনে সারসংক্ষেপ লেখা। কথাগুলোও নানা প্রেক্ষিতে বলা, এভাবে টানা নয়। কিন্তু মোটের উপর সারসংক্ষেপটা ঠিকই আছে। কারণ এ 'বিতর্কের' কোনো প্রেক্ষিত থাকা সম্ভব নয়।
:-)
"রাশিয়া থেকে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার নিয়েছে।"
রাশিয়া না ইউক্রেন? হ্যাঁ মোটামুটি কলতলার ঝগড়া। না দেখেই কমেন্ট করছি।
তবে এরকম করার কারণও আছে।
ট্রাম্প জানে যে যত গুন্ডামি করবে তত ওর বেসের মধ্যে ভোট পাকা হবে।
বাইডেণও জানে যে ট্রাম্প যত হাতপা ছুঁড়বে, তত বেশি মহিলা ভোট ডেমদের দিকে আসবে।
অতেব স্ট্র্যাটেজি সবার ঠিকই আছে।
একদমই। পুরোটাই রোল প্লেয়িং। হিসেব কষেই করা।
দুটো পয়েন্ট না করলেই নয়।
১) বাইডেণ বেশ কিছু অবভিয়াস ইস্যুতে প্রিপেয়ার্ড ছিলনা দেখে অবাক হছি।
২) ট্রাম্প যে ভালো পারফর্ম করেনি সেটার প্রমাণ ফক্স এখনও প্রোট্রাম্প হেডলাইন খুঁজে পায়নি, ওএনেনের সাইট খুললে তো বোঝাই যাচ্ছে না যে ডিবেট হয়েছে। টুইটারেও ট্রাম্পভক্তরা চুপ।
টেস্ট -
কিন্তু এটাই মানুষ চেয়েছে। আমেরিকার ডিবেটের এই স্তরের ডাম্বিং ট্রাম্প ই করেছে। বাইডেন কে দাঁড় করানো ই হয়েছে সে ট্রাম্পের সংগে ট্রাম্পের ভাষায় কথা বলবে বলে। যুক্তি, ফ্যাক্ট্স , আরগুমেন্ট্স গয়ে তেল লেনে। খেলার মাঠের বুলি দের ঝগড়া। লোকে ক্ষমতা বলতে এসব ই বোঝে। অতিরিক্ত টেলিভিসন হলে যা হয়। স্পার আর রোস্ট , এই তো গল্প।
আর কোর্টে, কোন ডিস্ট্রিক্টে , কার পক্ষে কত jaaj আছে তার গল্পে গিয়ে দাঁরানোর চান্স তো প্রচুর। আর সুপ্রিম কোর্ট তো পার্টিজান এখন রিপাবলিকান দের পক্ষে। রেসিস্ট দের রম্পিং মার্চ চলছে আর কি, খুব ই আনন্দের দিন। কাল কোন ডিবেট ই হয় নি, ঠিক ই বলেছে ইশান, দুটি ষাঁড়ের মধ্যে গুঁতো গুঁতি হয়েছে।
সার্কাসের আসল খেলা দেখবেন ইলেকশানের পরে।
এটা দেখেছি আজকে। অসাধারণ বললেন।
মনে হয় ট্রাম্প একটা ডিল মেকিঙ্গ এর ফিল্ড বানাবার চেষ্টা করছে।
পরিষ্কার জিতলে তো কোন ঝামেলা নেই। যদি হোয়াইট হাউস থেকে বেরোতে হয়, তখন জেলে যাতে না যেতে হয় সেই রাস্তা বানাতে চাইছে। একটা ব্ল্যান্কট পার্ডন।
বাইডেন বড়ই বুড়ো
"একটা ব্ল্যান্কট পার্ডন।"
সেটা কি আদৌ সম্ভব? স্টেটগুলো মেনে নেবে কেন? আর ট্রাম্প হারলে জিওপিদের ডিজৌন করতে দুমিনিটও লাগবে না। আমার ধারণা বেশিরভাগ জিওপি সেনেটার, গভর্ণর, ফক্স নিউজের ম্যানেজমেন্ট, এমনকি অ্যাডমিনিস্ট্রেশানের অনেকেও ট্রাম্পকে দুচক্ষে দেখতে পারেনা। তারাই এনশিওর করবে যাতে ট্রাম্প এবং ট্রাম্পের ফ্যামিলি কোনওদিনও পলিটিক্সে ফিরতে না পারে। ইলেকশন জেতার আগে এদের বক্তব্য শুনে নেবেন।
তবে ট্রাম্পের জেতার চান্স খুব ভালো। আরো ইমপ্রুভ করবে। ২০০০ সালে ফ্লোরিডাতে ততক্ষন ধরে ভোট পার্জ করা হয়েছিল যতক্ষন বুশ পিছিয়ে ছিল। শেষে ৫৩৭ ভোটে যখন এগুলো তখন বলা হল এটাই ফাইনাল। এবারেও বেশ কিছু রাজ্যে সেরকম হবে। প্রচুর মেইল ইন ব্যালট পড়ছে, সেগুলো আদৌ গোণা হবে বলে মনে হয়্না। ইন পার্সন ভোটে ট্রাম্প এগিয়ে থাকবে। কারণ মাইনরিটি এলাকায় বুথ, ভোটিং মেশিন, স্টাফ সবই কম। সেখানে জিওপির ক্যাডাররা অলরেডি গিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে। তাছাড়া সুপ্রীম কোর্ট, লোয়ার কোর্ট, সুইঙ্গ স্টেটগুলোর কঙ্গ্রেসে নিজেদের লোক বসে আছে।
ক্রিস ওয়ালেসের সেই কাকুতিমনতি, প্লিজ, প্লিজ জেন্টেলমেন। ট্রেভর নোয়া বলছে থ্যান্ক ইউ ক্রিস ওয়ালেস ফর ইওর সার্ভিস। হোপ ইউ হ্যাভ এনাফ মানি ফর থেরাপি।
প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট কমিশন নাকি পরের ডিবেটে আরো কিছু ব্যাবস্থা নেবে!
আরো ডিবেট?
খেয়েছে! আবার হবে নাকি! পরেরটা তো বলল ভিপি ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে।
<https://twitter.com/gdebenedetti/status/1311355474827186184/photo/1>
লিংক আসল না কেন ?
দুই এন্ডে ব্রাকেট লাগবে না, ওটা কেবলমাত্র পুরোনো বাংলা লেখার কলে লাগে
তিনটে ডিবেট না? আরেকটা ভিপিদের, মোট চারটে। তাই যেন দেখলাম।
হ্যাঁ সেতো প্রতিবারই তাই হয়। কিন্তু এবারে বাকীগুলো কাটিয়ে দিলেই পারে। তার থেকে কয়েকটা পুরোনো বাংলা সিনেমা দেখাক ঐ সময়্গুলোতে।
ফক্স নিউজে আজ সারাদিন ধরে বলে গেল যে বাইডেণের কানে (হয়ত) ইয়ারপীস ছিল। মানে স্বীকার করে নিল যে বাইডেণ ভালো পারফর্ম করেছে। সেই জয়সূর্য দারুন ব্যাটিং করার পর সবাই মজা করে বলত যে ওর ব্যাটে নাকি স্প্রিং লাগানো আছে। অবশ্য ধ্যানচাঁদের হকিস্টিকে সত্যিই আঠা লাগানো আছে কিনা, তার নাকি চেকিং করেছিল সাহেবরা।
বিডেন পড়াশুনা না করেই পরীক্ষায় বসে ছিল ।আমাদের রুহুল গান্ধি আসলই ভালো হতো
তুলি
সুকুমার রায়ের সেই অসামান্য চার লাইন কোথাও কেউ কোট করছে না দেখে অবাক হচ্ছি -
‘দুটোই বাঁদর, দুটোই গাধা,
রোগা মোটা সমান হাঁদা।
ভন্ড বেড়াল, পালের ধাড়ি,
লাগাও মুখে ঝাঁটার বাড়ি।
মাথায় মাথায় ঠুকে ঠুকে
চুনকালি দাও দুটোর মুখে॥'
আমার কাউন্টির ভোটের খবর আজ। আর্লি ভোটিং এর জন্যে লম্বা লাইন।
নর্দার্ণ ভার্জিনিয়া তো সব মডারেট ডেমদের রাজত্ব।
ডিবেটে লাড্ডুগুড্ডু খেয়েছে দেখে ডিপ মিচ পেন্স রে দাঁড় করিয়ে দেবে কিনা ভাবছে, চিফ জাস্টিসগুটি সাজানো আছে ৫০বছরের গ্যারেন্টি নিয়ে...